করোনা ভাইরাস রোধে বাংলাদেশে সাধারণ ছুটি ১১ এপ্রিল পর্যন্ত বাড়ানোর সিদ্ধান্ত

করোনাভাইরাস বাংলাদেশে ছড়িয়ে পড়া প্রতিরোধে সাধারণ ছুটি ১১ এপ্রিল পর্যন্ত বাড়ানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছে সরকার। বাংলাদেশের জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় জানায়, সাধারণ ছুটি আগামী ৯ এপ্রিল পর্যন্ত বাড়ানো হচ্ছে। সঙ্গে সাপ্তাহিক ছুটি ১০ এপ্রিল (শুক্রবার) ও ১১ এপ্রিল (শনিবার) যুক্ত হচ্ছে। তবে যেসব অফিস খুবই প্রয়োজন, সেগুলো চালু থাকবে। এর আগে ২৩ মার্চ সরকার ২৬ মার্চ থেকে ৪ এপ্রিল পর্যন্ত ছুটি ঘোষণা করে। এর মধ্যে ২৬ মার্চ স্বাধীনতা দিবস এবং পরের দুই দিন শুক্র ও শনিবার সাপ্তাহিক ছুটি ছিল। ২৯ মার্চ থেকে ২ এপ্রিল ৫ দিন সাধারণ ছুটি ঘোষণা করেছে সরকার। আর ৩ ও ৪ এপ্রিল সাপ্তাহিক ছুটি হওয়ায় মোট ১০ দিন হয়।

Lockdown Bangladesh

Source: Facebook

মঙ্গলবার গণভবন থেকে ভিডিও কনফারেন্সে মাঠ পর্যায়ের কর্মকর্তাদের সঙ্গে মতবিনিময়কালে বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, করোনা প্রতিরোধে মানুষের করণীয় বিষয়ে নির্দেশনা প্রদান করা হয়েছে। আপনারা এসব নির্দেশনা মেনে চলুন। কেননা নিজেদের সুরক্ষা নিজেদেরই করতে হবে। এ সময় সবাইকে ঘরে অবস্থানের পরামর্শ দেন প্রধানমন্ত্রী।বিদ্যমান করোনা পরিস্থিতির কারণে এ বছর নববর্ষের অনুষ্ঠান বন্ধ থাকবে বলে জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।

৩১ মার্চ মঙ্গলবার সকালে সরকারি বাসভবন গণভবন থেকে দেশের ৬৪ জেলার কর্মকর্তাদের সঙ্গে ভিডিও কনফারেন্সে দেওয়া বক্তব্যে নভেল করোনাভাইরাসের মহামারীর কারণে বিশ্বজুড়ে আসন্ন ব্যাপক অর্থনৈতিক মন্দা মোকাবেলায় সর্বোচ্চ খাদ্য উৎপাদনসহ সার্বিক পরিকল্পনা গ্রহণের উপরও জোর দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। সংকটের সময় প্রয়োজন হলে যাতে দেশের চাহিদা মিটিয়ে অন্য দেশকেও সহায়তা করা যায়, তার জন্য কোনো জমি বা জলাশয় যাতে অনাবাদী না থাকে তা নিশ্চিত করতে তিনি সংশ্লিষ্টদের নির্দেশ দিয়েছেন।

সরকারঘোষিত সাধারণ ছুটিতে কাজ হারানো নিম্নবিত্ত শ্রমজীবি মানুষের ঘরে খাদ্যসহ প্রয়োজনীয় সব ধরনের সেবা পৌঁছে দেওয়ার নির্দেশনাও দেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। জেলা প্রশাসকসহ সকলকে নিয়মিত সামাজিক নিরাপত্তামূলক কাজগুলো যথাযথভাবে পালনের নির্দেশনা দিয়ে নভেল করোনাভাইরাস সংক্রমণের প্রেক্ষিতে কাউকে খাদ্য সহায়তা করতে গিয়ে লোকসমাগম যাতে না হয় তা নিশ্চিত করারও নির্দেশনা দেন প্রধানমন্ত্রী। শ্রমজীবি মানুষের তালিকা তৈরি করে প্রয়োজনীয় সেবা নিশ্চিতের আহ্বান জানিয়ে তিনি বলেন, সেই তালিকা অনুযায়ী প্রত্যেকে যেন এই সহযোগিতাটা পায়। সেই বিষয়টা নিশ্চিত করতে হবে।

বিশ্বের শতাধিক দেশে ছড়িয়ে পড়া নভেল করোনা ভাইরাসের সংক্রমণ প্রতিরোধে দেশবাসীকে ভীত না হয়ে সাহসিকতার সঙ্গে পরিস্থিতি মোকাবেলার আহ্বান জানান প্রধানমন্ত্রী। একইসঙ্গে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমসহ বিভিন্ন মাধ্যমে যারা গুজব ছড়ায় তাদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়ার নির্দেশনা দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।

আরো ২ জন আক্রান্ত, সুস্থ আরো ৬

৩১ মার্চ পর্যন্ত বাংলাদেশে আরো দুই জনের মধ্যে নভেল করোনাভাইরাসের সংক্রমণ ধরা পড়ায় আক্রান্তের সংখ্যা বেড়ে হয়েছে ৫১ জন। সরকারের রোগতত্ত্ব, রোগ নিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা ইনস্টিটিউট- আইইডিসিআরের পরিচালক অধ্যাপক মীরজাদী সেব্রিনা ফ্লোরা মঙ্গলবার এক অনলাইন ব্রিফিংয়ে দেশে নভেল করোনাভাইরাস মহামারীর সর্বশেষ পরিস্থিতি তুলে ধরেন। তিনি জানান, বাংলাদেশে আক্রান্তদের মধ্যে গত ২৪ ঘণ্টায় সুস্থ হয়ে উঠেছেন আরও ছয়জন। আক্রান্তদের মধ্যে এ নিয়ে মোট ২৫ জন সংক্রমণমুক্ত হলেন।

নতুন করে কারও মৃত্যুর তথ্য না আসায় বাংলাদেশে কোভিড-১৯ এ মৃতের মোট সংখ্যা আগের মতই পাঁচজনে রয়েছে।
ব্রিফিংয়ে জানানো হয়, গত ২৪ ঘণ্টায় মোট ১৪০ জনের নমুনা পরীক্ষা করা হয়েছে, তার মধ্যে আইইডিসিআরের বাইরের গবেষণাগারে পরীক্ষা করা নমুনাও রয়েছে। এখন পর্যন্ত মোট ১ হাজার ৬০২ জনের নমুনা পরীক্ষা হয়েছে।সেব্রিনা ফ্লোরা বলেন, নতুন সংক্রমিত দুজনই পুরুষ। তাদের হাসপাতালে নিয়ে চিকিৎসা দেওয়া হচ্ছে।

আরও ছয়জন সুস্থ হয়ে বাড়ি ফিরে গেছেন জানিয়ে ডা. ফ্লোরা বলেন, আক্রান্তদের তারা তিন দিন পরপর পরীক্ষা করেন। প্রথমবার কোভিড-১৯ নেগেটিভ এলে ২৪ ঘণ্টা পর আবার পরীক্ষা হয়। পরপর দুটি টেস্ট নেগেটিভ হলে তাকে বাড়ি ফেরার ছাড়পত্র দেওয়া হয়।ছাড়পত্র পাওয়া এই ছয়জনের মধ্যে চারজন পুরুষ ও একজন নারী। তাদের মধ্যে একজন নার্সও রয়েছেন।ফ্লোরা জানান, ওই ছয়জনের মধ্যে একজনের বয়স ৭০ বছর, চারজনের বয়স ত্রিশ থেকে চল্লিশের ঘরে, একজনের বয়স চল্লিশের বেশি।বাংলাদেশে বর্তমানে আইসোলেশনে আছেন ৭৫ জন। আরও ৩৮ জনকে প্রাতিষ্ঠানিক কোয়ারেন্টিনে রাখা হয়েছে বলে জানানো হয় ব্রিফিংয়ে।

 


Share
Published 1 April 2020 1:16pm
By Ali Habib
Presented by Abu Arefin

Share this with family and friends