ভারতের হাথরসের কাণ্ডের জেরে মহিলাদের নিরাপত্তার প্রশ্ন নতুন করে মাথাচাড়া দিয়েছে আন্তর্জাতিক মহলেও ।পরিস্থিতি সামাল দিতে ভারতের বিদেশ মন্ত্রক,রাষ্ট্রপুঞ্জের কো-অর্ডিনেটর বিষয়টি নিয়ে মুখ খোলায় তাঁকে সাবধান করে দিয়েছে। জানিয়ে দেওয়া হয়েছে, এ ব্যাপারে কোনওরকম অনধিকার চর্চা কাম্য নয়।
বিদেশমন্ত্রকের মুখপাত্র অনুরাগ শ্রীবাস্তব বলেছেন,মহিলাদের বিরুদ্ধে সাম্প্রতিক হিংসার ঘটনায় অযাচিত মন্তব্য করেছেন রাষ্ট্রপুঞ্জের কো-অর্ডিনেটর। ওঁর জানা উচিত যে, এই বিষয়গুলি অত্যন্ত গুরুত্ব দিয়ে দেখছে কেন্দ্র সরকার,এখনও তদন্ত চলছে। তাই বাইরের কোনও সংস্থা এ নিয়ে মন্তব্য না করলেই ভাল। সংবিধানে সকলের সমানাধিকারের কথা বলা রয়েছে। গণতান্ত্রিক দেশ হিসেবে সমাজের সব স্তরের মানুষকে ন্যায় বিচার দেওয়ার নজির রয়েছে ভারতের।
এদিকে উত্তরপ্রদেশের হাথরসে বড় ধরনের হিংসার ঘটনা এড়াতেই মাঝরাতে দাহ করে দেওয়া হয় গণধর্ষিতাকে। সুপ্রিম কোর্টের সামনে এমনই যুক্তি দিয়েছে উত্তরপ্রদেশ সরকার।দাবি করা হয়েছে , আইনশৃঙ্খলার গুরুতর সমস্যা হতে পারে বলে গোয়েন্দাদের ইনপুট ছিল তাদের কাছে। সুপ্রিম কোর্টে পেশ করা হলফনামায় রাত ২.৩০ মিনিটে নিগৃহীতার দেহ পুড়িয়ে দেওয়ার যুক্তি দিতে গিয়ে বাবরি মসজিদ ধ্বংসের রায়দানের প্রসঙ্গও তুলে ধরেছে উত্তরপ্রদেশ সরকার।
তারা বলেছে,পরদিনই বাবরি মামলার রায়দান থাকায় জেলাজুড়ে সে দিন হাই অ্যালার্ট জারি করা ছিল।উত্তরপ্রদেশ সরকারের যুক্তি,রাজ্যকে বদনাম করতেই এই ষড়যন্ত্র, সবটাই জাতি হিংসার ছক।হাথরস ধর্ষণের কোনও প্রমাণই পাওয়া যায়নি রিপোর্টে।সুপ্রিম কোর্টে এমনটাই জানিয়েছে উত্তরপ্রদেশ সরকার।হাসপাতালের প্রাথমিক মেডিক্যাল রিপোর্ট এসেছে,সেখানে উল্লেখ নেই ধর্ষণের।
এ প্রসঙ্গে যোগী আদিত্যনাথ সরকারের দাবি, ষড়যন্ত্রেও তদন্ত হোক।জনস্বার্থ মামলায় হলফনামা দিয়েছে উত্তরপ্রদেশ সরকার।সফদরজং হাসপাতালের সামনে ধরনার যুক্তিকেও হাতিয়ার করেছেন উত্তরপ্রদেশের আইনজীবী।বলা হয়েছে,আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির কথা মাথায় রেখেই রাতেই সরানো হয় দেহ।
অন্যদিকে হাথরাস নিয়ে প্রধানমন্ত্রী এখনো নীরব কেন,প্রশ্ন তুলেছেন রাহুল গান্ধী।তাঁর কথায়,যিনি রোজ বিভিন্ন বিষয়ে কথা বলেন তিনি হাথরাসের মত জ্বলন্ত ইস্যুতে মুখ বন্ধ করে রয়েছেন কেন ? তবে, কংগ্রেস নির্যাতিতার পরিবারের সঙ্গে রয়েছে। গোটা পরিবার উত্তরপ্রদেশ প্রশাসনের নজরে রয়েছে। কিন্তু প্রধানমন্ত্রী এই বিষয়ে একটি শব্দও উচ্চারণ করেননি।রাহুল গান্ধী বলেছেন,গোটা দেশকে কোণঠাসা করে দেওয়া হয়েছে।তাই তাঁকে ধাক্কা দেওয়া বা হেনস্থা করা বড়ো বিষয় নয়। দেশকে রক্ষা করাই হল তাঁর কাজ।
রাহুল গান্ধীর কথায়, কেন্দ্রীয় সরকারের বিরোধিতা করলেই,তাকে ধাক্কা দেওয়া হয়।সব ধাক্কা তিনি সহ্য করে নেবেন কিন্তু আসল ধাক্কা দেওয়া হয়েছে নির্যাতিতার পরিবারকে।যাদের বাড়িতে কন্যাসন্তান রয়েছে তারাই বিষয়টি বুঝতে পারবেন।যদি কোনও ব্যক্তির সন্তানকে খুন করা হয় এবং সেই ব্যক্তিকে নিজের বাড়িতে আটকে রাখা হয় তাহলে কেমন অনুভব হবে।সেই জন্য হাথরসে নির্যাতিতার পরিবারের সঙ্গে দেখা করতে গিয়েছিলেন রাহুল গান্ধী।বলেছেন,যে সকল মহিলারা যৌন হেনস্থার শিকার হয়েছেন,তাদের পাশেও তিনি রয়েছেন।
এর আগে উত্তরপ্রদেশের হাথরসে ১৯ বছরের এক দলিত তরুণীকে চার জন মিলে ধর্ষণ করে বলে অভিযোগ। তাঁর সঙ্গে ঘটে যাওয়া নৃশংসতায় স্তম্ভিত গোটা দেশ। অভিযোগ, উঠছে, পুলিশ এবং প্রশাসন মিলে ধর্ষণের তত্ত্ব মুছে ফেলতে চাইছে। সেই নিয়ে গত কয়েক দিন ধরে দেশের বিভিন্ন প্রান্তে বিক্ষোভে শামিল হয়েছেন সাধারণ মানুষ ও বিরোধী শিবিরের রাজনীতিকরা।
এমন পরিস্থিতিতে হাথরস-কাণ্ডের তীব্র নিন্দা করেছেন ভারতে রাষ্ট্রপুঞ্জের কো-অর্ডিনেটর রিনাতা লোক-দেসালিয়েন। এক বিবৃতিতে তিনি বলেছেন, অন্যান্য ক্ষেত্রে ভারত যতই উন্নতি করুক না কেন, সমাজের একটি অংশের মহিলারা আজও সাধারণ সুযোগ-সুবিধা থেকে বঞ্চিত।যে কারণে অনেক বেশি দুর্বল ওঁরা। যৌন নির্যাতন ও লিঙ্গ বৈষম্যমূলক হিংসার শিকার। ভারতে রাষ্ট্রপুঞ্জের কো-অর্ডিনেটর রিনাতা লোক-দেসালিয়েন-র এই মন্তব্যেই আপত্তি দিল্লির।