বহু ফার্স্ট নেশন্স মানুষের জন্য ২৬ জানুয়ারী অস্ট্রেলিয়া দিবস উদযাপন এখনও বেদনাদায়ক

একটি আধুনিক ও বহুসাংস্কৃতিক অস্ট্রেলিয়ার অস্তিত্বকে উদযাপনের জন্যে তারিখ পরিবর্তনের দাবী প্রতি বছর আরও জোরালো হচ্ছে। ২৬ জানুয়ারীর বর্তমান তারিখ বিশেষত ফার্স্ট নেশন্স মানুষদের জন্য উদযাপনের চেয়ে বরং বেদনার কারণ হিসাবে রয়ে গেছে।

Incasiondaypic.jpg

People take part in an "Invasion Day" rally on Australia Day in Melbourne on January 26, 2018. Tens of thousands of people marched across Australia on January 26 in an "Invasion Day" protest calling for a rethink of the national day they say is offensive to Indigenous people. Credit: PETER PARKS/AFP via Getty Images

সারা দেশে ২৬ জানুয়ারী সরকারী ছুটির দিন, যেদিন বেশিরভাগ মানুষকেই কাজে যেতে হয় না। বরং গ্রীষ্ম অবকাশের সমাপ্তি টানতে এদিন অনেকেকই বারবিকিউ করতে দেখা যায়। এই দিনে শত শত অস্ট্রেলীয় নাগরিককে কম্যুনিটিতে তাঁদের অবদানের জন্যে জাতীয় সম্মান ও স্বীকৃতি দেওয়া হয়ে থাকে।

কিন্তু অনেক ফার্স্ট নেশন্স মানুষদের জন্যই এই দিনটি খুব ভিন্নরকম বার্তা নিয়ে আসে, তাঁদের জন্যে এই দিনটি উদযাপনের নয়। কারণ তাঁদের কাছে এই দিনটি ব্রিটিশ ঔপনিবেশিক আগ্রাসনের সূচনাকে চিহ্নিত করে, যার ফলে প্রজন্মের পর প্রজন্ম ধরে ফার্স্ট নেশন্স মানুষদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ, গণহত্যা, বর্ণবাদ এবং অন্যান্য নৃশংসতা ঘটেছিল।
আবার এই দিনটিতেই হাজার হাজার নবাগত ও এ দেশে অবস্থানরত অভিবাসী সম্প্রদায়ের মানুষ অস্ট্রেলিয়ার নাগরিকত্ব অর্জন উদযাপন করে।

সুতরাং এরকম দ্বন্দ্বে জর্জরিত একটি দিন, যা ‘ফার্স্ট ফ্লিট’ বা প্রথম নৌবহরের আগমনকে চিহ্নিত করে, সেই একই তারিখে কি বহুসাংস্কৃতিক পটভূমির লোকেরা অস্ট্রেলিয়ার পতাকার নীচে দাঁড়িয়ে একতা উদযাপন করবে? এমন একটি প্রশ্ন দীর্ঘদিন ধরে বহুসাংস্কৃতিক সম্প্রদায়ের মানুষদের মনে উঁকি দিচ্ছে।

'আমাদের মধ্যে একাত্মবোধ গড়ে তুলতে হবে'

২০২১ সালের জনশুমারি অনুসারে, ৭০ লাখেরও বেশি মানুষ, যা অস্ট্রেলিয়ার জনসংখ্যার ২৯.৩ শতাংশ, বিদেশে জন্মগ্রহণ করেছেন। এই হিসাব পরিসংখ্যানে যাদের জন্মস্থান উল্লেখ করা হয়নি তাদের বাদ দিয়ে।

সিডনির ইথিওপিয়ান সম্প্রদায়ের আসিফা বিকলে ইন্ডিজেনাস বা আদিবাসী সম্প্রদায়ের সাথে কাজ করেছেন এবং ফার্স্ট নেশন্স মানুষের ইতিহাসে তাঁর গভীর আগ্রহ রয়েছে।

