গুরুত্বপূর্ণ বিষয়গুলো:
- বিশেষজ্ঞরা বলছেন, লং কোভিডে আক্রান্ত ব্যক্তিদের মধ্যে অনেকেই ব্রেইন ফগ-এ ভুগে থাকেন
- ব্রেইন ফগ দীর্ঘস্থায়ী কিছু নয় এবং সাধারণত এটি নিজে থেকেই সেরে যায়
- তবে যদি আট সপ্তাহেরও বেশি সময় ধরে এটি চলতে থাকে তবে আপনার জিপির সাথে কথা বলুন
- বিশেষজ্ঞরা বলছেন, বিভিন্ন পাজল বা ধাঁধাঁর সমাধান এবং ভিডিও গেম খেলার মতো মানসিক অনুশীলনের অভ্যাসে থাকলে ব্রেইন ফগ সেরে উঠতে কাজে লাগে
সিডনি-ভিত্তিক প্রোজেক্ট ম্যানেজার ডায়ান ওয়াটস কোভিড থেকে সেরে উঠে কাজে ফেরার পরে তাঁর কাজের কিছু কর্মপদ্ধতি মনে করতে পারছিলেন না এবং কিছু শব্দের বানানও তিনি ভুলে গিয়েছিলেন।
মিজ ওয়াটস এসবিএস-কে বলেন, ‘আমার সাথে বসে একজন সহকর্মীকে আমাদের প্রতিষ্ঠানের কর্মপদ্ধতিগুলো আমাকে আবারও দেখিয়ে দেয়ার দরকার হয়েছিল।’
মিজ ওয়াটস জুন মাসে কোভিডে আক্রান্ত হন। তাঁর ধারণা কোভিড সেরে ওঠার পরে তিনি লং কোভিডে আক্রান্ত হয়েছিলেন, যেটি সাধারণত কোভিডের তিন মাসের মধ্যেই ঘটে।
নিউ সাউথ ওয়েলস হেলথ জানিয়েছে, লং কোভিডের জন্য কোনও ডাক্তারি পরীক্ষা নেই। তাই এটি নির্ণয়ের জন্যে ডাক্তাররা রোগীর উপসর্গগুলো অন্য রোগের সাথে মিলে যায় কিনা সেটি পরীক্ষা করেন। এবং অন্য কোনও রোগ না থাকলে লং কোভিড হয়েছে বলে ধরে নেন।
সাধারণত লং কোভিডের লক্ষণগুলির মধ্যে রয়েছে ব্রেইন ফগ, মনোসংযোগ ও ঘুমের সমস্যা, বিষণ্ণতা, উদ্বেগ, ক্লান্তি এবং কথা বলতে সমস্যা হওয়া।
অন্যান্য লক্ষণগুলি হলো শ্বাসকষ্ট, বা শ্বাস নিতে অসুবিধা, অবিরাম কাশি, বুকে ব্যথা, পেশী ব্যথা, গন্ধ বা স্বাদ হারানো এবং জ্বর।
লং কোভিড ক্লিনিক খুঁজতে নিচের লিঙ্কগুলোয় দেখুন।
কোভিড ফগ কী?
