গুরুত্বপূর্ণ দিকগুলো:
- অস্ট্রেলিয়ায় ই-কমার্সের ব্যাপক প্রসারের সাথে সাথে অনলাইন ক্রেতারাও ক্রমবর্ধমান স্ক্যামের হুমকির সম্মুখীন হচ্ছেন
- বেশিরভাগ বিক্রয় প্রতিষ্ঠানের লয়্যালটি প্রোগ্রামগুলি গ্রাহকদের ব্যক্তিগত তথ্য সংগ্রহ করার উদ্দেশ্যে মূল্য ছাড়ের প্রস্তাব দেয়
- হ্যাকাররা এ সমস্ত সংবেদনশীল তথ্যের ব্যাপারে আগ্রহী হয়ে থাকে, কারণ আর্থিক লাভের জন্য কালো বাজারে এসব তথ্য বিক্রি করা সম্ভব
- সাইবার অপরাধীরা মানুষের অর্থ এবং পরিচয় চুরি করার উদ্দেশ্যে জাল ওয়েবসাইট তৈরি ও ব্যবহার করে থাকে
যদিও গত এক দশকে অনলাইনে কেনাকাটা ধীরে ধীরে বেড়েছে, তবে কোভিড-১৯ মহামারীর সময়কালীন লকডাউনে এর হার বৃদ্ধি পেয়েছে সবচেয়ে বেশি।
থেকে জানা গেছে যে, প্রায় প্রতি পাঁচ জনে এক জন অস্ট্রেলিয়ান তাদের নিত্য ব্যবহার্য জিনিসের অনেক কিছুই অনলাইনে কিনে থাকেন। অন্যান্য গবেষণায় দেখা গেছে যে মহামারীর সময় অনলাইনে কেনাকাটা স্বাভাবিক সময়ের তুলনায় প্রায় তিনগুণ বৃদ্ধি পেয়েছে।
ড. লুইস গ্রিমার টাসমানিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের কলেজ অব বিজনেস অ্যান্ড ইকোনমিক্স-এর মার্কেটিং বিষয়ের একজন গবেষক এবং সিনিয়র প্রভাষক। তিনি বলেন, যদিও মহামারীর আগে থেকেই বেশ কিছু বড় বিক্রয়-প্রতিষ্ঠানের অনলাইন স্টোর ছিল, তবে এই মহামারী অনেক বিক্রয় প্রতিষ্ঠানকেই হয় নতুন করে একটি অনলাইন প্ল্যাটফর্ম তৈরি করতে বা তাদের বিদ্যমান ডিজিটাল প্ল্যাটফর্ম ও পরিষেবাগুলি আরও উন্নত করতে বাধ্য করেছে।
ড. গ্রিমার বলেন যে,অনেক বিক্রেতাই ব্যবসা চালু রাখার জন্য তাদের ওয়েবসাইটগুলি আরও উন্নত করেছে, এবং অন্যান্য সুবিধার সাথে সাথে উন্নত গ্রাহক পরিষেবা ও ডেলিভারি সেবাও যুক্ত করেছে।
তিনি বলেন, যদিও অনলাইন কেনাকাটার ওয়েবসাইটগুলি প্রায়শই গ্রাহকদের অর্থ সাশ্রয় করতে সহায়তা করে, এবং বিভিন্ন অফার ও ডিল, বা কুপন, অথবা ‘মানি ব্যাক’ জাতীয় অফারের মাধ্যমে ভোক্তাদের সুবিধা প্রদান করে, তবে তারপরেও ভোক্তাদের সচেতন হওয়া উচিত যে এই ওয়েবসাইটগুলি তাদের ব্যক্তিগত তথ্য সংগ্রহ করতে পারে এবং তাদের অনলাইন শপিং সংক্রান্ত অভ্যাস ও আচরণের উপর নজর রাখতে পারে।
Source: Getty / Getty Images
সংবেদনশীল এই তথ্যগুলি সাইবার অপরাধী এবং হ্যাকাররা তাদের নিজস্ব লাভের জন্য ব্যবহার করতে চাইতে পারে। কারণ ব্যক্তিগত তথ্য কালো বাজারে বিক্রি করা একটা লাভজনক ব্যবসা।
অনলাইন শপিংয়ের আরেকটি ঝুঁকি হ'ল মানুষের অর্থ বা পরিচয় চুরি করার জন্য স্ক্যামারদের দ্বারা প্রতিষ্ঠিত জাল বা নকল অনলাইন স্টোরের মাধ্যমে প্রতারিত হওয়া।
