ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির সঙ্গে ভিডিও কনফারেন্সে আলোচনায় বসেন বিভিন্ন রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রীগণ। তবে, সেই আলোচনায় উপস্থিত ছিলেন না পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। বাংলার মুখ্যমন্ত্রী না থাকায় বিজেপির তরফে কটাক্ষ করা হয়েছে মমতাকে। দেশজুড়ে করোনার বর্তমান পরিস্থিতিতে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির গলায় চিন্তার সুর ছিল স্পষ্ট। তিনি জানান, যে-সব দেশে কোভিড থাবা বসিয়েছে, কোনও না কোনও সময়ে সেই সব দেশে আছড়ে পড়েছে কোভিডের দ্বিতীয় ঢেউ। আর এই জায়গা থেকেই এ দেশে বাড়ছে উদ্বেগ। কারণ দেশের বেশ কিছু রাজ্যে গত কয়েকদিনে উল্লেখযোগ্যভাবে বেড়েছে করোনা আক্রান্তের সংখ্যা। যার মধ্যে রয়েছে মহারাষ্ট্র এবং মধ্যপ্রদেশ।
ভ্যাকসিন আসার পরও হঠাৎ করেই কোভিড ১৯-এর ঊর্ধ্বমুখী গ্রাফ নিয়ে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির বক্তব্য, করোনার দ্বিতীয় ঢেউ আটকাতে এখনই সতর্ক হতে হবে। তার জন্য যা যা পদক্ষেপ করার, তা করতে হবে।করোনা মহামারী বিশ্বকে ঐক্যবদ্ধ হয়ে লড়াই করতে শিখিয়েছে। এমনই মন্তব্য করেছেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী। বুধবার আন্তর্জাতিক বিপর্যয় মোকাবিলা পরিকাঠামো বিষয়ক কনফারেন্সে প্রধানমন্ত্রী বলেছেন, করোনা শিখিয়েছে কীভাবে দ্রুত গোটা বিশ্বের ওপরে প্রভাব বিস্তার করতে পারে। আবার কীভাবে বিশ্ব মহামারীর বিরুদ্ধে একত্রিত হয়ে লড়াই করতে পারে তাও শিখিয়েছে।
West Bengal Chief minister and Trinamool Congress chief Mamata Banerjee during the release of the party's election manifesto for the upcoming assembly election. Source: Hindustan Times/Sipa USA
তিনি বলেন, একইসঙ্গে আত্মনির্ভর দেশ, ধনী-গরিব দেশ, উত্তর-পূর্ব-দক্ষিণ কিংবা পশ্চিমের দেশগুলি বিশ্বব্যাপী বিপর্যয়কে কীভাবে প্রতিরোধ করবে, তাও শিখিয়েছে। মহামারীই দেখিয়েছে, যে-কোনও জায়গা থেকে বিশ্বের সামনে চ্যালেঞ্জ আসতে পারে। তাই করোনা থেকে প্রাপ্ত শিক্ষাগুলি কখনও ভুলে যাওয়া উচিত নয়। শুধুমাত্র স্বাস্থ্য নয়, অন্যান্য বিপর্যয়ের ক্ষেত্রেও এইগুলি মনে রাখা প্রয়োজন।
প্রধানমন্ত্রী আরও বলেছেন, জলবায়ু পরিবর্তন নিয়ে কোনও ভ্যাকসিন তৈরি হয় নি। জলবায়ুর পরিবর্তন রোধ করতে কঠোর নির্দেশিকার প্রয়োজন।
গত কয়েক সপ্তাহে ভারতের ৭০টি জেলায় করোনার হার ১৫০ শতাংশেরও বেশি বেড়েছে। তাই এখনই সতর্ক না হলে গোটা দেশে ছড়িয়ে পড়বে করোনা। কোভিড আক্রান্তদের চিহ্নিত করার জন্য আগে যে পরিমাণ টেস্টিং হত, সেই হারও আগের তুলনায় অনেকটাই কমেছে। একইসঙ্গে মোদি প্রশ্ন তুলেছেন, কেন নানা এলাকায় টিকাপ্রদানের হার এত কম? এর জন্য রাজ্যগুলিকেই কড়া হতে হবে বলে বার্তা মোদির। তিনি বলেছেন, করোনার সঙ্গে মোকাবিলা নিয়ে আমাদের আত্মবিশ্বাস যেন আত্মতুষ্টিতে বদলে না যায়। আমাদের সাফল্য যেন অবহেলায় না বদলে যায়।
