Source: Hindustan Times
ভারতের পশ্চিমবঙ্গ রাজ্যের তৃণমূল কংগ্রেস প্রার্থী কানাইয়ালাল আগরওয়ালের সমর্থনে উত্তর দিনাজপুর জেলার রায়গঞ্জ এ ফেরদৌস প্রচারে নেমেছিলেন।
একটি হুডখোলা গাড়িতে ফেরদৌসের নির্বাচনী প্রচার অভিযানের কয়েকটি স্থিরচিত্র সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমগুলোতে ছড়িয়ে পড়ে। ওই ছবিতে তার সঙ্গে ছিলেন কলকাতার দুই অভিনয়শিল্পী পায়েল সরকার ও অঙ্কুশক ।
চিত্রনায়ক ফেরদৌস আহমেদ বলেন ‘প্রযোজকের অনুরোধে’ এ নির্বাচনী প্রচারণায় অংশ নিয়েছিলেন তিনি।
শরৎচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়ের ‘দত্তা’ উপন্যাস অবলম্বনে নির্মিতব্য চলচ্চিত্রের শুটিংয়ের জন্য কলকাতায় যান ফেরদৌস ।
তিনি বলেন “বোলপুরে ছবিটির শুটিং চলাকালে এক পরিচিত প্রযোজক এর অনুরোধে তৃণমূলের প্রচারে যোগ দেন তিনি ।”
ফেরদৌস এর নির্বাচনী প্রচারে অংশ নেওয়াকে ভালো ভাবে গ্রহণ করতে পারেনি ভারতীয় জনতা পার্টি।
পশ্চমবঙ্গের বিজেপি সভাপতি দিলীপ ঘোষ বিদেশি নাগরিকের নির্বাচনী প্রচারণা নিয়ে প্রশ্ন তুলেন।তিনি বলেন, “ভারতের কোনো নিবন্ধিত রাজনৈতিক দল কোনো বিদেশি নাগরিককে দিয়ে প্রচারণা চালাতে পারেনা।
এভাবে চলতে থাকলে আগামীকাল হয়তো মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী ইমরান খানকে তৃণমূলের হয়ে নির্বাচনী প্রচারণায় অংশ নেওয়ার জন্য ডেকে আন্তে পারেন।”
এ প্রসঙ্গে তৃণমূল প্রার্থী কানাইয়ালালের নির্বাচনী এজেন্ট মোশারফ হোসেন বলেন, “ফেরদৌস একজন জনপ্রিয় অভিনেতা। আমরা তাকে রোড শো’তে অংশ নেওয়ার জন্য অনুরোধ করেছিলাম; তিনি অনুরোধ রেখেছেন মাত্র ।”
অভিনেতা ফেরদৌস কলকাতায়ও বেশ জনপ্রিয়। ১৯৯৮ সালে কলকাতার বাসু চ্যাটার্জির 'হঠাৎ বৃষ্টি' চলচ্চিত্রের অভিনয় করে খ্যাতি পান এ অভিনেতা। এ পর্যন্ত কলকাতায় ৫০টিরও বেশি চলচ্চিত্রে অভিনয় করেছেনফেরদৌস । ২০০১ সালে ‘মিট্টি’ নামের একটি বলিউডের চলচ্চিত্রেও অভিনয় করেছেন তিনি।
অবশেষে ভারত ছাড়তে হল ফেরদৌসকে :
পশ্চিমবঙ্গে তৃণমূল কংগ্রেসের নির্বাচনী প্রচারে অংশ নেওয়ার কারণে ভারত ছাড়তে বাধ্য হলেন চিত্রনায়ক ফেরদৌস।
ভারতের স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় তার ভিসা বাতিল করে তাকে দেশ ছাড়ার নির্দেশের পাশাপাশি তাকে কালো তালিকাভুক্ত করেছে ।
