ইওরোপীয় ইউনিয়নের সঙ্গে ভারতের অসামরিক পরমাণু চুক্তি

প্রায় ১৩ বছর ধরে চলা আলোচনার পর অসামরিক পরমাণু চুক্তি স্বাক্ষর করেছে ভারত ও ইউরোপীয় ইউনিয়ন। বুধবার, দু’পক্ষের মধ্যে অনলাইন সামিটে এই চুক্তির রূপরেখা ঘোষণা করা হয়েছে। অসামরিক ক্ষেত্রে আণবিক শক্তি নিয়ে সহযোগিতা করতে রাজি হয়েছে ভারত ও ইউরোপীয় ইউনিয়ন। এর জন্যই ইতিমধ্যে ফ্রেম ওয়ার্ক এগ্রিমেন্ট তৈরি করে ফেলা হয়েছে। সামিটে ভারতের প্রতিনিধি দলের নেতৃত্ব দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি। ইউরোপীয় ইউনিয়নের প্রতিনিধি দলটির শীর্ষে ছিলেন ইউরোপিয়ান কাউন্সিলের প্রেসিডেন্ট চার্লস মিশেল ও ইউরোপিয়ান কমিশনের প্রেসিডেন্ট উরসুলা ভন ডার লিয়েন। ভারত ও ইউরোপীয় ইউনিয়নের মধ্যে অসামরিক পরমাণু চুক্তি স্বাক্ষরিত হওয়ায় আণবিক জ্বালানি ও শক্তি উৎপন্ন করার ক্ষেত্রে দু’পক্ষের মধ্যে সম্পর্ক আরও মজবুত হবে।

A nuclear power plant in Belgium

Source: AAP

ইউরোপীয় ইউনিয়ন ও ভারত দীর্ঘদিনের সহযোগী। বিশ্বে শান্তি ও স্থিরতা বজায় রাখতে এই সহযোগিতা অত্যন্ত জরুরি, বুধবার ১৫তম ভারত ও ইউরোপীয় ইউনিয়ন ভারচুয়াল সামিটে ব্রাসেলসের সঙ্গে নয়াদিল্লির সম্পর্ক আরও মজবুত করে, এমনই বলেছেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি। প্রধানমন্ত্রী বলেছেন, মার্চ মাসে করোনা মহামারীর জন্য এই সম্মেলন পিছিয়ে দিতে হয়েছিল। কিন্তু আজ আমরা মিলিত হতে পেরেছি তা ভাল খবর। বর্তমানে বিশ্বে যে পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে সেই নিরিখে দেখলে, ভারত ও ইউরোপীয় ইউনিয়ন দীর্ঘদিনের সহযোগীতা বিশ্বে শান্তি বজায় রাখার জন্য কতটা গুরুত্বপূর্ণ, তা স্পষ্ট হয়ে গিয়েছে।

পরমাণু চুক্তি ছাড়াও নয়াদিল্লি ও ব্রাসেলসের মধ্যে আন্তর্জাতিক জলসীমার সুরক্ষা, সন্ত্রাসবাদ, মুক্ত বাণিজ্য-সহ একাধিক বিষয়ে আলোচনা ও সমঝোতা হয়েছে। আগামী পাঁচ বছরে এই সমস্ত বিষয়ে দুই পক্ষের কী পদক্ষেপ হবে তার একটি রূপরেখাও প্রকাশ করা হয়েছে। ইউরোপিয়ান পুলিশ ও সিবিআইয়ের মধ্যে সন্ত্রাসবাদ ও সংগঠিত অপরাধের সঙ্গে যৌথভাবে লড়াইয়ের জন্য একটি চুক্তি হয়েছে।এছাড়াও, মুক্ত বাণিজ্য বা ফ্রি ট্রেড এগ্রিমেন্ট-এর ক্ষেত্রে দু’পক্ষের মধ্যে দীর্ঘদিন ধরে অমীমাংসিত থাকা একাধিক বিষয়ে আলোচনা হয়েছে। ব্রিটেনের ইউরোপীয় ইউনিয়ন থেকে বেড়িয়ে যাওয়া, ব্রেক্সিটের পরও ২৭টি দেশের মিলিত গোষ্ঠী ইউরোপীয় ইউনিয়ন ভারতের কাছে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। ২০১৮ সালে ভারতের সবথেকে বড় বাণিজ্যিক সহযোগী ছিল ইউরোপীয় ইউনিয়ন। ২০১৮-১৯ সালে দু’পক্ষের মধ্যে প্রায় ১১৫ বিলিয়ন মার্কিন ডলার মূল্যের বাণিজ্যও হয়েছে। এর মধ্যে ভারত রপ্তানি করেছে প্রায় ৫৭ বিলিয়ন ডলার মূল্যের পণ্য।

এই অসামরিক চুক্তির কৃতিত্ব অনেকটাই প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী মনমোহন সিংয়ের। ২০০৮ সালে অসামরিক পরমাণু বিষয়ে ভারত-মার্কিন দ্বিপাক্ষিক চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়। যদিও ২০১০ সালে পরমাণু দায়বদ্ধতা আইনের জটে গোটা বিষয়টিই থমকে যায়। ওই আইনে বলা হয়েছিল, কোনও রকম দুর্ঘটনা ঘটলে তার দায় নিয়ে বিশাল অঙ্কের ক্ষতিপূরণ দিতে হবে ইউরেনিয়াম সরবরাহকারী মার্কিন সংস্থাগুলিকে। এই শর্ত মেনে নিতে রাজি হয়নি আমেরিকা। কিন্তু তারপর এগিয়ে আসে ইউরোপীয় ইউনিয়ন।

Follow SBS Bangla on .

Share
Published 16 July 2020 6:36pm
By Partha Mukhopadhyay
Presented by Sikder Taher Ahmad

Share this with family and friends