ফার্মেসির কাউন্টার থেকে বিক্রি হবে শিশুদের প্যারাসিটামল ও হাঁপানির (অ্যাজমা) ঔষধ ভেন্টোলিন। করোনাভাইরাসের কারণে মানুষের মজুদদারী ঠেকাতে মাথাপিছু একটি করে বিক্রি করা হবে।
বৈশ্বিক এই মহামারীতে আতঙ্কিত হয়ে মানুষ অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ওষুধগুলো কোনো বিশেষ প্রয়োজন ছাড়াই মজুদ করছে। এমতাবস্থায় ডেপুটি চিফ মেডিকেল অফিসার পল কেলি এই নতুন বিধি-নিষেধগুলো ঘোষণা করেন।
বৃহস্পতিবার ক্যানবেরায় রিপোর্টারদেরকে তিনি বলেন,
“দয়া করে প্রয়োজনের বেশি পণ্য কিনবেন না, তা সে খাদ্য এবং বিশেষভাবে ঔষধই হোক না কেন।”
অস্ট্রেলিয়ায় করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হওয়ার সংখ্যা ৫৬৫ তে পৌঁছেছে। এদের মধ্যে ছয় জন মারা গেছেন।
ড. কেলি বলেন, আক্রান্ত ব্যক্তিদের মধ্যে বড় অংশই বিদেশে ভ্রমণ করেছিলেন। আর, স্থানীয়ভাবে আক্রান্ত হয়েছেন ১০০ ব্যক্তি।
নিউ সাউথ ওয়েলসে করোনাভাইরাস কেসের সংখ্যা ৩০০ ছাড়িয়ে গেছে। এদের মধ্যে প্রায় ৫০ জন স্থানীয়ভাবে সংক্রমিত হয়েছেন বলে মনে করা হচ্ছে।
এদিকে, রাজ্য সরকারের বিভিন্ন এজেন্সির কর্তৃপক্ষ রুরাল ফায়ার সার্ভিস নিউ সাউথ ওয়েলস এর হেডকোয়ার্টার্সে যোগ দিচ্ছে আরও দ্রুত ও কার্যকরভাবে সমন্বয়-সাধনের জন্য।
নিউ সাউথ ওয়েলস চিফ হেলথ অফিসার ড. কেরি চ্যান্ট বৃহস্পতিবার রিপোর্টারদেরকে বলেন, এই রাজ্যে বুধবারে কোভিড-১৯ এর কনফার্মড কেস সংখ্যা ছিল ২৬৭ টি। এখন এটি ৩০৭ এ উপনীত হয়েছে।
এদের মধ্যে প্রায় ১৩০ জন বিদেশে আক্রান্ত হয়েছেন, যারা সম্প্রতি ইওরোপ, যুক্তরাজ্য এবং যুক্তরাষ্ট্রের ভাইরাস-আক্রান্ত বিভিন্ন অঞ্চল থেকে এসেছেন।৭০ টি কেস কোথায় আক্রান্ত হয়েছে তা নিয়ে এখনও অনুসন্ধান চলছে।
People in Sydney's CBD this week. Source: AAP
ড. চ্যান্ট বলেন, প্রাথমিক সতর্কতামূলক পদক্ষেপ হিসেবে কোভিড-১৯ এ সুনিশ্চিতভাবে আক্রান্ত সবাইকে হাসপাতালে পাঠানো হচ্ছিল। কেস সংখ্যা বৃদ্ধি পাওয়ায় এখন তা বন্ধ করা হয়েছে।
তিনি বলেন,
“এটি আবারও আশ্বস্ত করার মতো বিষয় যে, বহু কেস এমন রয়েছে যেগুলো খুবই মৃদু। নিবিড় পরিচর্যা কেন্দ্রগুলোতে (ইনটেনসিভ কেয়ার ইউনিটগুলোতে) বর্তমানে এ রকম ছ’জন রোগী রয়েছেন। কমিউনিটিতে এবং বাড়িতে আমাদের বহু রোগীর দেখাশোনা করা হচ্ছে। আর আমরা শুধু সে-সব রোগীকেই হাসপাতালে ভর্তি করছি যাদের আসলেই হাসপাতালের সেবার প্রয়োজন রয়েছে।”
“আমরা লেগে আছি এবং মানুষ সঠিক কাজ করছে তা নিশ্চিত করার জন্য আমরা একত্রিতভাবে পুরো সরকার কাজ করছি।”
নতুন সামাজিক দূরত্ব রক্ষা বিষয়ক রেগুলেশন মেনে চলায় নিউ সাউথ ওয়েলসের অধিবাসীদেরকে ধন্যবাদ জানান প্রিমিয়ার গ্লাডিস বেরেজিক্লিয়ান। আউটডোর গ্যাদারিংয়ের ক্ষেত্রে ৫০০ এর কম লোক-সমাগম এবং ইনডোর গ্যাদারিংয়ে ১০০ এর কম লোক-সমাগমের নির্দেশনা রয়েছে।
