অস্ট্রেলিয়ায় যেভাবে প্রাণীদের সুরক্ষা নিশ্চিত করা হয়

Woman holding chicken

A Woman holding a chicken Source: Getty / Getty Images/Mint Images

অস্ট্রেলিয়া পশুপ্রেমীদের দেশ। বিশ্বের পোষা প্রাণীদের মালিকানার সর্বোচ্চ হারের দেশগুলোর মধ্যে অস্ট্রেলিয়া অন্যতম। এ ছাড়াও দেশটি অনন্য বন্যপ্রাণীদের আবাস ও আশ্রয়স্থল। প্রাণীদের সংরক্ষণ ও নিরাপত্তা নিশ্চিত করা অস্ট্রেলিয়ায় জরুরীই শুধু নয়, এটি এখানকার আইনও বটে।


গুরুত্বপূর্ণ দিক:
  • অস্ট্রেলিয়ায় প্রাণীদের নিরাপত্তা ও সুরক্ষার জন্যে স্টেট ও টেরিটরিগুলোতে নির্দিষ্ট আইন রয়েছে
  • প্রাণীদের ইচ্ছাকৃত অবহেলা এবং পরিত্যাগ করা দণ্ডনীয় অপরাধ
  • সাজা হিসেবে জেল ও জরিমানা হতে পারে
  • নেটিভ প্রাণীদের জন্যে রয়েছে বিশেষ সুরক্ষা আইন
অস্ট্রেলীয় প্রাণী সংরক্ষণ ও নিরাপত্তা আইন নিয়ন্ত্রিত হয় স্টেট ও টেরিটরি সরকারের মাধ্যমে।

ড: সারাহ জিটো বলেন, এই আইনগুলোর বিভিন্ন প্রকার রয়েছে। তিনি RSPCA Australia-র একজন সিনিয়র সায়েন্টিফিক অফিসার। RSPCA মানে হচ্ছে-Royal Society for the Prevention of Cruelty to Animals.

কোনো প্রাণীর দায়িত্বে থাকা ব্যক্তি বলতে বোঝায় এর আইনগত মালিক, অথবা প্রাণীটি যার হেফাজতে রয়েছে এমন কেউ।

ড: জিটো বলেন, উদাহরণ হিসেবে বলা যায়, কোনো প্রজননকেন্দ্র অথবা কেনেল বা আশ্রয়স্থলের মালিকের সেখানকার প্রাণীদের যত্ন ও নিরাপত্তার দায়িত্ব নেয়া উচিৎ।

নিজের বাড়ি বা গাড়িতে অন্য কারও পোষা প্রাণীর যত্ন নেওয়ার ক্ষেত্রেও এই দায়িত্ব সম্পর্কে অবহিত থাকা প্রয়োজন।

People for the Ethical Treatment of Animals বা পেটা অস্ট্রেলিয়ার মুখপাত্র লরা ওয়েম্যান-জোন্স বলেন, এই নিয়মগুলি পূরণ করতে ব্যর্থ হওয়া একটি গুরুতর অপরাধ।
Puppies in cage
Source: Getty / Getty Images/John McKeen
কুকুরের খামারগুলি প্রাণী কল্যাণ সংস্থাগুলির জন্য একটি বড় চ্যালেঞ্জ।

অনেকে অনুমান করেন যে অস্ট্রেলিয়ায় কুকুর ও বিড়ালের খামার নিষিদ্ধ, কিন্তু সঠিক তথ্য হচ্ছে আগ্রহীরা আবেদন করে এগুলোর লাইসেন্স পেতে পারেন।

যদিও এই খামারগুলোর পরিবেশ-পরিস্থিতি খুব ভাল না-ও হতে পারে। আর ঘরের সৌন্দর্য বর্ধনের জন্য প্রজননকৃত প্রাণীরা প্রায়শই নানা রকম স্বাস্থ্য সমস্যায় ভোগে।

