ভারতের উত্তরপ্রদেশে করোনা লুকোলে ৩ বছর জেল

ভারতের উত্তরপ্রদেশে করোনাভাইরাস সংক্রমণ রুখতে একটি অর্ডিন্যান্স আনা হয়েছে,যেখানে কোভিড-১৯ রোগ গোপন করাকে দণ্ডনীয় অপরাধ হিসেবে ঘোষণা করা হয়েছে।মার্চে দিল্লির একটি বিতর্কিত ধর্মীয় জমায়েতে অংশ নেওয়া উত্তরপ্রদেশের অনেকে তাঁদের রোগ গোপন করে আছেন বলে অভিযোগ।এছাড়া রাজ্যের হাসপাতাল ও কোয়ারেনটাইন কেন্দ্রগুলি থেকে বেশ কয়েক জনের পালিয়ে আসার ঘটনা সামনে এসেছে।ফলে ঝুঁকির মুখে দাঁড়িয়েছে উত্তরপ্রদেশের জনস্বাস্থ্য।

India has now passed 31 lac coronavirus case, and experts say peak is yet to come.

India has now passed 31 lac coronavirus case, and experts say peak is yet to come. Source: EPA

বুধবার ভারতের উত্তরপ্রদেশ রাজ্য় মন্ত্রিসভায় গৃহীত অধ্যাদেশ অনুসারে,কোনও করোনা আক্রান্ত আত্মগোপন করে থাকলে তার ১ থেকে ৩ বছরের জেলের সংস্থান রাখা হয়েছে।সেইসঙ্গে গুণতে হবে ৫০ হাজার থেকে ১ লক্ষ টাকা জরিমানা। আর কোনও রোগী চিকিৎসকদের সঙ্গে অভব্য আচরণ করলে ১ থেকে ৩ বছরের জেলের মুখোমুখি হতে হবে। সেইসঙ্গে অভিযুক্তকে ৫০ হাজার থেকে ১ লক্ষ টাকা জরিমানা করা হবে।

এছাড়া লকডাউন ভঙ্গকারীদের বিরুদ্ধেও কড়া শাস্তির সংস্থান করা হয়েছে নয়া অধ্যাদেশে। করোনা সংক্রমণ রুখতে উত্তরপ্রদেশে একটি সংস্থা গঠিত হতে চলেছে। যার প্রধান থাকবেন স্বয়ং মুখ্যমন্ত্রী যোগী আদিত্যনাথ।কেন্দ্রীয় স্বাস্থ্য মন্ত্রকের পরিসংখ্যান অনুসারে, উত্তরপ্রদেশে এখনও পর্যন্ত ২হাজার ৮৮০ জন কোভিড১৯-এ আক্রান্ত হয়েছেন।এর মধ্যে মৃত্যু হয়েছে ৫৬ জনের। আর ৯৮৭ জন সম্পূর্ণ সুস্থ হয়ে উঠেছেন।

এর মধ্যে বুধবার ফের এক লাফে করোনা ৪৯ হাজারের গণ্ডি পেরিয়ে গিয়েছে।গত ২৪ ঘণ্টায় ২ হাজার ৯৫৮ জন নতুন করে আক্রান্ত হয়েছেন।তার ফলে ভারতে মোট করোনা আক্রান্তের সংখ্যা এখন ৪৯ হাজার ৩৯১ জন।গত ২৪ ঘণ্টায় সারা দেশে আরও ১২৬ জনের মৃত্যু হয়েছে।এই নিয়ে ভারতে মৃতের সংখ্যা এখন ১ হাজার ৬৯৪ জন। কেন্দ্রীয় স্বাস্থ্যমন্ত্রক জানিয়েছে,এর মধ্যে ৭০ শতাংশ রোগীই কো-মর্বিডিটির কারণে মারা গিয়েছেন।

