করোনা: মোদিকে চিঠি হাসিনার, লকডাউনে নারাজ মমতা

করোনাভাইরাস সংক্রমণের দ্বিতীয় ঢেউয়ে বেসামাল ভারতে নজিরবিহীন ক্ষয়-ক্ষতিতে ভুক্তভোগীদের জন্য শোক ও প্রার্থনা জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদিকে চিঠি লিখেছেন বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। সঙ্কটকালে চিঠিতে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ভারতের প্রতি বাংলাদেশের দৃঢ় সহমর্মিতার বিষয়টি পুনর্ব্যক্ত করেছেন বলে জানিয়েছে বাংলাদেশের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়।

Calls for a nationwide lockdown have been growing as the number of new COVID-19 infections and related deaths stood close to record highs on 10 May.

A suspected COVID-19 patient breathes oxygen at a hospital in Kolkata, India, 10 May 2021. EPA/PIYAL ADHIKARY Source: EPA

গুরুত্বপূর্ণ দিকগুলো

  • ২৪ ঘণ্টায় বিশ্বে করোনায় মোট সংক্রমিত ও মৃতদের প্রায় অর্ধেকই ভারতের।
  • অক্সফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয় এবং অ্যাস্ট্রাজেনেকা সংস্থার করোনার টিকা তৈরি করছে পুনের সেরাম ইনস্টিটিউট।
  • মধ্যপ্রদেশের সিংগ্রাউলি জেলার এক ব্যক্তি মেয়ের মৃতদেহ খাটিয়ায় চাপিয়ে ৩৫ কিলোমিটার পথ পাড়ি দিতে বাধ্য হয়েছেন।

বাংলাদেশের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের ফেসবুক পেজে বলা হয়েছে, বাংলাদেশের সর্বাত্মক সহযোগিতায় একসঙ্গে করোনাভাইরাস মোকাবিলার বিষয়েও অঙ্গীকার করেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
২৪ ঘণ্টায় বিশ্বে করোনায় মোট সংক্রমিত ও মৃতদের প্রায় অর্ধেকই ভারতের। উল্লেখ্য, ইতোমধ্যে ভারতে জরুরি চিকিৎসা সাহায্য পাঠিয়েছে বাংলাদেশ। করোনা মহামারী মোকাবিলায় ভারতে জরুরি ওষুধ ও চিকিৎসা সামগ্রীর অংশ হিসেবে প্রথম দফায় ১০ হাজার ইনজেক্টেবল অ্যান্টি-ভাইরাল রেমডেসিভির পাঠিয়েছে বাংলাদেশ। হরিদাসপুর-বেনাপোল সীমান্ত দিয়ে তা এলেও ভারতে এখন প্রচুর রেমডেসিভির প্রয়োজন।

এ ছাড়া ভারতের আর কী কী প্রয়োজন, তা নিয়ে দিল্লিতে বাংলাদেশ হাইকমিশন ভারতের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সঙ্গে যোগাযোগ রাখছে। বাংলাদেশের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, ইনজেক্টেবল অ্যান্টি-ভাইরালের পাশাপাশি ওরাল অ্যান্টি-ভাইরাল, পিপিই কিটস এবং জিঙ্ক, ক্যালসিয়াম, ভিটামিন-সি এবং প্রয়োজনীয় ট্যাবলেটও পাঠানো হয়েছে।

এদিকে বাংলাদেশেও করোনা সংক্রমণের হার সরকারকে চিন্তায় ফেলেছে। ভারত থেকে সময়মতো টিকা না পাওয়ায় রাশিয়া, চীন, আমেরিকা-সহ বিভিন্ন দেশ থেকে টিকা পেতে দরবার করে যাচ্ছে ঢাকা। জানা গিয়েছে, ভ্যাকসিন উৎপাদনের জন্য বাংলাদেশের বেক্সিমকো ফার্মাসিউটিক্যালসের সঙ্গে যোগাযোগ করেছে ভারত। অক্সফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয় এবং অ্যাস্ট্রাজেনেকা সংস্থার করোনার টিকা তৈরি করছে পুনের সেরাম ইনস্টিটিউট। কিন্তু ভ্যাকসিনের চাহিদা যে হারে বৃদ্ধি পেয়েছে, সেই হারে তা উৎপাদন করতে পারছে না পুনের সেরাম ইনস্টিটিউট। এ কারণে ভারতেই ঠিকমতো যোগান দিতে পারছে না সেরাম ইনস্টিটিউট। সেই পরিপ্রেক্ষিতে ভ্যাকসিন উৎপাদনের জন্য বাংলাদেশের বেক্সিমকো ফার্মাসিউটিক্যালসের সঙ্গে যোগাযোগ করেছে পুনের সেরাম ইনস্টিটিউট।
এর মধ্যেই ভারতে ফিরেছে এক বছর আগের লকডাউনের স্মৃতি। মধ্যপ্রদেশের সিংগ্রাউলি জেলার এক ব্যক্তি মেয়ের মৃতদেহ খাটিয়ায় চাপিয়ে ৩৫ কিলোমিটার পথ পাড়ি দিতে বাধ্য হয়েছেন। কারণ, গাড়ি ভাড়া করে মেয়ের মৃতদেহ হাসপাতালে নিয়ে যাওয়ার আর্থিক সামর্থ্য নেই তাঁর। আর প্রশাসনও সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দেয় নি। তাই অগত্যা নিজের পায়ের উপরই ভরসা রাখতে হল। আর এই ঘটনার একটি ভিডিও ভাইরাল হয়ে গিয়েছে সোশ্যাল মিডিয়ায়।

