অস্ট্রেলিয়া সম্পর্কে জানুন: 'নেট জিরো ২০৫০' - অস্ট্রেলিয়ার দীর্ঘমেয়াদী কার্বন নিঃসরণ হ্রাস পরিকল্পনা

Melbourne from the air - Image Tiff Ng - Pexels.jpg

The burning of fossil fuels release large amounts of carbon dioxide and other greenhouse gases into the atmosphere. Image: Tiff Ng/Pexels

বিশ্ব জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাবের সাথে লড়াই করছে, বৈশ্বিক তাপমাত্রায় দীর্ঘমেয়াদী পরিবর্তন এবং আবহাওয়ার ধরণের মধ্যে বাড়ন্ত পরিবর্তন ক্রমেই স্পষ্ট হয়ে উঠছে। কয়লা, তেল এবং গ্যাসের মতো জীবাশ্ম জ্বালানী পোড়ানোর মাধ্যমে আমাদের আধুনিক বিশ্ব জ্বালানি শক্তি পাচ্ছে, যা জলবায়ু পরিবর্তনের প্রধান কারণ। 'অস্ট্রেলিয়া সম্পর্কে জানুন' পর্ব থেকে এ নিয়ে একটি প্রতিবেদন।


গুরুত্বপূর্ণ দিকগুলো
  • জীবাশ্ম জ্বালানি পোড়ানোর ফলে বায়ুমণ্ডলে প্রচুর পরিমাণে কার্বন ডাই অক্সাইড এবং অন্যান্য গ্রিনহাউস গ্যাস নির্গত হয়।
  • গ্রিনহাউস গ্যাস নির্গমন কমাতে জীবাশ্ম জ্বালানির ব্যবহার থেকে সরে এসে বায়ু, সৌর এবং তরঙ্গ শক্তির মতো নবায়নযোগ্য শক্তির উৎস ব্যবহার করতে হবে।
  • আমাদের দ্বারা যে গ্রিনহাউস গ্যাস উৎপাদিত হয় তা বায়ুমণ্ডল থেকে অপসারণ করার মাধ্যমে সামগ্রিক ভারসাম্য অর্জন করার লক্ষ্যই হচ্ছে নেট শূন্য নির্গমন।
জীবাশ্ম জ্বালানী পোড়ানোর ফলে গ্রিনহাউস গ্যাস নির্গমন ঘটে। এর পরিমাণ হ্রাস করতে আরও নবায়নযোগ্য শক্তির উৎসগুলো ব্যবহার করা একটি গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ, যা জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাবকে ধীর করবে।

অস্ট্রেলিয়ার একটি দীর্ঘমেয়াদী নির্গমন হ্রাস পরিকল্পনা রয়েছে এবং এটি কী অর্জন করার চেষ্টা করছে তা বোঝা সবার জন্য গুরুত্বপূর্ণ। ব্যক্তি থেকে শুরু করে পরিবার এবং ব্যবসা-বাণিজ্য - সকল সেক্টরেই গ্লোবাল ওয়ার্মিং এবং জলবায়ু পরিবর্তন সীমিত করতে ক্ষমতায়ন প্রয়োজন।

জীবাশ্ম জ্বালানি পোড়ানোর ফলে বায়ুমণ্ডলে প্রচুর পরিমাণে কার্বন ডাই অক্সাইড এবং অন্যান্য গ্রিনহাউস গ্যাস নির্গত হয়। এর ফলে বৈশ্বিক তাপমাত্রা উষ্ণ হয় কারণ পৃথিবীর বায়ুমণ্ডলে জমা হওয়া গ্রিনহাউস গ্যাস সূর্য থেকেও বেশি তাপ আটকে রাখে।

