ভারতের রাজস্থান,মহারাষ্ট্রের পরে এবার পঙ্গপালের দল বিহারে ঢুকে পড়ায় পশ্চিবঙ্গেও হামলার আশঙ্কা করা হচ্ছে । জলবায়ুগত কারণে শস্য শ্যামল বাংলায় পঙ্গপাল প্রবেশ করে বহু ফসল ক্ষতি করতে পারে বলে জানিয়েছেন পতঙ্গবিশেষজ্ঞরা। ইতিমধ্যে, বিহারে ঢুকে পঙ্গপালের দল হামলা চালিয়েছে বহু কৃষিক্ষেতে। ফলে, প্রায় কয়েক হাজার কোটি টাকার ফসল নষ্ট হওয়ার আশঙ্কা করা হচ্ছে।
ফসল রক্ষার জন্য রাসায়নিক স্প্রে করা শুরু করে দিয়েছে রাজ্যের কৃষি দফতর। অন্যদিকে, মহারাষ্ট্রের পূর্বভাগে প্রায় ৫ টি গ্রামে প্রবেশ করে বহু কৃষিক্ষেত নষ্ট করেছে কয়েক লাখ পঙ্গপালের দল। মহারাষ্ট্রের কৃষি দফতরের জয়েন্ট ডিরেক্টর রবীন্দ্র ভোঁসলে জানিয়েছেন, অমরাবতী জেলা দিয়ে রাজ্যের পূর্বভাগে প্রবেশ করেছে হলুদ পঙ্গপাল। ওয়াধা জেলায় ফসল নষ্ট করার পরেই নাগপুরের কোটাল তেহসিলের কাছে পৌঁছে গিয়েছে পঙ্গপালের দল।
এদিকে, বিভিন্ন রাজ্যে পঙ্গপাল প্রবেশ করার পরেই সতর্কতা জারি করা হয়েছে উত্তর ভারতজুড়ে। উত্তরপ্রদেশের পঙ্গপালের মোকাবিলায় মথুরায় টাস্ক ফোর্স গঠন করা হয়েছে।
সাধারণত জুলাই থেকে অক্টোবরের মধ্যে ভারতে পঙ্গপাল দেখা যায়।কিন্তু এ বছর কিছুটা আগেই হানা দিয়েছে তারা।পতঙ্গবিদরা বলছেন,পঙ্গপালের এক একটি দল আকারে প্যারিস শহরের মতো বড় হতে পারে।তার থেকেও বড় আশঙ্কা,ওই পঙ্গপালের একটি দলের অর্ধেক ফ্রান্সবাসীর মতো খাবার খাওয়ার ক্ষমতা রয়েছে।
এখনো পর্যন্ত পূর্ব মহারাষ্ট্রের চার ও পাঁচটি গ্রামে হানা দিয়েছে পঙ্গপাল।ফসল বাঁচাতে ইতিমধ্যেই জমিতে কীটনাশক ব্যবহার করতে শুরু করেছেন কৃষকরা।উত্তরপ্রদেশের মথুরাতেও হানা দিয়েছে পঙ্গপাল।পরিস্থিতির দিকে নজর রেখে টাস্ক ফোর্স তৈরি করেছে জেলা প্রশাসন।
পাকিস্তান পেরিয়ে এপ্রিলের প্রথম দিকে রাজস্থানে ঢুকেছিল পঙ্গপালের দল।সে সময় জয়পুর শহরেও দেখা গিয়েছিল পঙ্গপাল। এর পর তা ছড়িয়ে পড়েছে পঞ্জাব, হরিয়ানা, মধ্যপ্রদেশ-সহ বিভিন্ন রাজ্যে।
