বিরোধী ইন্ডিয়া জোটের তরফে একমাত্র সমাজবাদী পার্টি নেতা অখিলেশ যাদব উপস্থিত একুশের সমাবেশে। যখন দেশজুড়ে আলোচনায় ইন্ডিয়া জোটের মধ্যে মমতা-অখিলেশ সমীকরণ, আলাদা পাওয়ার সেন্টার। আর তখনই তৃণমূল নেত্রী এবং সমাজবাদী পার্টি সুপ্রিমো দু’জনেই বলছেন, ভয় দেখিয়ে সরকার গঠন করা হয়েছে কেন্দ্রে। কিন্তু, এ সরকার বেশিদিন টিকতে পারে না।
দু’জনেই বলেছেন নির্বাচন কমিশনের একতরফা আচরণ, ইডি-সিবিআইয়ে ধমকানি, চমকানিতে মানুষ যে ভয় পায় না তার প্রমাণ, উত্তর প্রদেশের অখিলেশের দল এবং পশ্চিমবঙ্গে তৃণমূল কংগ্রেসের এবারের লোকসভার ফল। একইসঙ্গে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের ঘোষণা, এজেন্সিকে দিয়ে তৃণমূল কংগ্রেসের কিছু করা যাবে না। কর্মীদের উদ্দেশে নেত্রীর একুশের বার্তা, ভয় পাওয়ার দরকার নেই, তৃণমূল কংগ্রেস কোনোদিন বিজেপির সঙ্গে হাত মেলাবে না।
বস্তুত, দিল্লিতে এখন অতিথি সরকার চলছে, ধর্মতলায় একুশের মঞ্চ থেকে এভাবেই বিজেপিকে নিশানা করেছেন সমাজবাদী পার্টির সুপ্রিমো অখিলেশ যাদব। তৃণমূল কংগ্রেস সুপ্রিমো মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সঙ্গে অখিলেশ যাদবও ধর্মতলার সভাস্থলে পৌঁছান। তার আগে কলকাতা বিমানবন্দরে থেকে সোজা কালীঘাটের বাড়িতে গিয়ে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সঙ্গে দেখা করেছেন সমাজবাদী পার্টির প্রধান। এরপর একুশের মঞ্চ থেকে অখিলেশ যাদব বলেছেন, দিল্লিতে যারা ক্ষমতায় রয়েছেন, তাঁরা তা ধরে রাখার জন্য শহিদ ধার নেন। যা খুশি তাই করতে পারেন। যখন জনতা জেগে ওঠে, তখন এই সব লোকের মিথ্যা প্রচার ধাক্কা খায়। হতাশ হয়। অখিলেশ যাদবের কথায়, তাঁরা নেতিবাচক রাজনীতি করেন না। ইতিবাচক রাজনীতি করেন। সেই রাজনীতিতেই তাঁরা বিজেপি সরকারকে ফেলবেন। মানুষের জীবনে বদল আসবে শীঘ্রই।
এদিকে, বাংলাদেশ নিয়ে কোনোরকম প্ররোচনা না ছড়াতে দলের কর্মী-নেতাদের নির্দেশ দিয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। প্রতিবেশি রাষ্ট্রে সাম্প্রতিক পরিস্থিতি নিয়ে তার অনেককিছু জানা আছে, বলার আছে। কিন্তু কূটনৈতিক শিষ্টাচার মেনে তা নিয়ে বেশিকথা বলতে চান না, একুশের মঞ্চে দাঁড়িয়ে জানিয়ে দিয়েছেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। বলেছেন, চিকিৎসার জন্য বা অন্য কাজে এরাজ্যে এসে বাংলাদেশের যেসব মানুষ আটকে পড়েছেন তাদের যাতে কোনও অসুবিধে না হয় তা নিশ্চিত করবে তাঁর সরকার। এখানে যাঁরা পড়তে এসেছেন সেসব ছাত্রছাত্রীদেরও পাশে রয়েছে তাঁর সরকার এবং দল। জানিয়েছেন বাংলাদেশের সব খবরই তিনি রাখছেন। ছাত্রছাত্রীদের তাজা প্রাণ চলে যাচ্ছে। এই অবস্থায় অসমে একসময়ে যে ঘটনা ঘটেছিল তাও রেফারেন্সে এনেছেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। বলেছেন এত বড় সীমান্ত, এত প্রত্যাশা সব তাঁর মাথায় রয়েছে। কিন্তু, মানুষে মানুষে যাতে ভাগ না হয় তা মাথায় রাখতে হবে।
