Feature

যে ঝড় কেড়ে নিয়েছে লক্ষাধিক প্রাণ!

ভয়াল সেই রাত আজো তাড়া করে বেড়ায় ভোলাবাসীকে। ১৯৭০ সালের এই দিনে প্রলয়ংকরী ঘূর্ণিঝড় ও জলোচ্ছ্বাসে প্রাণ হারায় দশ লাখেরও বেশী মানুষ। যার পরিচয় 'ভোলা সাইক্লোন' নামে।

Cyclone Aftermath In East Pakistan

Villagers pulling corpse from river bank, after cyclone devastated the area, nr. Char Jubille. Source: The LIFE Picture Collection

তখনও জন্ম হয়নি বাংলাদেশের। বিশ্ব মানচিত্রে আমাদের পরিচয় পূর্ব পাকিস্তান নামে। ভারত- পাকিস্তান দ্বি-পক্ষীয় সম্পর্কে চলছে চাপা উত্তেজনা। ফলশ্রুতিতে বঙ্গোপসাগরে সৃষ্ট ঘূর্ণিঝড় সম্পর্কে তথ্য আদান-প্রদান অনেকটা বন্ধই থাকে দু'দেশের আবহাওয়াবিদদের মধ্যে। 

উইকিপিডিয়া বলছে, ঢাকায় অবস্থিত তৎকালীন পাকিস্তান আবহাওয়া কর্তৃপক্ষও আগে থেকে নেয়নি যথাযথ পদক্ষেপ। শুধু ঘটনার দিনই আসছে ঘূর্ণিঝড়কে 'ভয়ানক' বলে খবর প্রচার করে পাকিস্তান রেডিও। ততক্ষণে দেরি হয়ে গেছে অনেক। খবরটাকে খুব বেশী গুরুত্ব দেয়নি উপকূলের সাধারণ মানুষজন। ভয়াবহতা ঠেকাতে প্রশাসনিক ব্যবস্থাও তেমন ছিল না।

এ দেশীয় রাজনীতিবিদরা ব্যস্ত ছিলেন পাকিস্তান জাতীয় পরিষদের নির্বাচন নিয়ে।
1970 Bhola Cyclone
Aerial view of a village on the island of Bhola devastated by the tropical cyclone and tidal wave in East Pakistan (now Bangladesh). Source: Hulton Archive
মুষলধারে বৃষ্টি আর প্রচণ্ড ঝড় আগে থেকেই জানান দিচ্ছিল ভয়াবহতার। ১২ তারিখ মধ্যরাতে চট্টগ্রাম, ভোলা, চরফ্যাসন, মনপুরা, সন্দ্বীপ, বরগুনা, খেপুপাড়া, পটুয়াখালী, বোরহানুদ্দিন, চর তজুমদ্দিন, দক্ষিণ মাঈজদী, হারিয়াঘাটা এলাকার ওপর দিয়ে ২২২ কিলোমিটার বেগে বয়ে যায় ঘূর্ণিঝড়। সাথে ছিল ১৪ ফুট জলোচ্ছ্বাস। 

রাতভর ধ্বংসযজ্ঞের পর, দিনের বেলা বেঁচে থাকা মানুষজন খুঁজে ফিরে হারানো স্বজন। নদী পাড়ে মিলে ভেসে যাওয়া মানুষের মৃতদেহ।

জলোচ্ছ্বাসে নিখোঁজ হয়েছিল ২০ হাজার জেলে নৌকা। মারা গিয়েছিল ১০ লক্ষাধিক গবাদিপশু। 

বাড়িঘর ধ্বংস হয়েছিল চার লাখের বেশি। ঝড়ের পর দুর্যোগ মোকাবেলা, ক্ষতিগ্রস্তদের সরকারি সহায়তার অপ্রতুলতা ইত্যাদি নিয়ে ব্যাপক অসন্তোষ ছড়িয়ে পড়ে পূর্ব পাকিস্তানে।

বাংলাদেশের বাণিজ্য মন্ত্রী তোফায়েল আহমেদ, যিনি কিনা ভোলা থেকে নির্বাচিত সংসদ সদস্য, তার এক সাক্ষাৎকারে বলেছেন, "অসংখ্য লোকের মৃতদেহ আমাদের আতঙ্কিত করে তোলে। আমরা দিশাহারা হয়ে গেলাম। এখনো স্মৃতির পাতায় ভেসে ওঠে শিবপুর ইউনিয়নের রতনপুর বাজারের পুকুর পাড়ে শত শত লোককে দাফন করার দৃশ্য! এত মৃতদেহ যে দাফন করে আর কুলাতে পারছিলাম না।" 

"দাসেরহাটের বড় বড় ব্যবসায়ীরা হলেন সর্বস্বান্ত। চিত্ত বাবু নামে এক বড় ব্যবসায়ী ছিলেন। তার গুদামঘরে চাল, ধান, সুপারি ছিল। তিনি একেবারে রিক্ত।"

এত মৃত্যু আর ভয়াবহতার পরও সরকারি সহায়তা আসে চারদিন পর। 

মহান মুক্তিযুদ্ধের সময়ে একটি পোস্টার হয়েছিল 'সোনার বাংলা শ্মশান কেন?' এই পোস্টারটিতে ১৯৭০-এর ভয়াল ঘূর্ণিঝড়ের কথাই বলা হয়েছিল।

Share
Published 12 November 2018 5:46pm
Updated 12 November 2018 10:08pm
By Hasan Tariq
Presented by Hasan Tariq
Source: SBS Bangla

Share this with family and friends