অস্ট্রেলিয়ান দি ফ্রেড হলোজ ফাউন্ডেশন প্রতিষ্ঠিত হয় ১৯৯২ সালে। অস্ট্রেলিয়ার অ্যাবোরিজিনদের জন্য বিখ্যাত সার্জন, ডাক্তার ফ্রেড হলোজ এটি শুরু করেন। তিনি একজন অপটেমোলজিস্ট। তাদের চোখের ছানির চিকিৎসা করেন তিনি।
দি ফ্রেড হলোজ ফাউন্ডেশন বর্তমানে ২৫ টিরও অধিক দেশে কাজ করছে বলেন এর বাংলাদেশ শাখার কান্ট্রি ম্যানেজার ড. জেরিন খায়ের। অস্ট্রেলিয়া, এশিয়া ও আফ্রিকা মহাদেশের দেশগুলোতেই তাদের কার্যক্রম।
২০০৮ সাল থেকে বাংলাদেশে কার্যক্রম শুরু করে ফ্রেড হলোজ। ড. জেরিন খায়ের প্রথম থেকেই এর সঙ্গে জড়িত ছিলেন। এসবিএস বাংলাকে তিনি বলেন, তিনি আগেও তাদের সঙ্গে ছিলেন, এখনও আছেন এবং ভবিষ্যতেও থাকবেন।বাংলাদেশে মূলত চট্টগ্রাম, খুলনা এবং বরিশাল বিভাগে কাজ করছে এই প্রতিষ্ঠানটি। ড. জেরিন খায়ের বলেন,
Image from surgery in Cox’s Bazar. Source: The Fred Hollows Foundation
“২০০৮ এ আমরা শুরু করেছিলাম দু’টি সদর হাসপাতালে, ব্রাহ্মণবাড়িয়া এবং সাতক্ষিরায়।” বর্তমানে বাংলাদেশের ২৯টি জেলায় তারা কাজ করছেন বলে জানান তিনি।
তারা সরকারি হাসপাতাল এবং প্রাইভেট হাসপাতালগুলোর মাধ্যমে কাজ করছেন।
ড. খায়ের বলেন, জেলা হাসপাতালে তারা আই ওটিতে সরঞ্জাম প্রদান করেন। এছাড়া, তারা ডাক্তার, অপটিমোলজিস্ট, নার্স এবং স্বাস্থ্যকর্মীদেরকেও প্রশিক্ষণ প্রদান করে থাকেন।তারা সরাসরি রোগীদেরকে চিকিৎসা সেবা দেন কিনা জিজ্ঞাসা করা হলে তিনি বলেন,
Basic eye screening for students with special needs in Munshi Jinnah Buddhi Protibondhi and Autism Biddaloy (School), Magura, Bangladesh. Source: Supplied
“আমরা ইমপ্লিমেন্ট করি না, আমরা শুধু সাপোর্ট করি। আমরা তাদের সাথে একটা টিম প্লেয়ার হিসেবে কাজ করি। আমরা কাজ করি গভার্নমেন্টের ডাক্তারদের মাধ্যমে এবং প্রাইভেট হাসপাতাল, যেমন, ইসলামীয়া হাসপাতালের সঙ্গে। ইসলামীয়া হাসপাতাল আমাদের আরেকটা পার্টনার।”
“এ রকম আমাদের আরও বাস্তবায়নকারী পার্টনার আছে। যেমন, দ্বীপ জেলা ভোলায় নিজাম হাসিনা ফাউন্ডেশন হাসপাতাল, গ্রামীন ব্যাংকের ওয়েলফেয়ার ট্রাস্টের আওতাধীন গ্রামীন জিসি চক্ষু হাসপাতাল, বিএনএসবি খুলনা, চাঁদপুর এবং চট্টগ্রামে লায়ন্স হাসপাতাল।”
বাংলাদেশ সরকারের সঙ্গে অংশীদারিত্বের ভিত্তিতে ঢাকা এবং চট্টগ্রামে বিজিএমই এবং বিকেইএম-এর সাথে অংশীদারিত্বের ভিত্তিতে তৈরি-পোশাক-শিল্পের কর্মীদের জন্য কার্যক্রম পরিচালনা করছে ফ্রেড হলোজ ফাউন্ডেশন। ১৫ টি গার্মেন্টস ফ্যাক্টরি, গার্মেন্টস কর্মীদের জন্য পরিচালিত দুটি হাসপাতাল এবং গার্মেন্টস কর্মীদের অবসর কাটানোর জন্য ছয়টি গার্মেন্টস ক্যাফে পরিচালনা করছে ফ্রেড হলোজ।
“আমরা দেশের ভিতরে ট্রেইনিং দেই এবং দেশের বাইরেও ট্রেইনিং দিয়েছি, ইনডিয়াতে দিয়েছি, নেপালে দিয়েছি।”
ড. জেরিন খায়ের বলেন,
“আমরা ক্যাটার্যাক্ট (চোখের ছানি) থেকে শুরু করেছিলাম।” সম্প্রতি তারা ডায়াবেটিস রেটিনোপ্যাথি নিয়ে কাজ করছেন, বলেন তিনি।
বাংলাদেশে প্রায় সাত মিলিয়ন লোক ডায়াবেটিসে আক্রান্ত। তাদের মধ্যে তিন মিলিয়নেরও বেশি লোকের ডায়াগনসিস করা হয় নি। ডায়াবেটিক রেটিনোপ্যাথীতে আক্রান্ত হয়ে অবশেষে অন্ধ হয়ে যাচ্ছেন বহু লোক।ফ্রেড হলোজ ফাউন্ডেশনের সিইও Ian Wishart একটি বিবৃতিতে বলেন,
Shamsun Nahar, 50, after cataract surgery. Source: The Fred Hollows Foundation
