লখনউয়ের বিশেষ সিবিআই আদালতের বক্তব্য দীর্ঘ ২৮ বছরের তদন্তের শেষেও এই ৩২ জনের বিরুদ্ধে সিবিআই এমন কোনও প্রমাণ বা নথি পেশ করতে পারেনি, যাতে প্রমাণ হয় বাবরি ধ্বংসের নেপথ্যে কোনও রাজনৈতিক নেতার উসকানি ছিল। ফলে এই দীর্ঘ ২৮ বছরের আইনি লড়াইয়ের পর ভারতের প্রাক্তন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী এল কে আডবানী, দেশের প্রাক্তন মানব সম্পদ উন্নয়ন মন্ত্রী মুরলীমনোহর যোশী, উত্তরপ্রদেশের প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী কল্যাণ সিং, উমা ভারতী, সাক্ষী মহারাজের মতো বিজেপি নেতারা বেকসুর মুক্তি পেয়ে গিয়েছেন।
আদালত বলেছে, সিবিআই এই মামলার অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে কোনও প্রামাণ্য নথি জোগাড় করতে পারেনি। আর সংবাদমাধ্যমে প্রকাশিত তথ্য আদালতে গ্রহণযোগ্য নয়। আসলে বাবরি ধ্বংসের প্রত্যক্ষদর্শীর সংখ্যা অন্তত ৩০-৪০ হাজার। তবে সিবিআই মোট ১০২৬ জনকে সাক্ষী হিসেবে পেশ করার অনুমতি চেয়েছিল। এদের মধ্যেও মাত্র ৩৫১ জন আদালতে সাক্ষী দিয়েছেন। সেই সঙ্গে অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে বেশ কিছু নথি এবং ভিডিও ফুটেজ পেশ করেছে কেন্দ্রীয় তদন্তকারী সংস্থা। আদালতে পেশ করা হয়েছিল সেখানে উপস্থিত সাংবাদিক এবং পুলিশকর্মীদের বক্তব্যও। কিন্তু এর কোনও কিছুতেই প্রমাণ হয়নি যে অভিযুক্তরা কোনওরকম অপরাধমূলক ষড়যন্ত্রে যুক্ত ছিলেন। লখনউয়ের সিবিআই আদালতের এই রায়ের পর এবার হাই কোর্টে আবেদন করার সুযোগ থাকছে সিবিআইয়ের কাছে। তবে, সিবিআই সেটা করবে কিনা স্পষ্ট নয়।
এদিকে ১৯৯২ সালের ৬ ডিসেম্বর, মসজিদ ভাঙার দিন যেরকম অপমানিত বোধ করছিলেন আজও সেই একই অনুভব হচ্ছে,বাবরি মসজিদ ধ্বংস মামলার রায় সম্পর্কে কথা বলতে গিয়ে এই মন্তব্যই করেছেন এআইএমআইএম প্রধান আসাদউদ্দিন ওয়েইসি।বহুপ্রতীক্ষিত বাবরি মসজিদ ধ্বংস মামলার রায় দিয়েছেন লখনউের বিশেষ সিবিআই আদালত। ৩২ জন অভিযুক্তকে আদালত বেকসুর খালাস করে দিয়ে জানিয়েছেন,ওই ঘটনা পূর্বপরিকল্পিত ছিল না। আদালতের এই রায়ের তীব্র সমালোচনা করে বর্ষীয়ান বিজেপি নেতা লালকৃষ্ণ আডবানীকে আক্রমণ করেছেন হায়দরাবাদের সাংসদ এবং এআইএমআইএম প্রধান আসাদউদ্দিন ওয়েইসি।
অন্যদিকে,দীর্ঘ ২৮ বছরের পুরনো মামলা,বাবরি মসজিদ ধ্বংসের মামলার রায় শুনিয়েছেন তিনি। লখনউয়ের বিশেষ আদালতে বাবরি মসজিদ ধ্বংস মামলার রায় ঘোষণা করেছেন বিচারক সুরেন্দ্র কুমার যাদব। রায় ঘিরে তোলপাড় সারা দেশ। রায় ঘোষণা করে বাবরি মসজিদ ধ্বংস মামলায় লালকৃষ্ণ আদবানি সহ ৩২ অভিযুক্তকে বেকসুর খালাস ঘোষণা করেছেন বিচারক সুরেন্দ্র কুমার যাদব। দীর্ঘ ২৮ বছর ধরে চলা মামলার ২ হাজার পাতার রায় ঘোষণা করে এখন শিরোনামে বিচারক সুরেন্দ্র কুমার যাদব।ফৈজাবাদ আদালত থেকেই অ্যাডিশনাল ডিস্ট্রিক্ট জাজ হিসেবে শুরু করেছিলেন বিচারক সুরেন্দ্র কুমার যাদব। বাবরি মসজিদ ধ্বংস মামলার রায় ঘোষণা করে তাঁর দীর্ঘ বিচারক জীবন থেকে অবসর নিলেন তিনি।