অস্ট্রেলিয়ান কনজ্যুমার অ্যান্ড কম্পিটিশান কমিশনের ডেপুটি চেয়ারম্যান ডেলিয়া রিকার্ড ব্যাপারটি ব্যাখ্যা করেছেন। তিনি বলেন, যদি সাইটটি অস্বাভাবিক বা অপ্রচলিত কোনো পদ্ধতিতে পেমেন্ট করার জন্যে অনুরোধ করে, যেমন ওয়্যার ট্রান্সফার, ক্রিপ্টোকারেন্সি বা গিফট ভাউচার, সেক্ষেত্রে সাবধান হয়ে যেতে হবে কারণ সম্ভবত এটি কোনো স্ক্যামিং ওয়েবসাইট।
তিনি সতর্ক করে দেন যে অনলাইন স্ক্যামাররা বিশ্বাসযোগ্যতা গড়ে তোলার জন্য নিজেদের অস্ট্রেলিয়ান বলে উপস্থাপন করার চেষ্টা করে।
মিজ রিকার্ড অনলাইন ক্রেতাদের নিয়মিত ওয়েবসাইটটি অনুসরণ করার পরামর্শ দেন, যাতে তারা প্রচলিত অনলাইন স্ক্যামগুলো সম্পর্কে জানতে পারেন, নতুন কোনো স্ক্যামের খবর জানতে পারলে সেটি রিপোর্ট করতে পারেন অথবা প্রতারিত হলে সহায়তা পেতে পারেন।
এ বিষয়ক বিভিন্ন তথ্য ইংরেজী ছাড়াও আরো অনেকগুলো ভাষায় অনলাইনে পাওয়া যায়।
এছাড়াও স্ক্যামারদের দ্বারা প্রতারিত হলে অবিলম্বে সংশ্লিষ্ট ব্যাংকের সাথে যোগাযোগ করার পরামর্শ দেন মিজ রিকার্ড।
তিনি আরও বলেন যে চাহিদা অত্যধিক বেড়ে যাওয়ায় পণ্য সরবরাহের গতি ধীর হয়ে গেছে, যার ফলে গ্রাহকদের পক্ষে বোঝা কঠিন হয়ে গেছে এই বিলম্ব স্বাভাবিক নাকি তিনি প্রতারিত হয়েছেন।
মিজ রিকার্ড বলেন যে অনেক অনলাইন স্ক্যাম বিভিন্ন ব্যক্তিগত ও গুরুত্বপূর্ণ তথ্য, যেমন মানুষের নাম, বয়স এবং বাড়ির ঠিকানা চুরি করে নিতে সক্ষম। সেই সাথে ড্রাইভার’স লাইসেন্স ও পাসপোর্ট নম্বরও চুরির তালিকায় থাকা সম্ভব।
এই স্ক্যামগুলি সাধারণত মানুষের পরিচয় জাল করার জন্য ব্যবহৃত হয়।
এরকম সংবেদনশীল ব্যক্তিগত তথ্য দিয়ে প্রতারিত হয়ে থাকলে য দ্রুত সম্ভব স্ক্যামওয়াচের সাথে যোগাযোগ করার পরামর্শ দিয়েছেন মিজ রিকার্ড। অথবা idcare.org-র সাথেও যোগাযোগ করা যেতে পারে। এটি সরকারী অনুদানপ্রাপ্ত একটি সংস্থা যেটি ব্যক্তিগত তথ্য ও পরিচয় চুরি হলে সহায়তা দিয়ে থাকে।
Scam Source: Getty / Getty Images
ড. গ্রিমার বলেন যে যারা অনলাইন কেনাকাটায় নতুন তারা যেন তাদের পরিবার বা বন্ধুদের সাথে পরামর্শ করে নেন, যেন যে শপিং প্ল্যাটফর্ম থেকে তারা কিনছেন সেটি আদৌ বিশ্বাসযোগ্য কিনা এ বিষয়ে আগে থেকেই তারা ধারণা পেতে পারেন।
যদিও সব ক্ষেত্রে পুলিশের সাথে যোগাযোগ করার প্রয়োজন হয় না, তবে স্ক্যামারের অবস্থান যদি অস্ট্রেলিয়ায় হয়ে থাকে সে ক্ষেত্রে পুলিশের সাথে যোগাযোগ করাটাই ভাল।
সম্পূর্ণ প্রতিবেদনটি শুনতে উপরের অডিও লিংকে ক্লিক করুন।
এসবিএস বাংলার অনুষ্ঠান শুনুন রেডিওতে, এসবিএস বাংলা রেডিও অ্যাপ-এ এবং আমাদের ওয়েবসাইটে, প্রতি সোম ও শনিবার সন্ধ্যা ৬ টা থেকে ৭ টা পর্যন্ত। রেডিও অনুষ্ঠান পরেও শুনতে পারবেন, ভিজিট করুন: