সোমবার সুরাটের বরেলি বাজার এলাকার সামনে জড়ো হয়েছিলেন বহু সংখ্যক পরিযায়ী শ্রমিক। পরিস্থিতি সামাল দিতে পুলিশে খবর দেওয়া হয়।তবে পুলিশকে দেখেই তাদের লক্ষ করে পাথর ছুড়তে থাকে বিক্ষোভকারী শ্রমিকরা।বেশ কয়েকটি গাড়িতে ভাঙচুর চালানো হয়।পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে কাঁদানে গ্যাসের শেল ফাটায় পুলিশবাহিনী।এলাকায় বাড়তি বাহিনী পাঠানো হয়।
সুরাটেরই পালনপুর এলাকাতেও পরিযায়ী শ্রমিকদের আরও একটি বিক্ষোভের ঘটনা ঘটে।গত সপ্তাহে সুরাটে একটি হিরের কোম্পানির অফিসের বাইরে বিক্ষোভে অংশ নেন কয়েকশো পরিযায়ী শ্রমিক।লকডাউনেও তাঁদের দিয়ে কাজ করানো হচ্ছে বলে অভিযোগ করেন তাঁরা।তাঁদের খাওয়া-দাওয়াও ঠিকমতো জুটছে না বলে জানিয়ে,বাড়ি ফেরানোর দাবিতে সোচ্চার হয়েছিলেন শ্রমিকরা।সেই একই দিনে সুরাটের দিনদোল এলাকায় লকডাউন মেনে চলার কথা বলতে গিয়ে আক্রান্ত হন এক পুলিশকর্মী। নিরাপত্তা রক্ষীদের লক্ষ করে পাথর ছোড়া হয়।
ভারতে কোভিড-১৯ আক্রান্তের সংখ্যা বেড়ে ৪৩ হাজার ছুঁইছুঁই। সোমবার বিকেলে দেওয়া স্বাস্থ্যমন্ত্রকের হিসেবে গত ২৪ ঘণ্টায় নতুন করে করোনাভাইরাসে আক্রান্তের সংখ্যা বেড়েছে ২ হাজার ৫৭৩।এই বৃদ্ধির জেরে ভারতে করোনাভাইরাসে আক্রান্তের মোট সংখ্যা হল ৪২ হাজার ৮৩৬। এদের মধ্যে ১১ হাজার ৭০৬ জন সুস্থ হয়েছেন।করোনাভাইরাসের জেরে ভারতে ২৪ ঘণ্টায় মৃত্যু হয়েছে ৮৩ জনের। এই বৃদ্ধির জেরে সোমবার বিকেল পর্যন্ত করোনাভাইরাসে মৃত্যু হয়েছে ১ হাজার ৩৮৯ জনের।
করোনাভাইরাসের জেরে মৃত্যুর সংখ্যায় দেশের মধ্যে শীর্ষে রয়েছে মহারাষ্ট্র। সে রাজ্যে এখনও পর্যন্ত ৫৪৮ জন প্রাণ হারিয়েছেন। তার পরেই গুজরাত।সেখানে মৃত্যু হয়েছে ২৯০ জনের।মধ্যপ্রদেশে মৃত্যু হয়েছে ১৬৫ জনের।এই তিনটি রাজ্য ছাড়া বাকি আর সব রাজ্যেই মৃতের সংখ্যা ১০০ নীচে।আক্রান্তের নিরিখে দেশের রাজ্যগুলির মধ্যে শীর্ষে রয়েছে মহারাষ্ট্র। ৬৭৮ জন বেড়ে সেখানে মোট আক্রান্তের সংখ্যা এখন ১২ হাজার ৯৭৪ জন।আক্রান্তের সংখ্যায় মহারাষ্ট্রের পরেই রয়েছে গুজরাত। সেখানে মোট আক্রান্ত ৫৪২৮ জন। দিল্লিতে ৪৫৪৯ জন, তামিলনাড়ুতে ৩০২৩, রাজস্থানে ২৮৮৬, উত্তরপ্রদেশে ২৭৪২ জন করোনা আক্রান্ত হয়েছেন।কেন্দ্রীয় স্বাস্থ্যমন্ত্রকের দেওয়া তথ্য অনুসারে, করোনাভাইরাসের কবলে পশ্চিমবঙ্গে আক্রান্তের সংখ্যা দাড়িয়েছে ৯৬৩।