এআইএমআইএম প্রধান বলেছেন, হিংসা আডবানীকে রাজনৈতিক সুবিধা পাইয়ে দিয়েছে। সবাই খুব ভাল করেই জানেন যে যখনই আডবানী রথযাত্রা বের করেছেন তখন রক্তপাত ঘটেছে।তাই এই রায় হিন্দুত্ববাদের যারা অনুগামী একমাত্র তাদেরই সন্তুষ্ট করবে। আসাদউদ্দিন ওয়েইসি বলেছেন, ১৯৯২ সালের ৬ ডিসেম্বর যেরকম অপমানিত বোধ করছিলেন সেরকমই অনুভব করছেন।
এরপরই সুপ্রিম কোর্টের প্রসঙ্গ উত্থাপন করে তিনি বলেছেন, এই ঘটনা সম্পর্কে সুপ্রিম কোর্ট বলেছিল একটি প্রার্থনার জায়গাকে ধ্বংস করার জন্য আগে থেকে পরিকল্পনা করা হয়েছিল। এআইএমআইএম প্রধান কিছুতেই বুঝতে পারছেন না যে যদি এই ঘটনার ফলে আইনভঙ্গ না হয়ে থাকে তাহলে কি ডিসেম্বরের ৬ তারিখ জাদু বলে মসজিদটি ধ্বংস হয়েছিল? ১৯৪৯ সালের ২৮ ও ২৯ ডিসেম্বর রাতে কি ওখানে জাদুর সাহায্যে মূর্তিগুলি রাখা হয়েছিল? রাজীব গান্ধী যখন প্রধানমন্ত্রী ছিলেন তখন জাদুর সাহায্যে অযোধ্যায় তালা খোলা হয়েছিল?
বুধবারের আদালতের রায় ভারতের বিচার ব্যবস্থার কালো দিন বলে দাবি করে আসাদউদ্দিন ওয়েইসি বলেছেন,এই রায় অভিযুক্তদের সাহস যোগাবে।বলেছেন, আদালতের রায়ের সঙ্গে সহমত পোষণ না করা মানেই তাকে অবমাননা করা নয়। আশা করবেন নিজেদের স্বতন্ত্রতা বজায় রাখার জন্য সিবিআই এই রায়ের বিরুদ্ধে আবেদন জানাবে।তা যদি না হয় তাহলে বাবরি মসজিদ ধ্বংসের ঘটনায় অভিযুক্তরা কাশী এবং মথুরার ক্ষেত্রেও একই বিষয়ের পুনরাবৃত্তি করবে।
আর ইতিহাস বলছে ১৯৯২ সালের ৬ ডিসেম্বর করসেবকদের হাতুড়ির ঘায়ে গুঁড়িয়ে দিয়েছিল বাবরি মসজিদ। অভিযোগ, ঘটনাস্থলে উপস্থিত থেকে প্ররোচনা দিয়েছিলেন আদবানি, যোশী, উমা ভারতীরা। ১৯৯২ সালের এই ঘটনায় শুরুর দিকে দু'টি এফআইআর দায়ের হয়েছিল। প্রথমটি অজ্ঞাতপরিচয় করসেবকদের বিরুদ্ধে। দ্বিতীয়টি আদবানিদের বিরুদ্ধে। পরে একে একে ৪৫টি এফআইআর রুজু হয় এই মামলায়।
বিচারপ্রক্রিয়ার জন্য রায়বেরিলিতে তৈরি হয় সিবিআইয়ের বিশেষ আদালত। তারপর থেকেই মামলা চলছে। ২০০১-এ আদবানি, যোশীদের অভিযোগ থেকে রেহাই দেয় এলাহাবাদ হাইকোর্ট। কিন্তু, তারপরই ঘটনায় নতুন মোড় এনে ২০১৭ সালে সুপ্রিম কোর্ট জানিয়ে দেয়, হাইকোর্টের এই রায় ভুল। দেশের প্রাক্তন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী এল কে আদবানিরা অভিযুক্তই। আদালত এমনও বলে যে, বাবরি ধ্বংসের এই ঘটনা সংবিধানের ধর্মনিরপেক্ষতার ভিত্তিকে নাড়িয়ে দিয়েছিল। মামলার নিষ্পত্তির জন্য সময়সীমাও বেঁধে দেয় আদালত। সেই সময়সীমা অবশ্য বেশ কয়েক দফায় বাড়ানো হয়েছিল।