একদিকে, দুই দেশের মধ্যে আর্থিক সম্পর্ককে আরও মজবুত করা। অন্যদিকে, অস্থির ভূকৌশলগত পরিস্থিতির প্রেক্ষাপটে নিজেদের নিরাপত্তা ও কূটনৈতিক সহযোগিতাকে আরও এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার লক্ষে্য নয়া দিল্লিতে চতুর্দশ বৈঠক করেছেন ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী এবং জাপানের প্রধানমন্ত্রী ফুমিয়ো কিশিদা।
বৈঠকের পর প্রধানমন্ত্রীর দপ্তরের দাবি, আলোচনা সফল হয়েছে। বৈঠকের পরে একটি যৌথ বিবৃতি প্রকাশ করা হয়েছে। জাপানি বিনিয়োগের পাশাপাশি সাইবার নিরাপত্তা, নগরোন্নয়ন সংক্রান্ত তিনটি চুক্তি সই করছে ভারত ও জাপান।
এদিকে ‘বন্ধু’ প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির ডাকে সাড়া দিয়েছেন ইজরায়েলের প্রধানমন্ত্রী নাফতালি বেনেট। এপ্রিলের শুরুতেই প্রথম ভারত সফরে আসছেন বেনেট। ইজরায়েলের প্রধানমন্ত্রীর দপ্তর থেকে এমনটাই জানানো হয়েছে। সফরকালে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি-সহ একাধিক উচ্চপদস্থ কর্তাদের সঙ্গে সাক্ষাৎ করবেন তিনি। পাশাপাশি দেখা করবেন ভারতের ইহুদি সম্প্রদায়ের সঙ্গেও।
২ এপ্রিল, শনিবার ভারতে আসবেন ইজরায়েলের প্রধানমন্ত্রী। বেনেটের দপ্তরের তরফে তাঁকে উদ্ধৃত করে জানানো হয়েছে, বন্ধু মোদির আমন্ত্রণ রক্ষা করতে এপ্রিলের প্রথমে ভারতে আসছি। আমন্ত্রণ রক্ষা করতে পেরে আমি খুবই আনন্দিত। এভাবে দু’দেশের সম্পর্ক এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার বিষয়ে আশাবাদী আমরা।
দু'দিনের ভারত সফরে এসেছেন জাপানের প্রধানমন্ত্রী ফুমিও কিশিদা। বিমানবন্দরে তাঁকে অভ্যর্থনা জানাতে উপস্থিত ছিলেন কেন্দ্রীয় মন্ত্রী অশ্বিনী বৈষ্ণব। ভারতে আগামী পাঁচ বছরে ৪ হাজার ২০০ কোটি মার্কিন ডলার বিনিয়োগ করবে জাপান; যা ভারতীয় মূল্যে প্রায় ৩ লাখ ২০ হাজার কোটি টাকা। ভারতে সফরে এই বিনিয়োগের কথা ঘোষণা করেছেন জাপানের প্রধানমন্ত্রী ফুমিও কিশিদা।
এর আগে ২০১৪ সালে শিনজো আবে জাপানের প্রধানমন্ত্রী থাকাকালীন ভারতের সরকারি ও বেসরকারি ক্ষেত্রে ২৯.৩৫ বিলিয়ন ডলার বিনিয়োগ করতে সম্মত হয়েছিলেন।
ভারতীয় বিদেশমন্ত্রকের মুখপাত্র অরিন্দম বাগচী বলেছেন, ১৪তম ভারত-জাপান বার্ষিক শীর্ষ সম্মেলন উপলক্ষে দিল্লিতে এসেছেন ফুমিও কিশিদা। দ্বিপাক্ষিক নানা বিষয় ছাড়াও পারস্পরিক স্বার্থ জড়িত এমন আঞ্চলিক ও আন্তর্জাতিক বিষয়ে কথা হয়েছে। প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির সঙ্গে ফুমিও কিশিদার একটি ছবিও টুইটারে পোস্ট করেছেন অরিন্দম বাগচী। বলা হয়েছে, ভারত ও জাপানের দ্বিপাক্ষিক নানা বিষয়ে দুই রাষ্ট্রপ্রধানের কথা হয়েছে। আর্থিক সহযোগিতাও গুরুত্ব পাবে। পাশাপাশি, ইউক্রেনের বর্তমান পরিস্থিতি, দক্ষিণ চীন সাগর সম্পর্কিত আন্তর্জাতিক বিষয়ও আলোচনায় রয়েছে।
বৈঠকে কথা হয়েছে কার্বন নিঃসরণ কমানো নিয়েও। বৈঠকের পর প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী বলেছেন, এখন গোটা বিশ্ব করোনার সঙ্গে লড়াই করছে। তার উপর ভূকৌশলগত বিভিন্ন ঘটনা তাদের সামনে আরও চ্যালেঞ্জ বাড়িয়ে দিয়েছে। এই সংকটের সময় দুই দেশের সহযোগিতা আরও গভীর হওয়া প্রয়োজন।
