পুরুষদের মানসিক স্বাস্থ্য এবং কল্যাণ

Man alone at train station Getty Images_Cebas

Man alone at train station Source: Getty Images_Cebas

Get the SBS Audio app

Other ways to listen


Published 3 August 2020 1:01am
Updated 3 August 2020 1:04am
By Amy Chien-Yu Wang
Presented by Abu Arefin
Source: SBS

Share this with family and friends


পুরুষদের অনেক সময় বলা হয় জীবনে যত কঠিন সময়ই আসুক না কেন মানসিকভাবে শক্ত থাকতে। কিন্তু যখন আবেগ নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে যায় এবং পারিবারিক সম্পর্কে চিড় ধরে, তখন অস্ট্রেলিয়ায় থিতু হওয়ার স্বপ্ন অনেক সময়েই ভেঙে যায়। বিশেষজ্ঞরা বলেন, অন্যের কাছে আপনার অনুভূতি প্রকাশ কোন দুর্বলতা নয়, বরং এটা শক্ত মনের পরিচায়ক। প্রতিবেদনটি শুনতে উপরের অডিও লিংকটিতে ক্লিক করুন।


অস্ট্রেলিয়ায় নতুন আগতরা অনেক সময় একটি সুন্দর জীবনের স্বপ্ন দেখে থাকেন। কিন্তু সেই স্বপ্ন পূরণে থাকে অনেক বাধা অথবা এর সমাপ্তি ঘটে সম্পর্ক ভাঙ্গনের মধ্যে দিয়ে। সেটেলমেন্ট সার্ভিসেস ইন্টারন্যাশনাল প্রজেক্টের কোঅর্ডিনেটর জেসিকা হারকিন্স বিল্ডিং স্ট্রংগার ফ্যামিলিস কর্মসূচি পরিচালনা করে থাকেন, এর সাথে যুক্ত নিউ সাউথ ওয়েলসের রিলেশনশিপ অস্ট্রেলিয়া। এখানে ১৮-উর্দ্ধ ব্যক্তিদের মানসিক সেবা দেয়া হয়, যাদের বিরুদ্ধে পারিবারিক সম্পর্কের ক্ষেত্রে সহিংসতা কিংবা নিগ্রহের অভিযোগ আছে।

তিনি বলেন, পুরুষদের ব্যবহারের ইতিবাচক পরিবর্তনের এই কার্যক্রম অস্ট্রেলিয়ায় গত বিশ বছর ধরে চলে আসছে, কিন্তু এটা নিশ্চিত করা জরুরী যে কাউকেই এর বাইরে রাখা যাবে না, তাই সাংস্কৃতিকভাবে প্রাসঙ্গিক কর্মসূচি প্রণয়নের মাধ্যমে অস্ট্রেলিয়ার পুরুষদের মধ্যে পরিবর্তন আনার কার্যক্রম শুরু করা হয়েছে।

বিল্ডিং স্ট্রংগার ফ্যামিলিস কর্মসূচিটি আরবি এবং তামিল ভাষাতে ১৬ সপ্তাহের জন্য পরিচালিত হয়। হারকিন্স বলেন, উদ্যোক্তারা হাজারাগী ভাষাতেও একটি কর্মসূচি প্রণয়নের প্রক্রিয়া চালিয়ে যাচ্ছেন।

এই কর্মসূচির পরিচালক লেবানিজ বংশোদ্ভূত ঘাসান নৌজাইম বলেন, কিছু সংস্কৃতিতে পুরুষদের পরিবারের প্রধান মনে করা হয়। 
নৌজাইম বলেন, পুরুষরা অনেক সময়েই সাংস্কৃতিক মূল্যবোধ, বিশ্বাস, ঐতিহ্য, প্রত্যাশা, এবং পুরুষত্বের ধারণার একটি জটিল আবর্তে আটকে পড়েন। কিন্তু এই অপূর্ণ স্বপ্নের অনুভূতি সহিংসতার মধ্যে দিয়ে সমাপ্ত হওয়া উচিত নয়।

সাউথ অস্ট্রেলিয়ার রিলেশনশিপ অস্ট্রেলিয়াতে 'দা গুড লাইফ প্রজেক্ট' পরিচালনা করেন লাইফ কোচ এবং কাউন্সেলিং টীম মেম্বার ডঃ সুমবো এনডি। তাদের কথা হচ্ছে, উত্তম জীবনের জন্য যেসব বাধা আছে সেগুলো চিহ্নিত করাই প্রথম পদক্ষেপ যার মাধ্যমে ইতিবাচক পরিবর্তন আনা সম্ভব, এই সমস্যাগুলো জীবনে অনেক সময়েই চ্যালেঞ্জিং হয়ে উঠে।

'গুড লাইফ প্রজেক্টটি'র লক্ষ্য হচ্ছে এডেলেইডের বাসিন্দা আফ্রিকান নারী-পুরুষ এবং তরুণদের পরিবার কল্যাণ এবং পারিবারিক সহিংসতা বিষয়ে প্রশিক্ষিত করার জন্য।

