৫০ জন ভিয়েতনামী দক্ষ অভিবাসী-কর্মীর ওপরে একটি সমীক্ষা চালানো হয়। কর্মসংস্থানের ক্ষেত্রে এরা প্রায়শই বৈষম্যের শিকার হয়েছেন।
আর-এম-আই-টি বিশ্ববিদ্যালয়ের বিজনেস বিভাগের লেকচারার ড. জুন ট্রান বলেন, কর্মক্ষেত্রে যোগ দিতে অভিবাসীদের কয়েক বছর সময় লেগে যায়।
তিনি যে দিকটির কথা উল্লেখ করেছেন সেটি হলো, অস্ট্রেলিয়ায় অতি-দক্ষ অভিবাসী-কর্মীরা তাদের নিজ নিজ ক্ষেত্রে কাজ পাচ্ছে না। ফলে তারা নিম্ন-দক্ষতার কাজ করতে বাধ্য হচ্ছে। যেমন, তাদের কেউ কেউ ডেলিভারি ড্রাইভারের কাজও করছে।
এই সমীক্ষাটির লিড অথর ড. ট্রান। সম্প্রতি অস্ট্রেলিয়ায় আসা ৫০ জন ভিয়েতনামী দক্ষ অভিবাসীর অভিজ্ঞতা নিয়ে এই সমীক্ষাটি চালানো হয়। তারা কর্মসংস্থানের জন্য অনেক সংগ্রাম করেছেন। এছাড়া, ১২ জন নিয়োগদাতাও এই সমীক্ষাটিতে অংশ নেন।
এই অভিবাসীদের একজন ডাই নিউয়েন ২০০৯ সালে ভিয়েতনাম থেকে অস্ট্রেলিয়ায় অভিবাসন করেন। ইউনিভার্সিটি অব নিউ সাউথ ওয়েলস থেকে ইলেক্ট্রিকাল ইঞ্জিনিয়ারিং-এ তিনি পি-এইচ-ডি করেছেন।
সরকারী স্কিলড অকুপেশন লিস্টে তার পেশা অন্তর্ভুক্ত হলেও, এই পেশায় কাজ পেতে তার তিন বছর লেগে যায়। এজন্য তাকে শত শত আবেদন করতে হয়েছে।
চাকুরির আবেদন ফর্মে তিনি তার নাম ‘ডাই’ থেকে পরিবর্তন করে ‘ডিলন’ রাখেন। আর, এরপর দ্রুতই তিনি কাজ পেয়ে যান, বলেন তিনি।
মনাশ ইউনিভার্সিটি গত জুলাই মাসে একটি সমীক্ষার ফল প্রকাশ করে। দুই বছর ধরে পরিচালিত সেই সমীক্ষাটিতেও একই ধরনের অভিজ্ঞতার কথা উঠে এসেছে। এতে দেখা গেছে, লিডারশিপ পজিশনগুলোর জন্য নিয়োগদাতাদের কাছ থেকে ইংরেজি নামের আবেদনকারীদের তুলনায় ৫৭ শতাংশ কম সাড়া পেয়েছে এথনিক সংখ্যালঘু আবেদনকারীরা।
আর, নন-লিডারশিপ পজিশনগুলোর ক্ষেত্রে, এথনিক সংখ্যালঘুরা সাড়া পেয়েছে ৪৫ শতাংশ কম।
সুযোগ পাওয়ার পর কর্মক্ষেত্রে মিস্টার নিউয়েনের উন্নতি হতে থাকে। এখন তিনি কানেকশন্স ম্যানেজার হিসেবে বড় একটি রিনিউয়েবল এনার্জি কোম্পানি ইবারড্রোলা অস্ট্রেলিয়াতে কাজ করছেন।
তিনি বলেন, নিজের ক্ষেত্রে কাজ পাওয়ার পর, অন্য অভিবাসীদেরকেও তিনি কর্মসংস্থানের জন্য সহায়তা করে থাকেন।
গ্রাটান ইনস্টিটিউটের ডেপুটি প্রোগ্রাম ডাইরেক্টর অব মাইগ্রেশন অ্যান্ড লেবার মার্কেটস হিসেবে কাজ করেন ট্রেন্ট উইল্টশায়ার।
তিনি বলেন, এই প্রতিষ্ঠানটির সাম্প্রতিক একটি সমীক্ষায় দেখা গেছে, পড়াশোনা সম্পন্ন করার পর মিস্টার নিউয়েনের মতো আন্তর্জাতিক শিক্ষার্থীরা প্রায়শই কাজের সুযোগ থেকে বঞ্চিত হন। আর, এর জন্য দায়ী হচ্ছে, সেই সব নিয়োগদাতা, যারা মাইগ্রেশন সিস্টেমের জটিলতা বোঝেন না।
মিস্টার উইল্টশায়ার বলেন, একটি শক্তিশালী অর্থনীতির জন্য অস্ট্রেলিয়ার স্কিলড মাইগ্রেশন সিস্টেম অনেক সহায়ক। বিশেষত, বর্তমান অর্থনৈতিক পরিস্থিতিতে।
অস্ট্রেলিয়ায় অভিবাসনের ক্ষেত্রে এবং জটিল অভিবাসন ব্যবস্থা ও কর্মসংস্থান প্রক্রিয়া অনুধাবনের ক্ষেত্রে নবাগত অভিবাসী এবং শরণার্থীদেরকে সহায়তা করে থাকে ওয়েস্টার্ন সিডনি মাইগ্রান্ট রিসোর্স সেন্টার।
এর সিইও নেইথন বারব্রিজ দেখতে পান যে, দক্ষ অভিবাসীদের কর্মসংস্থানের ক্ষেত্রে অন্যতম বাধা হয়ে দাঁড়ায় লোকাল এক্সপিরিয়েন্স বা অস্ট্রেলিয়ায় কাজের অভিজ্ঞতা না থাকার বিষয়টি।
আর-এম-আই-টির ড. জুন ট্রান বলেন, যে-সব প্রতিষ্ঠান অভিবাসীদেরকে স্থানীয় কাজের অভিজ্ঞতা দিয়ে থাকে, অস্ট্রেলিয়া সরকারের উচিত সেসব প্রতিষ্ঠানকে আর্থিকভাবে সহায়তা করা।
প্রতিবেদনটি শুনতে উপরের অডিও-প্লেয়ারটিতে ক্লিক করুন।