ভারতের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী মন্ত্রণালয়ের বিবৃতিতে বলা হয়, “ইমিগ্রেশন ব্যুরো থেকে বাংলাদেশি নাগরিক ফেরদৌস আহমেদের ভিসার শর্ত লংঘনের তথ্যের ভিত্তিতে তার বিজনেস ভিসা বাতিল করা হয়েছে এবং তাকে ভারত ছাড়ার নোটিশ দেওয়া হয়েছে। তাকে কালো তালিকাভুক্তও করা হয়েছে।”
অবশ্য ভারতের স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের ওই বিবৃতি আসার আগে কলকাতার বাংলাদেশ হাই কমিশন ফেরদৌসকে যত দ্রুত সম্ভব ভারত ছাড়তে বলে।
এবং চলচ্চিত্রটির শুটিং থেকে বিরত থাকতে বলা হয়। অন্যদিকে তাকে ভারতের নির্বাচনের পর শুটিং এ অংশ নেয়ার পরামর্শ দেওয়া হয়।
ক্ষমা চাইলেন চিত্রনায়ক ফেরদৌস :
ভারতে নির্বাচনী প্রচারে অংশ নেওয়ায় ভিসা বাতিলের পর সমালোচনার মুখে ক্ষমা চাইলেন চিত্রনায়ক ফেরদৌস।
ঢাকায় ফিরে যাওয়ার পর আত্মপক্ষ সমর্থনে গ্লিটজকে পাঠানো এক লিখিত বার্তায় তিনি বলেন, ‘আবেগের বশে’ পশ্চিমবঙ্গে নির্বাচনী প্রচারে অংশ নেওয়াটা ‘ভুল’ ছিল বলে এখন বুঝতে পারছি "।
ফেরদৌস আরো বলেন, “আমি স্বাধীন বাংলাদেশের একজন নাগরিক। একটি স্বাধীন দেশের নাগরিক হিসাবে অন্য একটি দেশের নির্বাচনী প্রচারণায় অংশগ্রহণ কোনভাবেই উচিত নয়"। “আমার অনিচ্ছাকৃত ভুলের জন্য আমি ক্ষমা প্রার্থনা করছি। আশা করি, সংশ্লিষ্ট সকলে আমার অনিচ্ছাকৃত ভুলকে ক্ষমা সুন্দর দৃষ্টিতে দেখবেন।”
বাংলাদেশের পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন এটা দুঃখজনক ঘটনা :
বাংলাদেশের পররাষ্ট্রমন্ত্রী এ কে আব্দুল মোমেন ভারতের লোকসভা নির্বাচনে তৃণমূল কংগ্রেসের প্রার্থীর পক্ষে ফেরদৌসের প্রচারণায় অংশ নেওয়াকে দুঃখজনক বলে মন্তব্য করেছেন । তিনি বুধবার রাতে রাজধানীর একটি হোটেলে কনস্যুলার কর্প অব বাংলাদেশ (সিসিবি) আয়োজিত অনুষ্ঠানের আগে গণমাধ্যমকর্মীদের কাছে এ মন্তব্য করেন।
ফেরদৌসের এই প্রচারণার বিষয়ে ভারতের ক্ষমতাসীন দল ভারতীয় জনতা পার্টি (বিজেপি) আনুষ্ঠানিকভাবে ভারতের নির্বাচন কমিশনে ও কলকাতার রায়গঞ্জ জেলা ম্যাজিস্ট্রেট দপ্তরে আপত্তি জানিয়েছে। এ প্রসঙ্গে জানতে চাওয়া হলে পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, ‘ভারতীয়রা এত স্ট্রং রিঅ্যাক্ট করেছে, তা–ও আমার কাছে বেশি লাগল। রিঅ্যাকশনটা একটু বেশি হয়ে গেছে।’ তিনি আরো জানান, বিষয়টি নিয়ে সরকারকে এখনো কিছু জানায়নি ভারত।