২০২০ সালে প্রায় ৬০০,০০০ অস্থায়ী ভিসাধারী অস্ট্রেলিয়া থেকে দেশে ফিরে গেছে

২০২০ সালের ডিসেম্বরে অস্ট্রেলিয়ায় অস্থায়ী ভিসাধারীর সংখ্যা তার আগের বছরের একই সময়ের তুলনায় ৬০০,০০০ কম। কোভিড-১৯ বৈশ্বিক মহামারীর কারণে বিভিন্ন আন্তর্জাতিক সীমান্ত বন্ধের সময়টিতে শত শত অভিবাসী তাদের নিজ দেশে ফিরে গেছেন।

Temporary migrant

Australian government announces major visa concessions for temporary graduates stuck offshore. Source: AAP

হাইলাইটস

  • ২০২০ সালে অস্ট্রেলিয়া থেকে প্রায় ৬০০,০০০ অস্থায়ী ভিসাধারী নিজ দেশে ফিরে গেছেন।
  • আন্তর্জাতিক শিক্ষার্থীরা-সহ বহু ভিসাধারী ফেরত গেছেন কোভিড-১৯ বৈশ্বিক মহামারীর কারণে।
  • চলে যাওয়া এই ৬০০,০০০ অভিবাসীর মাঝে প্রায় ৪১,০০০ ভারতীয়।

গত বছর অস্ট্রেলিয়া থেকে পর্যটক, অবকাশ-যাপনকারী, আন্তর্জাতিক শিক্ষার্থী এবং কর্মী-ভিসাধারীরা-সহ শত শত অস্থায়ী ভিসাধারী তাদের নিজের দেশে ফিরে গেছেন। অস্ট্রেলিয়ায় এ রকম ঘটনা ইতোপূর্বে দেখা যায় নি।

ডিপার্টমেন্ট অফ হোম অ্যাফেয়ার্সের সাম্প্রতিক তথ্য-উপাত্ত থেকে জানা যায়, প্রায় ১২০,০০০ ব্রিজিং ভিসাধারীর পাশাপাশি ভিজিটর ও ওয়ার্কিং হলিডেমেকার্স ভিসাধারীদের সংখ্যা হ্রাস পেয়েছে। আর, ২০১৯ সালের ডিসেম্বরের তুলনায় ২০২০ সালের ডিসেম্বরে স্টুডেন্ট ভিসাধারীরর সংখ্যা ৩১,০০০ কম ছিল।

করোনাভাইরাসের বৈশ্বিক মহামারী শুরু হওয়ার তিন মাস পর এই সংখ্যা সবচেয়ে বেশি হ্রাস পায়। সেই সময়ে প্রায় ১৪৩,০০০ ভিসাধারী অস্ট্রেলিয়া ছেড়ে চলে যান।

অর্থনীতি ও জনসংখ্যার উপর ‘গুরুতর’ অভিঘাত

ইমিগ্রেশন ডিপার্টমেন্টের একজন সাবেক সিনিয়র কর্মকর্তা আবুল রিজভি বলেন, অস্থায়ী ভিসাধারীরা দেশ ছেড়ে চলে যাচ্ছে; তবে, সীমান্ত নিষেধাজ্ঞাগুলোর কারণে তারা এদেশে আসছে না। বর্তমানে শুধুমাত্র অস্ট্রেলিয়ান নাগরিকরা এবং স্থায়ী অভিবাসীরা ধীরে ধীরে অস্ট্রেলিয়ায় ফিরে আসছে।
Migration program
Sharpest decline was witnessed in the three months after the pandemic struck in March, a period in which nearly 143,000 temporary visa holders left Australia. Source: AAP
এভাবে অস্ট্রেলিয়া থেকে চলে যাওয়ার বড় প্রভাব পড়েছে মূলত শিক্ষা ও পর্যটন শিল্পে, বলেন তিনি।

“এর প্রভাব আমরা দেখছি আন্তর্জাতিক পর্যটনে এবং বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে, যেখানে ১৭,০০০ কর্ম-সংস্থান কমে গেছে বলে বলা হচ্ছে এবং কৃষি ফার্মগুলো কর্মী পাচ্ছে না।”

মিস্টার রিজভি ধারণা করছেন, “দুর্বল শ্রমবাজার”-এর কারণে অস্থায়ী অভিবাসীদের দেশে ফেরত যাওয়ার ঘটনা ঘটতেই থাকবে।

“তারা যদি কোনো কাজ না পায় কিংবা তাদের বিদ্যমান কর্ম-সংস্থান ধরে রাখতে না পারে, সেক্ষেত্রে অস্ট্রেলিয়ায় তাদের টিকে থাক অনেক কঠিন হবে। কারণ, তারা কোনো সরকারি সহায়তা পায় না।”

