অস্ট্রেলিয়ান হোমস্টে নেটওয়ার্ক (AHN) এর উদ্যোগে গঠিত হয় ইন্টারন্যাশনাল স্টুডেন্ট সাপোর্ট নেটওয়ার্ক (ISSN)। কোভিড-১৯ এর সঙ্কটের ফলে অস্ট্রেলিয়ার অর্থনীতিতে ব্যাপক প্রভাব পড়ে। এতে অস্ট্রেলিয়ায় পড়তে আসা আন্তর্জাতিক শিক্ষার্থীরা বিপাকে পড়ে যান। তাদের সহায়তায় এগিয়ে আসে হোমস্টে নেটওয়ার্ক। আন্তর্জাতিক শিক্ষার্থীদের জন্য স্বল্প খরচে এবং স্বল্প-মেয়াদে আবাসনের ব্যবস্থা করে দেয় তারা।
আন্তর্জাতিক শিক্ষা খাত হলো অস্ট্রেলিয়ার চতুর্থ বৃহত্তম রপ্তানি আয়ের খাত। ২০১৮ সালে এদেশে প্রায় ৭৫৮,১৫৪ আন্তর্জাতিক শিক্ষার্থী পড়াশোনা করতে আসে। ২০১৮-১৯ অর্থ-বছরে অস্ট্রেলিয়ার অর্থনীতিতে এই খাত ৩৭.৬ বিলিয়ন ডলার অবদান রেখেছে। প্রায় ২৫০ হাজার পূর্ণকালীন সমতুল্য কর্ম-সংস্থান সৃষ্টি হয়েছে এর মাধ্যমে।
অস্ট্রেলিয়ান পরিবারে আন্তর্জাতিক শিক্ষার্থীদের স্বল্প-খরচে থাকা ও খাওয়ার ব্যবস্থা করা হয় হোমস্টে নেটওয়ার্কের মাধ্যমে। এ সম্পর্কে অস্ট্রেলিয়ান হোমস্টে নেটওয়ার্ক-এর প্রতিষ্ঠাতা ডেভিড বেক্রফট বলেন,
“১২ বছর আগে অস্ট্রেলিয়ান হোমস্টে নেটওয়ার্ক প্রতিষ্ঠা করি। অস্ট্রেলিয়ান পরিবারগুলোর সঙ্গে আন্তর্জাতিক শিক্ষার্থীদের আবাসনের ব্যবস্থা করে তাদেরকে সেটল করতে সহায়তা করার জন্য; যেন তারা এদেশের সংস্কৃতি, ভাষা খুব দ্রুত শিখতে পারে এবং সমাজের সঙ্গে মিশে যেতে পারে।”
সাধারণত বিনা খরচে এই সুযোগ পাওয়া যায় না। তবে, কোভিড-১৯ সঙ্কটের কারণে বহু আন্তর্জাতিক শিক্ষার্থী খাদ্য-সংস্থান ও বাসস্থানের সমস্যায় নিপতিত হয়েছেন। তাদেরকে সহায়তা করার জন্য বিশেষ একটি প্রকল্প হিসেবে ইন্টারন্যাশনাল স্টুডেন্ট সাপোর্ট নেটওয়ার্ক (ISSN) গঠন করেন বলে জানান মিস্টার বেক্রফট। এর মাধ্যমে খুবই অল্প খরচে আন্তর্জাতিক শিক্ষার্থীদেরকে ঘরে রাখার জন্য অস্ট্রেলিয়ান হোস্ট পরিবারগুলোকে অনুপ্রাণিত করা হচ্ছে বলেন তিনি।
গত ১২ বছরে অস্ট্রেলিয়া জুড়ে ১৮০ টি দেশের প্রায় ৬০ হাজার আন্তর্জাতিক শিক্ষার্থীকে এভাবে আবাসনের ক্ষেত্রে সহায়তা প্রদান করা হয়েছে। তাদেরই একজন হলেন সাউদার্ন ক্রস ইউনিভার্সিটির বাংলাদেশী আন্তর্জাতিক শিক্ষার্থী সাদমান ওশান।
তার সম্পর্কে মিস্টার বে ক্রফট বলেন,
“সাদমান ওশান সাহায্যের জন্য আবেদন করেছিলেন। তিনি কাজ হারিয়েছেন এবং আবাসনের জন্য সংগ্রাম করছিলেন। আমরা সিডনিতে তার থাকার ব্যবস্থা করে দিই। আট সপ্তাহের জন্য তিনি পরিপূর্ণ স্পন্সর পেয়েছেন।”
আন্তর্জাতিক শিক্ষার্থীদেরকে সহায়তা করার ক্ষেত্রে কীভাবে বাছাই করা হয়? এক্ষেত্রে মানদণ্ড কী? এ সম্পর্কে মিস্টার বে ক্রফট বলেন,
“শিক্ষার্থী বাছাইয়ের ক্ষেত্রে আমরা মূলত তাদের শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে যোগাযোগ করে থাকি।”
“ওশানের অসহায় অবস্থা জানার পর আমরা খুব দ্রুত ব্যবস্থা গ্রহণ করি।”
ওশানের মতো সংগ্রামরত শিক্ষার্থীদের উদ্দেশে তিনি বলেন,
“তাদেরকে প্রথমে তাদের শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে যোগাযোগ করতে হবে এবং নিজের সমস্যার কথা খুলে বলতে হবে। অস্ট্রেলিয়ার বেশিরভাগ শিক্ষা প্রতিষ্ঠান ও সরকারের সঙ্গে আমরা কাজ করি। আমি শিক্ষার্থীদের উদ্দেশে বলবো, লজ্জা করার দরকার নেই। শিক্ষা প্রতিষ্ঠানকে তাদের জানানো উচিত যে, তাদের সাহায্যের প্রয়োজন আর তাদের শিক্ষা প্রতিষ্ঠানকে আমাদের প্রোগ্রামের জন্য রেফার করা।”
মিস্টার বে ক্রফট বলেন, তারা মূলত আবাসন, খাবার, আবেগী সহায়তা এবং ওয়াইফাই সুবিধার বন্দোবস্ত করেন, আন্তর্জাতিক শিক্ষার্থীরা যেন পড়াশোনা করতে পারে।
এসব খরচ মেটানোর জন্য অর্থ কীভাবে সংগ্রহ করা হয় জানতে চাইলে তিনি বলেন,
“নিউ সাউথ ওয়েলস সরকারের সঙ্গে আমরা পার্টনারশিপ এগ্রিমেন্ট করেছি।” তাই, অস্ট্রেলিয়ার অন্যান্য স্থানের তুলনায় নিউ সাউথ ওয়েলসে আমরা দ্রুত আবাসনের ব্যবস্থা করতে পারবো, বলেন তিনি।
সাউদার্ন ক্রস ইউনিভার্সিটির বাংলাদেশী আন্তর্জাতিক শিক্ষার্থী সাদমান ওশান হোমস্টে নেটওয়ার্ক থেকে আবাসন সহায়তা লাভ করেছেন। এ সম্পর্কে সাদমান ওশান বলেন,
“যখন থেকেই করোনাভাইরাসের প্যানডেমিকটা শুরু হলো, তখন থেকেই আসলে অনেক স্মল ও বিগ অর্গানাইজেশন, সবাই কম-বেশি সাহায্য করার চেষ্টা করেছে।”
“এর মধ্যে বিশেষভাবে বলতে হবে যে, কিছু বাঙালি কমিউনিটি, এখানকার, They have been really great. তারা আসলে সবাইকে সাহায্য করার চেষ্টা করেছে, নানাভাবে।”
বিনামূল্যে আবাসনের ব্যবস্থা করে দেওয়ার ক্ষেত্রে হোমস্টে নেটওয়ার্ক বিশেষভাবে ভূমিকা রেখেছে বলে জানান সাদমান ওশান। এটাকে তিনি চমৎকার উদ্যোগ বলে অভিহিত করেন।
“এটা একটা এক্সেলেন্ট ইনিশিয়েটিভ।”
অচেনা একটি পরিবারের সঙ্গে থাকার অভিজ্ঞতা সম্পর্কে সাদমান ওশান বলেন,
“ওরা অ্যামেজিং। আমি যে ফ্যামিলিটার সঙ্গে থাকছি, তিনি আসলে একজন টিচার।”
“খুবই সুন্দর বাসা, খুবই বড় বাসা। আমি দো’তলায় থাকছি, ওরা নিচতলায় থাকছে। ওরা খুবই ওয়েলকামিং। I am feeling like home."
ফেসবুকের মাধ্যমে হোমস্টে নেটওয়ার্কের কথা জানতে পারেন সাদমান ওশান।
তবে, আন্তর্জাতিক শিক্ষার্থীদের সবাই সাদমানের মতো এই নেটওয়ার্কের কথা জানতে পারেন নি।
মাসুদ আল শামস একটি প্রাইভেট কলেজে অ্যাডভান্সড ডিপ্লোমা করছেন। লাকেম্বার বাংলাদেশী কমিউনিটির কাছ থেকে বিনামূল্যে দু’বেলা খাবার সহায়তা পাওয়ার অনেক প্রশংসা করেন তিনি।
মাস্টার্স শিক্ষার্থী আতিকুর রহমানের স্ত্রী আজমেরি আফরিন বলেন, অন্য কোনো পরিবারের সঙ্গে বিনা-খরচে আবাসনের ব্যবস্থা সম্পর্কে তিনি কিছু শোনেন নি।