সতর্কতা: এই প্রতিবেদনটিতে পারিবারিক সহিংসতার বিষয় উল্লেখ করা হয়েছে।
আর্নিমা হায়াতের হত্যাকাণ্ডের ঘটনায় গিল্টি প্লিড করেছিল অভিযুক্ত মিরাজ জাফর।
গত ৩০ জানুয়ারি, ২০২২ তারিখে ওয়েস্টার্ন সিডনির একটি অ্যাপার্টমেন্টে রাসায়নিক পদার্থ ভর্তি বাথটাবে আর্নিমা হায়াতের মৃতদেহ পাওয়া যায়।
১৯ ডিসেম্বর ২০২৪, বৃহস্পতিবার, সিডনিতে সুপ্রিম কোর্টের জাস্টিস ডেবোরাহ সুইনি অভিযুক্ত জাফরকে ২১ বছর ৬ মাসের জন্য কারাদণ্ড প্রদান করেন।
২০৩৮ সালের মার্চে প্যারোলের [মুক্তির] জন্য উপযুক্ততা লাভ করবে জাফর।
২৩ বছর বয়সী জাফর ভিডিও লিঙ্কের মাধ্যমে কোর্টে হাজির হন।
জাস্টিস সুইনি বলেন, আর্নিমা হায়াৎকে জাফর শ্বাসরুদ্ধ করে হত্যা করে।
রায়ে উল্লিখিত তথ্য অনুসারে, অভিযুক্ত মিরাজ জাফরের সঙ্গে আর্নিমা হায়াতের বিয়ে হয় ২০২১ সালের ১৩ই অক্টোবরে। তখন মিরাজের বয়স ছিল ২০ বছর এবং আর্নিমার বয়স ছিল ১৮ বছর। তাদের বিয়েটি ছিল একটি প্রাইভেট ইসলামিক সিরিমনি। এতে মিস্টার জাফর এবং মিজ হায়াৎ, তাদের কারও পরিবারের লোকজনই উপস্থিত ছিল না।
আর্নিমার জন্ম বাংলাদেশে। ছোটবেলায় সে বাবা-মায়ের সঙ্গে অস্ট্রেলিয়ায় চলে আসে। মৃত্যুর সময়ে সে ইউনিভার্সিটি অব ওয়েস্টার্ন সিডনিতে মেডিকেল সায়েন্সের দ্বিতীয় বর্ষের শিক্ষার্থী ছিল।
২০১৮ সালে বন্ধুদের মাধ্যমে মিরাজ ও আর্নিমার পরিচয় হয়। আর্নিমা তখন হাই স্কুলে ইয়ার টেন-এর স্টুডেন্ট ছিল। ২০২১ সালের সেপ্টেম্বর মাসে জাফর ও আর্নিমা বিয়ের পরিকল্পনা করে।
২০২১ সালে বিভিন্ন সময়ে আর্নিমা তার বন্ধুদের কাছে অভিযোগ করে যে, জাফর তার সঙ্গে ভায়োলেন্ট আচরণ করে। তবে, সে পুলিসের কাছে কোনো অভিযোগ করে নি।
৮ অক্টোবর, ২০২১ এ মিরাজ জাফর আর্নিমার বাবা আবু হায়াৎকে টেলিফোন করে এবং হত্যা করার হুমকি দেয়। মিস্টার হায়াৎ পুলিসের কাছে অভিযোগ করলে তার নিরাপত্তা নিশ্চিত করার জন্য ৯ অক্টোবর, ২০২১ এ মিরাজ জাফরের বিরুদ্ধে একটি প্রভিশনাল অ্যাপ্রিহেন্ডেড ভায়োলেন্স অর্ডার জারি করা হয়।
সেই একই দিনে, আর্নিমা হায়াৎ তার বাবাকে ফোন করে এবং বলে যে, সে মিরাজ জাফরকে বিয়ে করতে চায়। এরপর, কয়েক দিন ধরে আর্নিমা তার জিনিসপত্র বাড়ি থেকে নিয়ে যায়। তারপর থেকে, আর্নিমার মৃত্যু পর্যন্ত তার সাথে তার বাবা-মায়ের কোনো যোগাযোগ ছিল না।
২০২১ সালের নভেম্বরের শেষের দিকে, আর্নিমা তার এক বন্ধুর কাছে তার নিজের একটি ছবি পাঠায়। এতে তার বাম গাল লাল হয়ে ফুলে গিয়েছিল। আর্নিমা তার বন্ধুকে মেসেজ দেয় যে, জাফর তাকে আঘাত করেছে এবং জাফরকে বিয়ে করার জন্যও সে অনুতাপ করে।
আদালতের রায়ে উঠে এসেছে আর্নিমার প্রতি নিপীড়নমূলক আচরণ ও হত্যাকাণ্ডের বিবরণ।
খুনি মিরাজ জাফরকে ১৬ বছরের নন-প্যারোল পিরিয়ড-সহ ২১ বছর ৬ মাসের জন্য কারাদণ্ড দিয়েছে আদালত। তবে, এই রায়ে সন্তুষ্ট নন নিহত আর্নিমা হায়াতের বাবা আবু হায়াত।
এসবিএস বাংলাকে তিনি বলেন,
“না, আমি এই রায়ে খুশী না। কারণ, আমার মেয়েটা চলে গেল। আমরা চাইছিলাম যেন ঐ ছেলে সারাজীবন, যাবজ্জীবন কারাদণ্ড হোক, বা মৃত্যুদণ্ড হোক, এটা আমরা চাইছিলাম। কিন্তু, এই অল্প জেল হইছে, এটা আমি বাবা হিসেবে মানতে পারি না। কারণ, এটা আমার, আমাদের অনেক বড় ক্ষতি হইছে। আমার মেয়েকে আমি সবসময় মিস করি।”
তিনি আরও বলেন,
“আমি আসলে বলতে পারি না, বুঝছেন? আমি খুব মানে যখন আমার মেয়ের কথা বলি তখন আমার মনে খুব কষ্ট লাগে। এই জন্য আমি কথা বলতে পারি না। লংগার করতে পারি না। কিন্তু আমরা এই রায়ে, আমি বাবা হিসেবে এই রায় মানতে পারি না। আমি চাইছি যেন ওর মৃত্যুদণ্ড হোক বা যাবজ্জীবন হোক।”
প্রসঙ্গত, অস্ট্রেলিয়ায় মৃত্যুদণ্ড নেই।
প্রতিবেদনটি শুনতে উপরের অডিও-প্লেয়ারটিতে ক্লিক করুন।
READ MORE
নতুন এসবিএস রেডিও অ্যাপ ডাউনলোড করুন
এসবিএস বাংলা এখন অস্ট্রেলিয়ায় বসবাসরত দক্ষিণ এশীয় সকল জনগোষ্ঠীর জন্য এসবিএস সাউথ এশিয়ান চ্যানেলের অংশ।
এসবিএস বাংলা লাইভ শুনুন প্রতি সোম ও বৃহস্পতিবার বিকাল ৩টায় এসবিএস সাউথ এশিয়ান-এ, ডিজিটাল রেডিওতে, কিংবা, আপনার টেলিভিশনের ৩০৫ নম্বর চ্যানেলে। এছাড়া, এসবিএস অডিও অ্যাপ-এ কিংবা আমাদের ওয়েবসাইটে। ভিজিট করুন .
আর, এসবিএস বাংলার এবং ইউটিউবেও পাবেন। ইউটিউবে সাবসক্রাইব করুন চ্যানেল। উপভোগ করুন দক্ষিণ এশীয় ১০টি ভাষায় নানা অনুষ্ঠান। আরও রয়েছে ইংরেজি ভাষায় ।