সুন্দর জীবন যাপন এবং শক্তিশালী পরিবার কাঠামো কি তা জানতে ডঃ এন্ডি কমিউনিটি সদস্যদের একে অপরের দৃষ্টিভঙ্গি এবং অভিজ্ঞতা জানতে উৎসাহিত করেন, বিশেষ করে যেভাবে তারা অস্ট্রেলিয়ান জীবন যাপনে অভ্যস্ত হয়েছে। এবং কখনো কখনো নারী-পুরুষদের কার কি ভূমিকা সে বিষয়ে পরিবর্তিত দৃষ্টিভঙ্গিও একজনের সাথে আরেকজনের সম্পর্কে প্রভাব ফেলে।

রিলেশনশিপ অস্ট্রেলিয়া নিউ সাউথ ওয়েলস গ্রূপ এবং কমিউনিটি এডুকেশন ম্যানেজার এন্ড্রু কিং একজন লেখক এবং পুরুষদের মানসিক স্বাস্থ্য কল্যাণ বিষয়ে বিশেষজ্ঞ। 
তিনি বলেন, আপনার ফেলে আসা অতীতকে ভুলতে যখন নিজেকে পরিবর্তন করবেন তখন আপনি আপনার সন্তানদের কথা ভেবে করুন।

ইসাক 'গুড লাইফ প্রজেক্টটি'র একজন ফ্যাসিলিটেটর। তিনি একসময় ইউরোপে ছিলেন এবং এখন এডিলেডে থাকেন, তিনি স্বীকার করেন, গত এক দশক আগে তিনি যখন আইভরি কোস্ট ছেড়ে এসেছেন তখন থেকে বর্তমানে পুরুষদের ভূমিকা সম্পর্কে তার চিন্তাভাবনায় ব্যাপক পরিবর্তন এসেছে। এই প্রোগ্রামে নতুনদের তাদের অস্ট্রেলিয়ায় মাইগ্রেশনের চ্যালেঞ্জগুলো নিয়ে কথা বলার সুযোগ আছে।

কিংয়ের মতে, পুরুষরা তাদের আবেগ প্রকাশ করে তাদের ম্যানহুড বা পৌরুষিক ব্যাপারের মধ্যে দিয়ে যা তারা ছোটবেলা থেকেই শিখে এসেছে। 
কিং বলেন, চেপে থাকা আবেগ-অনুভূতি থেকে কখনো কখনো আগ্নেয়গিরির মত উদগীরণ হতে পারে, যা আগ্রাসী ব্যবহারে রূপ নেয়।

পরিস্থিতি কোন সংকটজনক পর্যায়ে পৌঁছার আগেই তিনি পেশাদার ব্যক্তিদের সাহায্য নেয়ার পরামর্শ দেন। 
কিং ব্যাখ্যা করেন, কার্যকরী পরামর্শ ও আলোচনা অন্যের কথা শুনতে এবং অন্যের মতামতকে গুরুত্ব দিতে সাহায্য করে, একই সাথে আপনার নিজের চিন্তা-ভাবনাগুলোর প্রকৃতিও বুঝতে সাহায্য করে।

নৌজাইম বলেন, বিল্ডিং স্ট্রংগার ফ্যামিলিস কর্মসূচিতে অংশগ্রহণকারীদের মধ্যে ইতিবাচক পরিবর্তন লক্ষ করা গেছে, এদের অনেকেই প্রথমে চুপচাপ ছিল।

ডঃ এন্ডি বলেন, পারিবারিক সহিংসতা একসময় ট্যাবু বা আলোচনার অযোগ্য বিষয় ভাবা হলেও এক্ষেত্রে বড় ধরণের পরিবর্তন আনা সম্ভব যখন মানুষ নিরাপদ এবং সহায়ক পরিবেশে মুক্তভাবে কথা বলতে পারবে। ডঃ এন্ডি পরিবর্তন আনতে নিজের বিপন্নতাকে স্বীকার করে নিতে পরামর্শ দেন।

ইসাক বলেন, যেসব পুরুষরা কঠিন অবস্থার মধ্যে দিয়ে যাচ্ছেন তাদের জন্য অস্ট্রেলিয়ায় সহায়তা রয়েছে।

রিলেশনশিপ অস্ট্রেলিয়ার কর্মসূচি সম্পর্কে জানতে ফোন করুন ১৩০০ ৩৬৪ ২৭৭ নাম্বারে। 
পুরুষদের মানসিক স্বাস্থ্য অথবা পারিবারিক সম্পর্ক নিয়ে উদ্বেগ থাকলে ২৪ ঘন্টা ফ্রী কাউন্সেলিং সাহায্যের জন্য মেন্সলাইন অস্ট্রেলিয়াতে ফোন করুন ১৩০০ ৭৮ ৯৯ ৭৮ নাম্বারে। 
আপনার ভাষায় জানতে চাইলে ন্যাশনাল ট্রান্সলেটিং এন্ড ইন্টারপ্রেটিং সার্ভিসে ফোন দিন ১৩ ১৪ ৫০ নাম্বারে।


Share