এদিকে করোনায় মৃত্যুর হার গোটা দেশের মধ্যে পশ্চিমবঙ্গে সবচেয়ে বেশি। এই পরিসংখ্যানই ইঙ্গিত দিচ্ছে: রাজ্যে নমুনা পরীক্ষা কম হয়েছে।নজরদারি দুর্বল,সংক্রমিতদের খুঁজে সঠিক ভাবে চিহ্নিতও করা হয়নি।দু’সপ্তাহ কলকাতায় থাকার পর দিল্লি ফেরার আগে রাজ্যের মুখ্যসচিবকে চিঠি দিয়ে এমনটাই জানিয়েছে কেন্দ্রীয় সরকারের পাঠানো পর্যবেক্ষক দল।সোমবার মুখ্যসচিব রাজীব সিনহাকে পাঠানো চিঠিতে নিজেদের চূড়ান্ত পর্যবেক্ষণের এ কথাই জানিয়েছেন কলকাতা-সহ চার জেলায় পর্যবেক্ষণে আসা কেন্দ্রীয় দলের প্রধান অপূর্ব চন্দ্র।
এই চিঠি থেকে ইঙ্গিত স্পষ্ট,করোনা প্রসঙ্গে রাজ্যের বিরুদ্ধে কড়া রিপোর্ট দিতে চলেছে কেন্দ্রীয় দল।চিঠির শুরুতেই রাজ্য সরকারের বিরুদ্ধে ফের একরাশ অসহযোগিতার অভিযোগ তুলে ধরা হয়েছে।অপূর্ব চিঠিতে লিখেছেন,গত দু’সপ্তাহ ধরে তাঁরা গোটা পরিস্থিতি খতিয়ে দেখেছেন।প্রথমেই তিনি মুখ্যসচিবের কাছে অভিযোগ করেছেন, শুরু থেকে কেন্দ্রীয় দলের প্রতি শত্রুমনোভাবাপন্ন আচরণ করেছে রাজ্য।অপূর্বের দাবি, তিনি রাজ্যকে মোট সাতটি চিঠি দিয়েছেন।বিভিন্ন দফতরের সচিব-সহ একাধিক ব্যক্তির সঙ্গে কথা বলতে চেয়েছিলেন।বেশ কিছুও তথ্য জানতে চেয়েছিলেন।অভিযোগ,অধিকাংশ তথ্যই হাতে আসেনি।
অভিযোগ যে সত্যি ,কিছুক্ষনের মধ্যে কার্যত মেনে নিয়েছেন মুখ্যসচিব রাজীব সিনহা।জানিয়েছেন,রাজ্যে এখনও পর্যন্ত কোভিড আক্রান্ত হয়েছেন ১ হাজার ২৬৯ জন।দু দিন আগেও যা ছিল ৫০০-রও কম।চিকিৎসাধীন ৯০৮ জন।এখনও পর্যন্ত কোভিডের কারণে মৃত্যু হয়েছে ৬১ জনের।রোগমুক্ত হয়েছেন ২১৮ জন।রাজীব সিংহ জানিয়েছেন,গত ২৪ ঘণ্টায় নতুন করে আক্রান্ত হয়েছেন ৬১ জন।৩ মে রাজ্য স্বাস্থ্য দফতর প্রকাশিত বুলেটিন অনুযায়ী সক্রিয় করোনা আক্রান্তের সংখ্যা ছিল ৬৬৩ জন।
সেই হিসাবে গত ২৪ ঘণ্টায় আক্রান্ত হয়েছেন ২৪৫ জন। এ প্রসঙ্গে বলতে গিয়ে মুখ্যসচিব বলেছেন, কোভিড সংক্রাম্ত তথ্য রিপোর্টিংয়ের যে পদ্ধতি ছিল তা খুব জটিল।তার ফলেই বেশ কিছু তথ্য এবং পরিসংখ্যান নথিভুক্ত হয় নি।আর সেখান থেকেই তৈরি হয়েছে তথ্যের একটা পার্থক্য।মুখ্যসচিব জানিয়েছেন,সেই সমস্যা দূর করা হয়েছে এবং সামগ্রিক তথ্য সংকলিত করা হয়েছে।মুখ্যসচিবের দেওয়া তথ্য অনুযায়ী,২৪ঘণ্টায় কোভিড আক্রান্ত হয়ে মৃত্যু হয়েছে ১১ জনের।কারণ রবিবার পর্যম্ত মৃতের সংখ্যা ছিল ৫০। মুখ্য সচিবের দাবি, রাজ্যে প্রতি ১০ লাখ জনসংখ্যায় মৃত্যুর হার ১.৪৭ শতাংশ। সুস্থ হয়ে ওঠার হার প্রতি ১০ লাখে ১৩.৯৮ শতাংশ।
