বাকস্বাধীনতা ব্যাহত করতে পারে এমন আশঙ্কায় বিতর্কিত মিসইনফরমেশন বিল প্রত্যাহার করে নিয়েছে সরকার।
গত নভেম্বরে হাউজ অব রিপ্রেজেন্টেটিভসেকম্যুনিকেশন্স লেজিসলেশন অ্যামেন্ডমেন্ট (কমব্যাটিং মিসইনফরমেশন অ্যান্ড ডিসইনফরমেশন) বিল ২০২৪ পাস হয়েছিল, তবে সিনেট ভোটে (৬০-৫) এর বিরুদ্ধে মত এলে পরে কম্যুনিকেশন্স মিনিস্টার মিশেল রোল্যান্ড তা বাতিল করে দিয়েছিলেন।
বিলটি কীভাবে বাকস্বাধীনতার ওপর নেতিবাচক প্রভাব ফেলতে পারে তা নিয়ে কথা বলেছেন সিনেটররা।
"জনসাধারণের বিবৃতি এবং সিনেটরদের সাথে আলোচনার ভিত্তিতে এটি স্পষ্ট যে সিনেটের মাধ্যমে এই প্রস্তাবটি আইনে পরিণত হওয়ার কোনো সম্ভাবনা নেই," মিনিস্টার রোল্যান্ড বলেন।
LISTEN TO

Can we fight misinformation without threatening our freedom of speech?
SBS English
06:20
সরকার মূলত গণতান্ত্রিক অস্ট্রেলিয়ায় তথ্যের অবাধ প্রবাহ, বিশেষত ডিজিটাল প্ল্যাটফর্মগুলিতে, অস্ট্রেলিয়ানদের জন্য ক্ষতিকারক বিভ্রান্তিকর বা মিথ্যা তথ্য সহজেই ছড়িয়ে দেওয়ার বিষয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেছিল।
বিলটি ছিল ডিজিটাল যোগাযোগ মাধ্যম পরিচালনাকারীদের ভুল তথ্য এবং মিথ্যা তথ্যের ঝুঁকির বিষয়ে সঠিক পদক্ষেপ নেয়ার ব্যাপারে 'ক্ষমতা' প্রদানের মাধ্যমে এটি মোকাবেলা করার প্রচেষ্টা।
বিলটি প্রত্যাহারের ঘোষণা দিয়ে এক বিবৃতিতে মিনিস্টার রোল্যান্ড স্বীকার করেছেন যে "কোনো একটি পদক্ষেপ এ ব্যাপারে নিখুঁত সমাধান হতে পারে না"।
তিনি বলেন, "ডিজিটাল প্ল্যাটফর্মগুলোতে অস্ট্রেলিয়ানদের জন্য আরও ভালো সুরক্ষা নিশ্চিত করার জন্যে আমাদের অবশ্যই এই ব্যবস্থা উন্নত করা অব্যাহত রাখতে হবে।
'একটি উন্নততর ভারসাম্য'
ওয়ার্ল্ড ইকোনমিক ফোরামের (ডব্লিউইএফ) মতে, মিসইনফরমেশন ও ডিসইনফরমেশন এই মুহূর্তে সবচেয়ে বড় বৈশ্বিক ঝুঁকি।
বিশ্বজুড়ে অনেক রাষ্ট্রের সরকার এই ঝুঁকি মোকাবেলায় বিভিন্ন বিধিবিধান বাস্তবায়ন করে চলেছে।
তবে ডব্লিউইএফ এটাও উল্লেখ করেছে যে নিয়ন্ত্রণের গতি এবং কার্যকারিতা তথ্য বিকৃতির গতির সাথে পাল্লা দিতে পারছে না।
হিউম্যান রাইটস কমিশনার লোরেন ফিনলে এসবিএস এক্সামিনসকে বলেন, এগুলো নিয়ন্ত্রণের জন্য সঠিক ভারসাম্য বজায় রাখা দরকার।
"আমাদের বাকস্বাধীনতা এবং অনলাইন নিরাপত্তার মধ্যে আরও নিঁখুত ভারসাম্য খুঁজে বের করার দিকে নজর দেওয়া দরকার, কারণ আমাদের নিশ্চিত করতে হবে যে অনলাইন স্পেসগুলি নিরাপদ এবং এটি করার জন্য অপ্রয়োজনীয়ভাবে বাক স্বাধীনতাকে সীমাবদ্ধ করার দরকার নেই," তিনি বলেন।
"আমাদের যা করা দরকার তার মধ্যে একটি হলো গণতান্ত্রিক চেতনা রক্ষা করা, যেখানে আমাদের সত্যিকারের সভ্য ও গঠনমূলক উপায়ে বিভিন্ন ধারণা, বৈচিত্র্যময় দৃষ্টিভঙ্গি এবং ভিন্ন প্রেক্ষাপটের প্রকাশে বাধা আসবে না।
"অস্ট্রেলিয়ায় আমাদের নিরাপদ অনলাইন স্পেস তৈরি এবং বাকস্বাধীনতা রক্ষার মধ্যে ভারসাম্য খুঁজে বের করতে হবে।“
সরকার কীভাবে মিসইনফরমেশন ছড়ানোর সমস্যার মোকাবেলা করতে পারে?
মেলবোর্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের মেলবোর্ন সেন্টার ফর সিটিজের রিসার্চ ফেলো ইকা ট্রিসবার্গ ভুল তথ্যের বিষয়টি মোকাবেলার জন্য একটি কার্যপ্রণালী তৈরি করেছেন, যা আমাদের দেশেও ফলপ্রসূ হতে পারে।
"এটি স্থানীয় পর্যায়ে কাজে লাগানো হচ্ছে," এসবিএস এক্সামিনসকে বলেন তিনি।
"সরকারের স্থানীয় স্তরগুলি সরকারের সবচেয়ে বিশ্বস্ত স্তর এবং সহজেই তাদের কাছে পৌঁছানো যায়... তারা চটপটে, স্থানীয় মানুষদের সঙ্গে সম্পৃক্ত, সহযোগিতা প্রদানে দক্ষ এবং জটিল সামাজিক সমস্যা সমাধানের জন্য অত্যন্ত কার্যকরী।
এই পরিকল্পনায় তিন পর্যায়ের কৌশল ব্যবহারের প্রস্তাব রয়েছে। শুরুতেই মিসইনফরমেশন চিহ্নিত করে ফেলা, তারপর সেটির ছড়িয়ে পড়া প্রতিরোধ এবং সবশেষে ভুল তথ্য শুধরে দিয়ে সঠিক তথ্য পুনরুদ্ধার করা।
ট্রিসবার্গ এবং অন্য গবেষকরা দেখেন যে একটি পক্ষপাতহীন পদ্ধতি এক্ষেত্রে অপরিহার্য, কারণ বিভাজনের দ্বারা বিভ্রান্তি বৃদ্ধি পায়।
LISTEN TO

