এসিটি মাল্টিকালচারাল অ্যাওয়ার্ড জয়ী নাজমুল ২০২১-এর কোভিড-১৯ লকডাউনে সম্পূর্ণ নিজস্ব উদ্যোগে কমিউনিটির সদস্যদের জন্য ধর্মীয় ও সাংস্কৃতিকভাবে উপযুক্ত খাবারের ব্যবস্থা করেছিলেন।
তিনি তার অলাভজনক সংস্থা রাহিমুনের মাধ্যমে আফগানিস্তান থেকে আসা আশ্রয়প্রার্থী কষ্টে থাকা পরিবার এবং ব্যক্তিদের সহায়তার জন্য রেড ক্রসের সাথে মিলে কাজ করেছেন।
নাজমুল কমিউনিটির মানুষদের ঐক্যবদ্ধ করে এবং তাদের সাথে নিয়ে আর্থ-সামাজিকভাবে সবচেয়ে দুর্বল মানুষদের সাহায্য করার বিষয়ে উৎসাহী।
এই পুরস্কার সম্পর্কে এসবিএস বাংলাকে মি. নাজমুল হাসান বলেন, “এতে আমি খুবই বিনীত এবং সম্মানিত বোধ করছি, এবং এই অ্যাওয়ার্ডের জন্য কমিউনিটির মধ্যে বিবেচিত হতে পেরে কৃতজ্ঞ বোধ করছি৷ এটা সত্যিই একটি বড় সম্মান।”
"এই স্বীকৃতি অবশ্যই আমাকে বহুসংস্কৃতি এবং আন্তঃসাংস্কৃতিক বোঝাপড়ায় ইতিবাচক অবদান রাখতে এবং আমাদের সাংস্কৃতিকভাবে বৈচিত্র্যময় কমুউনিটির জন্য কাজ করতে অনুপ্রাণিত করবে।"
বহুসংস্কৃতির সম্প্রদায়কে সাহায্য করার বিষয়ে নাজমুল বলেন, "গত বছর ক্যানবেরায় কোভিড লকডাউনের সময় আমি আর্থিকভাবে কষ্টে থাকা ক্যানবেরাবাসীদের মধ্যে বিনামূল্যে হালাল গরম খাবার অফার করেছিলাম সোশ্যাল মিডিয়ার মাধ্যমে। তারপর আফগানিস্তান থেকে রেফিউজিদের জন্য রেড ক্রসের সহযোগিতায় আমার এই প্রচেষ্টা আরো প্রসারিত হয়েছে।"
"আমি কমুউনিটির সুবিধাবঞ্চিত সদস্যদের সাহায্য করার জন্য কাজ করি এবং সামাজিক এবং ভাষাগতভাবে বিভিন্ন ব্যাকগ্রাউন্ডের ব্যক্তিদের মধ্যে যারা নানা প্রতিবন্ধকতার সুম্মুখীন হচ্ছেন তাদের সহায়তা করি।"
নাজমুল হাসান তার কর্মকান্ডকে আরো বিস্তৃত করতে গড়ে তুলেছেন 'রাহিমুন' নামে একটি অলাভজনক সংস্থা-যার অর্থ করুণাময়তা। রাহিমুন এখন বিনামূল্যে গরম খাবার, গ্রোসারী, হোয়াইট গুডস, এবং গৃহস্থালির মৌলিক প্রয়োজনীয় জিনিসগুলো অর্থাভাবে থাকা পরিবারগুলোর মধ্যে বিতরণ করে।
নাজমুলের বিভিন্ন সামাজিক কাজের মধ্যে আছে অনুবাদকদের সাহায্যে আফগান শরণার্থীদের তাদের ভাষার প্রতিবন্ধকতা কাটিয়ে উঠতে সহায়তা করা, সোশ্যাল সার্ভিস প্রদান যেমন স্থানীয় নিয়োগকর্তাদের কাছে তাদের জন্য রেফারেন্স দিয়ে কর্মসংস্থানে সহায়তা এবং বৃহত্তর কমিউনিটিতে তাদের অংশগ্রহণে জন্য কমিউনিটি ইভেন্টের আয়োজন করা ইত্যাদি।
একটি সরকারি প্রতিষ্ঠানের সিনিয়র আইটি কর্মকর্তা নাজমুল হাসান এর আগে এবিসি ক্যানবেরা কমিউনিটি স্পিরিট অ্যাওয়ার্ড ২০২২ জিতেছেন।