জানা গিয়েছে, সিংগ্রাউলি জেলার গদাই গ্রামের বাসিন্দা ধীরাপতি সিং গোন্ডের বছর ষোলোর মেয়ে ৫ মে আত্মহত্যা করে। খবর পেয়ে ঘটনাস্থলে যায় পুলিশ। সেখানে গিয়ে মৃতের পরিবারকে বলে আসে, ময়নাতদন্তের জন্য মৃতদেহ তাদেরই হাসপাতালে পৌঁছে দিতে হবে। আর যে হাসপাতালে পৌঁছে দেওয়ার কথা হয় সেটি ছিল ধীরাপতিদের বাড়ি থেকে ৩৫ কিলোমিটার দূরে। কিন্তু এক দিকে প্রশাসনের কোনও সাহায্য না পাওয়ায় শেষে একটি খাটিয়ায় মেয়ের মৃতদেহ তুলে গ্রামবাসীদের সাহায্যে ৩৫ কিলোমিটার পথ পাড়ি দিতে বেরিয়ে পড়েন ওই প্রৌঢ়। হাসপাতাল পৌঁছতে তাঁদের প্রায় সাত ঘণ্টা সময় লাগে। সেই সময় গ্রামে উপস্থিত কেউ তাঁদের এই দৃশ্য ক্যামেরাবন্দি করেন। পরে যা সোশ্যাল মিডিয়া ভাইরাল হয়ে যায়।
 Mamata Banerjee was sworn-in as West Bengal chief minister for the third straight term today after she spearheaded her party Trinamool Congress to a remarkable victory in the assembly polls.  (Photo by Samir Jana/Hindustan Times/Sipa USA)
West Bengal Governor Jagdeep Dhankhar administers oath to Chief Minister Mamata Banerjee, at Raj Bhavan on May 5, 2021 in Kolkata, India. Source: Hindustan Times/Sipa USA
অন্যদিকে, নবগঠিত মন্ত্রিসভার সঙ্গে বৈঠকের পর মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় জানিয়েছেন, সম্পূর্ণ লকডাউনের পক্ষে নয় তাঁর সরকার। কারণ, তাতে বহু মানুষের সমস্যা হবে। তার চেয়ে কঠোরভাবে করোনাবিধি মেনে চললেই অনেকটা সুরক্ষিত থাকা যায় বলে মনে করেন তিনি। বাইরে থেকে এ রাজ্যে কেউ এলে এবার থেকে কোভিড টেস্ট বাধ্যতামূলক। পাশাপাশি, ভ্যাকসিন নিয়ে ফের কেন্দ্রীয় নীতির বিরুদ্ধে সরব হয়েছেন তিনি। করোনার দ্বিতীয় ঢেউ সামলাতে রাজ্যে জারি হয়েছে একাধিক বিধিনিষেধ। তা প্রায় আংশিক লকডাউনের মতোই। বন্ধ লোকাল ট্রেন, অন্যান্য পরিবহণ চলছে ৫০ শতাংশ, দিনে মাত্র ৫ ঘণ্টা খোলা দোকান-বাজার, বন্ধ শপিংমল-সিনেমা হল।

এই অবস্থায় বারবার জনগণকে সুরক্ষিত থাকার বার্তা দিচ্ছে রাজ্যের নতুন সরকার। মনে করা হচ্ছিল, দিন কয়েক পর হয়তো অন্যান্য রাজ্যের মতো সম্পূর্ণ লকডাউনের পথে হাঁটতে পারে পশ্চিমবঙ্গও। কিন্তু সোমবার সেই সম্ভাবনার কথা উড়িয়ে দিয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় নিজেই। বলেছেন, সম্পূর্ণ লকডাউন করার পক্ষপাতী নন। বহু গরিব মানুষের সমস্যা হবে। ওদের তো দিন চালাতে হবে। বরং ভালভাবে স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলুন।

Follow SBS Bangla on .

Share
Published 11 May 2021 11:55am
By Partha Mukhopadhyay

Share this with family and friends