‘কোভিড ফগ’ চিকিৎসাবিজ্ঞানে প্রতিষ্ঠিত কোনও শব্দ নয়, তবে এটি সাধারণত বুদ্ধিবৃত্তিক কিছু সমস্যা বর্ণনা করতে ব্যবহৃত হয়, যেমন কোভিড সংক্রমণের পরে যদি মানুষের চিন্তা ও মনোনিবেশ করতে এবং কোনও কিছু মনে রাখতে অসুবিধা হয়, এই অবস্থাকে কোভিড ফগ বলা হয়।
ডিপার্টমেন্ট অব হেলথ অ্যান্ড এজেড কেয়ার-এর কাছে অস্ট্রেলিয়ায় কোভিড ফগ কেসের সুনির্দিষ্ট কোনও পরিসংখ্যান নেই।
তবে অ্যাসোসিয়েট প্রফেসর এবং সিডনির সেন্ট ভিনসেন্টস হাসপাতালের লং কোভিড-১৯ ক্লিনিকের পরিচালক স্টিভেন ফও-এর মতে, লং কোভিডে আক্রান্ত মানুষদের মধ্যে সাধারণত কোভিড ফগ দেখা যায়।
ক্লিনিকে আসা প্রায় ১০ থেকে ২৫ শতাংশ রোগী কোভিড ফগে ভোগার কথা বলেন। আর আমরা যদি রোগীকে অন্যান্য মাথা খাটানোর কাজে অসুবিধা সম্পর্কে প্রশ্ন করি এই সংখ্যাটি তখন আরও বেড়ে যায়।
কোভিড ফগ কীভাবে নির্ণয় করা হয়
সিডনি-ভিত্তিক চিকিৎসক-বিজ্ঞানী এবং অ্যাকাডেমিক নিউরোলজিস্ট ড. সোনু ভাস্কর বলেছেন যে কোভিড ফগ নির্ণয় করা বেশ চ্যালেঞ্জিং হতে পারে, কারণ এটি হচ্ছে মূলত 'কোভিড -১৯ থেকে সেরে ওঠার পরে কোনও ব্যক্তির সম্পূর্ণ সুস্থ বোধ না করা বা মনোনিবেশ করতে অসুবিধা হওয়ার অভিজ্ঞতা'।
ড. ভাস্কর বলেন, 'কোভিড-১৯ থেকে সেরে ওঠা ব্যক্তিদের একটি অংশ দীর্ঘস্থায়ী স্নায়বিক ও চিন্তা শক্তি অনুশীলনে সমস্যার সম্মুখীন হতে পারে।'
অধ্যাপক ফও বলেছেন, কোভিড ফগ নির্ণয় কোনও একটি নির্দিষ্ট লক্ষণের মধ্যে সীমাবদ্ধ থাকতে পারে না কারণ উদ্বেগ এবং ক্লান্তি মানুষের চিন্তাভাবনাকেও প্রভাবিত করে।
তিনি বলেন, 'কোভিড ফগ মোকাবেলার সময় আমাদের অবশ্যই এই সমস্যার প্রেক্ষাপটটি খেয়াল রাখতে হবে।‘
অধ্যাপক ফও মনে করেন যে আইন ও স্বাস্থ্যসেবা খাতের মতো পেশায় থাকা মানুষেরা যাদের প্রচুর তথ্য মনে রাখার প্রয়োজন হয়, তাঁরাই কোভিড ফগের কারণে বেশি ক্ষতির সম্মুখীন হচ্ছে।
তিনি আরও বলেন, ‘যেসব পেশায় অনেক বেশি মনোযোগ দেয়ার দরকার হয়, সেসব পেশার জন্য কোভিড ফগ-কে গুরুতর হিসেবে বিবেচনা করা যেতে পারে।’
কোভিড ফগ হলে কী করতে হবে
বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই কোভিড ফগ স্বল্পস্থায়ী এবং সাধারণত এটি নিজে থেকেই ভাল হয়ে যায়।
'প্রথমত, আতঙ্কিত হবেন না। এটি স্থায়ী হওয়ার সম্ভাবনা কম। তাই নিজেকে সময় দিন,' অধ্যাপক ফও আশ্বাস দেন।
উদ্বেগ বা বিষণ্ণতার মতো সমস্যাগুলি সমাধানের চেষ্টা করা গেলে সেটি কোভিড ফগ সারাতেও সাহায্য করতে পারে।