ভারত-প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চলের শান্তি, নিরাপত্তা এবং সমৃদ্ধির জন্য ভারত-জাপান ঐক্যবদ্ধ হয়ে কাজ করবে বলে জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী। বৈঠকে চীনের প্রসঙ্গও উঠেছে। প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী বিস্তারিতভাবে লাদাখে চীনের অনুপ্রবেশের কথা জাপানের প্রধানমন্ত্রীকে জানিয়েছেন। তিনি স্পষ্ট করে দিয়েছেন, সীমান্তে শান্তি না ফিরলে ভারত-চীন সম্পর্ক আগের মতো থাকবে না।
অন্যদিকে, জাপানও দক্ষিণ চীন সাগরে বেইজিংয়ের ভূমিকা নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেছে। বিদেশ সচিব হর্ষবর্ধন শ্রিংলা বলেছেন, দু’পক্ষই রাশিয়া ও ইউক্রেনের যুদ্ধ নিয়ে আশঙ্কা প্রকাশ করেছে। দুই দেশই একমত, অবিলম্বে হিংসা বন্ধ করে আলোচনা ও কূটনীতিক রাস্তায় ফেরা প্রয়োজন। ভারত ও জাপান ইউক্রেনবাসীদের জন্য সহায়তা পাঠাচ্ছে।
বৈঠকের পরে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী বলেছেন, এখনও গোটা বিশ্ব কোভিডের সঙ্গে লড়াই করছে। তার উপর ভূকৌশলগত বিভিন্ন ঘটনা চ্যালেঞ্জ আরও বাড়িয়েছে। এই সঙ্কটের সময় সহযোগিতা আরও গভীর করা প্রয়োজন।
READ MORE
নতুন এসবিএস রেডিও অ্যাপ ডাউনলোড করুন
শনিবারই ভারতে পৌঁছেন জাপানের প্রধানমন্ত্রী কিশিদা। প্রধানমন্ত্রী হিসেবে ভারতে এটিই তাঁর প্রথম সফর। রবিবার সকালেই দিল্লি ছাড়েন জাপানের প্রধানমন্ত্রী ফুজিও কিশিদা। খবর, আগামী দিনে জাপানের বিনিয়োগ দেশের বিভিন্ন উন্নয়নমুখী প্রকল্পের কাজে লাগানো হবে। দেশের উত্তর-পূর্বের উন্নয়নেও এই অর্থ কাজে লাগানো হবে। পাশাপাশি, চতুর্দশ ইন্দো-জাপান বার্ষিক বৈঠকে বিভিন্ন বেসরকারি সংস্থার সঙ্গে হাত মিলিয়ে ভারতে উন্নয়ন করতে চায় জাপান। কিশিদার এই সফর তারই সূচনা।
বর্তমানে ভারতে ১৪৫৫টি জাপানি সংস্থার বিনিয়োগ রয়েছে। দেশের ১১টি শহরে রয়েছে উল্লেখযোগ্য জাপানী সহায়তা। ভারতে বিনিয়োগকারী দেশগুলোর মধ্যে জাপান রয়েছে পাঁচ নম্বরে।
অন্যদিকে, ইজরায়েলের পিএমও-র তরফে জানানো হয়েছে, দুই রাষ্ট্রপ্রধানের মধ্যে অর্থনীতি, নয়া উদ্ভাবন, গবেষণা, উন্নয়ন, চাষাবাদ-সহ একাধিক বিষয়ে আলোচনা হবে। বিভিন্ন ক্ষেত্রে ভারত-ইজরায়েলের সহযোগিতা মজবুত করতে বদ্ধপরিকর দু’দেশই।
পেগাসাস বিতর্কের মাঝেই ইজরায়েল প্রধানমন্ত্রীর ভারত সফর অত্যন্ত তাৎপর্যপূর্ণ। ১৯৯২ সালে তেল আভিভে প্রথম দূতাবাস চালু করেছিল ভারত। চলতি বছরে সেই সম্পর্কের ৩০ বছর পূর্ণ হচ্ছে। দু’দেশের সম্পর্ক মজবুত করতে এবার ভারত সফরে আসছেন ইজরায়েলের প্রধানমন্ত্রী।
ইজরায়েলের প্রধানমন্ত্রী হওয়ার পর নাফতালি বেনেটের সঙ্গে ২০২১ সালে অক্টোবরে গ্লাসগোয় জাতিসংঘের পরিবেশ সংক্রান্ত বৈঠকে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির সাক্ষাৎ হয়। বৈঠকের পাশাপাশি দুই রাষ্ট্রপ্রধানের মধ্যে বেশকিছুক্ষণ কথা হয়েছিল। সেইসময়ই প্রধানমন্ত্রী বেনেটকে ভারতে আসার আমন্ত্রণ জানিয়েছিলেন প্রধানমন্ত্রী মোদি।
এসবিএস বাংলার অনুষ্ঠান শুনুন রেডিওতে, এসবিএস বাংলা রেডিও অ্যাপ-এ এবং আমাদের ওয়েবসাইটে, প্রতি সোম ও শনিবার সন্ধ্যা ৬ টা থেকে ৭ টা পর্যন্ত। রেডিও অনুষ্ঠান পরেও শুনতে পারবেন, ভিজিট করুন: