সাংবাদিক বৈঠকে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, দ্বিপাক্ষিক বৈঠকে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর সঙ্গে একাধিক বিষয়ে আলোচনা হয়েছে তাঁর। তিনি আশাবাদী এই বিষয়গুলি এবং তিস্তা জলবণ্টন চুক্তি সম্পর্কিত আলোচনাও খুব শীঘ্রই ফলপ্রসূ হবে। এর ফলে উভয় দেশের জনগণ উপকৃত হবেন। কারণ, তিনি মনে করেন ভারত ও বাংলাদেশে একে অপরের সব থেকে ভাল বন্ধু।
কয়েক দশক ধরে বাংলাদেশ ও ভারত জল, রেল, সড়ক একাধিক ইস্যুতে একসঙ্গে কাজ করছে। কুশিয়ারা নদীর যে সমস্যা ছিল তাও সমাধান হয়েছে। এছাড়াও একাধিক বিষয়ে আলোচনায় তিনি এবং প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী একমত হয়েছেন। এরপরেই প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর দূরদর্শী নেতৃত্বের প্রশংসা করেছেন বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী। বলেছেন, প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর দূরদর্শী নেতৃত্বের ফলে দ্বিপাক্ষিক সম্পর্ককে আরও গতি প্রদান করে চলেছে। ভারত, বাংলাদেশের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ও নিকটতম প্রতিবেশি।
মঙ্গলবার বিদ্যুৎ, রেল, সড়ক পথ উন্নয়ন এবং বন্যা নিয়ন্ত্রণ নিয়ে সাতটি সমঝোতা স্বারক স্বাক্ষরিত হয়েছে ভারত ও বাংলাদেশের মধ্যে।
দ্বিপাক্ষিক বৈঠকের পর যৌথ সাংবাদিক বৈঠকে বাংলাদেশকে ভারতের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ উন্নয়ন সঙ্গী এবং বাণিজ্যিক অংশীদার বলে উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী বলেছেন, দু’দেশের বাণিজ্যিক সম্পর্ক প্রতিদিন উন্নত হচ্ছে। বন্যা প্রশমনে দুই দেশ একে অপরের দিকে সহযোগিতার হাত বাড়িয়ে দিয়েছে। সন্ত্রাসবাদ নিয়েও আলোচনা হয়েছে। পাশাপাশি বাংলাদেশকে তাদের সবচেয়ে বড় বিদ্যুৎ কেন্দ্র মৈত্রী সুপার থার্মাল প্ল্যান্ট তৈরির ব্যাপারে আশ্বাস দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী।
দুই রাষ্ট্রনেতার সই করা সাতটি চুক্তির মধ্যে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ হল বিদ্যুৎ কেন্দ্র মৈত্রী সুপার থার্মাল প্ল্যান্ট। বাংলাদেশের নদী কুশিয়ারার জলবণ্টন নিয়েও একটি গুরুত্বপূর্ণ সমঝোতা স্বারক স্বাক্ষর হয়েছে বলে ঘোষণা করেছেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী। বলেছেন, তিনি এবং প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ঠিক করেছেন তথ্য প্রযুক্তি, মহাকাশ গবেষণা এবং পরমাণু গবেষণার ক্ষেত্রে ভারত ও বাংলাদেশ পরস্পরের সঙ্গে সহযোগিতা করে চলবে।
এদিকে, বাংলাদেশে মুক্তিযুদ্ধের সময় ভারতের অবদান কখনও ভোলার নয়। ভারতে এলেই সেই স্মৃতির আবেগে ভাসেন, রাষ্ট্রপতি ভবনে ভাষণে এমনই মন্তব্য করেছেন বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
মঙ্গলবার সকালে রাষ্ট্রপতি ভবনে পৌঁছান বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী। সেখানে তাঁকে স্বাগত জানাতে উপস্থিত ছিলেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী-সহ বিদেশমন্ত্রী এস জয়শঙ্কর এবং কেন্দ্রীয় মন্ত্রিসভার অন্যান্য সদস্যরাও। রাষ্ট্রপতি ভবনে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে সেনার গার্ড অফ অনার দেওয়া হয়। এরপরেই আবেগাপ্লুত হয়ে পড়েন বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
READ MORE
নতুন এসবিএস রেডিও অ্যাপ ডাউনলোড করুন
সাংবাদিকদের মুখোমুখি হয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, ভারত তাদের বন্ধু। যখনই এখানে আসেন, তখন মনে পড়ে যায় মুক্তিযুদ্ধের সময় ভারতের অবদানের কথা। ভারত ও বাংলাদেশের মধ্যে বরাবর বন্ধুত্বের সম্পর্ক। সবসময় একে অপরের পাশে থেকেছে। পরস্পরকে সাহায্যের মাধ্যমে একসঙ্গে কাজ করতে চান তিনি। মানুষের উন্নয়ন এবং অর্থনীতি উন্নয়ন নিয়ে আলোচনা হবে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার কথায়, যখন ভারতে ছিলেন, তখন হিন্দি শিখেছেন। তবে বলা হয় না। অভ্যাস নেই। এদিন একটু বলার চেষ্টা করেছেন।
পাশাপাশি, ভারত সফরে এসে পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সঙ্গে দেখা না হওয়ায় আক্ষেপ প্রকাশ করেছেন বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। সোমবার দিল্লিতে নৈশভোজে বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী সাংবাদিকদের মুখোমুখি হতে উঠেছে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের প্রসঙ্গ। শেখ হাসিনা বলেছেন, মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় তার বোনের মতো। ভেবেছিলেন দিল্লি এলে দেখা হবে। কোনও কারণে এবার সেটা হল না। তবে তাঁর সঙ্গে তো যে কোনও সময়েই তার দেখা হতে পারে।
দিল্লিতে দেখা করার আশা জানিয়ে এর আগে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে চিঠিও দিয়েছিলেন শেখ হাসিনা। পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রীকে ওই চিঠিতে তিনি পদ্মা সেতু দেখার আমন্ত্রণও জানিয়েছেন। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সঙ্গে আলোচনায় বসাটা বাংলাদেশের আসন্ন ভোটে আওয়ামী লীগের পক্ষে ইতিবাচক প্রভাব ফেলত বলে মনে করা হচ্ছে।
এর আগে সোমবার থেকে শুরু হয়েছে বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রীর চার দিনের ভারত সফর। বিদেশমন্ত্রী এস জয়শঙ্কর দেখা করেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে। চাণক্যপুরীর বাংলাদেশ ভবনে তাঁর দেশের কূটনীতিকদের সঙ্গে কথা বলেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। জানিয়েছেন, তিনি আশাবাদী। দুই দেশের সরকার চাইলে কী হতে পারে স্থলসীমান্ত চুক্তি তার প্রমাণ। অন্য দেশ যখন সীমান্ত নিয়ে যুদ্ধ করে, সুন্দরভাবে সীমান্ত সমস্যা মিটিয়ে ফেলেছেন তারা। পাশাপাশি ইলিশ রফতানির ছাড়পত্র দিয়েই তিনি দিল্লি সফরে এসেছেন। পুজোর সময়ে ভারতের মানুষকে এটা তাঁর উপহার। তাঁর কথায়, নানা সূচকে বাংলাদেশের অর্থনীতি এগিয়ে চলেছে।
অন্যদিকে, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ভারত সফর চলাকালীন গঙ্গাপাড়ে পদ্মার ইলিশ কলকাতায় এসে পৌঁছেছে। মঙ্গলবার সকালে বাংলাদেশি ইলিশ পৌঁছেছে গঙ্গার ওপারের, হাওড়ার মাছ বাজারে। এই মরশুমে ৩০ সেপ্টেম্বরের মধ্যে ২ হাজার ৪৫০ মেট্রিক টন ইলিশ পাঠাবে বাংলাদেশ সরকার। হাওড়ার ফিশ ইমপোর্টস অ্যাসোসিয়েশনকে চিঠি পাঠিয়েছে বাংলাদেশের বাণিজ্য মন্ত্রণালয়। পাইকারি বাজারে বাংলাদেশি ইলিশের দাম পড়বে কিলোপ্রতি ১২০০ থেকে ১৩০০ ভারতীয় টাকা। যোগান বাড়লে খুচরো বাজারে পদ্মার ইলিশের দাম কমবে বলে আশা ক্রেতা-বিক্রেতাদের।
এর আগে ২০১২ সালে বাংলাদেশ সরকার ইলিশ রফতানিতে নিষেধাজ্ঞা জারি করে। তবে গত ৩ বছর ধরে দুর্গাপুজোর আগে উপহার হিসেবে আসছে বাংলাদেশের ইলিশ। রাজ্যের ইলিশ আমদানিকারী সংস্থা ফিস ইমপোর্টার্স অ্যাসোসিয়েশনের সম্পাদক সৈয়দ আনোয়ার মুকসুদ বলেছেন, পুজোর আগে পদ্মার ইলিশ ওপার বাংলা থেকে এপার বাংলায় এসেছে। এই ভালো লাগার আনন্দের কোনও সীমা নেই। কারণ সকলেই জানি যে, এপার বাংলার মানুষ ওপারের পদ্মার ইলিশের জন্য কতটা উদগ্রীব।