পল ফুং গ্যাম্বলিং বা জুয়ার ক্ষতিকর প্রভাব থেকে বের হয়ে আসার প্রক্রিয়াধীন রয়েছেন।
তৃতীয় প্রজন্মের চীনা অভিবাসী পল ৭ বছর বয়সেই জুয়াখেলার সঙ্গে পরিচিত হন।
তিনি পরিবার এবং বন্ধুদের কাছ থেকে - রেস্তোঁরা এবং আন্ডারগ্রাউন্ড ক্যাসিনোতে জুয়া খেলতে শেখেন।
এর পর থেকে তিনি প্রায় প্রতিদিনই জুয়া খেলায় অংশ নিতে থাকেন।
পল বলেন, এভাবে বছরের পর বছর জুয়া খেলার পর তিনি এক সময় একদম শেষ সীমায় পৌঁছে যান।
একবার প্রায় এক মিলিয়ন ডলার হোম লোন পাওয়ার পর ১০ দিনের মধ্যেই জুয়ার পেছনে সব অর্থ হারিয়ে ফেলেন তিনি।
তখনই তিনি সিদ্ধান্ত নেন এর থেকে বেরিয়ে আসার।
এখন রিকভারিতে থাকার সময়, পল বুঝতে পারছেন যে জুয়াখেলার সাথে তার সম্পর্কের ক্ষেত্রে তার সংস্কৃতি কীভাবে প্রধান ভূমিকা পালন করেছিল।
পল বলেন, ক্যাসিনোগুলি কীভাবে তার কম্যুনিটিকে টার্গেট করত, এবং এর ফলে তারা কতটা ক্ষতির মুখে পড়ত পল সে-সবই দেখতে পেয়েছিলেন। বিশেষত ৯০ এর দশকে যখন মেলবোর্নের ক্রাউন ক্যাসিনো খোলা হয়েছিল।
এশিয়ান গ্রাহকদের তাদের মূল বাজার হিসাবে বর্ণনা করত ক্রাউন ক্যাসিনো।
অস্ট্রেলিয়ান প্রোডাক্টিভিটি কমিশনের কাছে প্রতিবেদন জমা দেওয়ার সময় তারা জানিয়েছে যে নির্দিষ্ট সাংস্কৃতিক সচেতনতা প্রশিক্ষণ চালু করেছে তারা এবং সেই সাথে বহুভাষিক কর্মী নিয়োগ করেছে।
সেই প্রতিবেদনে আরও বলা হয়েছে যে এটি করা হয়েছে "এশিয়ান গ্রাহকদের ক্যাসিনো সার্ভিস দেয়া নিশ্চিত করার জন্যে”।
তবে পল বলেন যে এর ফলে জুয়া খেলার সাথে চাইনিজ কম্যুনিটি-র সম্পর্ক বদলে যায়- পারিবারিক গেম নাইটের বিনোদন থেকে এই অভ্যাস পোকার মেশিনে চলে যায়।
অস্ট্রেলিয়ান ইনস্টিটিউট অব ফ্যামিলি স্টাডিজের এক সমীক্ষা অনুসারে, অস্ট্রেলিয়ান চীনা সম্প্রদায়ের মধ্যে জুয়া খেলার হার সাধারণ জনসংখ্যার তুলনায় দুই থেকে আট গুণ বেশি।
চাইনিজ পিয়ার কানেকশনের গ্যাম্বলিং হেল্প সার্ভিস ইচ-এ কাজ করেন গ্রেস হাহ, তিনি বলেন, অনেকেই নিয়মিত তাদের পছন্দের ক্যাসিনোতে যান ভাগ্য পরীক্ষা করতে।
ক্যাসিনোগুলো সাধারণত 'ধনী ও মধ্যবিত্ত চীনাদের' টার্গেট করলেও ভিন্ন ব্যাকগ্রাউন্ডের মানুষেরাও এই ঝুঁকির মধ্যে রয়েছে।
মার্টিন থমাস অ্যালায়েন্স ফর গ্যাম্বলিং রিফর্মের প্রধান নির্বাহী হিসাবে কাজ করেন।
তিনি বলেন, যে গ্যাম্বলিং অর্গানাইজেশনগুলি ইচ্ছাকৃতভাবে নিম্ন আর্থ-সামাজিক অঞ্চলে বসবাসকারীদের টার্গেট করে। এ-সব অঞ্চলে সাধারণত সাংস্কৃতিক ও ভাষাগতভাবে বিভিন্ন পটভূমি থেকে আসা মানুষেরা বসবাস করে থাকে।
মার্টিন বলেন, এমনকি বিজ্ঞাপনের ক্ষেত্রেও তারা কোনো বৈষম্য করে না।
অস্ট্রেলিয়ানরা জুয়ার পেছনে বছরে প্রায় ৩২ বিলিয়ন ডলার হারায়।
কুইন্সল্যান্ড ট্রেজারির সর্বশেষ পরিসংখ্যান অনুসারে, মাথাপিছু হারে এটি বিশ্বের অন্য যে কোনো দেশের চেয়ে বেশি।
পলের মত অনেকেই এমন ব্যাকগ্রাউন্ড থেকে এসেছেন যেখানে জুয়া খেলা সংস্কৃতির অংশ। কিন্তু আবার অনেক অভিবাসী এমন জায়গা থেকে এসেছেন যেখানে বাজি ধরা ভালো চোখে দেখা হয় না, কখনো কখনো তা বেআইনী।
এ কারণেই ডাইভার্স কম্যুনিটির ওপর জুয়ার ক্ষতিকর প্রভাব ঠেকাতে বিভিন্ন উপায় অবলম্বন করা যেতে পারে।
সিডনি লোকাল হেলথ ডিস্ট্রিক্টের ডাইভারসিটি প্রোগ্রাম অ্যান্ড স্ট্র্যাটেজি হাবের সিনিয়র কমিউনিটি এনগেজমেন্ট অফিসার ওয়ায়েল সাবরি। তিনি বলেন,
ডাইভার্স কম্যুনিটির অনেকেই লজ্জা ও অস্বস্তি থেকে নিজের এই আসক্তির কথা বলতে পারেন না।
ওয়ায়েল সাবরি বিভিন্ন সম্প্রদায়ের সাথে সরাসরি কাজ করেন। তিনি বলেন যে তার মূল লক্ষ্য হচ্ছে জুয়ার ক্ষতিকর প্রভাব সম্পর্কে কথা বলার ক্ষেত্রে লজ্জা এবং অস্বস্তির ব্যাপারটি ভেঙে ফেলা।
এ ব্যাপারে এক মত প্রকাশ করেন পল। জুয়া খেলায় আসক্তি নিয়ে যারা উদ্বিগ্ন, এ-ব্যাপারে সাহায্য চেয়ে কথা বলার জন্যে এগিয়ে আসতে অনুরোধ করেন তিনি।
বিস্তারিত পরামর্শের জন্যে কল করুন গ্যাম্বলিং হেল্পলাইনের নম্বরে: 1800 858 858.
To find out more visit sbs.com.au/sbsexamines.