ভারতে নাগরিকত্ব আইন ও জাতীয় নাগরিক পঞ্জির বিরুদ্ধে জোট বাঁধতে সমস্ত অবিজেপি মুখ্যমন্ত্রীকে চিঠি দিয়ে আবেদন করেছেন পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। রবিবার নরেন্দ্র মোদীর আক্রমণের জবাবে তৃণমূল কংগ্রেস নেত্রী লিখেছিলেন, দেশজুড়ে জাতীয় নাগরিক পঞ্জি নিয়ে দু রকম কথা শোনা যাচ্ছে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী ও কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহের মুখে। রবিবার রামলীলা ময়দানের জনসভা থেকে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে নিশানা করে প্রধানমন্ত্রী মোদী বলেছিলেন, সংসদে দাঁড়িয়ে একসময় বাংলাদেশি অনুপ্রবেশকারীদের তাড়ানোর আর শরণার্থীদের জায়গা দিতে বলতেন মমতা দিদি। আর আজ তিনি কলকাতা থেকে পৌঁছে গেছেন জাতিসঙ্ঘে। দিদি, এখন কী হয়েছে আপনার, কেন বদলে গিয়েছেন, নির্বাচন আসে-যায়, বাংলার মানুষকে ভরসা করুন। বাংলার বাসিন্দাদের আপনি শত্রু ভেবে ফেলেছেন।
প্রধানমন্ত্রীর বক্তব্যের পরেই তাঁকে পালটা জবাব দেন মুখ্যমন্ত্রী। ট্যুইটে লেখেন, তিনি যা বলেছেন, তা জনসমক্ষে বলেছেন। কিন্তু প্রধানমন্ত্রী যা বলেছেন তার বিচারক মানুষ। সংসদের সিএএ শুরুর মুখেই তৃণমূল কংগ্রেস নেত্রীর সুরে সুর মিলিয়ে অনেক রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রীরাই জানিয়েছিলেন, তাঁদের রাজ্যে এনআরসি-সিএএ কার্যকর হবে না। সংসদে সমর্থন দিয়েই বিজেপির বিরুদ্ধে চলে গিয়েছে নীতিশ কুমার, নবীন পট্টনায়ক, উদ্ধব ঠাকরের দল। সোমবার অন্ধ্রের মুখ্যমন্ত্রীও বেসুরো গেয়েছেন। এমন মুহূর্তে সমস্ত অবিজেপি মুখ্যমন্ত্রীকে চিঠি দিয়ে মমতার জোট বাঁধার বার্তা ভীষণ লক্ষ্যণীয়।
দক্ষিণ ভারতেও এ বার নাগরিকত্ব আইন এবং জাতীয় নাগরিক পঞ্জির বিরুদ্ধে প্রতিবাদের ঢেউ উঠেছে। সোমবার চেন্নাইয়ের রাজপথে বিশাল মিছিল করেছেন বিরোধীরা। ডিএমকে-র ডাকা প্রতিবাদ মিছিলে শামিল হয়েছেন কংগ্রেস-সিপিএম-সহ অধিকাংশ বিরোধী দলের নেতারা। প্রতিবাদ মিছিল হয়েছে বেঙ্গালুরুতে। তবে লখনউ-সহ দেশের অন্যান্য প্রান্তে কিছুটা স্তিমিত হয়েছে প্রতিবাদ-বিক্ষোভ।
অন্যদিকে, নাগরিকত্ব আইনের সমর্থনেও মিছিল হয়েছে দেশের বিভিন্ন প্রান্তে। সিএএ-এনআরসির প্রতিবাদে মিছিল শুরু হতেই রাস্তায় আম জনতার ঢল নেমেছে চেন্নাইয়ের রাজপথে। ডিএমকে সুপ্রিমো এম কে স্টালিন ছাড়াও মিছিলে শামিল হয়েছেন কংগ্রেস নেতা পি চিদম্বরম, সিপিএম রাজ্য সম্পাদক কে বালাকৃষ্ণন, বিদুথালাই চিরুথাইগল কাটচি (ভিসিকে) সুপ্রিমো থোল তুরিমাভালভনের মতো নেতারা। তবে পুলিশ প্রথমে মিছিলের অনুমতি দেয় নি। কোনও অপ্রীতিকর ঘটনা ঘটলে তার দায় কে নেবে, এই প্রশ্নেই অনুমতি দিতে অস্বীকার করে চেন্নাই সিটি পুলিশ। তার পর হাইকোর্টের দ্বারস্থ হয় ডিএমকে। অবশেষে মিছিলের অনুমতি দেয় মাদ্রাজ হাইকোর্ট।
