এক মাস সিয়াম সাধনার পর বিশ্ব জুড়ে মুসলমানরা পালন করেছেন অন্যতম ধর্মীয় উৎসব ঈদ-উল-ফিতর।
চাঁদ দেখার উপর নির্ভর করে রমযান মাসের শুরু ও ঈদের দিন নির্ধারিত হয়ে থাকে। সেজন্য প্রতিবছরই দেখা যায়, মুসলমানরা বিভিন্ন দেশে বিভিন্ন সময়ে ঈদ উদযাপন করেন। একই দেশে থেকেও এ নিয়ে মতভেদের কারণে ভিন্ন ভিন্ন দিন ঈদ উদযাপন করা হয়ে থাকে।
অস্ট্রেলিয়ার বাংলাভাষী মুসলমানদের কেউ কেউ গতকাল রবিবার করেছেন এবং কেউ কেউ আজ সোমবার ঈদ পালন করছেন।
ঈদ উদযাপনের দিন নিয়ে মতভেদ থাকলেও একটি বিষয়ে সবার মাঝে অনেক মিল লক্ষ করা গেছে। সেটা হলো করোনাভাইরাসের বৈশ্বিক মহামারীর কারণে আরোপিত বিভিন্ন নিষেধাজ্ঞার কারণে এবারের ঈদও সবার ব্যতিক্রমী হয়েছে।
মসজিদগুলোতে ঈদের জামা’ত আয়োজনে নিষেধাজ্ঞা, সোশাল ডিস্টেন্সিং বা জন-দূরত্ব বজায় রাখার নির্দেশ ইত্যাদির কারণে ব্যতিক্রমী ঈদ হলেও ঈদের যে চিরন্তন ও সার্বজনীন চেতনা, সেটা রয়ে গেছে ভিন্ন ভাবে এবং ভিন্ন রং-এ।
এসবিএস বাংলার পক্ষ থেকে অস্ট্রেলিয়ায় বসবাসরত বাংলাভাষী মুসলমানদের কয়েকজনের সঙ্গে কথা বলেছি আমরা।
সিডনির নুসরাত জাহান স্মৃতি বলেন, আজ তিনি কারও বাড়িতে যাচ্ছেন না এবং ঈদের নামাজ পড়তে না পারায় তিনি কষ্ট পেয়েছেন।
“যেহেতু নামায পড়া হলো না, মনটা একটু অন্যরকম। কারণ, আমি ঈদ পালন করি নামাযের মাধ্যমে।”
নার্সিং পেশায় থাকায় করোনাভাইরাসের এই দিনগুলোতে তিনি প্রায় প্রতিদিনই কাজে গিয়েছেন, আজও যাবেন বলে জানান তিনি।
“আজকেও তার ব্যতিক্রম হবে না। যেহেতু কোথায় ঈদ পালন করছি না, কোথাও যাচ্ছি না, মানুষকে সেবা দেওয়াটাকেই আমি বড় ঈদ পালনের একটা উপায় হিসেবে ধরে নিয়েছি। এই সেবার মধ্য দিয়েই আমি আমার বাংলাদেশকে মনে করতে পারছি।”
আন্তর্জাতিক শিক্ষার্থী, ওয়েস্টার্ন সিডনি ইউনিভার্সিটির ছাত্র মোরসালিন খান দীপ্ত বলেন, দেশের বাইরের ঈদ একটু ভিন্ন রকম হয়ে থাকে। দেশের মতো মজা এখানে হয় না।
“আমরা সাধারণত ঈদের নামাজ পড়ি, এবার আমরা সেটা পাই নি। আমরা যে যার মতো বাসায় নামায পড়েছি।”
মেলবোর্ন থেকে খন্দকার সালেক সুফি ঈদের এই সময়টিতে বাংলাদেশে ঘূর্ণিঝড় আম্ফানের আঘাতে ক্ষতিগ্রস্তদের কথাও স্মরণ করিয়ে দেন।
“আমি সবাইকে অনুরোধ করবো ... আমাদের এই আম্ফান-কবলিত মানুষগুলোর পাশেও যেন আমরা দাঁড়াই।”অ্যাডিলেইড থেকে মাহবুব সিরাজ তুহিন জানান, তিনি বাসাতেই ইদের নামাজ পড়েছেন এবং অনলাইনে ঈদের খুৎবায় যোগদান করেছেন। কারও বাড়িতে যান নি, কেউ তার বাড়িতেও আসে নি। ফোন ও ফেসবুকে ঈদের শুভেচ্ছা বিনিময় করেছেন তিনি।
