গত বছর ৯ ফেব্রুয়ারি মেলবোর্নের মিল পার্কে বাড়িওয়ালা রজার সিঙ্গারাভেলুকে ছুরিকাহত করে বাংলাদেশী নাগরিক মোমেনা সোমা। ২৬ বছর বয়সী এই নারী ‘শহীদ হওয়ার’ আকাঙ্ক্ষায় এ কাণ্ড ঘটায় বলে জানিয়েছে।
উচ্চস্বরে ‘আল্লাহু আকবর’ বলার সঙ্গে সঙ্গে সে মিস্টার সিঙ্গারাভেলুকে এতো জোরে ছুরি মারে যে, তার ঘাঁড়ে ছুরি ঢুকে যায় ও ছুরির অগ্রভাগ ভেঙ্গে যায়।
বিচারপতি লেসলি অ্যান টেইলর গত বুধবার মোমেনা সোমাকে ৪২ বছরের কারাদণ্ড প্রদান করেন। মোমেনা সোমা সাড়ে ৩১ বছর কারাবাসের আগে প্যারোলের আবেদন করতে পারবেন না।
ভিক্টোরিয়ান সুপ্রিম কোর্টে এই বিচারপতি মোমেনাকে উদ্দেশ করে বলেন,
“আপনার এই কাজের ফলে অস্ট্রেলিয়ান কমিউনিটিতে ভীতি সঞ্চারিতি হয়েছে। কিন্তু, তারা আপনাকে শহীদ বানায় নি। … তারা আপনাকে একজন অপরাধীতে পরিণত করেছে।”বিচারপতি টেইলর বলেন, অস্ট্রেলিয়ায় সোমার আগমনের “মূল উদ্দেশ্যই” ছিল একটি সন্ত্রাসী হামলা চালানো। চালাকি করে তিনি লা ট্রোব ইউনিভার্সিটিতে লিঙ্গুইস্টিক্সে মাস্টার্স কোর্সে ভর্তি হন।
Crying, "Allahu akbar", Shoma plunged the knife with such force it embedded into Mr Singaravelu's neck and the knife tip snapped off. Source: AAP
২০১৮ সালের ১ ফেব্রুয়ারি বাংলাদেশে থেকে স্টুডেন্ট ভিসায় অস্ট্রেলিয়ায় আসেন সোমা। এর মাত্র আট দিন পরই ৯ ফেব্রুয়ারিতে বাড়িওয়ালাকে আক্রমণ করেন। পুলিশকে তিনি বলেন, বালিশের উপরে ছুরি মেরে এর আগে অনুশীলন করেন তিনি।
আক্রমণের পরিকল্পনার অংশ হিসেবে তিনি নাইট ভিশন গগলস কেনেন এবং গুগলে দু’বার অনুসন্ধান করেন যে, কেউ গভীর ঘুমে আচ্ছন্ন আছে কিনা তা কীভাবে বোঝা যাবে? মিস্টার সিঙ্গারাভেলুকে তিনি লক্ষ্য হিসেবে বেঁছে নেন কারণ সে অসহায় ছিল।
বিচারপতি টেইলর বলেন, সোমা অনুতপ্ত নয়।
“নিঃসন্দেহে আপনি শুধু অনুতাপ করেছেন এজন্য যে, আপনি সফল হন নি”, বলেন বিচারপতি টেইলর।
বাড়িওয়ালা মিস্টার সিঙ্গারাভেলু ও তার পরিবার সম্পর্কে বিচারপতি টেইলর বলেন,
“একজন অপরিচিত ব্যক্তিকে স্থান দেওয়ার ক্ষেত্রে (তারা) অনেক উদারতার পরিচয় দিয়েছে। আর এখন তারা শারীরিক, মানসিক এবং আর্থিকভাবে কষ্ট করছে।
এর আগে মিস্টার সিঙ্গারাভেলু আদালতকে বলেছিলেন, এই আক্রমণের পর থেকে তিনি পোস্ট-ট্রমাটিক স্ট্রেস ডিজওর্ডারে (পিটিএসডি) ভুগছেন। এই ঘটনা ভুলে যাওয়ার জন্য তিনি বেশ কয়েকটি ওষুধ সেবন করেছেন এবং অ্যালকোহলের আশ্রয় নিয়েছেন।
তার মেয়েও পিটিএসডি-তে ভুগছে এবং দুঃস্বপ্ন দেখছে।রায় ঘোষণার পর আদালতের বাইরে মিস্টার সিঙ্গারাভেলু বলেন, তিনি সৌভাগ্যবান বলেই এই আক্রমণের পর বেঁচে গেছেন।
Roger Singaravelu (Right) and Maha Solomon leave the Supreme Court of Victoria in Melbourne, following the decision. Source: AAP
সাংবাদিকদেরকে তিনি বলেন, “আমার তো কাঠের বাক্সে থাকার কথা, নিদেন পক্ষে হুইল-চেয়ারে।”
শিক্ষার্থীদের ভিসা-আবেদনগুলো ভালোভাবে খতিয়ে দেখার জন্য সরকারের প্রতি আহ্বান জানান তিনি।
মোমেনা সোমার উচ্চতা ৫ ফুট এবং ওজন ৪০ কেজি। ছোটখাটো গড়নের এই নারীই অস্ট্রেলিয়ায় প্রথম নারী যিনি প্রত্যক্ষভাবে সন্ত্রাসী হামলার অভিযোগে সাজা পেলেন।
কালো রংয়ের নিকাব পরে আদালতে এসেছিলেন মোমেনা সোমা। এর মধ্য দিয়ে শুধু তার চোখ দুটো দেখা যাচ্ছিল। বিচারপতি টেইলারের সম্মানে মোমেনা সোমা উঠে দাঁড়ান নি।