পঙ্গপালের হানার অভিজ্ঞতা পশ্চিমবঙ্গে আছে।তবে আজ থেকে ২৬ বছর আগে পর্যন্ত,ক্ষেতের পর ক্ষেত এভাবেই উজার করে দিত পঙ্গপাল।এবার,আফ্রিকা, ইরান, পাকিস্তান হয়ে ভারতে প্রবেশ করেছে ঘাস ফড়িংয়ের দল। সম্প্রতি ভারতের বুক দিয়ে বয়ে গিয়েছে ঘূর্ণিঝড় আমপান। তছনছ করে দিয়েছে পশ্চিমবঙ্গ-ওড়িশার উপকূল।
অন্যদিকে প্রতিদিন করোনার থাবা অব্যাহত। আক্রান্ত লক্ষাধিক মানুষ। এই মুহূর্তে কার্যত ঘরবন্দি জনজীবন। তার উপর পঙ্গপালের হানা,বিশেষজ্ঞরা বলছেন, করোনার থেকেও নাকি ভয়ঙ্কর পঙ্গপাল হানা,দেশের মেরুদণ্ড ভেঙে দিতে পারে পঙ্গপাল।বিভিন্ন রাজ্যে পঙ্গপাল যে হানা দিয়েছে তা নিয়ে গত সপ্তাহেই সতর্কবার্তা জারি করেছিল কেন্দ্রীয় পরিবেশ মন্ত্রক।
ভারতের রাজধানী দিল্লিতেও ঝাঁপিয়ে পড়তে পারে বলে আশঙ্কা রয়েছে। ২০১৯-এও গুজরাতে এমনি পঙ্গপালের ঝাঁক হামলা চালিয়েছিল।তার জেরে ২৫ হাজার হেক্টর জমির ফসল নষ্ট হয়েছিল ওই রাজ্যে। কিন্তু তার থেকেও এ বারের হানা আরও বেশি উদ্বেগজনক বলেই মনে করা হচ্ছে।
পঙ্গপাল গড়ে ৯০ দিন জীবিত থাকে। মরু পঙ্গপালের ঝাঁক দিনে ১৫০ কিমি পর্যন্ত যেতে পারে। বিশেষজ্ঞদের ধারণা, পূর্ব আফ্রিকা, দক্ষিণ-পশ্চিম এশিয়া এবং লোহিত সাগর সংলগ্ন এলাকায় অনুকূল আবহাওয়ার জেরেই পঙ্গপালের বিপুল প্রজনন ঘটেছে। আর সেই ধাক্কাই এখন সামলাতে হচ্ছে ভারতের অন্তত পাঁচ রাজ্যকে।
ঘাস ফড়িংরা সাধারণত লাজুক প্রকৃতির। ইংরেজিতে লোকাস্ট বলা হয়। দৈর্ঘ ইঞ্চি খানেক হলেও একদিনে ২ গ্রাম খাবার সাবাড় করতে পারে একটি পতঙ্গ।একটা ঝাঁকে কয়েক লক্ষ পতঙ্গ থাকতে পারে। কখনও ৪ কোটি থেকে ৮ কোটি পতঙ্গও থাকে।বাতাসের উষ্ণতার গতি অনুযায়ী ধাবিত হয় এক জায়গা থেকে অন্য জায়গায়।
এক জায়গার খাবার ফুরলেই অন্য জায়গায় হানা দেয়। সম্পূর্ণ খাবার শেষ না হওয়া পর্যন্ত অনত্র তারা যায় না। দিনে ১০০ থেকে ২০০ কিলোমিটার জায়গা জুড়ে তাদের গতিবিধি থাকে।পূর্ব আফ্রিকা থেকে যাত্রা পথ শুরু হয় পঙ্গপালেদের।ইথিওপিয়া, সোমালিয়া, কেনিয়া-সহ আফ্রিকার বেশি কিছু দেশে ভয়াবহ পরিস্থিতি তৈরি হয়।তারপর সৌদি আরব হয়ে পাকিস্তান, ব্যাপক ফসলের ক্ষতি হয় পাকিস্তানে।বাধ্য হয়ে জরুরি অবস্থা জারি করতে হয় পাকিস্তানে।