Mahbub Siraz Tuhin Source: Supplied
ডাবো থেকে জিপি ডাক্তার চৌধুরী বেগ জানিয়েছেন, স্থানীয় কর্তৃপক্ষের নির্দেশনা অনুসারে তারা সবাই বাড়িতেই নামাজ পড়েছেন। সবার সঙ্গে কোলাকুলি করার সুযোগ এবার হয় নি। তবে নিয়ম মেনে কয়েকজনের বাড়িতে গিয়েছেন তিনি।
“বলা যায় যে, নামাযের পর কোলাকুলি আমরা একদমই করি নি।”
“অনেকেই বাইরে গাড়ি পার্ক করে বসেছিলাম। (ঘর থেকে) অন্যরা বের হওয়ার পর ভেতরে ঢুকেছি।”
“জুম বা ভিডিওর মাধ্যমে একজনের সঙ্গে আরেকজনের যোগাযোগ করাটা ঈদের দিনেও করেছি, ঈদের আগেও রোযার সময়ে করেছি।”
“কয়েকজনের বাসায় গিয়েছি, যাওয়ার ক্ষেত্রেও নির্দিষ্ট নিয়ম মেনে চলেছি। যেমন, বাসায় ঢোকার আগে ফোন করে জেনেছি ভেতরে লোকজনের অবস্থা কী রকম? কতজন লোক আছেন?”আগের মতো জমজমাট ঈদ হয় নি এবার, পার্থ থেকে আবুল হোসেন বলেন এ কথা। সেখানে ২০ জন করে ছোট আকারের ঈদের জামাতের আয়োজন করা হয়েছে।
Eid in Dubbo Source: Supplied
“আগের মতো এবার জমজমাট ঈদের আয়োজন হয় নি। সেটাকে আমি মিস করেছি।”
মেলবোর্ন থেকে লুৎফর খান জানালেন, তার জীবদ্দশায় এ রকম ঈদ তিনি কখনও দেখেন নি।
“ঈদের প্রধান যে-সব সামাজিক আকর্ষণ, যেমন, আত্মীয়-বন্ধু-পরিজন নিয়ে ঘুরে বেড়ানো, একসাথে ভাল-মন্দ খাওয়া, সেসব কিছুই হচ্ছে না।”
ইন্টারনেটের মাধ্যমে, ভিডিওর মাধ্যমে সবার সঙ্গে যোগাযোগ করা সম্ভব হলেও সেটাকে তিনি অনেকটা “দুধের স্বাদ ঘোলে মেটানো”র সঙ্গে তুলনা করেন।
মেলবোর্ন থেকে নুসরাত ইসলাম বর্ষা সবাইকে ঈদের শুভেচ্ছা জানান। ভিক্টোরিয়ান মাল্টি-কালচারাল কমিশন থেকে মুসলমান কমিউনিটির জন্য অর্থায়ন করার দাবি করেন তিনি।সিডনির মাহবুব হাসান বাহার বলেন,
Mahbub Hasan Bahar Source: Supplied
“জুমের মাধ্যমে পরিবারের সদস্য ও বন্ধু-বান্ধবদের সঙ্গে ফেস-টু-ফেস আমরা কথা বলেছি।”
“কালচারাল প্র্যাকটিসটা, সেটা আর হলো না এবার।”
কুইন্সল্যান্ড থেকে ফরহাদ কামাল বলেন,
“বেশিরভাগ মানুষ নিজ নিজ ঘরেই নামাজ আদায় করেছেন আজ। আজকে সাধারণ কর্ম-দিবস। পরিবারের সদস্যরা নিজেদের মধ্যেই ঈদের আনন্দ ভাগাভাগি করে নিয়েছেন। বন্ধু-বান্ধব, আত্মীয়-পরিজনদের সঙ্গে সামাজিক দূরত্ব মেনে কুশলাদি বিনিময় করেছেন। এছাড়াও সবাই ফোন এবং সামাজিক-যোগাযোগ-মাধ্যম ব্যবহার করে বিশ্বের অন্য প্রান্তে ছড়িয়ে থাকা সকলের সঙ্গে সংযুক্ত হচ্ছেন।”
প্রতিবেদনটি বাংলায় শুনতে উপরের অডিও-প্লেয়ারটিতে ক্লিক করুন।