তিনি বলেন, একটি সম্প্রদায় বা জাতির সাথে সম্পর্কিত হওয়ার জন্যে একাত্মবোধ গড়ে তোলা খুব গুরুত্বপূর্ণ।

মি: বিকলে বলেন, 'প্রত্যেক ব্যক্তি ও নাগরিক এবং বিশেষ করে যারা বিদেশ থেকে এসেছেন ও ৬০ হাজার বছরেরও বেশি সময় ধরে এখানে বসবাসকারী আদিবাসী অস্ট্রেলিয়ান, সকলকেই এই দেশের সাথে নিজেদের যুক্ত রাখতে হবে।‘

‘এবং আমরা সবাই জানি ইতিহাস, সংস্কৃতি এবং অন্য সবকিছু ভাগ করে নিলে নিজস্ব স্বকীয়তার সাথে সাথে একাত্মতার অনুভূতিও বিকশিত হয়।‘

‘এই তারিখ পরিবর্তন করতে আমার কোনো সমস্যা নেই, একেবারেই না। অস্ট্রেলিয়া এগিয়ে যাচ্ছে এবং সময়ের পরিবর্তন হচ্ছে, তাই মানুষকেও এর সাথে পরিবর্তিত হতে হবে।‘
অস্ট্রেলিয়া একটি বহুসাংস্কৃতিক দেশ, এবং এই সংস্কৃতির প্রতিটি অংশেরই সম্মান পাওয়া উচিৎ।
আসিফা বিকলে
‘দিন শেষে আমাদের সবার প্রয়োজন শুধু শান্তি, সম্প্রীতি ও ঐক্য।‘

'উদযাপনের জন্য ভুল দিন বেছে নেয়া হয়েছে'

বাচুলা ও গাবি গাবি পুরুষ, গ্যাভিন সমারস, একজন গায়ক ও গীতিকার। তিনি অস্ট্রেলিয়া দিবস ও নাগরিকত্ব অর্জন উদযাপনের জন্য একটি আলাদা দিন রাখার গুরুত্ব স্বীকার করেন, তবে তিনি বলেন যে বর্তমান তারিখটি উদযাপনের জন্য ভুল একটি দিন।

‘আমাদের এমন একটি তারিখ থাকা দরকার যা এখানে বসবাসকারী অন্যান্য বহুসাংস্কৃতিক গোষ্ঠীর সাথে মিলে আমরা গর্বের সাথে উদযাপন করতে পারি,’ মি: সমারস বলেন।

‘এমন একটি দিন বেছে নেয়া খুবই গুরুত্বপূর্ণ, যে দিনের সাথে আমরা সবাই একাত্মবোধ করতে পারি, সবাই নির্দ্বিধায় উদযাপন করতে পারি।‘

অস্ট্রেলিয়া দিবস আরও নতুন প্রশ্নের জন্ম দেয়

অলাভজনক ও কমিউনিটি দ্বারা পরিচালিত আদিবাসী সংগঠন কেডব্লিউওয়াই-এর সিইও, গারিনজেরি ও কাউরনা পুরুষ ক্রেইগ রিগনি বলেন, অস্ট্রেলিয়া ডে ক্রমাগত অস্বস্তিকর প্রশ্ন উত্থাপন করে চলেছে।
অস্ট্রেলিয়া দিবসে আমাদের সবারই উচিৎ নিজেদেরকে জিজ্ঞেস করা, 'আমরা কেমন ভবিষ্যৎ দেখতে পাচ্ছি?'
ক্রেইগ রিগনি
‘আমরা কি একসাথে একটি সুন্দর ভবিষ্যতের ছবি দেখতে পাচ্ছি?’ মি: রিগনি বলেন।