জলবায়ু পরিবর্তন মানে শুধু উষ্ণতা বৃদ্ধির চেয়েও বেশি কিছু। পৃথিবীর জলবায়ু ব্যবস্থাটি জটিল, এবং জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাবগুলো হচ্ছে খরা, দাবানল, বন্যা এবং ঝড়ের তীব্রতা বৃদ্ধি। সমুদ্রের উষ্ণতা, সমুদ্রপৃষ্ঠের উচ্চতা বৃদ্ধি, মেরু অঞ্চলের বরফ গলে যাওয়া এবং জীববৈচিত্র্যের উপর প্রভাব- সবই জলবায়ু পরিবর্তনের অংশ, এবং এটি আমাদের অস্তিত্বকে হুমকির মুখে ফেলতে পারে।
Wind farm in South Australia - Image Alex Eckermann - Unsplash.jpg
A wind farm produces a form of renewable energy. Image: Alex Eckermann - Unsplash
জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাব কমাতে গ্রিনহাউস গ্যাস নির্গমন কমাতে হবে। এজন্য জীবাশ্ম জ্বালানির ব্যবহার থেকে সরে এসে বায়ু, সৌর এবং তরঙ্গ শক্তির মতো নবায়নযোগ্য শক্তির উৎস ব্যবহার করতে হবে।

অস্ট্রেলিয়া গ্লোবাল ওয়ার্মিং সীমিত করতে একটি দীর্ঘমেয়াদী গ্রীনহাউস গ্যাস নির্গমন হ্রাস পরিকল্পনা বাস্তবায়ন করেছে।

ডঃ সাইমন ব্র্যাডশ যিনি জলবায়ু পরিবর্তন নিয়ে গবেষণা করেন জলবায়ু কাউন্সিলের গবেষণা পরিচালক হিসাবে, চ্যালেঞ্জগুলি ব্যাখ্যা করেন।

তিনি বলছেন,"অস্ট্রেলিয়া, অধিকাংশ দেশের মত, ২০৫০ সালের মধ্যে নেট শূন্য গ্রীনহাউস নির্গমন অর্জনে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ। এর অর্থ হল আমরা যেভাবে আমাদের বাড়ি এবং আমাদের শিল্পগুলিকে জ্বালানি শক্তি দিচ্ছি তা পুনরায় ব্যবহার করা। তাই, আমাদের বিদ্যুৎ উৎপাদনের উপায় পরিবর্তন করে, সূর্য এবং বায়ু থেকে নেয়া হলে আমাদের বিদ্যুৎ ব্যবস্থায় অনেক বেশি শক্তি পাওয়া যায়, এবং খুব দ্রুত জীবাশ্ম জ্বালানির ব্যবহার থেকে সম্পূর্ণভাবে নিষ্কৃতি পাওয়া যায়।"

এবং যদি ২০৫০ সাল পর্যন্ত দীর্ঘ সময় বলে মনে হয়, ডঃ ব্র্যাডশ বলেন, নির্গমন কমাতে পদক্ষেপ নেওয়ার সময়সীমা নির্ধারণ জরুরি।

জলবায়ু পরিবর্তন বিল

অস্ট্রেলিয়ান সরকার ২০২২ সালে প্রবর্তন করে, যা অস্ট্রেলিয়ার গ্রীনহাউস গ্যাস নির্গমন হ্রাস লক্ষ্যমাত্রার রূপরেখা দেয়।

অ্যারন ট্যাং, যিনি কেমব্রিজ বিশ্ববিদ্যালয়ের সেন্টার ফর দ্য স্টাডি অফ এক্সিস্টেনশিয়াল রিস্ক-এর একটি গবেষণা অধিভুক্ত হিসাবে জলবায়ু নীতির উপর কাজ করেন। তিনি অস্ট্রেলিয়ান ন্যাশনাল ইউনিভার্সিটির পিএইচডি এবং লেকচারার হিসেবে কাজ করেন, তিনি এটি ব্যাখ্যা করেন।

তিনি বলছেন, "অস্ট্রেলিয়ার জলবায়ু পরিবর্তন বিলের লক্ষ্য হচ্ছে, ২০০৫ সালের মাত্রা থেকে ২০৩০ সালের মধ্যে ৪৩% নির্গমন কমানো এবং ২০৫০ সালের মধ্যে নেট শূন্য নির্গমনে পৌঁছানো। এই লক্ষ্যটি বেশ বড়। অস্ট্রেলিয়ার জন্য এর আগে ফেডারেল স্তরে সামঞ্জস্যপূর্ণ জলবায়ু নীতি বজায় রাখতে সমস্যা হয়েছিল। তাই আমাদের প্রত্যাশা হলো, জলবায়ু পরিবর্তন বিল এই লক্ষ্যটি এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার জন্য অনেক প্রয়োজনীয় স্থিতিশীলতা দেবে এবং ভবিষ্যতে আরও উচ্চাভিলাষী পদক্ষেপের ভিত্তি তৈরী করবে।"
Dr Simon Bradshaw - Climate Council Head of Research.jpg
Dr Simon Bradshaw from the Climate Council. Image: Climate Council

নেট শূন্য নির্গমন কি?

আমাদের দ্বারা যে গ্রিনহাউস গ্যাস উৎপাদিত হয় তা বায়ুমণ্ডল থেকে অপসারণ করার মাধ্যমে সামগ্রিক ভারসাম্য অর্জন করার লক্ষ্যই হচ্ছে

নেট শূন্য নির্গমনে পৌঁছানোর জন্য, ডঃ ট্যাং বলেছেন পুনঃনবায়নযোগ্য বা রিনিউয়েবল শক্তিতে বিনিয়োগ প্রয়োজন।
আমরা সড়ক যোগাযোগের জন্য পেট্রোল এবং ডিজেল চালিত গাড়ি ব্যবহার করি যা বেশিরভাগ দূষণ ঘটায়, তাই ভবিষ্যতে আমাদের এমন একটি ব্যবস্থায় যেতে হবে যেখানে আমাদের গাড়ি ব্যবহার করতে হবে না, পায়ে হেঁটে এবং পাবলিক ট্রান্সপোর্টের মাধ্যমে হবে। যদি আমাদের গাড়ি ব্যবহার করার প্রয়োজন হয়, তবে সেক্ষেত্রে বৈদ্যুতিক গাড়ি ব্যবহার করা উচিত যা আরও বেশি সাশ্রয়ী।
ডঃ সাইমন ব্র্যাডশ, জলবায়ু কাউন্সিল গবেষণা দলের প্রধান
ডঃ ব্র্যাডশ সম্মত হন যে পুনর্নবীকরণযোগ্য শক্তির ব্যবহারে নেতৃত্ব দেওয়ার জন্য অস্ট্রেলিয়া আদর্শভাবে স্থাপন করা হয়েছে।

নেট জিরো নির্গমনের লক্ষ্য অর্জনে সবাই সাহায্য করতে পারে

তিনি বলেন, আমাদের সকলেরই এই পরিবর্তনের অংশ হওয়ার ক্ষমতা আছে।

ডঃ ব্র্যাডশ বলছেন, "আমরা সড়ক যোগাযোগের জন্য পেট্রোল এবং ডিজেল চালিত গাড়ি ব্যবহার করি যা বেশিরভাগ দূষণ ঘটায়, তাই ভবিষ্যতে আমাদের এমন একটি ব্যবস্থায় যেতে হবে যেখানে আমাদের গাড়ি ব্যবহার করতে হবে না, পায়ে হেঁটে এবং পাবলিক ট্রান্সপোর্টের মাধ্যমে হবে। যদি আমাদের গাড়ি ব্যবহার করার প্রয়োজন হয়, তবে সেক্ষেত্রে বৈদ্যুতিক গাড়ি ব্যবহার করা উচিত যা আরও বেশি সাশ্রয়ী।"

পরিবহন ব্যবস্থার পাশাপাশি, আরও কিছু কাজ আছে যা আমরা সবাই বাড়িতেও করতে পারি।
আমরা বর্তমানে আমাদের রান্না এবং অন্যান্য প্রয়োজনে গ্যাস ব্যবহার করি, এখানে যদি গ্যাসের বদলে বৈদ্যুতিক যন্ত্রপাতিতে ব্যবহার করি তবে সেটি এমিশন কমিয়ে দেবে কারণ গ্যাস জীবাশ্ম জ্বালানীকে দূষিত করছে। এছাড়াও এমন প্রমাণ আছে আছে যে বাড়িতে গ্যাস ব্যবহারে গুরুতর স্বাস্থ্য ঝুঁকি আছে।
অ্যারন ট্যাং, কেমব্রিজ বিশ্ববিদ্যালয়ের সেন্টার ফর দ্য স্টাডি অফ এক্সিস্টেনশিয়াল রিস্ক-এর গবেষক
Aaron Tang.png
Aaron Tang from the Australian National University. Image: Aaron Tang/ANU.
তিনি বলছেন, "আমরা বর্তমানে আমাদের রান্না এবং অন্যান্য প্রয়োজনে গ্যাস ব্যবহার করি, এখানে যদি গ্যাসের বদলে বৈদ্যুতিক যন্ত্রপাতিতে ব্যবহার করি তবে সেটি এমিশন কমিয়ে দেবে কারণ গ্যাস জীবাশ্ম জ্বালানীকে দূষিত করছে। এছাড়াও এমন প্রমাণ আছে আছে যে বাড়িতে গ্যাস ব্যবহারে গুরুতর স্বাস্থ্য ঝুঁকি আছে।"

মিঃ ট্যাং আরও বলেন যে ব্যক্তির পছন্দ সম্মিলিতভাবে নির্গমন হ্রাসে ইতিবাচক পার্থক্য আনতে পারে।

নেট শূন্য নির্গমনের অন্য দিকটি হলো কীভাবে এটি বায়ুমণ্ডল থেকে গ্রিনহাউস গ্যাস নিঃসরণে কাজ করছে এটি দেখা।

জীববৈচিত্র্য সংরক্ষণ ও রক্ষা

বিশ্বের জীববৈচিত্র্য সংরক্ষণ ও রক্ষা করাও গুরুত্বপূর্ণ। ড. ব্র্যাডশো বলেন, কারণ এটি গ্রহের জীবন-সহায়ক ব্যবস্থার অংশ।

মিঃ ট্যাং বলেন, নির্গমন হ্রাসে অস্ট্রেলিয়ার যাত্রা চ্যালেঞ্জিং হবে, তবে সাফল্য পাওয়ার প্রত্যাশা রয়েছে।

ডঃ ব্র্যাডশ বলেন, ব্যক্তি, পরিবার বা ব্যবসা প্রতিষ্ঠান হিসাবে, আমরা সকলেই নির্গমন হ্রাস অর্জনে ভূমিকা রাখতে পারি।
electric-charge-2301604_1920 - Image Paulbr75 - Pixabay.jpg
Consider changing from petrol or diesel vehicle to an electric vehicle. Image: Paulbr75 - Pixabay
সম্পূর্ণ প্রতিবেদনটি শুনতে উপরের অডিও-প্লেয়ার লিঙ্কে ক্লিক করুন।

এসবিএস রেডিও সম্প্রচার-সূচী হালনাগাদ করেছে । ৫ অক্টোবর থেকে নতুন চ্যানেলে, পরিবর্তিত সময়ে সরাসরি সম্প্রচার শোনা যাচ্ছে।

প্রতি সোম ও বৃহস্পতিবার, বিকাল ৩টায়, এসবিএস পপদেশীতে আমাদের অনুষ্ঠান শুনুন, লাইভ।

কিংবা, পুরনো সময়সূচীতেও আপনি আমাদের অনুষ্ঠান শোনা চালিয়ে যেতে পারেন। প্রতি সোম ও শনিবার, সন্ধ্যা ৬টায়, এসবিএস-২ এ।

রেডিও অনুষ্ঠান পরেও শুনতে পারবেন, ভিজিট করুন: 

এ সম্পর্কে আরও জানতে ভিজিট করুন:

আমাদেরকে অনুসরণ করুন 


Share