অস্ট্রেলিয়ায় সদ্য অভিবাসনের পর থেকে আপনার কি ঘুমের ব্যাঘাত হচ্ছে?

Australia Explained - Migration and Sleep

Lack of sleep can cause mood changes and loss of concentration. Credit: Filmstax/Getty Images

অস্ট্রেলিয়ায় আসা নতুন অভিবাসীদের জন্যে ঘুমের ব্যাঘাত ঘটা সাধারণ একটি ঘটনা। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, সাময়িকভাবে নিদ্রাহীনতা বা ঘুমের অন্যান্য সমস্যা হওয়া অস্বাভাবিক কিছু নয়। কিন্তু এটি দীর্ঘমেয়াদী সমস্যায় পরিণত হলে কী করা উচিত? কখন এ-বিষয়ে পরামর্শ নেয়া উচিত? আপনার এবং আপনার পরিবারের সদস্যদের ঘুমের ব্যাঘাত হলে কীভাবে এর সমাধান করা যেতে পারে?


গুরুত্বপূর্ণ দিক
  • স্লিপ সাইন্টিস্টরা ঘুমের মোট সময়কাল, দ্রুত ঘুমিয়ে পড়ার সক্ষমতা এবং ব্যাঘাতবিহীন ঘুমানোর দক্ষতার উপর নির্ভর করে ঘুমের গুণমান নির্ধারণ করে থাকেন, তবে ব্যক্তিভেদে এর মাপকাঠি আলাদা হতে পারে
  • নতুন অভিবাসনের অভিজ্ঞতা, নতুন দেশে স্থিত হওয়ার প্রতিবন্ধকতা এবং আগের কোনো ট্রমা, এ-সবই কারো ঘুমের গুণমানকে প্রভাবিত করতে পারে
  • ঘুমের সমস্যা যদি কর্মক্ষেত্রে কারো মনোনিবেশ করার ক্ষমতাকে প্রভাবিত করে, তবে চিকিৎসার সাহায্যে এর সমাধান করা সম্ভব
পরিচিত যে-কাউকে জিজ্ঞেস করলে দেখা যাবে, তাদের ঘুমের সাথে আপনার ঘুমের ধরনের পার্থক্য থাকার সম্ভাবনাই বেশি।

স্লিপ সাইন্টিস্ট ও এপিডেমিওলজিস্ট এবং ইউনিভার্সিটি অব কুইন্সল্যান্ডের একজন অ্যাসোসিয়েট প্রফেসর ফাতিমা ইয়াকুট বলেন, ঘুম খুবই সাবজেক্টিভ একটি বিষয়।

স্লিপ হেলথ রিসার্চে বেশ কয়েকটি কারণের ভিত্তিতে ভালো মানের ঘুমকে সংজ্ঞায়িত করা হয়। যেমন- ঘুমের মোট সময়কাল, সারা রাত নিরবচ্ছিন্ন ঘুম বজায় রাখার পারদর্শীতা, এবং বিছানায় যাওয়ার ১৫ থেকে ২০ মিনিটের মধ্যে ঘুমিয়ে পড়ার ক্ষমতা।

তবে এসবের মধ্যে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ হচ্ছে জেগে ওঠার পরে কেউ কেমন অনুভব করছে সেই অভিজ্ঞতা।
Australia Explained - Migration and Sleep
The biggest indicator of healthy sleep is the way you feel when you wake up. Credit: miodrag ignjatovic/Getty Images
বিভিন্ন সংস্কৃতি ভেদে ঘুমের অভ্যাস ও বিশ্রামের অনুশীলন আলাদা হতে পারে।

সাধারণত উষ্ণ জলবায়ুর এলাকা যেমন, সেন্ট্রাল ও সাউথ অ্যামেরিকা এবং ভূমধ্যসাগরীয় অঞ্চল থেকে আসা লোকেদের জন্যে সিয়েসটা গ্রহণ করা অস্বাভাবিক নয়। এর মানে হচ্ছে বৈকালিক বিশ্রাম।

অ্যাসোসিয়েট প্রফেসর ইয়াকুট বলেন,
দিনের বেলা খানিক ঘুমিয়ে নেয়া অস্বাস্থ্যকর নয়, তবে খেয়াল রাখতে হবে তা যেন খুব দীর্ঘ না হয়।

ঘুমের গুণমান কর্মক্ষেত্রে আপনার দায়িত্ব, কাজের সময়সূচী এবং কোন পদে কাজ করছেন তার উপরও নির্ভর করে থাকে।

অ্যাসোসিয়েট প্রফেসর ইয়াকুট বলেন, নতুন কোনো দেশে যাওয়া জীবনের একটি বড় পরিবর্তন, যা শুরুর দিকে কিছু দিনের জন্যে ঘুমের ব্যাঘাত ঘটানোর ক্ষেত্রে ভূমিকা রাখতে পারে।

অস্ট্রেলিয়ান স্লিপ হেলথ রিসার্চে অভিবাসী জনগোষ্ঠীর ব্যাপারে অনেক বেশি তথ্য নেই।

তবে ২০১৯ সালে মোনাশ ইউনিভার্সিটি পরিচালিত এক গবেষণায় শরণার্থী ও অ্যাসাইলাম সিকারসদের ঘুমের ব্যাঘাতের সাথে মানসিক স্বাস্থ্য ও মনোসামাজিক বিষয়গুলির ভূমিকার বিষয়ে আলোকপাত করা হয়।

এই গবেষণায় দেখা যায় যে অংশগ্রহণকারী বেশিরভাগ প্রাপ্তবয়স্ক ও শিশুদের মধ্যে মাঝারি থেকে গুরুতর ঘুমের সমস্যা উপস্থিত রয়েছে।

মেলবোর্নভিত্তিক বিশেষজ্ঞ শরণার্থী ট্রমা এজেন্সি ফাউন্ডেশন হাউজের একজন প্র্যাকটিস লিডার ও সমাজকর্মী ক্রিস্টা সেনডেন এ ব্যাপারে তাঁর অভিমত জানিয়ে বলেন, এই গবেষণায় শতকরা ৭৫ জনের মধ্যে ঘুমের ব্যাঘাতের প্রমাণ পাওয়া গিয়েছিল।

Australia Explained - Migration and Sleep
Teenage insomnia is fuelled by stressors such as daily schedules, parental expectations and screen use at night. Credit: Alihan Usullu/Getty Images
তবে আপনার বা প্রিয়জনের কোনো ট্রমাই যে শুধু ঘুমকে প্রভাবিত করে থাকে এমনটা সঠিক নয়।

মিজ সেনডেন বলেন, অভিবাসন ও নতুন দেশে স্থিত হওয়ার অভিজ্ঞতাও এক্ষেত্রে ভূমিকা রাখতে পারে।

মিজ সেনডেন আরও বলেন,
অভিবাসনের চাপ ঘুমের ব্যাঘাত যেমন ঘটায়, তেমনি ঘুমের অতিরিক্ত ব্যাঘাত আপনার স্বাভাবিক জীবন যাপনে ক্ষতিকর প্রভাব ফেলতে পারে।

ক্রিস সেটন ওয়েস্টার্ন সিডনির ওয়েস্টমিডের চিলড্রেন’স হসপিটালে একজন পেডিয়াট্রিক ও অ্যাডোলেসেন্ট স্লিপ ফিজিশিয়ান হিসেবে কাজ করছেন। তিনি নবজাতক থেকে শুরু করে ১৮ বছর বয়সীদের ঘুমের সমস্যা মূল্যায়ন ও নির্ণয় করে থাকেন।

তিনি বলেন, যে-কোনো বাবা-মা অথবা জিপি ডাক্তার ঘুমের যে প্যাটার্নকে অস্বাভাবিক বলে মনে করেন, সেটিকে স্লিপ প্রবলেম বলে অভিহিত করা যায়।

ড. সেটন বলেন, যেসব পরিবারের সদস্যরা একত্রে ঘুমায়, তাদের অবশ্যই ঘুমের সমস্যা হবে, এরকম ভাবাটা ভুল হবে ।

কো-স্লিপিং তখনই সমস্যা হয়ে দাঁড়ায় যখন এর ফলে কেউ কেউ পর্যাপ্ত ঘুমের সুযোগ পায় না।

কোনো পরিবার যখন স্লিপ ক্লিনিকের সাহায্যপ্রার্থী হয়, তখন ডাক্তারেরা সন্তানের স্বাস্থ্যকর ঘুমের অভ্যাসকে বাড়িয়ে তুলতে একাধিক কৌশল প্রয়োগ করেন।
Australia Explained - Migration and Sleep
Sleep clinics can diagnose sleep problems even in infancy. Credit: SolStock/Getty Images
ড. সেটন বলেন, কো-স্লিপিং এবং ঘন ঘন দুঃস্বপ্ন দেখার ব্যাপারটি সাধারণত ছয় থেকে ১০ বছর বয়সীদের মধ্যে বেশি দেখা যায়।

আর কিশোর-কিশোরীদের ক্ষেত্রে ঘুমের সমস্যার পেছনের কারণগুলি হলো অনিদ্রা, প্রতিদিনের ব্যস্ত সময়সূচী, বাবা-মায়ের অত্যধিক প্রত্যাশার চাপ, এবং রাতে অতিরিক্ত স্ক্রিন-টাইম কাটানো।

অভিবাসী কিশোর-কিশোরীদের জন্যে কারণ হিসেবে আরও যুক্ত হয় নতুন দেশে আসার অভিজ্ঞতা, নতুন সংস্কৃতি ও ভাষার সাথে খাপ খাইয়ে নেয়া এবং শৈশবের বন্ধু ও আত্মীয়স্বজনের কাছ থেকে দূরে চলে আসা।

অনিদ্রা অথবা অন্যান্য ঘুমের সমস্যার মুখোমুখি হওয়া প্রাপ্তবয়স্কদের ক্ষেত্রেও একই কথা প্রযোজ্য।

অ্যাসোসিয়েট প্রফেসর ইয়াকুট পরামর্শ দেন যে, যখনই আপনি দেখবেন যে আপনার ঘুমের সমস্যার পুনরাবৃত্তি হচ্ছে এবং সে-কারনে আপনার কাজে মনোনিবেশ করার ক্ষমতায় ব্যাঘাত হচ্ছে, আপনার উচিত হবে যত দ্রুত সম্ভব ডাক্তারের সাথে যোগাযোগ করা।
 
Subscribe to or follow the Australia Explained podcast for more valuable information and tips about settling into your new life in Australia.   

Do you have any questions or topic ideas? Send us an email to

Share