২০১৮ তে নিউরোএন্ডোক্রাইন টিউমার ধরা পরে ৫৪ বছর বয়সি অভিনেতা ইরফান খানের।এরপর একবছর বিদেশে থেকে চিকিৎসা করেছিলেন।তার মাঝেই শেষ করেছিলেন হিন্দি মিডিয়াম-এর সিক্যুয়েল ‘আংরেজি মিডিয়াম’-এর শুটিং। মার্চ মাসে মুক্তি পায় ইরফানের আংরেজি মিডিয়াম।তখনও শরীর অসুস্থ ছিল বলে তাঁকে প্রচারে দেখা যায়নি।যদিও করোনার কবলে কয়েকদিন পরই বন্ধ হয়ে যায় ছবির প্রদর্শন।ইরফান খানের মা সাঈদা বেগম শনিবার সকালে জয়পুরে ৯৫ বছর বয়সে প্রয়াত হন।কিন্তু লকডাউনের কারণে মুম্বই থেকে জয়পুরে পৌঁছতে পারেননি ইরফান,ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে মায়ের শেষকৃত্যে অংশ নেন তিনি। সবাই অপেক্ষা করছিল আবার কবে সেলুলয়েডের পর্দায় তাঁর বুদ্ধিদীপ্ত অভিনয়ের ঝলক দেখা যাবে।
দাঁতে দাঁত চেপে লড়াই চালিয়েও এক গাল হাসি নিয়ে জীবনের দিকে হাত বাড়িয়ে দিয়ে বসেছিলেন ইরফান খান। ২০১৮ সালে বিরল ক্যানসার রোগে আক্রান্ত হওয়ার পরও হার মানেননি।বরং আরও বেশি করে জীবনকে আঁকড়ে ধরেছিলেন ইরফান খান।আর এই লড়াইয়ে পাশে পেয়েছিলেন স্ত্রী ও পরিবারকে।ছবিই ছিল তাঁর প্রাণ, তাই সামান্য সুস্থ হতেই ফিরে এসেছিলেন লাইট.. ক্যামেরা... অ্যাকশনের দুনিয়ায়।শেষ ছবি আংরেজি মিডিয়ামেও মাতিয়ে দিয়েছিলেন।
অনুরাগীদের উদ্দেশে কিছুদিন আগে টুইটারে ইরফান লিখেছিলেন,জীবনে জয়ী হওয়ার সাধনায় মাঝে মধ্যে ভালবাসার গুরুত্ব ভুলে যাই আমরা।তবে দুর্বল সময় আমাদের তা মনে করিয়ে দেয়।জীবনের পরবর্তী ধাপে পা রাখার আগে তাই খানিক ক্ষণ থমকে দাঁড়াতে চাই আমি।অফুরন্ত ভালবাসা দেওয়ার জন্য এবং পাশে থাকার জন্য আপনাদের সকলকে কৃতজ্ঞতা জানাতে চাই।আপনাদের এই ভালবাসাই আমার যন্ত্রণায় প্রলেপ দিয়েছে। তাই ফের আপনাদের কাছেই ফিরছি।অন্তর থেকে কৃতজ্ঞতা জানাচ্ছি সকলকে।ফিরে এসেছিলেন ইরফান।
তাঁর প্রতি ট্যুইটেই বার বার ঝলক পাওয়া গিয়েছে জীবনের প্রতি অগাধ আস্থা আর ভালোবাসার।কিন্তু শেষ রক্ষা হল না।শুধু বলিউডই নয়, হলিউডেও নিজের ক্যারিশ্মা দেখিয়েছেন ইরফান।কাজ করেছেন একাধিক নামী পরিচালকের সঙ্গে।কিন্তু কখনও মাটি থেকে পা সরে যায়নি বাংলার জামাইয়ের।১৯৬৭ সালের ৭ জানুয়ারি রাজস্থানের জয়পুরে জন্ম ইরফানের।এমএ পড়ার সময়েই ১৯৮৪ সালে হাতে আসে ন্যাশনাল স্কুল অফ ড্রামায় পড়ার জন্যে স্কলারশিপ।তারপর থেকে মঞ্চ এবং সিলভার স্ক্রিনই হয়ে ওঠে জীবনের ধ্যান-জ্ঞান।আর তাঁর এই কর্মযজ্ঞে সবসময়ে পাশে পেয়েছেন স্ত্রী সুতপা সিকদারকে।বিভিন্ন সাক্ষাত্কারে বার বার তাই অকপটে স্বীকার করেছেন তাঁর জীবনের চালিকা শক্তিই স্ত্রী সুতপা।
আমির, সালমান ও শাহরুখ খান—মুম্বাই ফিল্ম ইন্ডাস্ট্রির মূল চালিকাশক্তি হলেও এদের বাইরে আরও একজন খান কিন্তু নিজের যোগ্যতা আর প্রতিভায় ভারতের সিনেমাপ্রেমীদের মন জয় করে নিয়েছিলেন। আর তিনিই সাহেবজাদা ইরফান আলি খান।বলিউডের বিশিষ্ট অভিনেতার অকাল প্রয়াণে শোকস্তব্ধ গোটা ইন্ডাস্ট্রি। প্রিয়বন্ধু ও পরিচালক সুজিত সরকার টুইটে শ্রদ্ধা জানিয়ে লিখেছেন ,খুব কাছের বন্ধু, ইরফান।তুমি লড়ে গিয়েছে, লড়েই গিয়েছ।তোমাকে নিয়ে আমি সবসময় গর্ববোধ করি।আমাদের আবার দেখা হবে।সুতপা ও ছেলেদের জানাই সমবেদনা।সুতপা তুমিও লড়াইটা চালিয়ে গিয়েছ।এখনও যাচ্ছ, তোমাকে সেলাম, ইরফান।