বস্তুত, ভোটের আগে কোভিড টিকা নিয়ে সরগরম ভারতের রাজনীতি। এবার করোনা ভ্যাকসিনের প্রতিশ্রুতি নিয়ে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদিকে বিঁধছেন তৃণমূল কংগ্রেস নেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। একদিকে, গণটিকাকরণে কেন্দ্র রাজি হয় নি বলে অভিযোগ করেছেন মমতা, অন্যদিকে তুলে এনেছেন বিহারের ভ্যাকসিনের প্রতিশ্রুতির কথা। তৃণমূল কংগ্রেস সুপ্রিমোর দাবি, বিহারের নির্বাচনের আগে বিনামূল্যে টিকাকরণের প্রতিশ্রুতি দিলেও, তা আজও পূরণ করে নি বিজেপি।
বুধবার ঝাড়গ্রামের গোপীবল্লভপুরে নির্বাচনী সভা করেছেন তৃণমূল কংগ্রেস নেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। হুইলচেয়ারে বসেই সভামঞ্চ থেকে বিজেপিকে তুলোধোনা করেছেন তিনি। বলেছেন, নির্বাচনের আগে সকলের জন্য টিকা চেয়েছিলাম। বলেছিলাম, আমি টাকা দিচ্ছি। কিন্তু মোদিজি আমার কথা শুনলেন না। উনি শুধু বড় বড় ভাষণ দেন। কিন্তু কোভিড রুখতে গণটিকাকরণের ব্যবস্থা করলেন না। এ প্রসঙ্গে বলতে গিয়ে বিজেপিকে মিথ্যাবাদীর দল বলেও কটাক্ষ করলেন মমতা। তুলে এনেছেন বিহারে বিজেপির ভ্যাকসিন প্রতিশ্রুতির কথাও।
আসলে ভারতে দৈনিক আক্রান্ত প্রায় ২৯ হাজার। মৃত ১৮৮। বুধবার সকালের এই পরিসংখ্যান গত কয়েক সপ্তাহের মধ্যে সর্বোচ্চ। এর সিংহভাগের জন্যই দায়ী মহারাষ্ট্র। মঙ্গলবার স্রেফ মহারাষ্ট্রেই ১৭ হাজার ৮৬৪ জন করোনা আক্রান্ত হয়েছেন। শুধু মঙ্গলবার রাজ্যেই মৃত্যু হয়েছে ৮৭ জনের।
আরও কয়েকটি রাজ্যের করোনা পরিসংখ্যান উদ্বেগজনক। এর মধ্যে রয়েছে গুজরাট, কেরল, তামিলনাড়ু। যার জেরে দেশের সার্বিক করোনা পরিসংখ্যান চিন্তা বাড়াচ্ছে। স্বাস্থ্য ও পরিবারকল্যাণ মন্ত্রকের দেওয়া পরিসংখ্যান বলছে, গত ২৪ ঘণ্টায় ভারতে ২৮ হাজার ৯০৩ জন করোনা আক্রান্ত হয়েছেন। যা আগের দিনের থেকে অনেকটাই বেশি। ফলে দেশে মোট করোনা আক্রান্তের সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ১ কোটি ১৪ লক্ষ ৩৮ হাজার ৭৩৪ জন।স্বাস্থ্য ও পরিবারকল্যাণ মন্ত্রকের দেওয়া পরিসংখ্যান অনুযায়ী, আপাতত মোট মৃতের সংখ্যা ১ লক্ষ ৫৯ হাজার ৪৪ জন। এর মধ্যে গত ২৪ ঘণ্টায় মৃত্যু হয়েছে ১৮৮ জনের।এই সংখ্যাটাও আগের দিনের থেকে প্রায় ১৫ শতাংশ বেশি।
A beneficiary gets the first dose of a COVID-19 vaccine shot, manufactured by Serum Institute of India, inside the vaccination center at Amri Hospital, Kolkata. Source: AAP Image/EPA/PIYAL ADHIKARY
অন্যদিকে, ইতিমধ্যেই দেশের বেশ কিছু অংশে জারি হয়েছে লকডাউন। মুসৌরি শহরের একাধিক অংশে নতুন করে সম্পূর্ণ লকডাউনের ঘোষণা করা হয়েছে। শহরের গালওয়ে কটেজ, সেন্ট জর্জ স্কুল, বার্লো গঞ্জ এলাকায় পুরোপুরি শাটডাউনের অর্ডার দিয়েছে প্রশাসন। নিত্যপ্রয়োজনীয় সামগ্রী ছাড়া কোনও দোকান খোলা রাখা যাবে না মুসৌরির এই অংশে।
আরও সঙ্কটজনক মহারাষ্ট্রের পরিস্থিতি। লাফিয়ে লাফিয়ে বাড়ছে দৈনিক সংক্রমণ। এদিন থেকেই নাগপুরে জারি হয়েছে পূর্ণ লকডাউন। চলবে ২১ মার্চ পর্যন্ত। গত দু'দিন ঔরঙ্গাবাদেও ছিল লকডাউন।
আবারও কী জারি হতে পারে লকডাউন? দেশে করোনার বাড়বাড়ন্ত দেখে ফের রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রীদের সঙ্গে প্রধানমন্ত্রীর বৈঠকে নতুন করে জল্পনা তৈরি হয়েছে জনসাধারণের মনে।