হাইলাইটস
- নরেন্দ্র মোদী- শেখ হাসিনার ভার্চুয়াল বৈঠকে দু’ দেশের বিভিন্ন বিষয় নিয়ে আলোচনা হয়েছে।
- দীর্ঘ ৫৫ বছর পর ফের ভারতের হলদিবাড়ি ও বাংলাদেশের নীলফামারীর চিলাহাটির মধ্যে রেল পরিষেবা চালু হয়েছে
- ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী বলেন করোনা মহামারীর সময বাংলাদেশের সঙ্গে ভারতের সম্পর্ক আরও গভীর হযেছে।
- বাংলাদেশ-ভারত সম্পর্ক একটি যুগান্তকারী মুহূর্ত অতিক্রম করছে উল্লেখ করে শেখ হাসিনা বলেন, একটি স্বাধীন জাতি হিসেবে বাংলাদেশ ৫০ বছর পূর্তি উদযাপন করতে যাচ্ছে।
বাংলাদেশের সঙ্গে সম্পর্ক মজবুত করতে ভারত সবসময উদ্যোগী বলেও জানিযেছেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী । বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের সম্মানে একটি ডাকটিকিটের প্রকাশ করা হযেছে। এদিকে বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে দ্বিপাক্ষিক ভার্চুযাল বৈঠকে ভারতের প্রধানমন্ত্রীর নরেন্দ্র মোদীর ব্যাকড্রপে কোচবিহারের রাজবাড়ির ছবি দেখা গিযেছে। বাজতে শোনা গিযেছে রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের গান। এর আগে উজবেকিস্তানের রাষ্ট্রপতির সঙ্গে বৈঠকে প্রধানমন্ত্রীর ব্যাকড্রপে ছিল দক্ষিণেশ্বরের মন্দির। আর এবার শেখ হাসিনার সঙ্গে বৈঠকে কোচবিহার রাজবাড়িকে বেছে নিযেছেন প্রধানমন্ত্রী মোদী।
নরেন্দ্র মোদী- শেখ হাসিনার ভার্চুয়াল বৈঠকে দু’ দেশের বিভিন্ন বিষয় নিয়ে আলোচনা হয়েছে। শেখ হাসিনা মার্চে নরেন্দ্র মোদীকে বাংলাদেশে আসার জন্য নিমন্ত্রণ জানিয়েছেন। স্বাধীনতার ৫০ বছর উপলক্ষে বর্ষব্যপী বিভিন্ন অনুষ্ঠানের পরিকল্পনা করেছে বাংলাদেশের সরকার। সেই উপলক্ষে ভারতের প্রধানমন্ত্রীকে আমন্ত্রণ জানিয়েছেন বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীও বাংলাদেশের বিজয় দিবস উপলক্ষে হাসিনাকে শুভেচ্ছা জানিয়েছেন।
নরেন্দ্র মোদী বাংলাদেশের সঙ্গে ভারতের সম্পর্ক দৃঢ় করার অঙ্গীকার করেছেন। তিনি জানিয়েছেন, করোনা মহামারীর সময় বাংলাদেশের সঙ্গে ভারতের সম্পর্ক আরও গভীর হয়েছে। দুই প্রতিবেশী দেশ মহামারীর বিরুদ্ধে লড়াই করেছে হাতে হাত মিলিয়ে। তিনি যে প্রথম থেকেই বাংলাদেশের সঙ্গে সম্পর্ক অটুট করার জন্য উদ্যোগী, সে কথাও জানাতেও ভোলেননি প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী।
অন্যদিকে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বাংলাদেশ ও ভারতের অর্থনীতিকে আরও সংহত করার প্রয়োজনীয়তার উপর গুরুত্বারোপ করে বলেছেন, প্রাপ্ত সুযোগকে কাজে লাগিয়ে উভয় দেশ বৈশ্বিক এবং আঞ্চলিক ভ্যালু-চেইন আরও সমৃদ্ধ করতে পারে। বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী বলেছেন, আমি বিশ্বাস করি, উভয় দেশ বিদ্যমান সহযোগিতামূলক ঐকমত্যের সুযোগ নিয়ে আমাদের অর্থনীতিকে আরও সংহত করে বৈশ্বিক এবং আঞ্চলিক ভ্যালু-চেইন আরও সমৃদ্ধ করতে পারে।
বৃহস্পতিবার বাংলাদেশ-ভারত ভার্চুয়াল সামিটের উদ্বোধনী ভাষণে বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন,প্রতিবেশী দেশ দুটির মধ্যে প্রচলিত যোগাযোগ ব্যবস্থা অনুঘটক। এর একটি বড় উদাহরণ হলো চিলাহাটি-হলদিবাড়ি রেল যোগাযোগ পুনরায় চালু করা, যা উদ্বোধন হলো।প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বৈঠকে গণভবন থেকে বাংলাদেশ প্রতিনিধি দলের নেতৃত্ব দেন। অন্যদিকে, ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি নয়াদিল্লী থেকে ভারতীয় প্রতিনিধি দলের নেতৃত্ব প্রদান করেন।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন ,বাংলাদেশ ও ভারতের অর্থনীতির ক্রমবর্ধমান পারস্পরিক নির্ভরতা আমরা আনন্দের সঙ্গে স্বীকৃতি দেন। তিনি বলেছেন, বেশ কিছু সংখ্যক ভারতীয় নাগরিক বাংলাদেশের উৎপাদন ও সেবাখাতে নিযুক্ত রয়েছেন এবং তারা নিজ দেশ ভারতে রেমিট্যান্স পাঠিয়ে থাকেন। অন্যদিকে, বাংলাদেশ থেকে সর্বোচ্চ সংখ্যক পর্যটক এবং চিকিৎসা সেবা গ্রহণকারীকে ভারত গ্রহণ করে।
বাংলাদেশ-ভারত সম্পর্ক একটি যুগান্তকারী মুহূর্ত অতিক্রম করছে উল্লেখ করে শেখ হাসিনা বলেন, একটি স্বাধীন জাতি হিসেবে বাংলাদেশ ৫০ বছর পূর্তি উদযাপন করতে যাচ্ছে। বাংলাদেশ এবং ভারত কূটনৈতিক সম্পর্ক প্রতিষ্ঠারও ৫০তম বছরে পা রেখেছে।তিনি এ সম্পর্কে আরও বলেন, আমরা জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জন্মশতবার্ষিকী উৎযাপন করছি। মাত্র কয়েক মাস আগে, আপনাদের জাতির পিতা মহাত্মা গান্ধীর সার্ধশততম জন্মবার্ষিকী আমরা উদযাপন শেষ করেছি।
বাংলাদেশে আমরা বাপুজির প্রতি শ্রদ্ধার নিদর্শন হিসেবে একটি বিশেষ ডাকটিকিট অবমুক্ত করেছি। আমরা আজ বঙ্গবন্ধুর সম্মানে ভারতের ডাক বিভাগের একটি স্ট্যাম্পের উদ্বোধন করবো, বলেন তিনি।এই গুরুত্বপূর্ণ অনুষ্ঠানগুলো যৌথভাবে উদযাপনের জন্য স্বতঃস্ফূর্তভাবে একত্রিত হওয়ায় তিনি ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির প্রতি আন্তরিক কৃতজ্ঞতা জানিয়ে একাত্তরের মুক্তিযুদ্ধে ভারত সরকার এবং জনগণের সহযোগিতার কথা কৃতজ্ঞচিত্তে স্মরণ করেন।
এর মধ্যে ,দীর্ঘ ৫৫ বছর পর ফের ভারতের হলদিবাড়ি ও বাংলাদেশের নীলফামারীর চিলাহাটির মধ্যে রেল পরিষেবা চালু হয়েছে।ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী ও বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ভার্চুয়াল বৈঠকের পর এমনই ঘোষণা হয়েছে। ১৯৬৫ সালে ভারত-পাকিস্তান যুদ্ধের সময় ওই রেলপথ বন্ধ করা হয়েছিল। আজ থেকেই এই পথে রেল চলাচল শুরু হয়ে গেল।
সিদ্ধান্ত হয়েছে, আপাতত এই পথে মালবাহী ট্রেন চলাচল করবে। কিন্তু ২০২১ সালের মার্চ থেকে এই পথে ঢাকা থেকে শিলিগুড়ি পর্যন্ত যাত্রীবাহী ট্রেন চলাচল শুরু হতে পারে। অবিভক্ত ভারতে রেলপথ ছিল চিলাহাটি-হলদিবাড়ী যোগাযোগের অন্যতম মাধ্যম। কিন্তু ১৯৬৫ সালে সেই রেলপথ বন্ধ হয়ে যায়। ফলে বাংলাদেশের নীলফামারি ও সংলগ্ন জেলার ব্যবসা-বাণিজ্য মুখ থুবড়ে পড়ে।
বহুদিন ধরেই এই রেলপথ চালু করার দাবি ছিল। তবে দুদেশের সরকার বিভিন্ন রাজনৈতিক জটিলতা কাটিয়ে এই রেলপথ চালু করতে পারছিল না। শেষমেশ ৫৫ বছর পর ফের এই রেলপথ চালু হল। ইতিমধ্যে বাংলাদেশ তাদের অংশে ৬.৭২ কিলোমিটার রেল লাইন বসানোর কাজ শেষ করেছে। আজ ৩২টি খালি ওয়াগন নিয়ে বাংলাদেশের একটি ইঞ্জিন আসছে হলদিবাড়ি। তার পর সেই ওয়াগনগুলি হলদিবাড়িতে রেখে ইঞ্জিন ফিরে যাবে বাংলাদেশের চিলাহাটিতে। এই উপলক্ষে ইতিমধ্যে চিলাহাটি রেলস্টেশন সেজে উঠেছে।