এসবিএস নিউজ সিরিজের রিপোর্টে কোভিড ১৯-এর প্রভাব এবং অর্থনৈতিক মন্দা কিভাবে আন্তর্জাতিক শিক্ষার্থীদের চাপে ফেলেছে তা তুলে ধরা হচ্ছে।
অন্যান্য আন্তর্জাতিক শিক্ষার্থীদের মতো তরুণ আন্দ্রেয়াস পুয়ের্তো অস্ট্রেলিয়ায় এসেছিলেন উচ্চ শিক্ষা লাভ করতে। প্রথমে তার পরিকল্পনা ছিল ছয় মাস থাকার, কিন্তু তাড়াতাড়িই তিনি এই দেশের প্রেমে পড়ে যান, এবং তিনি সিডনিতে থাকছেন প্রায় তিন বছরেরও অধিক সময় ধরে।
কলম্বিয়া থেকে আসা ২৭ বছরের এই তরুণ এখন টরেন্স ইউনিভার্সিটি অস্ট্রেলিয়াতে বিজনেস ইনফরমেশন সিস্টেমে মাস্টার্স করছেন। এসময় প্রায় দু'বছর আন্দ্রেয়াস একটা ক্যাফে এবং বুকশপে কাজ করেছেন একই নিয়োগদাতার অধীনে।
কিন্তু কোভিড ১৯ যখন হানা দিলো, তিনি তখন তার কাজ হারালেন, তখন তার হাতে খরচের অর্থ নেই এবং ফেডারেল সরকারের অনুমোদনে তার সুপার ফান্ড থেকে অর্থ তুলতে চাইলেন।
কিন্তু আন্দ্রেয়াস দেখলেন সুপার ফান্ডে তার হিসেবে থাকার কথা ৩,৫০০ ডলার, কিন্তু সেখানে একটি পয়সাও নেই, তার নিয়োগদাতা ফান্ডে কোন অর্থই জমা দেননি।
তিনি এসবিএস নিউজকে বলেন, "আমি তার সাথে যোগাযোগ করার চেষ্টা করেছি, কল করেছি, মেসেজ দিয়েছি, ইমেইল করেছি কিন্তু কোন উত্তর পাইনি।"
"তবে কিছুদিন আগে সে আমার সাথে যোগাযোগ করে বলে সে দেউলিয়া হয়ে গেছে এবং পরে আমাকে পাওনা দেবে।"
কিন্তু তিনি অদ্যাবধি তার পাওনা সুপার এনুয়েশনের অর্থ পাননি।
আন্তর্জাতিক শিক্ষার্থীদের মতো যারা টেম্পোরারি ভিসায় আছেন তারা মহামারীজনিত সরকারি সহায়তা যেমন জবকীপার বা জবসিকার পেমেন্ট পান না।
গত এপ্রিলে ফেডারেল সরকার ঘোষণা করেছে অন্যান্যদের মতো টেম্পোরারি ভিসাধারীরাও মহামারীর এই সংকটে সুপারএনুয়েশন থেকে এই অর্থবছরে সর্বোচ্চ ১০,০০০ ডলার পর্যন্ত তুলতে পারবেন।
আন্দ্রেয়াস ভেবেছিলেন এটা তাকে সহায়তা করবে।
তিনি বলেন, "আমি আমার অর্থ ফেরত চাই, তাছাড়া, আমি চাই না আর কারো বেলায় এমনটি ঘটুক, আমি জানি এটা কত কষ্টের, যখন কেউ দেখবে সে কঠোর পরিশ্রম করলো ঠিকই কিন্তু তার প্রাপ্য অর্থটা পেলো না।"
এটা কোন বিচ্ছিন্ন ঘটনা নয়, নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক আরো একজন আন্তর্জাতিক শিক্ষার্থী এসবিএস নিউজকে তার পে স্লিপ দেখিয়েছে, যেখানে দেখা যায় যে তার নিয়োগদাতা সুপার ফান্ডে অর্থ দিয়েছে, কিন্তু বাস্তবে তা কখনোই করা হয়নি।রেডফার্ন লিগাল সেন্টারের শার্মিলা বার্গন বলেন, অনেক আন্তর্জাতিক শিক্ষার্থীরা তাদের কাছে আসছেন তাদের না দেয়া সুপারএনুয়েশন ফেরত পেতে।
Sharmilla Bargon from Redfern Legal Centre says requests for help from international students have increased. Source: SBS News
তিনি বলেন, "আমরা দেখতে পাচ্ছি যে, এইভাবে নিয়োগদাতারা ব্যাপকভাবে কর্মীদের শোষণ করেছেন। এটা সত্যিই সাধারণ ব্যাপার যে ব্যবসা যদি ক্ষতিগ্রস্ত হয় তবে ব্যবসায়ীরা আগেই সুপারএনুয়েশনে অর্থ দেয়া বন্ধ করে দেবে।"
সাধারণত, আন্তর্জাতিক শিক্ষার্থীরা স্থায়ীভাবে দেশ থেকে চলে গেলে সুপারএনুয়েশন থেকে অর্থ তুলতে পারে, সে অবস্থায় তারা যদি পেমেন্ট না পান তবে তাদের পক্ষে পাওনা দাবি করা দুরূহ, কারণ অতো সময় তারা পান না।
এ প্রসঙ্গে মিজ বার্গন বলেন, "যারা তারপরেও চেষ্টা করেছেন, তাদের জন্য প্রক্রিয়াটি বেশ কঠিন এবং সাফল্যের ব্যাপারেও কিছু পরিষ্কার বলা যায় না, এটা কেইসের প্রকৃতি কি তার ওপর নির্ভর করবে।"
অস্ট্রেলিয়ান ট্যাক্সেশন অফিসের একজন মুখপাত্র বলেন, বকেয়া সুপারএনুয়েশন বিষয়ে যে অভিযোগ এসেছে তা তারা গুরুত্বের সাথে নিচ্ছে।
সেখান থেকে বলা হয়, "২০১৯-২০ অর্থবছরের প্রথম ছয় মাসে আমরা ৯,০০০-এরও বেশি নিয়োগদাতার সাথে যোগাযোগ করে নিয়ম অনুসারে কর্মীদের প্রাপ্য ৪০৬.৫ মিলিয়ন ডলার তুলতে সক্ষম হয়েছি।"
থেকে কর্মীদের বলা হয়েছে এমন ঘটনা ঘটলে তারা যাতে তাদের নিয়োগদাতাদের বিষয়ে রিপোর্ট করে।
আন্তর্জাতিক শিক্ষার্থীদের পরামর্শ দেয়া হয়েছে, যাতে তারা তাদের পে স্লিপ ভালো করে দেখে নেয়, তাদের সুপার ফান্ডে অর্থ দেয়া হয়েছে কিনা এজন্য তাদের সুপার ফান্ডের সাথে যোগাযোগ করে, এবং তাদের অধিকার কি তা যাতে ভালো করে বুঝে নেয়।
নামক বহুভাষী এপ নিউ সাউথ ওয়েলসের প্রায় ৫০,০০০ আন্তর্জাতিক শিক্ষার্থীদের ব্যবহারের জন্য গত বছর খোলা হয়েছিল যা সম্পূর্ণ ফ্রি।
আরো পড়ুন: