Essential Research নামে এসবিএস নিউজের একটি এক্সক্লুসিভ জরিপে দেখা গেছে, অংশগ্রহণকারীদের চার ভাগের তিন ভাগই নতুন অভিবাসীদের মধ্যে কাজ পাওয়ার দক্ষতা ও যোগ্যতা থাকা প্রয়োজন বলে মনে করেন। আটটি মানদণ্ডের মধ্যে এ বিষয়টিকে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ মনে করছেন জরিপে অংশ নেওয়া প্রায় তিন ভাগের এক ভাগ ব্যক্তি।
এই জরিপে দেখা গেছে, অভিবাসীরা কোন ধর্মের অনুসারী কিংবা তারা কোন জাতি-গোষ্ঠীর মানুষ সেগুলো নিয়ে চিন্তিত নয় অস্ট্রেলিয়ানরা।
অস্ট্রেলিয়ান সংস্কৃতি ও মূল্যবোধ সম্পর্কে জানার বিষয়টিকে গুরুত্বপূর্ণ মনে করছেন শতকরা ৬৫ ভাগ ও ভাল ইংরেজি বলতে পারার বিষয়টির প্রতি জোর দিচ্ছেন শতকরা ৫১ ভাগ।জরিপে অংশ নেওয়া প্রতি পাঁচ জনে প্রায় এক জন মনে করেন ইংরেজি ভালভাবে বলতে পারাটা নতুন অভিবাসীদের জন্য সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ।
Q: Which of the following criteria do you think should be the most important for deciding whether a migrant should be allowed to move to Australia? Source: Essential Research
গত সপ্তাহে পরিচালিত এই জরিপে ১,০৭৯ জন অংশ নেন।
নতুন অভিবাসীদের ধর্মীয় ও জাতিগত পরিচয় অস্ট্রেলিয়ানদের কাছে তেমন একটা মূল্য বহন করে না। অভিবাসীরা কোন দেশ থেকে আসছেন তা গুরুত্বপূর্ণ মনে করেন ১৮ শতাংশ ব্যক্তি আর অভিবাসীদের ধর্মীয় পরিচয়কে গুরুত্বপূর্ণ মনে করেন ১১ শতাংশ ব্যক্তি।
ধর্মীয় পরিচয় বাধা নয়
অস্ট্রেলিয়ায় আসতে ইচ্ছুক নতুন অভিবাসীদের ধর্মীয় পরিচয় নিয়ে বেশিরভাগ অস্ট্রেলিয়ান তেমন একটা আগ্রহী নয় জেনে অবাক হন ইসলাম ফোবিয়া নেটওয়ার্কের ইনাজ জেনিফ। এসবিএস নিউজকে তিনি বলেন,
“আমি যখন প্রথমবার চাকুরির জন্য আবেদন করি তখন আমাকে বলা হয়, আমি যদি হিজাব পরিধান করা বন্ধ করি তাহলে আমি কাজটি পাব … । এখন দেখতে পাচ্ছি ধর্ম আর বড় কোনো বাধা নয়। এটি খুশির বিষয়।”
অভিবাসীদের যোগ্যতার বিষয়ে তিনি অস্ট্রেলিয়ানদেরকে উদার মনের পরিচয় দিতে আহ্বান জানান।
“দক্ষতা ও যোগ্যতার বিষয়টি গুরুত্বপূর্ণ। তবে এটাও মনে রাখতে হবে, কারও কারও এগুলো অর্জন করার সুযোগ থাকে না যতক্ষণ না তাদের পারিপার্শ্বিক অবস্থার পরিবর্তন হয়।”নিউ সাউথ ওয়েলসের বেনেলঙ আসনের লিবারাল এমপি জন আলেকজান্ডারও এটা জেনে স্বস্ত্বি বোধ করেন যে, বেশিরভাগ অস্ট্রেলিয়ান ধর্মীয় পরিচয়কে গুরুত্বপূর্ণ বিষয় মনে করে নি।
Inaz Sharif says it's heartening that religion is not considered a key factor by most Australians in determining who should come to the country. Source: SBS News
“ধর্মীয় পরিচয়ের ভিত্তিতে আমরা কখনও বৈষম্য করবো না বলে আমি আশা করি।”
গত মঙ্গলবার প্যারামাটায় এসবিএস এর একটি ফোরামে আরও কয়েকজন রাজনৈতিক নেতার সঙ্গে তিনিও উপস্থিত ছিলেন। ইমিগ্রেশন মন্ত্রী ডেভিড কোলম্যানও সেখানে ছিলেন, তবে তিনি এসবিএস-কে সাক্ষাৎকার দিতে অস্বীকৃতি জানান।