তিনি বলেন, কোভিড-১৯ এর বিরুদ্ধে সমন্বিতভাবে কাজ করার জন্য আর-এফ-এস হেডকোয়ার্টার্স-এ তিনি আরও এজেন্সি নিয়ে আসবেন, যেগুলোর মধ্যে রয়েছে পুলিশ, হেলথ, ট্রান্সপোর্ট এবং এডুকেশন।
বৃহস্পতিবার রিপোর্টারদেরকে মিজ বেরেজিক্লিয়ান বলেন,
“এখানে আপনি যা দেখছেন তা হলো পুলিশ, হেলথ, এডুকেশন, ট্রান্সপোর্ট এবং আরও বহু সরকারি এজেন্সির পরিপূর্ণ অঙ্গীভূতকরণ। তারা একসঙ্গে কাজ করবে আমাদের নাগরিকদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করার জন্য এবং একই সময়ে গুরুত্বপূর্ণ তথ্যাদি আদান-প্রদানের জন্য।”
“এই রুমের আমাদের সকল বিশেষজ্ঞ সমন্বিতভাবে, পুরো সরকার একত্রিতভাবে কাজ করছেন (এবং এ সংক্রান্ত) তথ্য-উপাত্ত তাদের হাতের নাগালের মধ্যে পাবেন।”
নিউ সাউথ ওয়েলস হেলথ গত বুধবার বলেছিল, কোভিড-১৯ এ সুনিশ্চিতভাবে আক্রান্ত ৮৬ বছর বয়সী এক ব্যক্তি মঙ্গলবার রাতে সিডনির একটি হাসপাতালে মারা গেছেন। ফলে করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে মৃত্যুর সংখ্যা এ রাজ্যে ৫ এ উন্নীত হলো।
নিউ সাউথ ওয়েলসের স্কুলগুলো খোলা থাকবে। তবে, সেগুলোতে কোনো এসেমব্লি হবে না। আর, অসুস্থ্য শিক্ষার্থী ও শিক্ষক-শিক্ষিকাদেরকে স্কুলে আসতে কড়াকড়িভাবে বারণ করা হয়েছে এবং নিয়মিত হাত ধোয়ার বিষয়টি পালন করতে বলা হয়েছে।
মিজ বেরেজিক্লিয়ান বলেন, স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা স্কুলগুলো খোলা রাখার পরামর্শ দিয়েছেন। এগুলো বন্ধ করার কোনো ‘যৌক্তিকতা নেই’।
সিডনি ফিল্ম ফেস্টিভ্যাল, স্প্লেনডার দ্য গ্রাস এবং গ্রোভিন দ্য মু অনুষ্ঠান এ সপ্তাহে স্থগিত বা বাতিল করা হয়েছে।
শ্রেণী-কক্ষে মুখোমুখি ক্লাস স্থগিত করেছে বিশ্ববিদ্যালয়গুলো। ব্যবসা প্রতিষ্ঠানগুলো তাদের কর্মীদেরকে অনুরোধ করেছে অফিসে না আসতে। অনেকগুলো চার্চ এবং মসজিদ তাদের সেবা ও কার্যক্রম স্থগিত করেছে।
এদিকে, পরিচ্ছন্নতা বজায় রাখার জন্য রাস্তায় ড্রাগ ও অ্যালকোহল পরীক্ষা সাময়িকভাবে বন্ধ করেছে নিউ সাউথ ওয়েলস পুলিশ।
মঙ্গলবার বিকাল পর্যন্ত প্রাপ্ত তথ্য অনুসারে, যে-সব ব্যক্তি সম্প্রতি বিদেশ ভ্রমণ করে এসেছেন কিংবা সুনিশ্চিতভাবে কোভিড-১৯ এ আক্রান্ত কারও সংস্পর্শে এসেছেন এবং গত ১৪ দিনে তার শরীরে এর লক্ষণ দেখা দিয়েছে, তাদেরকে কোভিড-১৯ পরীক্ষা করার পরামর্শ দেওয়া হচ্ছে।
আপনি যদি মনে করেন যে, আপনি এই ভাইরাসে আক্রান্ত হয়েছেন, তাহলে আপনার ডাক্তারকে কল করুন। ডাক্তারের কাছে যাবেন না। আপনি ন্যাশনাল করোনাভাইরাস হেলথ ইনফরমেশন হটলাইনেও কল করতে পারেন এই নম্বরে: 1800 020 080
আপনার যদি শ্বাস-কষ্ট কিংবা মেডিকেল ইমার্জেন্সি দেখা দেয়, তাহলে 000 নম্বরে কল করুন।