বাংলাদেশের জাতীয় পতাকার রং লাল ও সবুজ। কিন্তু, আপনি যদি এ সপ্তাহে ঢাকার অলিতে-গলিতে ঢু মারেন এবং এ নিয়ে ভিন্ন রকম ধারণা করেন, সেজন্য আপনাকে দোষ দেওয়া যাবে না। কারণ, আর্জেন্টিনার পতাকার রং নীল ও সাদায় রাজধানী ঢাকা ছেয়ে ফেলেছেন সেখানকার আর্জেন্টিনা-সমর্থক ক্রীড়ামোদীরা।
তাদের মধ্যে অনেকের মতে, আর্জেন্টিনার এবারের যাওয়ার পেছনে সিংহভাগ অবদান রেখেছেন লিওনেল মেসি।
Thousands of ans in Dhaka packed out areas where live viewing sites were organised to watch Argentina matches at the World Cup. Source: Getty, AFP / Munir Uz Zaman
ঢাকায় সেই ম্যাচটির সরাসরি সম্প্রচার দেখেছেন অনির্বাণ কায়সার। সেই সময়ে দর্শকদের অবস্থা বর্ণনা করতে গিয়ে তিনি এক শব্দে বলেন, “ক্রেজি”।
আর্জেন্টিনা বাংলাদেশের সীমান্তবর্তী কোনো দেশ নয়। এটি এমনকি একই মহাদেশেও অবস্থিত নয়। তাহলে ফুটবল খেলায় বাংলাদেশীরা কেন আর্জেন্টিনাকে এত সমর্থন করেন?
Although Bangladesh has never qualified for the FIFA World Cup, many children growing up supporting Argentina and Brazil. Source: Getty / Future Publishing
“এটি একটি জাদু”
বন্ধু-বান্ধবদেরকে সঙ্গে নিয়ে বিশ্বকাপ ফাইনাল ম্যাচ দেখার প্রস্তুতি নিচ্ছেন সিডনির বাসিন্দা, ১৯ বছর বয়সী ইকরাম আহমেদ। সেজন্য তিনি তার গ্যারেজটি সাজিয়েছেন। প্রিয় ফুটবলার মেসির হাতে বিশ্বকাপ উঠুক, এটাই তার কামনা।
বড় আকারের একটি টেলিভিশন সেট এবং আর্জেন্টিনার সঙ্গে সম্পর্কিত নানা রকম সাজ-সজ্জায় সজ্জিত করেছেন তার গ্যারেজটিকে। এখন আর্জেন্টিনা-ফ্রান্স ফাইনালের জন্য অপেক্ষা।
ইকরাম আহমেদের জন্ম বাংলাদেশী বাবা-মায়ের ঘরে, অস্ট্রেলিয়ায়। আর্জেন্টিনার সঙ্গে তার কোনো ধরনের সম্পৃক্ততা নেই।
কিন্তু, ২০১০ সাল থেকেই বিশ্বকাপ ফুটবলে তিনি আর্জেন্টিনাকে প্রবলভাবে সমর্থন করেন।
আসলে, ইকরামের বাবা আর্জেন্টিনার সমর্থক। সেই ১৯৮৬ সালে আর্জেন্টিনার পারফরমেন্স, ফুটবল-ঈশ্বর ম্যারাডোনার কীর্তি, ইত্যাদি তিনি তার ছেলেকে বলেছেন।
Bangladeshi-Australian Ikram Ahmed is a passionate Argentina supporter in the World Cup. Source: Supplied / Ikram Ahmed
যখন সে [লিওনেল মেসি] খুশি, তখন সবাই খুশি।ইকরাম আহমেদ
বাবার কাছে ম্যারাডোনার কথা শুনে এখন তার ছাপ তিনি দেখতে পান মেসির মাঝেও। তার মতে, এক প্রজন্ম থেকে আরেক প্রজন্মে আর্জেন্টিনার প্রতি ভালবাসা আসলে একটি “সাংস্কৃতিক পরম্পরা”।
তিনি বলেন,
“আমি তার [ম্যারাডোনার] সঙ্গে মেসির যোগসূত্র দেখি। মেসি তার খেলার মধ্য দিয়ে আর্জেন্টিনার গল্পই তুলে ধরেন। আমরা সবাই চাই মেসি বিশ্বকাপ জয়ী হোক।”
“আপনি চাইবেন এই সেরা খেলোয়াড়টি যেন তার সেরাটাই দেয়, সে যেন জয়ী হয়। সে যখন খুশি, তখন সবাই খুশি।”
কূটনৈতিক সাফল্য
কোনো একটি দেশ, যার সঙ্গে তাদের কোনো ভূ-রাজনৈতিক সম্পর্ক নেই, সেই দেশটিতে মানুষ তাদের দেশের পতাকা ওড়াচ্ছে, এ বিষয়টি আর্জেন্টাইনদের কাছে বেখাপ্পা লাগে। তবে, একই সঙ্গে তারা এটি উপভোগও করে।
দৃশ্যত মনে হচ্ছে, মেসির প্রতি সেই দেশটির মানুষের ভালবাসার কারণে, এখন আর্জেন্টিনার সঙ্গে সেই দেশটির কূটনৈতিক সম্পর্ক পুনঃপ্রতিষ্ঠিত হতে যাচ্ছে।
গত রবিবার, আর্জেন্টিনার পররাষ্ট্রমন্ত্রী সান্টিয়াগো ক্যাফিয়েরো টুইটারে ঘোষণা করেন যে, আর্জেন্টিনা আবারও ঢাকায় তাদের দূতাবাস খুলবে। ১৯৭৮ সালে এটি বন্ধ করা হয়েছিল।
ফুটবলে বাংলাদেশীরা যেহেতু আর্জেন্টিনাকে সমর্থন করে, তাই, এই ভালবাসার প্রতিদানে, তারাও এখন ক্রিকেটে বাংলাদেশ টিমকে সমর্থন করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে।
ফিফা র্যাংকিং-এ বাংলাদেশের অবস্থান অনেক নিচে, ২১১টি দেশের মাঝে ১৯২তম। তারপরও, বাংলাদেশীরা ফুটবল ভালবাসে। তবে, দৃশ্যত, ক্রিকেটকে এখন বাংলাদেশের অফিসিয়াল ন্যাশনাল স্পোর্ট হিসেবে গণ্য করা হচ্ছে।
এ মাসের শুরুর দিকে একটি ফেসবুক পেজ খোলা হয়: এটি ইতোমধ্যে প্রায় ২০০,০০০ সদস্য লাভ করেছে।
মিস্টার অনির্বাণ কায়সার বলেন,
“এটার মধ্যে আসলেই কিছুটা জাদু আছে। কারণ, আর্জেন্টিনা আমাদের থেকে অনেক, অনেক, অনেক দূরের একটি দেশ। এটি এমনকি এশিয়ার কোনো দেশও নয়। তবে, আমরা তাদেরকে সমর্থন করি এবং আমাদের দেশ তাদের পতাকায় পরিপূর্ণ।”
“[আর্জেন্টাইনরা] আমাদের লাল-সবুজ পতাকার রং-এ তাদের পথ-ঘাট রঞ্জিত করছে। তারা আমাদের ক্রিকেট জার্সি পরছে। এটি ভালবাসা বিনিময়।”
The on on Monday 19 December from 1.30am AEDT.