সাধারণত বিভিন্ন রেস্কিউ গ্রুপ বা উদ্ধারকেন্দ্র থেকে প্রাণী সংগ্রহ করা ভাল। কারণ অনেক সময় কেউ পোষার জন্যে নিয়ে না গেলে অনেক সুস্থ প্রাণীকেও ইউথানাইজড করা হয়ে থাকে।
Injured wallaby
Injured wallaby at a wildlife hospital Source: Getty / James D. Morgan/Getty Images
অ্যানিম্যাল ডিফেন্ডারস অফিসের স্বেচ্ছাসেবক প্রিন্সিপাল সলিসিটর টারা ওয়ার্ড বলেন, অস্ট্রেলিয়ার নেটিভ প্রাণীদের বিশেষ আইনী নিরাপত্তা রয়েছে।

সরকারের জারি করা বিশেষ লাইসেন্স না থাকলে বেশিরভাগ নেটিভ প্রাণীকে অধিগ্রহণ বা যে কোনো উদ্দেশ্যে ক্ষতি করা দণ্ডনীয় অপরাধ। কিছু বিপন্ন প্রজাতির প্রাণীর জন্যে অতিরিক্ত সুরক্ষার নিয়ম বহাল রয়েছে।

মিজ ওয়ার্ড বলেন, অবশ্য স্টেট বা টেরিটরির নিয়ম অনুযায়ী যদি কারো লাইসেন্স থাকে, তবে তিনি নেটিভ প্রাণীদের পোষা প্রাণী হিসাবে রাখতে পারেন।

যদিও নেটিভ বা স্থানীয় প্রাণীদের পোষ মানানোর ব্যাপারে বেশ কিছু বিষয়ে উদ্বেগ রয়েছে, কারণ, মানুষের সংস্পর্শে এলে অনেক ক্ষেত্রেই এসব প্রাণী সহজাত প্রবৃত্তি হারিয়ে ফেলে।

তবে একটি ব্যতিক্রম আছে বলে জানিয়েছেন মিজ ওয়ার্ড।

ড: জিটো আরও বলেন, প্রাণী কল্যাণ আইন লঙ্ঘন করলে জেল ও জরিমানাসহ আরও গুরুতর শাস্তি হতে পারে।

বিভিন্ন স্টেটের আইনগুলো এ ক্ষেত্রে যেমন আলাদা, তেমনই নিষ্ঠুরতা বা ইচ্ছাকৃত অবহেলার জন্যে শাস্তির মাত্রা ও মেয়াদও ভিন্ন।

কোনো প্রাণীর প্রতি অবহেলা, পরিত্যাগ করা বা অন্য কোনও নিষ্ঠুরতা প্রত্যক্ষ করলে সঙ্গে সঙ্গে অভিযোগ করা জরুরী।

এ ধরনের অপরাধের বিষয়ে যারা অভিযোগ দায়ের করে, তাদের পরিচয় গোপন রাখা হয়।

মিজ ওয়েম্যান-জোনস্‌ বলেন, যদি কোনো প্রাণীর তাৎক্ষণিক বিপদের সম্ভাবনা থাকে, যেমন অত্যন্ত উষ্ণ দিনে গাড়ির ভেতরে আটকা পড়েছে, এরকম ক্ষেত্রে অতি সত্বর পুলিশে খবর দেয়া উচিৎ।

আর অসুস্থ, আহত বা অনাথ নেটিভ প্রাণীদের খবর ওয়াইল্ডলাইফ রেসকিউ অস্ট্রেলিয়ার ২৪-ঘন্টার হটলাইন 1300 596 457 এই নম্বরে জানাতে হবে।

RSPCA অস্ট্রেলিয়া জুড়ে প্রাণী কল্যাণ আইন সম্পর্কিত তথ্যগুলি একত্রিত করেছে। সেগুলো জানতে দেখুন এই ওয়েবসাইটটি: kb.rspca.org.au

প্রতিবেদনটি শুনতে উপরের অডিও-প্লেয়ারটিতে ক্লিক করুন।

Share