ভিসা ছাড় দিতে যাচ্ছে অস্ট্রেলিয়া সরকার। প্যারেন্ট ভিসার আবেদনকারীদেরকে এই কোভিড-১৯ বৈশ্বিক মহামারীর সময়টিতে ভিসার অনুমোদন লাভের জন্য অস্ট্রেলিয়ার বাইরে যেতে হবে না।
ভিসা প্রদানের ক্ষেত্রে এই ছাড় দেওয়া না হলে অস্ট্রেলিয়ার বাইরে থেকে আবেদনকারীদেরকে ভিসা ইস্যু হওয়ার সময়টিতে বাধ্য হয়েই অস্ট্রেলিয়ার বাইরে যেতে হতো।
অফশোর প্যারেন্ট ভিসা প্রক্রিয়াকরণের ক্ষেত্রে দীর্ঘ দিন অপেক্ষা করতে হয়। সাধারণত ভিসা আবেদনকারীরা অপেক্ষার এই সময়টিতে টুরিস্ট ভিসায় অস্ট্রেলিয়ায় আগমন করে থাকেন।
মেলবোর্নে বসবাসকারী দম্পতি কেন লিউ এবং জুলি জিন, তাদের উভয়ের বাবা-মা চীন থেকে গত বছরের মে মাসে অস্ট্রেলিয়ায় আসেন এবং তারা এখনও এখানে আছেন। তারা কন্ট্রিবিউটোরি প্যারেন্ট ভিসার জন্য আবেদন করেছেন।জুলি বলেন, তার শ্বশুর ডং লিউ এবং শাশুড়ি লিক্সিয়া ওয়াং প্যারেন্ট ভিসা প্রক্রিয়ার চূড়ান্ত ধাপ হিসেবে অস্ট্রেলিয়া ছেড়ে যাওয়ার ব্যাপারে উদ্বিগ্ন ছিলেন।
Grandparents Dong Liu and Lixia Wang with their granddaughter. Source: Supplied
এসবিএস নিউজকে তিনি বলেন,
“মানুষ বিদেশে গিয়ে আটকে পড়েছে— এ জাতীয় সকল খবরই আমরা পড়ি এবং তারা তাদের নিজের দেশে ফিরে যেতে পারে না। তাই আমরা অনেক উদ্বিগ্ন।”
জুলি আশাবাদী যে, সাময়িক এই ছাড় প্রদানের ফলে তার শ্বশুর-শাশুড়িকে আর “এসব সমস্যার” মধ্য দিয়ে যেতে হবে না এবং তারা অস্ট্রেলিয়ায় তাদের পরিবারকে সহায়তা করা চালিয়ে যেতে পারবেন।
তিনি বলেন,
“আমার পুরো পরিবারের জন্য এটি অনেক বড় স্বস্তির কারণ।”
তাদের দু’বছর বয়সী মেয়ের জন্যও এ কথা সত্য।
তিনি আরও বলেন,
“আসল কথা হলো, এর ফলে আমরা একসাথে বাস করতে পারছি।”
এই পরিবর্তন প্রযোজ্য হবে প্যারেন্ট (সাবক্লাস ১০৩) ভিসা, কন্ট্রিবিউটোরি প্যারেন্ট (সাবক্লাস ১৭৩) এবং (সাবক্লাস ১৪৩) ভিসাগুলোর জন্য, যারা অস্ট্রেলিয়ার বাইরে থেকে প্রাথমিকভাবে এসব ভিসার জন্য আবেদন করেছেন।
অতীতে, আবেদনকারীরা প্রায়ই তাদের প্রিয়জনদেরকে দেখার জন্য অস্ট্রেলিয়ায় ভ্রমণ করতেন এবং ভিসা মঞ্জুর হওয়ার জন্য সেই সময়টিতে কোনো ছোট-খাটো ভ্রমণে কিংবা অবকাশ কাটাতে অস্ট্রেলিয়ার বাইরে চলে যেতেন।