ব্যাংকস আসনে লেবার দলের প্রার্থী ক্রিস গ্যাম্বিয়ান বলেন, মাইগ্রেশন ইস্যু নিয়ে গুরুত্বের সঙ্গে আলোচনা করার প্রয়োজন রয়েছে।
ইমিগ্রেশন
গত সপ্তাহে এসবিএস নিউজ-এর পরিচালিত দেখা গেছে, অস্ট্রেলিয়ানদের একটা বড় অংশ মনে করে, ইমিগ্রেশন থেকে দেশটি উপকৃত হচ্ছে।
গত বছরের জুলাই মাসে তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী ম্যালকম টার্নবুল বলেন, পার্মানেন্ট রেসিডেন্সির জন্য আবেদনের ক্ষেত্রে সরকার অস্ট্রেলিয়ান মূল্যবোধ নিয়ে পরীক্ষা নেওয়ার কথা চিন্তা করছে। এর ফলে অভিবাসীরা সহজেই সমাজের সঙ্গে অঙ্গীভূত হতে পারবেন।তখন তিনি বলেছিলেন,
Prime Minister Scott Morrison takes a selfie with newly-sworn citizens at an Australia Day Citizenship Ceremony. Source: AAP
“অনেকগুলো কারণের মধ্যে একটি কারণ হলো, অস্ট্রেলিয়ায় অঙ্গীভূতকরণের পেছনে আমরা বিপুল অংকের অর্থ খরচ করি। আমরা এটা নিশ্চিত করার চেষ্টা করি যে, আমাদের যে-ধরনের বহু-সংস্কৃতি, তাতে আমরা সবাই সাংস্কৃতিক, ধর্মীয় এবং জাতিগত বৈচিত্র থেকে উপকৃত হই।”
নাগরিকত্বের এই কঠিন শর্তের প্রস্তাব সিনেটে প্রত্যাখ্যাত হয়।
ফেব্রুয়ারিতে বার্ষিক অভিবাসনের সংখ্যা ১৯০ হাজার থেকে কমিয়ে ১৬০ হাজার করার বিষয়টি নিশ্চিত করে সরকার। বিরোধী দলও এই পরিবর্তন সমর্থন করে। তখন অস্থায়ী ভিসায় আগত অভিবাসীর সংখ্যা বহুগুণে বৃদ্ধি পায়।
ইংরেজি ভাষায় দক্ষতা
ইংরেজি ভাষায় দুর্বল অভিবাসীদের সঠিক সংখ্যা কতো তা বলা মুশকিল। গত জুলাই মাসে পপুলেশন মন্ত্রী অ্যালান টাজ পরিকল্পনা করেছিলেন নাগরিকত্বের আবেদনকারীদের পাশাপাশি পার্মানেন্ট রেসিডেন্সি আবেদনকারীদেরও ইংরেজি ভাষায় দক্ষতার পরীক্ষা গ্রহণ করার।
তখন তিনি এসবিএস নিউজকে বলেছিলেন,
“আমরা যে বিষয়টি নিয়ে উদ্বিগ্ন তা হলো, আমাদের এখন প্রায় এক মিলিয়নের কাছাকাছি লোক রয়েছে যারা অস্ট্রেলিয়ায় ইংরেজিতে কথা বলেন না।”
২০০৬ সালে নবাগত অভিবাসীদের মধ্যে শতকরা ১৮.৬ ভাগ ভালভাবে ইংরেজিতে কথা বলতে পারতেন না। এর এক দশক পরে এই সংখ্যা বৃদ্ধি পেয়ে শতকরা ২৫ ভাগের উপরে চলে গেছে, বলেন তিনি।ম্যাকোয়েরি বিশ্ববিদ্যালয়ের ভাষাতত্ত্বের অধ্যাপক ইংগ্রিড পিলার এর সঙ্গে দ্বিমত পোষণ করেন। তিনি বলেন, ২০১৬ সালে এই সংখ্যা ১৬.৬ শতাংশ ছিল।
An Indian family at a citizenship ceremony in Adelaide. Source: Supplied
কোনো কোনো অভিবাসীর কাছে ইংরেজি ভাষায় দক্ষতার প্রমাণ চাওয়া হয়ে থাকে। এটি নির্ভর করে ভিসার ওপর। যেমন, স্কিলড ভিসা ও স্টুডেন্ট ভিসাগুলোতে মূল আবেদনকারীকে ভাষাগত দক্ষতার বিষয়টি প্রমাণ করতে হয়। তবে, তাদের জীবনসঙ্গী/সঙ্গীনী ও পরিবারের সদস্যদের তার দরকার হয় না।
এ ছাড়া, ফ্যামিলি রি-ইউনিয়ন স্কিম ও শরণার্থীদের জন্য হিউম্যানিটেরিয়ান স্কিমে ইংরেজি ভাষায় দক্ষতা চাওয়া হয় না।
সরকার ৫১০ ঘণ্টা পর্যন্ত বিনামূল্যে ইংরেজি ভাষা শিক্ষা দিয়ে থাকে। এই সেবা পাওয়ার যোগ্য অভিবাসী ও শরণার্থীরা, যাদের ইংরেজি ভাষায় কম দক্ষতা রয়েছে, তারা এই শিক্ষা গ্রহণ করতে পারেন। তবে, সব অভিবাসী এই সুযোগ কাজে লাগান না।