অন্যদিকে সঙ্ঘাত থামার লক্ষণ নেই। শনিবার মুখ্যমন্ত্রীর কাছ থেকে ১৩ পৃষ্ঠার চিঠি পাওয়ার অল্প ক্ষণের মধ্যেই টুইটারে পাল্টা আক্রমণ করেছিলেন রাজ্যপাল জগদীপ ধনখড়। সোমবার তিনি ফের চিঠি পাঠিয়েছেন মুখ্যমন্ত্রীকে।কয়েক দিনে রাজ্যে করোনা পরিস্থিতির সাংঘাতিক অবনতি হয়েছে বলে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে লিখেছেন রাজ্যপাল জগদীপ ধনখড়।রাজ্য এক ভয়ঙ্করতম পরিস্থিতির মধ্যে দিয়ে যাচ্ছে বলেও দাবি করেছেন তিনি।
রেশন দুর্নীতি, সংবাদমাধ্যমের কণ্ঠরোধ এবং পশ্চিমবঙ্গে পুলিশ-রাজ কায়েম করার অভিযোগ তুলেছেন রাজ্যপাল।কোভিড-১৯ সংক্রমণে যাঁদের মৃত্যু হচ্ছে,তাঁদের মৃতদেহ সৎকারের পদ্ধতি নিয়েও প্রশ্ন তুলেছেন রাজ্যপাল।বিভিন্ন এলাকা থেকে মৃতদেহ যে ভাবে সরানো হচ্ছে,তাকে রাজ্যপাল হৃদয়হীন অবর্ণনীয় অসংবেদনশীলতা আখ্যা দিয়েছেন।কোভিডে মৃতদের দেহ কলকাতার যে অঞ্চলে সৎকারের ব্যবস্থা করা হয়েছে,সেখানকার নাম উল্লেখ করে রাজ্যপাল লিখেছেন,ধাপার লজ্জা এবং হীন কাহিনি কখনও ভুলতে পারব না,দীর্ঘ দিন তা তাড়া করবে।
এর মধ্যেই আতঙ্কের কথা ভেবে তথ্য গোপন করলে বিপরীত ফল হবে।দলীয় কাউন্সিলরদের সঙ্গে বৈঠকে এমনই সতর্কবার্তা দিয়েছেন মেয়র ফিরহাদ হাকিম।কেন্দ্রের তালিকায় করোনা সংক্রমণে বিপদজনক ২০টির তালিকায় রয়েছে কলকাতার নাম।রাজ্যে ফের আসছে কেন্দ্রীয় দল।দেখা গিয়েছে কলকাতার বারোটি ওয়ার্ডে করোনা আক্রান্তের সংখ্যা সবচেয়ে বেশি।
এবার সেই ১২ ওয়ার্ডের কাউন্সিলরদের নিয়ে বৈঠক করেছেন মেয়র ফিরহাদ হকিম।করোনা সংক্রমণ নিয়ে কাউন্সিলরদের সঙ্গে দীর্ঘক্ষণ বৈঠক করেন মেয়র।মেয়রের অভিযোগ,বেশ কিছু কাউন্সিলরের মাইক্রোপ্ল্যানিংয়ে ভুল ছিল।অনেকেই বস্তি এলাকায় ঢোকেননি।জোড়াবাগান, গিরিশ পার্ক, সুকিয়া স্ট্রিট, নারকেলডাঙার মতো এলাকায় নিয়ম মেনে কাজ হয়নি বলে ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন মেয়র ফিরহাদ হাকিম।