বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা বলছে, ২০১৫ সালে ক্যানসারে বিশ্বব্যাপী ৮৮ লাখ রোগী মারা গেছেন। প্রতি ছয়জনে মারা গেছেন একজন। হৃদরোগের পরেই ক্যানসারে আক্রান্ত হয়ে সবচেয়ে বেশি মৃত্যু হয়।
ক্যানসারকে বলা হয় মরণব্যাধি। সঠিক সময়ে এই রোগ নির্ণয় করতে না পারায় প্রতিনিয়ত দীর্ঘ হচ্ছে ক্যানসারে মৃত্যুর মিছিল। চিকিৎসাশাস্ত্রে যে ক'ধরণের ক্যানসার শনাক্তের পদ্ধতি চালু আছে, তা বেশ সময় সাপেক্ষ এবং ব্যয়বহুল।
সম্প্রতি অস্ট্রেলিয়ার কুইন্সল্যান্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের বিজ্ঞানীরা, ডিএনএ এর একটি বিশেষ বৈশিষ্ট্য আবিষ্কার করেছেন, যার উপস্থিতি আছে সবধরণের ক্যানসারে। আর জটিল রোগ ক্যানসার শনাক্তের জন্য আবিষ্কার করেছেন দুই ধরণের কৌশল।
বিজ্ঞানীদের প্রধান তিন সদস্য দলের একজন হচ্ছেন, প্রবাসী বাংলাদেশী ডক্টর আবু সিনা। যিনি এ বিশ্ববিদ্যালয়ে একজন গবেষক হিসেবে কর্মরত আছেন।আবু সিনা বলেন, "মানব দেহের গ্লুকোজ বা কোলেস্টেরলের পরিমাণ নির্ণয়ের মতই সাধারণ রক্ত পরীক্ষায় মিলবে ক্যানসার উপস্থিতির তথ্য।""আমরা ডিএনএ এর বিশেষ একটি বৈশিষ্ট্য আবিষ্কার করতে পেরেছি, যাকে বলছি ইউনিভার্সেল ক্যানসার বায়ো মার্কার। যা সব ধরণের ক্যানসারে আছে। পাশাপাশি এই বৈশিষ্ট্য ধরে এমন পদ্ধতি বের করেছি যা দিয়ে সবধরণের ক্যানসার শনাক্ত সম্ভব।"
গবেষণাগারে আবু সিনা ও অন্য বিজ্ঞানীরা। Source: Supplied
পিএইচডি করতে অস্ট্রেলিয়া আসেন আবু সিনা। এখানে স্থায়ী বসবাস শুরুর আগে তিনি ছিলেন বাংলাদেশের শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের সহকারী অধ্যাপক।
আবু সিনা ও তার দলের আবিষ্কৃত পদ্ধতিতে দুইভাবে শনাক্ত করা যাবে ক্যানসার।
"একটি হচ্ছে খালি চোখে। এ পদ্ধতিতে, রক্ত থেকে ডিএনএকে আলাদা করে সোনার দ্রবনে (গোল্ড ন্যানো পার্টিকেল সলিউশন) মিশানো হবে। সাথে যোগ করা হবে লবন। যদি ক্যানসার থাকে তবে দ্রবনের রং পরিবর্তন হবে না। আর যদি রক্তে ক্যানসার না থাকে, তবে দ্রবনের রং গোলাপী থেকে নীল হবে।"
"আরেকটি হচ্ছে ইলেক্ট্রোকেমিক্যাল পদ্ধতি। ডায়াবেটিকস শনাক্তের জন্য প্রচলিত যেসব ছোট ছোট মোবাইল ডিভাইস আছে, হয়ত ঠিক তেমনি মেশিন আসবে বাজারে। যা দিয়ে সহজে শনাক্ত করা যাবে ক্যানসার," জানিয়েছেন আবু সিনা।
ক্যানসার নির্ণয়ে গবেষণা। Source: Supplied
বাংলায় পুরো রিপোর্ট শুনতে উপরের অডিও লিংকে ক্লিক করুন
এই গবেষণার নেতৃত্বে ছিলেন কুইন্সল্যান্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক ম্যাট ট্রাউ, আবু সিনা এবং পোস্টডক্টরাল রিসার্চ ফেলো ডক্টর লরা কারাসকোসা।
গবেষণাগারে দুইশরও অধিক রক্ত এবং টিস্যুর নমুনা নিয়ে পরীক্ষা করেছেন তারা। আবু সিনা জানান, আরো বছর খানিক সময় লাগবে এ আবিষ্কারের সুফল পেতে।
"এখন ক্লিনিক্যাল ট্রায়ালে যাবে গবেষণাগারের এ আবিষ্কার। প্রায় সব ধরণের ক্যানসারের কয়েক হাজার নমুনা নিয়ে কাজ করতে লেগে যাবে আরো ক'বছর। তবে এ আবিষ্কারে উপকৃত হবে সাধারণ মানুষ।"
বাংলাদেশের চাঁদপুরের ছেলে আবু সিনার বাবা- মা দু'জনই শিক্ষক। স্ত্রী-সন্তান নিয়ে ব্রিসবেনেই থাকেন তিনি।
"একজন বাংলাদেশী হিসেবে এ আবিষ্কারের সাথে সংশ্লিষ্ট থাকতে পেরে গর্ববোধ করছি। আশা করি আমাদের তরুণ প্রজন্ম অনুপ্রাণিত হবে। সুযোগ পেলে দেশের জন্যও অবদান রাখতে চাই," বলেছেন কুইন্সল্যান্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষক আবু সিনা।