What is misinformation and disinformation?
SBS Audio
04:35
এর সাথে রাজনীতি জড়িয়ে গেলে কী হয়?
বিলের বিস্তারিত ব্যাখ্যা দেয়া স্মারকলিপিতে 'মানবাধিকারের প্রভাব' উপশিরোনামের অধীনে একটি সতর্কবাণী ছিল যে, আইনটি কারও গোপনীয়তা এবং বাক স্বাধীনতার অধিকারকে সীমাবদ্ধ করে ফেলতে পারে।
নথিতে আরও বলা হয়, আইন করা হলে ডিজিটাল কমিউনিকেশন প্ল্যাটফর্ম সরবরাহকারী সংস্থাগুলি যেসব পদক্ষেপ নিবে তাতে কনটেন্ট নিয়ন্ত্রণের ক্ষেত্রে 'অতিরিক্ত সতর্কতা' অবলম্বন করা হতে পারে।
এতে বলা হয়, 'এগুলো নেতিবাচক প্রভাব ফেলতে পারে, যা বাকস্বাধীনতার ওপর চাপ সৃষ্টি করবে।‘
সামনে এগিয়ে যাওয়ার আর কী উপায় আছে?
অনেকেই বলছেন, মিসইনফরমেশন ও ডিসইনফরমেশন নিয়ন্ত্রণের সম্পূর্ণ দায় সরকারের ওপর পড়া উচিত নয়।
বাকস্বাধীনতার একজন সক্রিয় সমর্থক জশ জেপস এসবিএস এক্সামিনসকে বলেন, প্রযুক্তি সংস্থাগুলির উপর এই দায়িত্ব দেয়া উচিত।
তিনি বলেন, তাদের আরও স্বচ্ছ হতে হবে।
"আমি এই স্বাধীনতা নিয়ন্ত্রণের বিরোধীতা করি, এবং সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম প্রতিষ্ঠানগুলো কী করছে, তাদের অ্যালগরিদম কী ধরনের কনটেন্টের দিকে আমাদের ঠেলে দিচ্ছে এবং অনলাইনে ছড়িয়ে পড়া বক্তব্যের মানের ওপর এর কী প্রভাব পড়ছে তা নিয়ে গবেষণার ফলাফল আমাদের জানতে দিতে হবে," বলেন মি. জেপস।
“এরকম একটা সময় যখন সবাই নিজ নিজ পছন্দের খবর ও তথ্য নিজেদের ফিডে দেখছে, এভাবে সবার ঐক্যবদ্ধ থাকাটা মুশকিল। আমি মনে করি, এরকম একটি জটিল সামাজিক সমস্যার সমাধান খোঁজার চেয়ে, এর পেছনে যে গবেষণা ভূমিকা রাখছে, সেটি জেনে নিয়ে সমাধান করাটা সহজতর হবে।“
LISTEN TO

Do Australians have freedom of speech?
SBS English
03:31
Editor's note: This article was updated on December 3 2024, to clarify reasons for the bill's withdrawal.