পুরো ভারতের নিরিখে করোনা পরিস্থিতি সবচেয়ে ভয়াবহ আকার নিয়েছে মহারাষ্ট্রে।সেখানে ১৫ হাজার ৫২৫ জন আক্রান্ত হয়েছেন।মৃত্যু হয়েছে ৬১৭ জনের।মহারাষ্ট্রের ৩৬টি জেলার মধ্যে ৩৪ টিতেই হানা দিয়েছে করোনা সংক্রমণ। তবে সেখানে সুস্থ হয়ে ওঠার সংখ্যাও সারা দেশের মধ্যে বেশি।এর পরেই রয়েছে গুজরাত। সেখানে করোনা আক্রান্ত ৬ হাজার ২৪৫ জন। মৃত্যু হয়েছে ৩৬৮ জনের।নতুন করে আক্রান্ত যেমন বাড়ছে, তেমনই সারা দেশেই করোনা রোগীদের সুস্থ হয়ে ওঠার সংখ্যাটাও বাড়ছে উল্লেখজনক ভাবে। স্বাস্থ্যমন্ত্রকের হিসাব বলছে, ইতিমধ্যেই ১৪ হাজার ১৮৩ জন রোগী সুস্থ হয়ে উঠছেন।

ভারতের পশ্চিমবঙ্গেও করোনা আক্রান্তের সংখ্যা বৃদ্ধি পাচ্ছে।উদ্ভূত পরিস্থিতিতে এবার কলকাতার মেডিক্যাল কলেজকে পূর্ণসময়ের তৃতীয় পর্যায়ের করোনা হাসপাতাল হিসেবে ঘোষণার সিদ্ধান্তের কথা জানিয়েছেন,মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়।বৃহস্পতিবার থেকে এই হাসপাতাল কাজ শুরু করবে বলে জানিয়েছেন তিনি।দ্রুত পরীক্ষা ও চিকিৎসার জন্য এই সিদ্ধান্ত বলে জানা গিয়েছে।

মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় আরও জানিয়েছেন,প্রাথমিকভাবে ৫০০ শয্যা নিয়ে নতুন পূর্ণ সময়ের কোভিড হাসপাতাল কলকাতা মেডিক্যাল কলেজের কাজ শুরু হবে।এর মধ্যেই করোনায় আক্রান্ত হয়েছেন কলকাতার একটি থানার ওসি।বাইপাসের ধারে একটি বেসরকারি হাসপাতালে তিনি ভর্তি রয়েছেন।ওই পুলিশ আধিকারিক কী ভাবে করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হলেন,তা খতিয়ে দেখা হচ্ছে।এ নিয়ে এখনও পর্যন্ত আট জন করোনা আক্রান্ত হয়েছেন। থানা-ট্রাফিক গার্ডগুলিতে নিয়মিত জীবাণুমুক্ত করার প্রক্রিয়া চলছে।

পশ্চিমবঙ্গে আরও ১১২ জনের শরীরে করোনা ভাইরাসের উপস্থিতি শনাক্ত করা গিয়েছে।যার ফলে রাজ্যে মোট কোভিড আক্রান্তের সংখ্যা বেড়ে হয়েছে ১ হাজার ৪৫৬ জন,জানিয়েছেন স্বরাষ্ট্রসচিব আলাপন বন্দ্যোপাধ্যায়।এদিকে, গত ২৪ ঘণ্টায় রাজ্যে করোনার বলি হয়েছেন আরও ৪ জন। ফলে করোনায় মোট মৃতের সংখ্যা বেড়ে হয়েছে ৭২।

