সেটলমেন্ট সার্ভিসেস ইন্টারন্যাশনাল- এস এস আই প্রকাশিত নতুন একটি রিপোর্টে দেখা গেছে, নতুন আগত অভিবাসী ও আশ্রয়লাভীদের চাকুরির বাজারে প্রবেশ করতে অনেক সংগ্রাম করতে হয়।
গত এপ্রিল মাসে ক্যানবেরার ন্যাশনাল প্রেস ক্লাবে বক্তৃতা দেবার সময়ে হোম এফেয়ার্স মিনিস্টার ক্লেয়ার ও’ নেইল বলেন,
"অস্ট্রেলিয়ার অভিবাসন ব্যবস্থার ভগ্নদশার কারণে দেশের অর্থনীতি ও ব্যবসা ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। অভিবাসীদের দক্ষতাকে কাজে লাগাতে দেশ ব্যর্থ হচ্ছে। দেশের অনেক জাতীয় সমস্যা অভিবাসন দিয়ে সমাধান করা যেত।"
Overqualified migrants are not employed in their own field
গত বছর পাঁচটি ইন্টার্ভিউতে ডাক পেয়েছিলেন তিনি, কিন্তু কোনটাতেই সফল হন নি। ব্যর্থতার কারণ জানতে ইন্টারভিউয়ের পর নিয়োগদাতাদের কাছে ফলো আপ করা হলে তারা জানান যে, ডক্টর জুবায়ের একজন “ওভার কোয়ালিফায়েড” প্রার্থী। শ্রমবাজারে ওভার কোয়ালিফায়েড প্রার্থী বলতে চাকুরীর জন্য প্রয়োজনীয় মাপকাঠির তুলনায় অধিক যোগ্যতাসম্পন্ন ব্যক্তিকে বোঝায়।
সেটলমেন্ট সার্ভিসেস ইন্টারন্যাশনাল এর সিইও ভায়োলেট রোমেলিয়োটিস জানান, ডক্টর হারুনির মত অসংখ্য ব্যক্তি চাকুরীর বাজারে উপযুক্ত কাজ খুঁজতে সংগ্রাম করে চলেছেন।
তিনি আরও বলেন এসএসএস আই এর রিপোর্ট অনুযায়ী কেবল মেডিসিন নয়, রিফিউজি ও দক্ষ অভিবাসীরা ইঞ্জিনিয়ারিং-সহ অন্যান্য ক্ষেত্রেও কাজ পেতে চ্যালেঞ্জের সম্মুখীন হচ্ছেন।
অস্ট্রেলিয়ায় প্রতি চার জনে একজন দক্ষ স্থায়ী অভিবাসীর উচ্চতর যোগ্যতা থাকা সত্ত্বেও তাদেরকে যোগ্যতার নিচের স্তরে কাজ করতে হচ্ছে
অস্ট্রেলিয়ার শ্রমবাজারে ৩০ হাজার ইঞ্জিনিয়ার পদের শূন্যতা আছে অথচ প্রায় অর্ধেক অভিবাসী ইঞ্জিনিয়ার বেকার অথবা ভিন্ন খাতে কাজ করছেন।
Does unconscious bias stop some people getting jobs for which they are qualified? Source: SBS / SBS News
অভিবাসী ও শরণার্থীদের কর্মক্ষেত্রে নিয়োগ দিতে নিয়োগকর্তাদের মধ্যে অনীহার কারণে তারা তাদের যোগ্যতা প্রমাণ করতে পারছেন না এবং তারা তাদের উপযুক্ত কাজ খুঁজে পাচ্ছেন না।
এই রিপোর্টে অস্ট্রেলিয়ার অভিবাসন প্রক্রিয়া ও শ্রমবাজারের বিভিন্ন তুলে ধরা হয়েছে। এসএসআই তাদের রিপোর্টে এসব দিক তুলে ধরার মাধ্যমে শ্রম শোষণ আর যোগ্য কর্মীদের নিম্নমানের কাজে নিয়োজিত হওয়ার অন্তর্নিহিত বিভিন্ন কারণ নির্দেশ করেছে।
এসএসআইএর রিপোর্টে দেখা গেছে যে, ৫৭ ভাগ আশ্রয়প্রার্থী বা এসাইলাম সিকার ভিসাজনিত কারণে কাজের সুযোগ পায় না। দুই-তৃতীয়াংশ অস্থায়ী ভিসাধারী কর্মী সরকার নির্ধারিত সর্বনিম্ন মান থেকে কম মজুরী পেয়ে থাকে। স্থায়ী ভিসা নিয়ে আসা অভিবাসীদের ৩৩ শতাংশের উচ্চ শিক্ষার সনদ অস্ট্রেলিয়ায় স্বীকৃত নয়।
অস্ট্রেলিয়ার শ্রমবাজারে রিফিউজি ও অভিবাসী দক্ষ জনশক্তির এই সংকটের বিষয়ে ফেডারেল সরকার ওয়াকিবহাল আছে। ক্লেয়ার ও’ নেইলের বক্তব্যে এদেশের পদ্ধতিগত সমস্যার কথা জানা যায়। বহির্বিশ্ব থেকে অস্ট্রেলিয়ায় যেসব দক্ষ অভিবাসী আসছেন, তারা নিম্ন আয়ের ফাঁদে আটকা পড়ে যাচ্ছেন।
চলমান এই সমস্যা সমাধান করতে সরকার পদক্ষেপ নিচ্ছে বলে জানিয়েছেন এই মন্ত্রী। অভিবাসীদের নিজ নিজ দেশের শিক্ষাগত যোগ্যতা এদেশে রূপান্তর বা স্বীকৃতি দেবার পদ্ধতি সংস্কার করা, ভিসা ও কাজের অধিকারের জটিলতা দূর করার কৌশল নিয়ে আলোচনা চলছে। চলতি বছরের শেষ নাগাদ এসব বিষয়কে আমলে নিয়ে নতুন একটি অভিবাসন কৌশল প্রকাশ করা হবে।
দক্ষ অভিবাসীদের নিজ নিজ দক্ষতার ক্ষেত্রে কাজ খুঁজে যেমন পাওয়া সহজ নয়, তেমনি অভিবাসীদের নিজ দেশে অর্জিত যোগ্যতার স্বীকৃতি পাওয়াও দীর্ঘ ও কঠিন একটি প্রক্রিয়া। কেননা, জীবনসংগ্রামের সম্মুখীন হয়ে বেশিরভাগ অভিবাসী এই কঠিন পথ পাড়ি দিতে চান না। তবে ডক্টর জোবায়ের হারুনী একটি ব্যতিক্রমী দৃষ্টান্ত।
প্রতিবেদনটি শুনতে উপরের অডিও প্লেয়ারে ক্লিক করুন।
এসবিএস বাংলার অনুষ্ঠান শুনুন রেডিওতে, এসবিএস বাংলা অডিও অ্যাপ-এ এবং আমাদের ওয়েবসাইটে, প্রতি সোম ও শনিবার সন্ধ্যা ৬টা থেকে ৭টা পর্যন্ত।