তবে, আবেদনকারীরা উদ্বেগ প্রকাশ করেন যে, কোভিড-১৯ এর কারণে সীমান্ত বন্ধ করায় এবং কোয়ারেন্টিনের বিভিন্ন শর্ত থাকার কারণে বহু লোক অবাধে বিদেশ ভ্রমণ করতে পারছেন না।
এই বৈশ্বিক মহামারীর সময়ে ভ্রমণের খরচ নিয়েও পরিবারগুলো শঙ্কিত।
ইমিগ্রেশন মিনিস্টার অ্যালেক্স হাক বলেন, ভিসাধারীদের ওপর কোভিড-১৯ এর অভিঘাত নিয়ে সবসময় কাজ করে যাচ্ছে সরকার।
তিনি বলেন,
“কতিপয় প্যারেন্ট ভিসা আবেদনকারীর জন্য পরিবর্তন আনার প্রচেষ্টা চালাচ্ছে সরকার, যারা অস্ট্রেলিয়ার বাইরে থেকে ভিসার আবেদন করেছেন এবং কোভিড-১৯ বৈশ্বিক মহামারীর সময়টিতে অস্ট্রেলিয়ায় থাকা অবস্থায় ভিসার অনুমোদন চাচ্ছেন।”
“এই সাময়িক ছাড় প্রযোজ্য হবে প্যারেন্ট ভিসা সাবক্লাসগুলোর প্রতি এবং উপযুক্ত আবেদনকারীরা, যারা অস্ট্রেলিয়ায় আছেন এবং কোভিড-১৯ এর কারণে অফশোরে (অস্ট্রেলিয়ার বাইরে) যেতে পারছেন না, তাদের ভিসা মঞ্জুর করা হবে।”
সেটেলমেন্ট কাউন্সিল অফ অস্ট্রেলিয়ার সিইও স্যান্ড্রা রাইটও বিভিন্ন পরিবারের বাবা-মায়ের ভিসা লাভের অনিশ্চয়তা দূর করার ক্ষেত্রে এই পরিবর্তনকে স্বাগত জানান।
এসবিএস নিউজকে তিনি বলেন,
“আমরা আসলেই খুশি যে, সরকার পরিবারগুলোর জন্য এই কঠিন সময়ে এই বিষয়ে নমনীয়তা প্রদর্শন করেছে।”
“সন্তানদেরকে বাবা-মায়েরা অনেক সহায়তা করেন এবং তারা তাদের জন্য অনেক কল্যাণকর সাব্যস্ত হন।”
লেবার এমপি জুলিয়ান হিল পরিবারগুলোর সমর্থনে দাঁড়িয়েছেন এবং সরকারের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন ভিসার শর্তসমূহ সংশোধন করার জন্য।
তিনি বলেন, এই সিদ্ধান্ত এখন সময়োত্তীর্ণ হয়ে গেছে।
এসবিএস নিউজকে তিনি বলেন,
“তাদের সঞ্চয় বিনষ্ট করে অপ্রয়োজনীয় এবং বিপদজনক ভ্রমণে বিদেশে যাওয়ার ক্ষেত্রে ইতোমধ্যে শত শত ব্যক্তি তাদের জীবনের ঝুঁকি নিয়েছেন।”
“শুধুমাত্র তাদের ভিসা মঞ্জুর হওয়ার জন্য, সরকার কর্তৃক সেখানে বিমানযোগে যেতে এবং আবার ফিরে আসতে বাধ্য হয়েছেন।”
এই পরিবর্তনগুলোর ফলে ভিসা আবেদন প্রক্রিয়াকরণের সময়সীমায় কোনো প্রভাব পড়বে না।
এই পরিবর্তনগুলো ২০২১ সালের প্রথম কোয়ার্টারে (ত্রৈমাসিক পর্বে) কার্যকর করা হবে বলে আশা করা হচ্ছে।