'আমি মনে করি আমরা একে অপরের সাথে কেমন আচরণ করি তা নির্ধারণ করবে আমাদের ভাগ্য, ভবিষ্যত এবং আমরা নিজেদের সাথে কেমন আচরণ করব, সেটি।‘
Cr Angelica Panopoulos headshot.jpg
Cr Angelica Panopoulos Credit: Angelica Panopoulos
কিছু কিছু স্টেটে স্থানীয় কাউন্সিলগুলি নাগরিকত্ব প্রদান এবং ২৬ জানুয়ারী অস্ট্রেলিয়া ডে উদযাপন করা থেকে সরে দাঁড়িয়েছে, যেমন যেটি কুলিন জাতির উরানজেরি ওই-উরাং জনগোষ্ঠীর ভূমিতে অবস্থিত।

কাউন্সিলের মেয়র অ্যাঞ্জেলিকা পানোপোলোস বলেছেন, ২৬ জানুয়ারী তারিখটি ফার্স্ট নেশন্স জনগোষ্ঠীর জন্য শতাব্দীব্যাপী দূর্ভোগ ও সংগ্রামের সূচনার সাথে ঘনিষ্ঠভাবে সম্পর্কিত।

তিনি বলেন, '১৭৮৮ সালের এই দিনে ক্যাপ্টেন আর্থার ফিলিপ (এবং ফার্স্ট ফ্লিট) অস্ট্রেলিয়ায় আসেন এবং তার সাথে সাথেই দখলদারিত্ব ও গণহত্যা শুরু হয়।‘

তিনি বলেন, 'বাস্তবতা হলো, আমাদের এখনও প্রজন্মান্তর জুড়ে ট্রমা, প্রাতিষ্ঠানিক বর্ণবাদ এবং ফৌজদারি বিচার ব্যবস্থা নিয়ে অনেক সমস্যা রয়েছে, যেগুলো এসেছে ঔপনিবেশিক শাসনামল থেকে।‘

‘আর এ কারণেই এটা খুবই গুরুত্বপূর্ণ যে, যখন ফার্স্ট নেশন্স মানুষেরা আমাদের বলে যে ২৬ জানুয়ারি উদযাপনের দিন নয়, তখন আমাদের সে কথা শোনা উচিত।‘
Rigneynew.jpg
Mr Rigney says it's time Australia listened and learned from those uncomfortable with the current date of Australia Day.
মি: রিগনিও এ কথা সমর্থন করে বলেন, 'একটি সম্প্রদায় ও জাতি হিসেবে আমাদের শেখার, শেখানোর এবং শোনার যথেষ্ট সুযোগ রয়েছে।‘

‘এই সম্প্রদায়ের, (এবং) এই জাতির অংশ হিসাবে, আমি বিশ্বাস করি যে আমরা একে অপরকে এবং যে দেশকে আমরা অস্ট্রেলিয়া বলে ডাকি, এই দেশকে স্বীকৃতি দিতে ও শ্রদ্ধার সাথে ভালবাসতে শিখব।‘

তবে তিনি আরও বলেন যে, অস্ট্রেলিয়ানদের কোন দিনটি উদযাপন করা উচিত সেই প্রশ্নটি এখনও জনগণকে বিভ্রান্ত ও বিভক্ত করছে।

তিনি বলেন, ২৬ জানুয়ারী অস্ট্রেলিয়া দিবস পালনের রীতি খুব বেশিদিনের পুরনো নয়, এটি শুরু হয়েছে কেবল ১৯৯৪ সাল থেকে।

এসবিএস বাংলার অনুষ্ঠান শুনুন রেডিওতে, এসবিএস বাংলা রেডিও অ্যাপ-এ এবং আমাদের ওয়েবসাইটে, প্রতি সোম ও শনিবার সন্ধ্যা ৬ টা থেকে ৭ টা পর্যন্ত। রেডিও অনুষ্ঠান পরেও শুনতে পারবেন, ভিজিট করুন: 

আমাদেরকে অনুসরণ করুন 


Share
Published 25 January 2023 3:01pm
By Sarka Pechova, Kerri-Lee Harding
Presented by Tareq Nurul Hasan
Source: SBS


Share this with family and friends