অন্যদিকে, আরও বেশি করে মহিলাদের সম্মান করার জন্য দলের কর্মীদের নির্দেশ দিয়েছেন নেত্রী মমতা বন্দ্যেপাাধ্যায়। সাম্প্রতিককালে রাজ্যের একাধিক স্থানে মহিলাদের ওপর সালিশি সভা-সহ অত্যাচারের ঘটনা যখন ক্রমেই সংবাদমাধ্যমে প্রকাশ্যে আসছে, তখনই কলকাতায় বাৎসরিক ২১ জুলাইয়ে সভা থেকে কঠোর বার্তা দিয়েছেন তৃণমূল কংগ্রেস নেত্রী। জানিয়ে দিয়েছেন, কোনোরকম অন্যায় করলে তা তিনি যেই হোন না কেন, তাঁকে তাঁর সরকার বা তৃণমূল কেউই রেয়াত করবে না। এইসব ক্ষেত্রে যেখানেই অভিযোগ এসেছে, গ্রেফতার করা হয়েছে জানিয়ে দিয়ে মুখ্যমন্ত্রী বলেছেন, কারও বিরুদ্ধে কোনোরকম অভিযোগ এলে দল বা রঙ বা নেতা না দেখে গ্রেফতার করার জন্য, কঠোরতম ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। এরপরেই কেন একথা বলছেন, বোঝাতে গিয়ে মুখ্যমন্ত্রী বলেছেন লোভী নয়, মানুষের বন্ধু হতে হবে। আর সে বন্ধুত্বটা যে সামাজিক বন্ধুত্ব তাও ২১ শে জুলাইয়ে মঞ্চ থেকে স্পষ্ট করে দিয়েছেন তৃণমূল কংগ্রেস নেত্রী।
এই অবস্থায় এক দশকেরও বেশি সময় ধরে ক্ষমতায়, প্রায় সর্বত্রই মার্জিন বাড়ছে, লাফিয়ে লাফিয়ে পাল্লা দিয়ে বাড়ছে মানুষের প্রত্যাশাও। ২১-এর মঞ্চে দাঁড়িয়ে দলের কর্মী-নেতাদের মনে করিয়ে দিয়েছেন তৃণমূল কংগ্রেস নেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। সরাসরি বলেছেন যত জিতব, তত নম্র হতে হবে, দায়িত্ববান হতে হবে। কেন বলছেন বোঝাতে গিয়ে কয়েক লাখ মানুষের বৃষ্টিভেজা জনতাকে নেত্রীর পরামর্শ, মানুষ ভোটে জিতিয়েছেন অনেক প্রত্যাশা নিয়ে, যে প্রত্যাশা অন্য রাজনৈতিক দলগুলো পূরণ করতে পারে না। সেখানেও যে তৃণমূল কংগ্রেসেরও ঘাটতি আছে, বোঝাতে গিয়ে নেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় উদাহরণ হিসেবে সামনে এনেছেন মালদার কথা। বলেছেন, কংগ্রেস এবং বিজেপি কিছু না করেও এবার লোকসভা নির্বাচনে মালদা জিতেছে। জানেন না কেন মালদার মানুষ তাঁকে এবং তাঁর দলকে ভুল বুঝেছেন। এটা দুভার্গ্য, একইসঙ্গে তৃণমূল নেত্রীর আশা, ২০২৬-এ মালদার আম এবং আমসত্ত্ব দু’টোই তৃণমূল কংগ্রেস পাবে। আর সেই পাওয়ার লক্ষ্যেই নেত্রীর প্রত্যাশা বিত্তবান নয়, বিবেকবান কর্মী।
সেইসঙ্গে, বয়স্কদের সম্মান, পুরনো কর্মীদের ফেরানোর কথা ফের শোনা গিয়েছে তৃণমূলের একুশে জুলাইয়ের সমাবেশে। ঘটনাচক্রে তিন দশক বাদে এবারের একুশে জুলাই যেদিন উদযাপিত হয়েছে সেদিনটা ক্যালেন্ডারের হিসেবে গুরু পূর্ণিমা। যে আধ্যাত্মিক উৎসবের ভিত্তিই হল বিকশিত বা আলোকিত মানুষ তৈরি এবং তাঁদের জ্ঞান বৃদ্ধি। এরই প্রেক্ষাপটে একুশের সমাবেশে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় থেকে অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়, সবাই তৃণমূল কর্মী নেতাদের কাছে যে নির্দেশ পাঠিয়েছেন তার একটাই বার্তা, সৎ এবং গ্রহণযোগ্য কর্মী এবং সংগঠন। মুখ্যমন্ত্রী বলেছেন, পুরনোরা রাগ করে বসে থাকলে গিয়ে ডেকে আনবেন, কেউ যেন দূরে না থাকেন।
আর অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায় বলেছেন, একুশের সভা থেকেই ফিরে গিয়ে মানুষকে বলতে হবে কী করতে পেরেছেন, কী করতে পারেন নি আর কী করতে চান। আর জানতে হবে মানুষ কী চাইছেন। আর কোথায় সে প্রত্যাশাপূরণ করা যাবে। এই প্রত্যাশা পূরণের ক্ষেত্রে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের নির্দেশ, স্থানীয়ভাবে যদি তা পূরণ করা না যায়, সেক্ষেত্রে, প্রথমে নেতৃত্ব, না হলে তাঁকে জানাতে হবে। কারণ, মানুষই শেষ কথা।
READ MORE

কলকাতায় লুঙ্গি-টি শার্ট পরা সাহেব