স্বরাষ্ট্রসচিব আরও জানিয়েছেন,গত ২৪ ঘণ্টায় ২৭ হাজার ৫৭১ জনের নমুনা পরীক্ষা করা হয়েছে। আগামীদিনে আরও বেশি বেশি করে করোনার টেস্ট করাতে চায় রাজ্য সরকার।এই মুহূর্তে রাজ্যে ১৫টি ল্যাবে করোনা পরীক্ষা হচ্ছে।এর মধ্যে ১০টি সরকারি ও বাকিগুলি বেসরকারি।সরকারি-বেসরকারি মিলিয়ে আরও ১২টি ল্যাবে পরীক্ষার অনুমতি চেয়ে নবান্নের তরফে আইসিএমআরের কাছে আবেদন করা হয়েছে।এদিকে, কেউ চাইলেই করোনা পরীক্ষা করাতে যেতে পারবেন না বলেও স্পষ্ট করে দিয়েছেন রাজ্যের স্বরাষ্ট্রসচিব।তিনি জানিয়েছেন, করোনা পরীক্ষা নিয়ে আইসিএমআরের সুনির্দিষ্ট গাইডলাইন রয়েছে। সেই গাইডলাইন অনুসারে সমস্ত টেস্ট চলছে।

চাপে মৌলানা সাদ

এদিকে ভারতের তাবলিগি জামাতের প্রধান মৌলানা সাদের উপরে চাপ বাড়াচ্ছে দিল্লি পুলিশের অপরাধ দমন শাখা। জানা যাচ্ছে মৌলানা সাদের পুত্র সঈদকে ২ ঘণ্টা ধরে জেরা করা হয়েছে।জানা যাচ্ছে মৌলানা সাদের সব কাজকর্মের হিসেব এই ছেলের কাছেই রয়েছে।এছাড়াও এনফোর্সমেন্ট ডিরেক্টরেট বা ইডির তরফে মৌলানা সাদের দুই ঘনিষ্ট ব্যক্তিকেও নোটিশ পাঠানো হয়েছে।তাঁদের মধ্যে একজন মার্কাজ কোর গ্রুপের সদস্য।ওই ব্যক্তির উপরে অর্থ তছরুপের অভিযোগ রয়েছে।

অন্য ব্যক্তির বিরুদ্ধে অভিযোগ, তিনি হাওলা অপারেটরের কাজ করতেন।অর্থাৎ তিনি মৌলানা সাদের অর্থ এদিক ওদিক করতেন।ইডি সূত্রে জানা গিয়েছে,ওই দুই ব্যক্তির আইনজীবী ইডিকে জানিয়েছিলেন তাঁদের মক্কেলরা আসতে পারবেন না ইডির দফতরে।এদিকে আইনের নির্দেশ এড়িয়ে বাঁচার চেষ্টা করে চলেছেন।ইডি এখনও পর্যন্ত সাদ-ঘনিষ্ঠ ৯০-এর বেশি সহযোগীকে জিজ্ঞাসাবাদ করছে।

সম্প্রতি মৌলানা সাদকে নোটিশ দেয় দিল্লি পুলিশের অপরাধ দমন শাখা।তাঁর কাছে জানতে চাওয়া হয়, তিনি সরকারি হাসপাতালে গিয়ে করোনার পরীক্ষা করিয়েছেন কিনা।আর যদি করিয়ে থাকেন,তাহলে এখনও কেন সেই রিপোর্ট জমা দেননি অপরাধ দমন শাখায়।ওই রিপোর্ট হাতে পেলে তা খতিয়ে দেখে তবেই তাবলিগি জামাতের প্রধান মৌলানা সাদের বিষয়ে পরবর্তী তদন্তের কাজ শুরু করা হবে।প্রসঙ্গত, এর আগে মৌলানা সাদ দাবি করেছেন,তিনি দু’বার করোনা পরীক্ষা করিয়েছেন।দু’বারই পরীক্ষার ফলাফল নেগেটিভ এসেছে।ডক্টর লাল প্যাথোলজি থেকে তিনি ওই পরীক্ষা করিয়েছেন।


Share
Published 7 May 2020 5:13am
By Partha Mukhapadhdhaya
Presented by Abu Arefin

Share this with family and friends