কেমন গেল ২০১৯: বাংলাদেশ
২০১৯ সালে বাংলাদেশে আলোড়ন সৃষ্টিকারী বেশ কয়েকটি ঘটনা ঘটেছে। এর মধ্যে অন্যতম ছিল আওয়ামী লীগ ও শেখ হাসিনার টানা তৃতীয়বারের মতো ক্ষমতা গ্রহণ। এছাড়া দৃষ্টি আকর্ষণ করেছে ফেনীতে মাদ্রাসা ছাত্রী , বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয় (বুয়েট)-এর ছাত্র , , এবং বছর শেষে বিতর্ক সৃষ্টিকারী রাজাকারের তালিকা।
রাজনীতি
বাংলাদেশের রাজনীতিতে বহু রেকর্ডের বছর ২০১৯। আওয়ামী লীগ ও শেখ হাসিনার টানা তৃতীয়বার ক্ষমতা গ্রহণের বছর। বাংলাদেশের রাজনীতিতে এমনটি আগে কখনও ঘটে নি। চল্লিশোর্ধ্ব রাজনৈতিক দল বিএনপি এ বছর প্রথম সবচেয়ে ছোট বিরোধীদল হিসেবে সংসদে গেছে। বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর নির্বাচনে জিতেও সংসদ সদস্য হন নি, এমন ঘটনাও নজিরবিহীন।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ বা ডাকসু নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয় দীর্ঘ ২৮ বছর পর। এতে সাধারণ ছাত্র অধিকার সংরক্ষণ পরিষদের প্রার্থী নুরুল হক ভিপি নির্বাচিত হন। তবে, ডাকসু’র জিএস’সহ অন্য পদগুলোতে ছাত্রলীগের প্রার্থীরা বিজয়ী হন।
২০১৯ সালের শেষ দিকে রাজাকারের তালিকা নিয়ে তোলপাড় দেখা দেয়। বিজয় দিবস উদযাপনের আগে মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রণালয় রাজাকার-আলবদরসহ স্বাধীনতা বিরোধীদের তালিকা প্রকাশ করে। সেই তালিকায় যুদ্ধাপরাধীদের বিচারের ট্রাইবুনালের প্রধান আইনজীবিসহ বেশ কয়েকজন মুক্তিযোদ্ধার নাম চলে আসলে দেশজুড়ে বিতর্কের সৃষ্টি হয়।
আওয়ামী লীগ
আওয়ামী লীগ জোটের বহু দল ২০০৯ সাল থেকে টানা দুই মেয়াদে সরকারের অংশীদারিত্ব পেলেও তৃতীয় মেয়াদের শুরুতে পায় নি, তাতে বেজার হয় তারা। অন্যদিকে, আওয়ামী লীগ পরিবারের বড় সদস্য সংগঠন যুবলীগ ও ছাত্রলীগের অনেকেই নানা অপকর্মে গ্রেপ্তার হয়, ফলে বৃহত্তর পরিবারে চলে টানাপোড়েন। তার মধ্যেই কৃতিত্ব দাবি করে সরকারি দল।
বিএনপি
দলে গতি ফিরিয়ে আনার জন্য সংগঠন গোছানোর কাজ শুরু করেছিলেন বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান। কিন্তু সংগঠন গোছানোর কাজ আর সরকারবিরোধী আন্দোলন—এ দুটি একসঙ্গে চলে না বলে দলটির নেতারা মনে করছেন। তাঁদের মতে, এটা অসংগতিপূর্ণ বা পরস্পরবিরোধী।
অন্যদিকে, সরকারবিরোধী আন্দোলনও আপাতত করতে পারছে না বিএনপি। কারণ, আসন্ন ঢাকার দুই সিটি করপোরেশন নির্বাচনে অংশ নিচ্ছে দলটি। আগামী এক থেকে দেড় মাস দলটিকে ওই নির্বাচন নিয়ে ব্যস্ত থাকতে হবে। আন্দোলন না হওয়ার বিষয়টি গত সোমবার দলটির স্থায়ী কমিটির বৈঠকেও আলোচনা হয়েছে।
অর্থনীতি
২০১৯-২০ সালের অর্থ মন্ত্রণালয়ের দায়িত্ব পান আগের পরিকল্পনামন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল। নতুনভাবে দায়িত্ব গ্রহণের পর ব্যাংকের উদ্যোক্তা পরিচালক ও ব্যবস্থাপকদের সঙ্গে আলোচনায় বসেন তিনি। ঘোষণা দেন খেলাপি ঋণ এক টাকাও বাড়বে না। কিন্তু ঘটেছে তার উল্টো। খেলাপি ঋণ নিয়ে সারাবছর নানা আলোচনা-সমালোচনা চলে ব্যাংক খাতে। এ অর্থবছরে ব্যাংক খাতে শুধুমাত্র রেমিট্যান্সে বয়ে যায় সুবাতাস।
রেমিট্যান্স
অর্থনীতির অন্যান্য সূচক নেতিবাচক হলেও সুবাতাস বয়ে যায় রেমিট্যান্সের পালে। রেমিট্যান্সে ২ শতাংশ হারে প্রণোদনা প্রদান এবং টাকার বিপরীতে ডলারের মূল্য বৃদ্ধিতে বৈধ পথে বেড়েছে রেমিট্যান্সের প্রবাহ। চলতি ২০১৯-২০ অর্থবছরের প্রথম পাঁচ মাসে (জুলাই-নভেম্বর) রেমিট্যান্স এসেছে ৭৭১ কোটি (৭.৭১ বিলিয়ন) ডলার। যা গত অর্থবছরের একই সময়ের তুলনায় ২২ দশমিক ৬০ শতাংশ বেশি। গতবছর একই সময়ে রেমিট্যান্স এসেছিল ৬২৯ কোটি (৬.২৯ বিলিয়ন) ডলার।
খেলাপি ঋণ
বাংলাদেশ ব্যাংক তার পরিসংখ্যান বলছে, চলতি বছরের সেপ্টেম্বর শেষে ব্যাংক খাতে বিতরণ করা ঋণের পরিমাণ দাঁড়িয়েছে নয় লাখ ৬৯ হাজার ৮৮২ কোটি টাকা। এর মধ্যে অবলোপন বাদে খেলাপি ঋণ দাঁড়িয়েছে প্রায় এক লাখ ১৬ হাজার ২৮৮ কোটি টাকা। যা মোট ঋণের ১১ দশমিক ৯৯ শতাংশ। অবলোপনসহ খেলাপি ঋণের পরিমাণ দেড় লাখ কোটি টাকা ছাড়িয়ে যাবে। ২০১৮ সালের ডিসেম্বর শেষে খেলাপি ঋণ ছিল ৯৩ হাজার ৯৯১ কোটি টাকা। এ হিসাবে গত নয় মাসে দেশে খেলাপি ঋণ বেড়েছে ২২ হাজার নয় কোটি টাকা।
বেসরকারি ঋণ
নানা উদ্যোগের পরও আশানুরূপ বাড়ছে না বেসরকারি ঋণ। গত কয়েক মাস ধরে ঋণ প্রবৃদ্ধির হার ধারাবাহিক কমছে। এছাড়া আর্থিক খাতের নানা কেলেঙ্কারি ও সঞ্চয়পত্রে সুদ বেশি হওয়ায় ব্যাংকে আমানত প্রবৃদ্ধি কমে গেছে। ফলে একদিকে চাহিদা থাকা সত্ত্বেও ঋণ দিতে পারছে না ব্যাংকগুলো। অন্যদিকে উচ্চ সুদহারের কারণে ঋণ নিতেও আগ্রহ দেখাচ্ছেন না উদ্যোক্তা ব্যবসায়ীরা। সব মিলিয়ে বেসরকারি ঋণ কাঙ্ক্ষিত হারে বাড়ছে না। যে হারে বাড়ছে তা মুদ্রানীতির লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে অনেক কম। এত কম হারে বাড়লে কাঙ্ক্ষিত অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি অর্জন সম্ভব হবে না- বলছেন অর্থনীতিবিদরা।
ক্যাসিনো অভিযানে জব্দ করা হয় ব্যাংক হিসাব
চলতি বছরের আলোচিত ঘটনা ছিল ক্যাসিনোবিরোধী অভিযান। বিভিন্ন ক্লাবে চলে অভিযান। ক্লাবের নামে অসামাজিক কার্যকলাপ, ক্যাসিনো, সন্ত্রাস, ঘুষ, টেন্ডারবাজির ঘটনায় অর্জিত অর্থ ও সম্পদের উৎস জানতে তদন্ত চলছে। নজর রাখা হয়েছে আলোচিত ব্যক্তিদের ব্যাংক হিসাব, ব্যাংকের লকারে থাকা সম্পদ, তাদের প্রতিষ্ঠান ও নামে-বেনামে থাকা সম্পদ ও আয়কর নথির ওপর। এরইমধ্যে জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর) থেকে রাজস্ব ফাঁকি ও অর্থ পাচারের বিষয়ে খোঁজ নেয়া শুরু হয়েছে। একই ইস্যুতে মাঠে কাজ করছে দুর্নীতি দমন কমিশনও (দুদক)। কোটি কোটি টাকা পাচারের তথ্য সংগ্রহে কাজ করছে বিভিন্ন গোয়েন্দা সংস্থা। আর বাংলাদেশ ব্যাংক থেকে এ তিন সংস্থার চাহিদামাফিক তথ্য সরবরাহ করা হচ্ছে। একই সঙ্গে তিন সংস্থার নির্দেশনা মতো বিভিন্ন ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠানের ব্যাংক হিসাব স্থগিত করা হচ্ছে।
ক্যাসিনো, সন্ত্রাস, মানিলন্ডারিং, ঘুষসহ বিভিন্ন অপরাধে যাদের বিরুদ্ধে মামলা হয়েছে তাদের ব্যাংক হিসাব স্থগিত করা হয়েছে। ব্যাংকগুলোতে চিঠি দিয়ে তাদের তথ্য সংগ্রহ করে তা অনুসন্ধান করা হচ্ছে। যাদের বিরুদ্ধে আইনি পরিপন্থী কোনো তথ্য পাওয়া যাচ্ছে বিএফআইইউ নিয়ম অনুযায়ী ব্যবস্থাও নেয়া হচ্ছে।
পেঁয়াজ
গত তিন মাস ধরেই আলোচনায় ছিল দেশের পেঁয়াজের বাজার। গত ২৯ সেপ্টেম্বর বাংলাদেশে পেঁয়াজ রফতানি বন্ধের ঘোষণা দেয় ভারত। এরপর দেশের বাজারে এর ঝাঁজ বাড়তে থাকে। পেঁয়াজের বাজার নিয়ন্ত্রণে এরই মধ্যে মিয়ানমার, মিসর, আজারবাইজান, পাকিস্তান ও উজবেকিস্তান থেকে পেঁয়াজ আমদানি করা হয়। প্লেনে ২৫০ টাকা কেজি দরে পেঁয়াজ আমদানি করে টিসিবির মাধ্যমে ৪৫ টাকা দরে বিক্রি করে সরকার। খোলা ও পাইকারি বাজারেও চোখের পলকে বেড়ে যায় দাম। যা অর্থনীতিতে বড় ধাক্কা লাগে। সরকারি সিদ্ধান্ত অনুসারে জানা যায় এখন থেকে দেশে পেঁয়াজ চাষে কৃষকদের উদ্বুদ্ধ করা হবে।
READ MORE
ফিরে দেখা ২০১৯: ভারত