২০১৬ সালের সেনসাস রিপোর্ট অনুসারে, অস্ট্রেলিয়ায় প্রায় ছয় লাখ মুসলিম ধর্মাবলম্বী আছে। অস্ট্রেলিয়ান ন্যাশনাল ইমাম কাউন্সিলের সিদ্ধান্ত অনুসারে এ বছর ইদ-উল-আজহা পালিত হয়েছে মঙ্গলবার, ২০ জুলাই আর মুনসাইটিং অস্ট্রেলিয়ার সিদ্ধান্ত অনুযায়ী ঈদ উদযাপিত হয়েছে বুধবার, ২১ জুলাই।
এদিকে, গ্রেটার সিডনি, মেলবোর্ন-সহ অস্ট্রেলিয়ার বিভিন্ন স্থানে লকডাউন জারি থাকায় বরাবরের মতো এ বছর ঈদের জামা’তের আয়োজন করা সম্ভব হয় নি। সিডনিতে ঘরেই ঈদের নামাজ আদায় করতে বলেছে কর্তৃপক্ষ।এ বছরের ঈদ-উল-আজহা উপলক্ষে প্রধানমন্ত্রী স্কট মরিসন সবার প্রতি ঈদ মোবারক জানিয়েছেন। এক বাণীতে তিনি উল্লেখ করেন যে, যদিও আমরা বহু লোকের জীবন ও জীবিকা রক্ষা করতে পেরেছি, তারপরও, বহু অস্ট্রেলিয়ান, বিশেষত, সিডনি ও মেলবোর্নে একত্রিত হতে পারছেন না। তিনি আশাবাদ ব্যক্ত করে বলেন, আমাদের ত্যাগ, তিতিক্ষা এবং পরস্পরের প্রতি সহায়তার ফল আমরা পাব সুদিন আসার মাধ্যমে।
The Hon Scott Morrison MP, Prime Minister of Australia. Source: Prime Minister’s Office
বাংলাদেশী সঙ্গীতশিল্পী, বর্তমানে সিডনির বাসিন্দা লরা বলেন,
“এবারের ঈদটা অনেক নতুনভাবে কাটালাম। আবার নতুনও না। গত বছর যখন ঈদ হলো তখন আমরা ফুল লকডাউনে ছিলাম, দুটো ঈদেই। এবারও লকডাউনে কাটালাম।”
তিনি আরও বলেন,
“নতুন মনে হচ্ছে, একটা নতুন জীবনে পা দিচ্ছি সবাই আমরা। কারও সাথে কেউ দেখাও করতে পারছি না, নট দ্যাট আমি রুল ভেঙ্গে দেখা করবো এখন।”
READ MORE
নতুন এসবিএস রেডিও অ্যাপ ডাউনলোড করুন
ঈদের দিনটি তিনি শুরু করেন নামাজ দিয়ে।
“এবারের ঈদ কাটলো, অবশ্যই নামাজ দিয়ে শুরু হলো দিন। আর, রান্না-বান্না অল্প-স্বল্প করলাম।”
ঈদের দিনে স্বামী মিতুলকে সঙ্গে নিয়ে নাটক দেখে কাটিয়েছেন লরা।
“ঈদের নাটকের একটা ম্যারাথন করলাম। গত রোজার ঈদে যত ঈদের নাটক ছিল, সেগুলো আমরা বেছে বেছে কিছু দেখলাম। ভাল লাগলো। আসলে দেশকে অনেক মিস করি, দেশের ঈদ মিস করি।”
লকডাউনের কারণে সবাইকে মিস করেছেন বলে তিনি জানান।
সিডনির ব্লাকটাউন সিটি কাউন্সিলের উডক্রফ্টের আলবিনা হক ১৪ বছর ধরে অস্ট্রেলিয়ায় আছেন। তিনি বলেন, এ বারই প্রথম ঈদ এটি, যেদিন আমার বাসায় কেউ আসেন নি।
“এমনিতে সাধারণত প্রতি ঈদে আমার বাসায় ২৫ থেকে ৩০ জন নাশতা খেতে আসেন। আমরা ঈদ করছি আজ বুধবার, ২১ জুলাই। আজ বাসায় ঈদের নামাজ পড়েছি। আর, আমার স্বামী যেহেতু একজন এসেনশিয়াল ওয়ার্কার, তাই এর পরে তিনি কাজে চলে গেছেন।”সিডনির আইটি প্রফেশনাল ও শাপলা-শালুক লায়ন্স ক্লাবের সেক্রেটারি ইলিয়াস চৌধুরী বলেন, “এবারের ঈদটা অবশ্যই একটু ব্যতিক্রমধর্মী। কারণ, এবারের লকডাউনের কারণে আমরা নামাজ পড়তে যাওয়ার জন্য সে সুযোগটা পাই নি। আমি আমার পরিবার-সহ বাসায় নামাজ পড়েছি।”
সিডনির উডক্রফ্টের আলবিনা হক বলেন, এ বারই প্রথম ঈদ, যেদিন আমার বাসায় কেউ আসেন নি। এমনিতে প্রতি ঈদে আমার বাসায় ২৫ থেকে ৩০ জন নাশতা খেতে আসেন। Source: Albina Haque
তিনি আরও বলেন,
“আগে যেভাবে বের হতে পারতাম, সেটা যেহেতু সম্ভব ছিল না, তাই আমার বন্ধু-বান্ধব ও পরিবারের যারা এখানে আছেন, তাদের সঙ্গে ভার্চুয়াল গ্যাদারিংয়ের মাধ্যমে, জুম মিটিংয়ের মাধ্যমে ঈদের শুভেচ্ছা বিনিময় করেছি।”
