হেইট ক্রাইমের একটি নতুন বিশ্লেষণে আরও দেখা গেছে যে দুই বছরের ব্যবধানে প্রায় ৩৫০টি ইসলামোফোবিক ঘটনা ঘটেছে যার মূল লক্ষ্য ছিল মুসলিম মহিলা ও অল্প বয়সী মেয়েরা।
গত সোমবার প্রকাশিত ২০১৯ সালে অস্ট্রেলিয়ার ইসলামোফোবিয়ার প্রতিবেদনে পাওয়া গেছে যে ২০১৬ এবং ২০১৭ সালে আক্রমণের যেসব ঘটনা ঘটেছে তার ৬০% ঘটেছে জনসমক্ষে, যা পূর্ববর্তী ১৫ মাসের তুলনায় দ্বিগুণ।
এ পর্যন্ত যত ঘটনা ঘটেছে তাতে ক্ষতিগ্রস্থরা উল্লেখ করেছেন যে অধিকাংশ ক্ষেত্রেই যারা পাশ দিয়ে যান তারা কোন সাহায্য করেন না।
এদিকে অনলাইনেও ঘৃণা বিস্তারের ঘটনার কমতি নেই। মুসলিম আইনজীবী রামিয়া আবদো সুলতান বলেন যে এই অনলাইন-ঘৃণা আসলে রিয়েল-ওয়ার্ল্ডে যা ঘটছে তারই পরিণতি।
তিনি বলেন, "আমরা অনলাইনে যে সব ঘৃণাত্মক বক্তব্য বা বিষয় এবং মন্তব্যগুলো দেখি তা প্রকৃতপক্ষে বাস্তব বিশ্বে চর্চ্চা করা হয়। এগুলো এখন আর কোন মন্তব্যের মধ্যে সীমাবদ্ধ নেই, এখন এর বাস্তব প্রয়োগ ঘটছে।"

ক্রাইস্টচার্চ গণহত্যা ছিল হেইট ক্রাইমের চূড়ান্ত উদাহরণ Source: AAP
চার্লস স্টার্ট বিশ্ববিদ্যালয়ের সেন্টার ফর ইসলামিক স্টাডিজ অ্যান্ড সিভিলাইজেশনের করা এই প্রতিবেদনে দেখা গেছে, আক্রান্তদের মধ্যে ৭০ শতাংশেরও বেশি মুসলিম মহিলা ও বালিকারা রয়েছে।
এগুলি প্রায়শই ঘটছে কেনাকাটার সময়ে প্রকাশ্য স্থানে; অপরাধের প্রকৃতি হচ্ছে মৌখিক নির্যাতন কিংবা অপমান, অশ্লীল অঙ্গভঙ্গি, শারীরিকভাবে ভয় দেখানো ও মৃত্যুর হুমকি।
তিন-চতুর্থাংশ মামলার অপরাধী হচ্ছে অ্যাংলো-সেল্টিক বংশোদ্ভূত পুরুষরা।
বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই মুসলিম পোশাক-আষাক এবং চেহেরাই ছিল মূল লক্ষ্য, ৯৬ শতাংশ নারী উত্তরদাতারা বলেছেন এ সময় তারা হিজাব পরেছিলেন।
শীর্ষস্থানীয় লেখক ডঃ ডেরিয়া ইনার বলেন যে অস্ট্রেলিয়ায় ইসলামোফোবিয়া সেক্সিস্ট কিংবা নারীবিদ্বেষী ভাষার সাথে সরাসরি সম্পর্কিত।
তিনি বলেন, "আমরা পূর্ববর্তী প্রতিবেদনে এবং এই প্রতিবেদনে অস্ট্রেলিয়ায় ইসলামোফোবিয়া কিভাবে কাজ করছে তা দেখতে পাই। আমি মনে করি এই প্রবণতা অন্যান্য প্রসঙ্গে এবং দেশেও প্রযোজ্য; এখানে অশ্রাব্য নারীবিদ্বেষী ভাষা ব্যবহার হয়, এবং ইসলামোফোবিয়ার ভেতরেও নারীবিদ্বেষ রয়ে গেছে। অনলাইন এবং অফলাইন উভয় ক্ষেত্রেই আমরা দেখতে পেয়েছি যে পুরুষরাই সর্বদা আক্রমণকারী এবং মহিলারাই এর শিকার।"
যদিও মার্চ মাসে ক্রাইস্টচার্চ মসজিদ হামলার আগে গবেষকরা যাচাই করে দেখেছেন যে বিগত বছরগুলিতে ঘৃণা ভরা বক্তব্যগুলো উদ্বেগজনক বাড়ছিল যেগুলি সন্দেহভাজন সন্ত্রাসবাদীদের আকৃষ্ট করেছিল। এসব বক্তব্যের ভেতর অনেক মৃত্যু হুমকিও ছিলো।

ভিক্টোরিয়া রাজ্যের বেন্ডিগোতে ইসলামবিরোধী সমাবেশ Source: AAP
অস্ট্রেলিয়ার ইউনাইটেড মুসলিম নেতা ইব্রাহিম দাদুন বলেন যে, মুসলিম সম্প্রদায়ের অনেকেই এ ধরণের নির্যাতনের ঘটনা রিপোর্ট করার বিষয়ে সচেতন নন, সুতরাং ঘটনার সংখ্যা আরও বেশি হতে পারে।
তিনি বলেন, "দুর্ভাগ্যক্রমে, মুসলিম সম্প্রদায়ের লোকেরা আসলে এই বিষয়গুলি কর্তৃপক্ষকে জানায় না, এর কারণ সম্ভবত তারা এই বিষয়গুলি জানাতে ভীত হতে পারে, অথবা তারা জানেনা যে এগুলো রিপোর্ট করা উচিত, তাই আমি মনে করি তাদের মধ্যে সচেতনতা বাড়াতে হবে।"
প্রতিবেদনে বলা হয়েছে: "অনলাইন এবং অফলাইনে আক্রমণকারীরা কীভাবে সমস্ত মুসলমানদের হত্যা করতে চায় তা বিশদভাবে বর্ণনা করা হয়েছে এরপরেও কোনও তদন্ত বা মামলা-মোকদ্দমা হয়নি বলে বিদ্যমান আইনগুলির যোগ্যতা নিয়ে গুরুতর প্রশ্ন উত্থাপন করা হয়েছে।"
ইসলামোফোবিয়া রেজিস্টার অস্ট্রেলিয়া তাদের পরবর্তী প্রতিবেদনের জন্য অর্থ সংগ্রহ শুরু করেছে, যা ক্রাইস্টচার্চের ট্র্যাজেডির আগে পর্যন্ত এবং তার পরপর যা ঘটেছিলো তা পর্যালোচনা করবে।