অন্যদিকে, বেঙ্গালুরুতে সিএএ-এনআরসি বিরোধী একটি প্রতিবাদ মিছিলের আয়োজন করেছিলেন সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের মানুষজন। শহরের হজরত খাজি মহম্মদ আবদুল কুদ্দুস সাহিব ইদগাহ্ ময়দান থেকে মিছিল শুরু করে শহরের মিলার রোড, নন্দী দুর্গা রোডের মতো এলাকা প্রদক্ষিণ করে। তবে কোথাও কোনও অশান্তির খবর নেই। অন্যদিকে, বেঙ্গালুরুতে সিএএ-র পক্ষেও একটি মিছিল করেছে বিজেপি। সিএএ-এনআরসিকে সমর্থন করে মিছিল হয়েছে কলকাতাতেও। এই মিছিলের নেতৃত্ব দেন বিজেপির সর্বভারতীয় সহ সভাপতি জে পি নাড্ডা।
অন্যদিকে, কয়েক দিন ধরে লখনউ-সহ উত্তরপ্রদেশের বিভিন্ন এলাকায় যে অগ্নিগর্ভ পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়েছিল, সোমবার তা অনেকটাই নিয়ন্ত্রণে। ১৯ ডিসেম্বর থেকে বন্ধ থাকা ইন্টারনেট পরিষেবা চালু হয়েছে ইলাহাবাদে। রাজ্যের অন্যান্য প্রান্তেও ধীরে ধীরে নিয়ন্ত্রণ শিথিল হচ্ছে। তবে বিক্ষোভে উত্তেজনা ছড়ানোয় সোমবার নতুন করে কার্ফু জারি হয়েছে মধ্যপ্রদেশের জব্বলপুরে।
দিল্লির রাজঘাটে দুপুর তিনটে থেকে নাগরিকত্ব সংশোধনী আইনের প্রতিবাদে বিক্ষোভ সমাবেশ করেছে কংগ্রেস। রাজঘাটে ধরণায় বসে ছিলেন সোনিয়া গান্ধী, রাহুল গান্ধী এবং প্রিয়াঙ্কা গান্ধী। দেশের প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী মনমোহন সিং ছাড়াও কমলনাথ, কপিল সিব্বল, গুলাম নবি আজাদের মতো প্রবীণ কংগ্রেস নেতারাও শামিল হয়েছিলেন বিক্ষোভ সমাবেশে। দেশের নানা প্রান্তের কংগ্রেস নেতারাও ছিলেন ধরণা মঞ্চে নাগরিকত্ব সংশোধনী আইনের প্রতিবাদ জানাতে। রাজঘাটে দেশের সংবিধানের মুখবন্ধ পাঠ করেন সোনিয়া গান্ধী। তার কিছুক্ষণ পরেই রাহুল গান্ধী এবং মনমোহন সিংও পাঠ করেন সংবিধানের প্রস্তাবনা।
কংগ্রেস নেতা এবং প্রাক্তন অর্থমন্ত্রী পি চিদম্বরম বলেছেন, প্রতিটি অবিজেপি দলেরই রীতিমতো মিছিল করে, শান্তিপূর্ণভাবে এই নাগরিকত্ব সংশোধনী আইনের প্রতিবাদে পথে নামা উচিত। মধ্যপ্রদেশের মুখ্যমন্ত্রী কমলনাথ এবং রাজস্থানের মুখ্যমন্ত্রী অশোক গেহলট নাগরিকত্ব সংশোধনী আইন নিয়ে নিজেদের অবস্থান স্পষ্ট করে জানিয়ে দিয়েছেন যে, কোনও অবস্থাতেই নিজেদের রাজ্যে এই আইন কার্যকর করবেন না তাঁরা। দেশজুড়ে গত কয়েকদিন ধরে আন্দোলন চলতে থাকলেও এই প্রথম সোনিয়া গান্ধীর নেতৃত্বে নাগরিকত্ব আইনের প্রতিবাদে রাস্তায় নেমে প্রতিবাদে শামিল হচ্ছেন কংগ্রেসের শীর্ষ নেতারা। যদিও দিন দুয়েক আগেই এই নয়া আইনের প্রতিবাদে দেশের সাধারণের জন্য ভিডিও বার্তায় প্রতিবাদ করতেও বলেছিলেন সোনিয়া গান্ধী।
READ MORE
মুসলমান তাড়াতে কোনো আইন নয়: মোদী