এবারের ঈদের জন্য সেভাবে কোনো কেনাকাটা করেন নি, বলেন তিনি।
“এবারের ঈদের জন্য সেভাবে কোনো শপিং করা হয় নি। বরং, সে টাকাগুলো, যেহেতু বাংলাদেশের মানুষেরা অনেক অভাবী এবং কোভিডের কারণে, লকডাউনের কারণে তারা বের হতে পারছেন না, এবং অনেকের আর্থিক সমস্যা আছে, তাই তাদেরকে বিভিন্নভাবে আমি গিফটের টাকাগুলো পাঠিয়ে দেওয়ার ব্যবস্থা করেছি।”
“আমার পরিবারের সবাই এবার তাদের গিফট না কিনে তারা বাংলাদেশে এ টাকাগুলো গরিব-দুঃখীদের মাঝে দেওয়ার জন্য আমাকে বলার পর আমি সেগুলো একটা অলাভজনক প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে বিভিন্ন অভাবী মানুষের কাছে টাকাগুলো পাঠানোর ব্যবস্থা করেছি।”
তিনি বলেন, এই ঈদটা মনে থাকবে সবসময়। কারণ, এবার বড় কোনো জমায়েত করা যায় নি অন্যান্য বারের মতো। ভার্চুয়ালি এটা করা হয়েছে বলেন তিনি।
ব্রিসবেনের লাইলাক শহীদ বলেন,
“ব্রিসবেনে আজ (২১ জুলাই, বুধবার) ঈদ হচ্ছে। তবে, এবার আমি ঈদ করছি না। এমনকি কাউকে ঈদের শুভেচ্ছাও জানাই নি! বাংলাদেশ খুব খারাপ সময় পার করছে। সে কারণে নীরবে যতটুকু পারি তাদের সহযোগিতা করছি।”
ব্রিসবেনের গ্রিফিথ ইউনিভার্সিটির গ্রিফিথ বিজনেস স্কুলের লেকচারার ড. শামসুন্নাহার বলেন,
এই বৈশ্বিক মহামারীতে আরও একটি ভিন্ন রকম ঈদ উদযাপন করেছি। আমি ব্রিসবেনে থাকি। এখানে লকডাউন নেই, কিন্তু, উইকডেজ-এ ঈদ হওয়াতে আসলে ঈদ উদযাপন করেছি এবার রাতে।”
বাংলাদেশের মতো না হলেও চেষ্টা করি ঈদ উদযাপন করতে বন্ধুদের সাথে। সকাল থেকে শুরু করি ঈদের বেড়ানো।”
দোয়া করছি সবাই যেন আবার স্বাভাবিক ঈদ উদযাপন করতে পারে আগামী বছর। সবাইকে ঈদের শুভেচ্ছা। ঈদ মোবারক।”মেলবোর্নের আর-এম-আই-টি ইউনিভার্সিটির শিক্ষার্থী সুমাইয়া কবীর বলেন,
ব্রিসবেনের গ্রিফিথ বিজনেস স্কুলের লেকচারার ড. শামসুন্নাহার বলেন, এখানে লকডাউন নেই, কিন্তু, উইকডেজ-এ ঈদ হওয়াতে আসলে ঈদ উদযাপন করেছি এবার রাতে। Source: Shamsun Nahar
“গতকাল (মঙ্গলবার, ২০ জুলাই) ঈদ করেছি। বাংলাদেশে থাকা পরিবার ও বন্ধু-বান্ধবীদের সবাইকে অনেক মিস করেছি। লকডাউন থাকার কারণে আসলে বাংলাদেশী কমিউনিটির সবাই এক সাথে ঈদ উদযাপন করা সম্ভব হয় নি।”
ক্যানবেরা থেকে লুবনা আলম বলেন, আমরা ঈদটা পালন করেছি স্বল্প পরিসরে, সীমিত আকারে। তিনি বলেন,
“ক্যানবেরায় আমরা একটা বাবলের মধ্যে আছি। আমরাই হয়তো অস্ট্রেলিয়ার গুটিকয়েক শহরের মধ্যে, যারা কোভিড-ফ্রি আছি। সেজন্য হয়তো আমাদের এবারের ঈদ উদযাপন করার সুযোগ ছিল।”
তিনি আরও বলেন,
“আমরা কিন্তু রোজার ঈদ করেছিলাম। কিন্তু, এবারের ঈদের, আমি বলবো, ক্যানবেরাবাসীরা খুবই সাবধানতা অবলম্বন করেছে। এবং যেহেতু আমাদের আশে-পাশের বড় শহরগুলোর কেউই ঈদ উদযাপন করতে পারছে না, বাংলাদেশেও পারছে না, সেজন্য অনেকটা তাদেরকে শ্রদ্ধা জানানোর জন্য আমরা বড় আকারে ঈদ উদযাপন করি নি।”
“আমাদের ঈদ শুরু হয়েছিল নামাজ দিয়ে এবং তারপর কিছু ঘনিষ্ট বন্ধু এবং আত্মীয়-স্বজন নিয়ে আমরা বাকি দিনটা কাটিয়েছি। আমরা ঈদ করেছি স্বল্প-পরিসরে, সীমিত আকারে।”