“দুঃখজনকভাবে, চক্ষু-সেবা প্রদানকারী সেবাকেন্দ্রগুলোর অপ্রতুলতার কারণে বাংলাদেশে বহু লোক নিয়মিত চক্ষু পরীক্ষা করার সুযোগ পান না। এর ফলে ডায়াবেটিক রেটিনোপ্যাথী আগে ভাগে সনাক্ত করা সম্ভব হয় না।”
বাংলাদেশে ১.৮৬ মিলিয়ন মানুষ ডায়াবেটিক রেটিনোপ্যাথিতে আক্রান্ত হওয়ার ঝুঁকিতে রয়েছেন বলে ফ্রেড হলোজের পক্ষ থেকে বলা হচ্ছে।
বাংলাদেশে ডায়াবেটিক রোগীদের চিকিৎসার জন্য প্রতিষ্ঠান বারডেম এবং জেলা পর্যায়ে প্রতিষ্ঠিত এর সহযোগী সংস্থা ডায়াবেটিক অ্যাসোসিয়েশন বাংলাদেশ (ড্যাব) এর সঙ্গে এই ফাউন্ডেশনের গভীর সম্পর্ক রয়েছে বলে জানান কান্ট্রি ম্যানেজার ড. জেরিন খায়ের।
তিনি বলেন, “ডায়াবেটিক রেটিনোপ্যাথী সনাক্ত করার জন্য বরিশাল বিভাগের জেলা পর্যায়ে ড্যাব-এর সঙ্গে পার্টনারশিপের মাধ্যমে আমরা নার্স, ডাক্তার এবং স্বাস্থ্য-কর্মীদেরকে প্রশিক্ষণ দেই।”
“পরবর্তী চিকিৎসার জন্য শের-এ-বাংলা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ডায়াবেটিক রেটিনোপ্যাথি জোন (ডিআর জোন) স্থাপন করা হয়েছে। সেখানে লেজার ট্রিটমেন্ট দেওয়া হয়, যাতে করে ডায়াবেটিকজনিত অন্ধত্বের হার কমানো যায়।”
ড. খায়ের বলেন, এ বছর জুন মাসের পরে বরিশালে ডায়াবেটিক অ্যাসোসিয়েশন বাংলাদেশ (ড্যাব)-এ লেজার ট্রিটমেন্টের ব্যবস্থা করবেন।
“চলতি বছরের (২০২০) জুন-পরবর্তী সময়ে ড্যাব-বরিশালে লেজার ট্রিটমেন্টের ব্যবস্থা করবো বলে আমরা আশা করছি।”
তিনি আরও জানান, গর্ভবতী মা ও শিশুদের চক্ষু সেবা প্রদানের লক্ষ্যে খুলনা এবং যশোর জেলায় বে-সরকারি সংস্থা পরিবার কল্যান সমিতি (পিকেএস)-এর মাধ্যমে পরিচালিত মাতৃ- ও শিশু- স্বাস্থ্য ক্লিনিকের কার্যক্রমের সাথে চক্ষু সেবা কার্যক্রম চালু করা হয়েছে।
বাংলাদেশে অবস্থানরত রোহিঙ্গা শরণার্থীদেরকেও চক্ষু-চিকিৎসা-সেবা দিচ্ছে দি ফ্রেড হলোজ ফাউন্ডেশন।
রোহিঙ্গা ক্যাম্পের মধ্যে সরকারের পরিচালিত প্রাথমিক স্বাস্থ্য সেবা কেন্দ্রে প্রাথমিক চক্ষু সেবা অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে। সেখানে সরকারি চিকিৎসকদের মাধ্যমে শরণার্থীদের চোখ পরীক্ষা করা হয়, তবে অবকাঠামোর সমস্যার কারণে চোখের অপারেশন করা সম্ভব হয় না। সেখানে চিকিৎসা-সেবা গ্রহণকারী রোহিঙ্গা শরণার্থীদের মধ্যে প্রতি ছয় জনে একজনের চোখে ছানি রয়েছে।তিনি বলেন, কক্স বাজার এলাকায় মাত্র একটি এনজিও, বাইতুশ শরীফ চক্ষু হাসপাতাল রয়েছে, যেটি চক্ষু স্বাস্থ্য সেবা নিয়ে কাজ করছে। তারা সেখানকার প্রয়োজনের তুলনায় চাহিদা পূরণ করতে পারছে না।
Dr Zareen Khair, the Country Manager of the Fred Hollows Foundation in Bangladesh. Source: The Fred Hollows Foundation
ফাউন্ডেশনের পক্ষ থেকে বলা হচ্ছে, ২০১৮ সালে মোট ১১ হাজার ব্যক্তির চক্ষু পরীক্ষা করা হয়েছে এবং ১৫০০ ব্যক্তির চোখের ছানি অপারেশন করা হয়েছে।
২০১৯ সালে মোট ২১ হাজার ব্যক্তির চক্ষু পরীক্ষা করা হয়েছে আর এদের মধ্যে ১৫০০ ব্যক্তির ছানি অপারেশন করা হয়েছে।
রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠী এবং স্থানীয় বাসিন্দাদের চাহিদা পূরণের লক্ষ্যে বায়তুশ শরীফ চক্ষ হাসপাতালের সক্ষমতা বৃদ্ধির জন্য দি ফ্রেড হলোজ ফাউন্ডেশনের আর্থিক সহায়তায় ২০১৯ সালের শেষের দিকে একটি অপারেশন থিয়েটার স্থাপন করা হয়েছে। ছানি অপারেশনের জন্য সেটি অত্যাধুনিক উপকরণ ও সরঞ্জামে সজ্জিত করা হয়েছে বলে জানান ড. জেরিন খায়ের।