সংক্রমণের আট সপ্তাহ পরেও কেউ যদি লক্ষণগুলি অনুভব করতে থাকে, তাহলে তাদের জিপির সাথে কথা বলার পরামর্শ দেন প্রফেসর ফও।
বেশিরভাগ লোকেরা নিজেরাই বাড়িতে ব্যায়ামের মাধ্যমে এটি নিয়ন্ত্রণে রাখতে পারেন। তবে অতিরিক্ত ব্যায়ামও ভাল নয়, শুধু ধীরে ধীরে এবং কিছু সহজ ব্যায়াম করুন।
ড. ভাস্কর আরও যোগ করেছেন যে কিছু মাথা খাটানোর মত কাজ যেমন ভিডিও গেম খেলা, এগুলো কোভিড ফগ কাটাতে সাহায্য করে থাকে।
মিজ ওয়াটস তার ব্রেইন ফগ-এর জন্য কোনও ডাক্তারের কাছে যাননি, তবে নিজেই খেয়াল রাখছিলেন কতটুকু উন্নতি হচ্ছে বা কতটা সেরে উঠছেন।
‘আমি সবসময় স্বাস্থ্যকর খাবার খেয়েছি এবং ধীরে ধীরে আগের চেয়ে বেশি সক্রিয় হয়ে উঠেছি,’ তিনি বলেন।
‘তারপর সংক্রমণের চার সপ্তাহ পরে হঠাৎ করেই আমার ব্রেইন ফগ সেরে যায়,’ মিজ ওয়াটস জানালেন।
Experts believe people high-demanding jobs could be more affected by COVID fog. Credit: Hinterhaus Productions/Getty Images
আরও গবেষণার প্রয়োজন
মানুষের শরীরের বিভিন্ন অঙ্গ-প্রত্যঙ্গের ওপরে কোভিড-১৯ এর কতটুকু প্রভাব করে, বিশেষ করে স্নায়বিক ক্ষমতার ওপরে, সে বিষয়ে আরও বেশি গবেষণা করা প্রয়োজন।
কিন্তু সম্প্রতি -তে প্রকাশিত একটি গবেষণায় দেখা গেছে, কিছু লোক কোভিড -১৯ সংক্রমণের দুই বছর পরেও ব্রেইন ফগ, স্মৃতিবিভ্রম এবং সাইকোসিসসহ বেশ কিছু স্নায়বিক ও মানসিক রোগের ঝুঁকিতে রয়েছে।
এ ছাড়াও, -এ প্রকাশিত লা ট্রোব বিশ্ববিদ্যালয়ের নেতৃত্বাধীন এক গবেষণায় পাওয়া গেছে যে কোভিড-পরবর্তী রোগীদের মধ্যে যে স্নায়বিক ও মানসিক সমস্যাগুলো দেখা গেছে, সেগুলির সাথে অ্যালঝেইমার ও ডিমেনশিয়া রোগের লক্ষণের মিল রয়েছে।
শীর্ষ পর্যায়ের গবেষক ড. নিক রেনল্ডস অবশ্য এসবিএসকে বলেছেন যে ভবিষ্যতে অ্যালঝেইমার এবং ডিমেনশিয়ার চিকিৎসার জন্য তৈরি করা ওষুধগুলিকে কোভিড সংক্রমণের পরবর্তী স্নায়বিক রোগের চিকিৎসার উপযোগী করে প্রস্তুত করা সম্ভব হতে পারে।
এসবিএস অস্ট্রেলিয়ার বহুসংস্কৃতি ও বহুভাষী সম্প্রদায়ের কাছে সমস্ত কোভিড-১৯ সম্পর্কিত তথ্য সরবরাহ করতে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ। নিরাপদে থাকুন এবং অন্যান্য তথ্যের জন্যে নিয়মিত দেখুন:
এসবিএস বাংলার অনুষ্ঠান শুনুন রেডিওতে, এসবিএস বাংলা রেডিও অ্যাপ-এ এবং আমাদের ওয়েবসাইটে, প্রতি সোম ও শনিবার সন্ধ্যা ৬ টা থেকে ৭ টা পর্যন্ত। রেডিও অনুষ্ঠান পরেও শুনতে পারবেন, ভিজিট করুন: