বৃহস্পতিবার নিউ সাউথ ওয়েলসের দক্ষিণ-পূর্ব অঞ্চলের অগ্নি-বিধ্বস্ত শহর কোবার্গো (Cobargo) সফরে যান প্রধানমন্ত্রী স্কট মরিসন। সেখানে তিনি বুশফায়ারে ক্ষতিগ্রস্ত ব্যক্তিদের রোষাণলে পড়েন।
স্থানীয় লোকজনের সঙ্গে ছবি তোলার পর তাদের কেউ কেউ বুশফায়ারে সাড়া প্রদান নিয়ে তাদের হতাশা ব্যক্ত করেন।
সেখানকার একজন অধিবাসী স্কট মরিসনকে বোকা (ইডিয়ট) বলেন। আরেকজন চিৎকার করে বলেন, তিনি এই কমিউনিটি থেকে কোনো ভোট পাবেন না।প্রধানমন্ত্রী করমর্দনের জন্য হাত বাড়িয়ে দিলে এক নারী তাৎক্ষণিকভাবে সাড়া দেন নি। স্কট মরিসন তখন নিচু হয়ে তার হাত ধরেন এবং করমর্দন করেন।
The prime minister reaches down to grab a woman's hand during a visit to bushfire-ravaged Cobargo. Source: Nine Network
সেই নারী বলেন,
“আমি আপনার সঙ্গে করমর্দন করছি শুধুমাত্র এজন্য যে, আপনি যেন আর-এফ-এস-কে আরও অর্থ প্রদান করেন। এখানকার বহু লোক তাদের ঘর-বাড়ি হারিয়েছে। আমাদের আরও সাহায্যের দরকার।”
এরপর মিস্টার মরিসন তার পিঠ চাপড়ে দেন এবং হেঁটে চলে যান।
প্রধানমন্ত্রীকে যখন অপেক্ষমান গাড়িতে নিয়ে যাওয়া হচ্ছিল এবং যখন তিনি চলে যাচ্ছিলেন তখন আরেকজন অধিবাসী চিৎকার করে বলেন, “আপনি এখানে সাদরে গৃহীত নন”।মঙ্গলবারের ভয়ানক বুশফায়ারে নিউ সাউথ ওয়েলসের সাউথ কোস্টে চরম ক্ষতিগ্রস্ত এলাকাগুলোর মধ্যে এই ছোট শহর কোবার্গোও রয়েছে। এতে হাজার হাজার অবকাশ-যাপনকারী আটকে পড়েন।
Prime Minister Scott Morrison is heckled as he tours a fire-ravaged community. Source: Supplied
সোমবার রাতে এই এলাকায় একজন বাবা ও তার ছেলে মারা যান। আগুন থেকে তাদের সহায়-সম্পদ রক্ষা করার জন্য তারা সেখানে রয়ে গিয়েছিলেন।বৃহস্পতিবার আরেকটি বিব্রতকর ঘটনায় দেখা যায়, প্রধানমন্ত্রী স্কট মরিসনকে অবজ্ঞা ও উপেক্ষা করেন একজন ফায়ারফাইটার। তিনি তার নিজের ঘর হারিয়েছেন।
A firefighter declines to shake the prime minister's hand. Source: ABC Australia
হেঁটে চলে যাওয়ার আগে তিনি মিস্টার মরিসনকে বলেন,
“আমি সত্যিকারভাবেই আপনার সঙ্গে করমর্দন করতে চাই না।”
এরপর, ইনসিডেন্ট কন্ট্রোলারকে প্রধানমন্ত্রী বলেন, “ঐ লোককে বলুন, আমি আসলেই দুঃখিত। আমি নিশ্চিত, সে খুবই ক্লান্ত।”
ইনসিডেন্ট কন্ট্রোলার জবাবে বলেন, “না, না, সে একটি বাড়ি হারিয়েছে।”
লিবারাল মন্ত্রী বলেন মরিসন ‘খুব সম্ভবত’ এর উপযুক্ত
নিউ ইয়ার্স ইভ-এ বেইটম্যানস বে-এর দক্ষিণে অবস্থিত মালুয়া বে-তে নিজের বাড়ি রক্ষার জন্য সংগ্রাম করেছেন নিউ সাউথ ওয়েলসের লিবারাল মন্ত্রী অ্যান্ড্রু কনস্ট্যান্স। শুক্রবার সকালে অত্যন্ত খোলামেলা মন্তব্যের মাধ্যমে তিনি প্রধানমন্ত্রীর উপর চাপ আরও বৃদ্ধি করেন।
সেভেন’স সানরাইজকে তিনি বলেন,
“স্থানীয়রা খুব সম্ভবত যেভাবে তাকে স্বাগত জানিয়েছে তিনি খুব সম্ভবত তার উপযুক্ত।”
“আমি প্রধানমন্ত্রীকে আজ এ কথা বলতে চাই: ‘জাতি চায় আপনি চেক বুকগুলো উন্মুক্ত করুন, জনগণকে তাদের জীবন পুনর্গঠনে সহায়তা করুন’। ”কোবার্গো শহর যে নির্বাচনী আসনের অন্তর্ভুক্ত সেই আসনের প্রতিনিধি হলেন মিস্টার কনস্ট্যান্স। তিনি বলেন, মিস্টার মরিসনের সফর সম্পর্কে তিনি জানতেন না আর টেলিফোনে তার সঙ্গে কথাও হয় নি।
یکی از تعمیرهای تخریب شده در کوبارگو Source: AAP
এই জনরোষের প্রতিক্রিয়া জানিয়ে এবিসি নিউজকে মিস্টার মরিসন বলেন, তাদের প্রতিক্রিয়া দেখে তিনি বিস্মিত হন নি।
তিনি বলেন,
“এ সময়ে লোকজন খুবই উত্তেজিত। তাই আজ আমি এখানে এসেছি এটা নিজের চোখে দেখতে এবং তাদের জন্য আমি কী স্বস্তি দিতে পারি তা বলতে।”
“আমরা যে রকম অভ্যর্থনা পেয়েছি তার মূল্যায়ন করি আমি এবং জেনি। তবে একই সময়ে লোকজনের তীব্র আবেগও আমি বুঝি। তারা সবকিছু হারিয়েছে এবং সামনে আরও বিপদজনক দিন রয়েছে।”
“আমার কাজ হচ্ছে এই কঠিন দিনগুলোতে সবকিছু সুষমভাবে চালানো এবং স্টেটগুলোকে সহায়তা করা নিশ্চিত করা যেন তারা তাদের সাহায্য কার্যক্রম চালিয়ে যেতে পারে।”
এর আগে বৃহস্পতিবার অস্ট্রেলিয়ার টেস্ট ক্রিকেট দলের সঙ্গে ছবি তুলে সমালোচিত হন প্রধানমন্ত্রী স্কট মরিসন।সিডনি টেস্টকে সামনে রেখে বুধবার মিস্টার মরিসন তার কিরিবিলি হাউজে আমন্ত্রণ জানান অস্ট্রেলিয়া এবং নিউ জিল্যান্ড ন্যাশনাল ক্রিকেট টিমকে। তিনি বলেন,
Cobargo resident Roland Hough surveys the damage on New Year's Day. Source: AAP
“এই টেস্ট ও পুরো সিজন খেলা হবে ভয়ানক ঘটনাবলীর মধ্যে, অস্ট্রেলিয়াতে এবং নিউ জিল্যান্ডে হোয়াইট আইল্যান্ড ট্রাজেডি সত্ত্বেও।”
“আমাদের ফায়ারফাইটাররা এবং তারা সবাই, যারা অন্তরালে থেকে তাদেরকে সহায়তা করছেন, তারা সামনে থেকে স্বেচ্ছাসেবী হিসেবে কাজ করুক কিংবা অন্তরালে থেকে কাজ করুক, এটা এমন একটা কিছু যা অবশ্যই ঘটবে টেস্ট ম্যাচের আড়ালে।”
প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী ম্যালকম টার্নবুল, টনি অ্যাবোট এবং জুলিয়া গিলার্ড, এরা সবাই যখন দায়িত্বে ছিলেন তখন বার্ষিক অনুষ্ঠানে হোস্ট হিসেবে অংশ নিয়েছেন।
বুশফায়ার সঙ্কট চলাকালে স্কট মরিসন গত ডিসেম্বরে অবকাশ যাপনের জন্য হাওয়াই গিয়ে সমালোচিত হন। তখন দু’জন ফায়ারফাইটারের মৃত্যু হলে তিনি সফর সংক্ষিপ্ত করে অস্ট্রেলিয়ায় ফিরে আসেন। এর পর থেকেই তিনি অগ্নি-কবলিত বিভিন্ন স্থান সফর করছেন।
এবং ভিক্টোরিয়াতে ৩০টি বুশফায়ার ওয়ার্নিং এখনো জারি রয়েছে। ৩.৬ মিলিয়ন হেক্টরেরও বেশি এলাকা, যা কিনা সিডনি মেট্রো এলাকার তিন গুণ, পুড়ে গেছে এ বছরের অগ্নিকাণ্ডে।