পারিবারিক ও ধর্মীয় মূল্যবোধের অনুসারী নাজমুল বলেন, তার সকল জনহিতকর কাজের অনুপ্রেরণা ইসলামী শিক্ষা।
"আমাকে সমাজে এই ধরনের কাজ করতে সক্ষমতা দেওয়ার জন্য পরম করুনাময় আল্লাহ তায়ালার নিকট অনেক কৃতজ্ঞ। আল্লাহ যেন আমার এই কাজকে কবুল করেন," বলেন তিনি।তাই সকল ধর্মীয় ও সাংস্কৃতিক পটভূমি থেকে আসা ক্যানবেরাবাসীদের জন্য সহায়তার হাত বাড়িয়ে দিয়ে মি. নাজমুল হাসান হয়ে উঠেছেন কমুউনিটির একজন রোল মডেল।
Nazmul Hasan (R) with his brother Mahmodul Hassan. Source: Nazmul Hasan
জনহিতকর কাজ করতে গিয়ে নিজ পরিবারের সদস্যদের সহযোগিতার বিষয়ে নাজমুল বলেন, আমি আমার স্ত্রী এবং সন্তানদের কাছে অত্যন্ত কৃতজ্ঞ, যারা আমাকে কমিউনিটির জন্য এই গুরুত্বপূর্ণ কাজটি করতে সহায়তা করতে তাদের সময় উৎসর্গ করেছেন।
"তাছাড়া আমি আমার বাবা-মাকেও ধন্যবাদ জানাই যারা আমাকে দেখিয়েছেন কীভাবে অন্যদের সাহায্য করতে হয়," বলেন নাজমুল।
এছাড়া এসিটি মাল্টিকালচারাল অ্যাওয়ার্ড ২০২২-এ আরো বাংলাভাষী ব্যক্তি ও সংগঠনগুলো তাদের কাজের জন্য অত্যন্ত প্রশংসিত (Highly Commended) হয়েছেন।
এই তালিকায় ইন্ডিভিজুয়াল চ্যাম্পিয়ন অ্যাওয়ার্ড ক্যাটাগরিতে প্রশংসিত হয়েছেন ড. শামারুহ মির্জা।
কোন ব্যক্তি সে যে সাংস্কৃতিক পটভূমিরই হোন না কেন মানসিক স্বাস্থ্য নিয়ে আলোচনা করা তাদের জন্য বেশ কঠিন বিষয় হতে পারে। এর আলোকে ড. মির্জা তার সংস্থা সিতারা'স স্টোরি প্রতিষ্ঠার মাধ্যমে মানসিক স্বাস্থ্য সমস্যা নিরসনে বিভিন্ন সাংস্কৃতিক পটভূমি থেকে আসা নারীদের প্রশিক্ষণ দেওয়া এবং কমিউনিটিতে সচেতনতা বাড়াতে সহায়ক ভূমিকা পালন করেছেন।
আর্ট, মিডিয়া বা কালচার অ্যাওয়ার্ড ক্যাটাগরিতে প্রশংসিত হয়েছেন জাহিন তানভীর।
মি. জাহিন তানভীর একজন তরুণ নেতা হিসেবে তার মতো তরুণদের জন্য অত্যন্ত কৃতিত্বের সাথে সামাজিক মিডিয়া এবং অন্যান্য অপ্রচলিত চ্যানেল জুড়ে কাজ করছেন। তিনি বিভিন্ন ভাষা-সাংস্কৃতিক পটভূমির তরুণরা কী কী সমস্যার মুখোমুখি হচ্ছেন সে সম্পর্কে সচেতনতা তৈরির কাজ করছেন।
এই ক্যাটাগরিতে বাংলা রেডিও, ক্যানবেরাও তাদের কার্য্যক্রমের জন্য অত্যন্ত প্রশংসিত হয়েছে।
টুএক্সএক্স এফএম-এ বাংলা রেডিও ক্যানবেরা ১৯৯৯ সাল থেকে বাংলা কমিউনিটির কণ্ঠস্বর হিসেবে সহযোগিতা দিয়ে আসছে। সংস্থাটি এসিটিতে কোভিড - ১৯ টিকা নিতে উদ্বুদ্ধকরণ এবং প্রচারে মুখ্য ভূমিকা পালন করছে।