গুরুত্বপূর্ণ দিকগুলো
- সূর্যের অতিবেগুনি রশ্মির তেজস্ক্রিয়তার ফলে ত্বকের ডিএনএ ক্ষতিগ্রস্থ হয়।
- গাঢ় অর্থাৎ শ্যামলা বা কালো ত্বকে ঝুঁকির মাত্রা কম,কিন্তু তাদেরও স্কিন ক্যান্সার হয়।
- গাঢ় ত্বকের মানুষদের ভিটামিন ডি'র ঘাটতি হবার ঝুঁকি বেশি।
ব্রাজিলে জন্ম নেওয়া ক্রিস্টিয়েন হোলম্যান লির বেড়ে উঠা ইতালিতে। আট বছর আগে তিনি অস্ট্রেলিয়ায় এসেছিলেন, বর্তমানে ব্রিসবেনে থাকেন। এখানে সূর্যরশ্মি ইতালির চাইতে বেশি প্রখর বলে তিনি মন্তব্য করেন।
ইতালির রোদ এখানকার চেয়ে কোমল বলে তার ধারণা। এখানে কড়া রোদে তিনি সহজে বের হননা, হলেও তিনি ছাতা ব্যবহার করেন আর চেষ্টা করেন ছায়ার আশ্রয়ে থাকতে।
সারা বিশ্বে ত্বকে ক্যান্সার আক্রান্তের দিক দিয়ে অস্ট্রেলিয়া অন্যতম শীর্ষে। অস্ট্রেলিয়ায় ক্যান্সার রোগীর মধ্যে ত্বকের ক্যান্সারই সবচেয়ে বেশি দেখা যায়। অস্ট্রেলিয়ার পরিসংখ্যান ব্যুরোর ২০১৭-১৮ সালের তথ্যমতে, প্রতি তিনজন ক্যান্সার আক্রান্তের মধ্যে একজনেরটিই ত্বকের ক্যান্সার।
অস্ট্রেলিয়ায় কেন এই হারে ক্যান্সার হয়?

Source: Getty Images/MB Photography
এই প্রশ্নের উত্তরে ক্যান্সার গবেষক ডেভিড হোয়াইট বলেন, অনেক কারণেই এদেশে মানুষ অধিক হারে ত্বকের ক্যন্সারে আক্রান্ত হন। অস্ট্রেলিয়ার ভৌগোলিক অবস্থানের কারণে অন্য দেশের তুলনায় এদেশে সূর্যের অতিবেগুনি রশ্মির তিব্রতা বেশি।
মিস্টার ডেভিড ক্যান্সার কন্ট্রোল গ্রুপের দলনেতা এবং কুইন্সল্যান্ড ইন্সটিটিউট অফ মেডিক্যাল রিসার্চ (QIMR Berghofer) এর ডেপুটি ডিরেক্টর।
শুধু ভৌগলিক অবস্থান নয়, দক্ষিণ গোলার্ধের যেখানে অস্ট্রেলিয়ার অবস্থান, সেখানে সূর্যরশ্মির তিব্রতা উত্তর গোলার্ধের চাইতে বেশি বলে জানান মিস্টার ডেভিড।
প্রফেসর হোয়াইটম্যান আরো জানান, পরিবেশগত প্রভাব ছাড়াও নৃতাত্ত্বিক গঠনের কারণে এখানকার মানুষ সূর্যের ক্ষতিকর রশ্মির প্রতি সহনশীল নন।

Source: Getty Images/maps4media
সিডনীর ডাক্তার আহমাদ হাসনাইন একজন জেনারেল ফিজিশিয়ান এবং স্কিন ক্যানসার বিশেষজ্ঞ।
তিনি বলেন, সূর্যের অতিবেগুনি রশ্মির তেজস্ক্রিয়ায় থাকার ফলে ত্বকের কোষগুলোর ডিএনএর ক্ষতি হয়। দীর্ঘদিন ধরে অরক্ষিত অবস্থায় কড়া রোদে পুড়ে ত্বকের ক্যানসার হয়।
শরীরের অভ্যন্তরীণ প্রক্রিয়ায় ক্ষতিগ্রস্ত ডিএনএ মেরামত না হলে আক্রান্ত দেহকোষ বা ক্যান্সার কোষ বাড়তে থাকে। এই ক্যান্সার আক্রান্ত কোষের অস্বাভাবিক বৃদ্ধি একদিন ক্যান্সার রোগ হিসাবে প্রকাশ পায়।
অস্ট্রেলিয়ার কোন সাধারণ গ্রীষ্মের রোদে যে মাত্রায় ক্ষতিকর অতিবেগুনি রশ্মি থাকে, তাতে অরক্ষিত অবস্থায় থাকলেই অনেক ক্ষতি হয়ে যায়। খোলা রোদে তাই ত্বক সুরক্ষার ব্যবস্থা নেওয়া জরুরি।
পেইজ প্রেস্টন অস্ট্রেলিয়া ক্যান্সার কাউন্সিলের স্কিন ক্যান্সার কমিটির সভাপতি।
তিনি ঘরের বাইরে বের হবার আগে অতিবেগুনি রশ্মির তীব্রতা দেখে তবে বের হওয়ার পরামর্শ দেন।
নিজ এলাকার সূর্যরশ্মির তীব্রতা বা ব্যুরো অফ মেটেরেওলজির ওয়েবসাইটে দেখা যায়।

Source: Getty Images/Stuart Westmoreland
ডাক্তার হাসনাইন বলেন, তার অনেক ক্যান্সার রোগীর ত্বক গাঢ় রঙের। সবাইকে তাই এই বিষয়ে সচেতন বা সানস্মার্ট হবার আহবান জানান তিনি।
কিন্তু রোদে না বের হলে ভিটামিন ডি এর ঘাটতি দেখা দিতে পারে, বিশেষ করে শ্যামলা বা গাঢ় রঙের মানুষদের।
ক্যান্সার কাউন্সিলের পেইজ প্রেস্টন বলেন, ভিটামিন ডি এর ঘাটতি দেখা দিলে জিপি এর সাথে আলাপ করে সম্পূরক ভিটামিন ওষুধ সেবন করা উচিত। ভিটামিন ডি পেতে অধিক সময় সূর্যালোকে থাকার দরকার নেই।
অনেকে গ্রীষ্মের রোদ থেকে রক্ষা পেতে ট্যানিং করে থাকেন। তাদেরকে সতর্ক করে দিয়ে মিস্টার হোয়াইটম্যান বলেন, ট্যানিং ত্বক ও ডিএনএ-র ব্যাপক ক্ষতি করে।

Source: Getty Images/Elizabeth Fernandez
প্রতিবেদনটি বাংলায় শুনতে উপরের অডিও প্লেয়ারে ক্লিক করুন।