গতবছর অক্টোবরে ফেডারাল বাজেটে দেখা গেছে যে, অস্ট্রেলিয়ার নেট মাইগ্রেশন ইনটেক দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর এই প্রথমবারের মতো ঋণাত্বক হবে এবং এটি আগামী চার বছরের মাঝে আর করোনাভাইরাসের বৈশ্বিক মহামারীর পূর্বাবস্থায় ফিরে আসতে পারবে না।

কমিটি ফর ইকনোমিক ডেভেলপমেন্ট অফ অস্ট্রেলিয়া (সিডা) এর ২০১৯ সালের প্রতিবেদন অনুসারে, স্বল্প-মেয়াদে, বিদেশী অভিবাসনের ক্ষেত্রে অস্থায়ী অভিবাসন সবচেয়ে বেশি অবদান রাখে। ২০১৬-১৭ অর্থবছরে নেট মাইগ্রেশন বৃদ্ধির ক্ষেত্রে এটি ৭১ শতাংশ অবদান রেখেছিল।
রিপোর্টটিতে অস্থায়ী ভিসাধারীদের ভূমিকার কথাও তুলে ধরা হয়। দক্ষ অভিবাসীরা দক্ষ কর্মীদের অভাব পূরণ করে থাকেন এবং আয়কর প্রদান ও অর্থ ব্যয়ের মাধ্যমে তারা সামগ্রিকভাবে অর্থনীতিতে অবদান রেখে থাকেন।

সিডা-র একজন বয়োজ্যেষ্ঠ অর্থনীতিবিদ গ্যাব্রিয়েলা ডি’সুজা বলেন, টেম্পোরারি স্কিলড মাইগ্রেশনের দীর্ঘ ইতিহাস আছে অস্ট্রেলিয়ায়। তিনি বলেন, “আমাদের শিক্ষা-ব্যবস্থা কতোটা সুসজ্জিত সেটা বিষয় নয়, সেখানে এমন কিছু প্রজেক্ট আছে, যেগুলোতে তাৎক্ষণিকভাবে দক্ষ জনগোষ্ঠীর চাহিদা রয়েছে।”

“বর্তমানে সীমান্ত বন্ধ থাকার কারণে এসব ক্ষেত্রে বাধা পড়েছে এবং দীর্ঘ মেয়াদে উন্নয়ন ব্যাহত হচ্ছে।”

ডিপার্টমেন্ট অফ হোম অ্যাফেয়ার্সের তথ্য-উপাত্ত থেকে দেখা যায়, গত বছর প্রায় ৬০০,০০০ অস্থায়ী অভিবাসী তাদের দেশে ফেরত গেছে। এদের মধ্যে প্রায় ৪১,০০০ ভারতীয়। তাদের অনেকেই করোনাভাইরাসের বৈশ্বিক মহামারীর আগে চলে গেছেন।
Temp visa holder
Apoorva Kapoor Source: Supplied
তাদের একজন অপূর্ব কাপুর। তিনি মেলবোর্ন-ভিত্তিক একটি আইট ফার্মে উচ্চ-বেতনে কাজ করতেন। গত বছর মার্চ মাসে ভারতে যাওয়ার আগে তিনি মাত্র তার শিক্ষা-ঋণ পরিশোধ করা শুরু করেছিলেন।

স্থায়ী অভিবাসনের জন্য তিনি আবেদন করেছেন। তিনি বলেন, “উদ্বিগ্ন বোধ করছি এবং অত্যন্ত অসহায় লাগছে”। কারণ, এত ভাল কাজ পাওয়া সত্ত্বেও, এত দক্ষতা থাকা সত্ত্বেও তিনি দূর থেকে এই কাজ সম্পাদন করতে পারছেন না। তার পোস্ট-গ্রাজুয়েট ভিসার মেয়াদ বহু আগেই শেষ হয়ে গেছে।

তিনি বলেন,

“আমার পুরো জীবন স্থবির হয়ে পড়েছে। অস্ট্রেলিয়ায় ফিরে যাওয়া এবং সেখানে কাজ করার জন্য আমার ৪৮৫ ভিসা বৈধ থাকার বিষয়টি গুরুত্বপূর্ণ ছিল। এটি আমাকে একটি বৈধ ভিসা ধরে রাখতে সক্ষম করতো, এমনকি আমার ৪৮৫ ভিসার মেয়াদ শেষ হয়ে গেলেও।”

Follow SBS Bangla on .

Share
Published 17 February 2021 2:27pm
By Avneet Arora
Presented by Sikder Taher Ahmad


Share this with family and friends