এন্ডোমেট্রিওসিস একটি দীর্ঘস্থায়ী রোগ যা বিভিন্ন উপসর্গের সাথে সংশ্লিষ্ট।
এর মধ্যে পিরিয়ড, যৌন মিলনের সময় তীব্র ব্যথা, পেটের সমস্যা, ফোলাভাব, বমির উদ্রেক হওয়া এবং ক্লান্তি থাকতে পারে। এছাড়া কখনও কখনও বিষণ্নতা, উদ্বেগ এবং বন্ধ্যাত্বও এর সাথে যুক্ত।
এতো উপসর্গের কারণে স্বাস্থ্যসেবা কর্মী এবং রোগীরা সহজেই বুঝতে পারে না রোগটি এন্ডোমেট্রিওসিসই কীনা।
এন্ডোমেট্রিওসিস বিশেষজ্ঞ অ্যালেক্স অ্যাডেস বলেন যে লক্ষণগুলির সূত্রপাত এবং রোগ নির্ণয়ের মধ্যে অনেক সময় দীর্ঘ বিলম্ব হয়।
তিনি বলছেন, অনেক ডাক্তারই এই রোগ সম্পর্কে খুব ভালো জানেন না, কারণ লক্ষণগুলি খুব সুনির্দিষ্ট নয়। তাছাড়া মহিলাদের পিরিয়ডের সময় ব্যথা হওয়া খুবই সাধারণ বিষয়। তাই ল্যাপারোস্কোপি করার আগে ওষুধ দিয়ে সরিয়ে তোলার চেষ্টা করা ভুল নয়। আবার একজন গাইনোকোলজিস্টের সাথে প্রথম অ্যাপয়েন্টমেন্ট পেতে দীর্ঘ সময় লাগতে পারে। সুতরাং এই দীর্ঘসূত্রিতা অস্বাভাবিক নয়।
এসব কারণে যেসব রোগী চিকিৎসা ব্যবস্থাপনা থেকে উপকৃত হতে পারে তাদের সবসময় উপযুক্ত চিকিৎসা দেওয়া যায় না।
তবে এন্ডোমেট্রিওসিস অস্ট্রেলিয়ার অ্যালেক্সিস উলফ বলেন - পরিস্থিতির উন্নতি হচ্ছে।
তিনি বলছেন, এন্ডোমেট্রিওসিস নির্ণয়ের ক্ষেত্রে আগে যেখানে অবিশ্বাস্যভাবে ১০ থেকে ১২ বছর লাগতো, এখন তা নেমে সাড়ে ছয় বছর নেমে এসেছে। এই দীর্ঘ সময় লাগার প্রাথমিক কারণ হলো, অনেকের ধারণা হচ্ছে যে ঋতুস্রাব এবং তার সাথে ব্যথা স্বাভাবিক। কিন্তু যা আপনাকে আপনার জীবনযাপন থেকে বিরত রাখে, তা স্বাভাবিক নয়। এমন অনেক নারী আছেন যারা শুধু মনে করেন যে এটা তাদের জীবনের ভাগ্য, এবং তারা এর সমাধানেরও চেষ্টা করে না। আবার যদিওবা তারা ডাক্তারের শরণাপন্ন হন, অনেক সময় সেই ডাক্তারও এন্ডোমেট্রিওসিস সম্পর্কে ভালোভাবে অবহিত না থাকায় পুরো রোগ নির্ণয় প্রক্রিয়াটি চ্যালেঞ্জিং হতে পারে।
এন্ডোমেট্রিওসিস সম্পর্কে আমাদের অজ্ঞতার কারণে রোগ নির্ণয় আরও কঠিন হয়ে উঠেছে।
রোগের সঠিক উৎপত্তির জন্য বেশ কয়েকটি কারণ চিহ্নিত করে অনেক হাইপোথিসিস প্রস্তাব করা হলেও, এখনও পর্যন্ত কোনটিই প্রমাণিত হয়নি।
উলফ বলছেন, আমরা জানি না কী কারণে এন্ডোমেট্রিওসিস হয়। গবেষণায় আরো অনেক দূর যেতে হবে। এর কারণ অজানা, এবং আমাদের কাছে এখনও কোন সুনির্দিষ্ট প্রতিকার নেই।
তবে এছাড়াও সামাজিক কুসংস্কার এবং সাহায্যের অভাবে অনেক রোগী মানসিক কষ্টে ভোগে।
এমনি একজন কেট স্যাগারস বলেন, যখন তিনি সহবাস শুরু করেন তখনই তার আরও অনেক সমস্যা হতে শুরু করে, সেই থেকে ব্যথা এবং রক্তপাত। তিনি এতে বিব্রত হতেন।
সেন্ট লুকস হাসপাতালের গাইনোকোলজির প্রধান মাইকেল কুপার মনে করেন, রোগটি সম্পর্কে সচেতনতা বাড়ছে এবং ধীরে ধীরে পরিবর্তন আসছে।
তিনি বলছেন, এই রোগটি নারীদের যৌনতা এবং প্রজনন ক্ষমতা সম্পর্কিত। যদিও অনেক কারণে এটি নিয়ে খুব আলোচনা নেই, তবে সোশ্যাল মিডিয়ার এই যুগে এটি সম্পর্কে কথা বলা আরও সহজ হচ্ছে।
এই সিরিজের প্রথম অংশে, আমরা জেনেছি যে এন্ডোমেট্রিওসিস সাধারণত ন্যূনতম থেকে গুরুতর পর্যায়ে শ্রেণীবদ্ধ করা হয়।
রোগটি সম্পর্কে সুনির্দিষ্ট ডায়াগনোসিসের জন্য সবচেয়ে সঠিক কাজ হচ্ছে ল্যাপারোস্কোপি করা।
আরো দেখুন
নতুন এসবিএস রেডিও অ্যাপ ডাউনলোড করুন
ড. অ্যাডেস বলছেন, ল্যাপারোস্কোপি একটি ছোট অস্ত্রোপচার, যেখানে ক্যামেরায় পেটের ভিতরে এবং শ্রোণীচক্রের চারপাশ দেখে এন্ডোমেট্রিওসিস আছে কীনা সে সম্পর্কে ধারণা করা যায়, এরপর আরো পরীক্ষার জন্য প্যাথলজিতে পাঠানো হয়। এখানে এন্ডোমেট্রিয়াল কোষ দেখে রোগটি নির্দিষ্ট করে নির্ণয় করা যায়। অনেক সময়ে ল্যাপারোস্কোপির প্রয়োজন হয় না, এটি নির্ভর করে এন্ডোমেট্রিওসিসের স্তরের উপর। কিছু ইমেজিং পদ্ধতিতেও ডায়াগনোসিস করা যায়। এছাড়া আল্ট্রাসাউন্ড এবং এমআরআই ভালো পদ্ধতি। উপসর্গের উপর ভিত্তি করে আমরা এন্ডোমেট্রিওসিস আছে কীনা অনুমান করতে পারি, কিন্তু ল্যাপারোস্কোপি না করা পর্যন্ত নির্দিষ্ট করে রোগ নির্ণয় করা যায় না।
অনেক সময় অফিসিয়াল ডায়াগনোসিসের প্রয়োজন নাও হতে পারে।
ড. কুপার বলছেন, পিরিয়ডের ব্যাথা থাকতে পারে। কিন্তু কেউ যদি গর্ভনিরোধক পিল ব্যবহার করে এবং তাদের স্ক্যান স্বাভাবিক হয়, তাহলে তাদের কিছু করার দরকার নেই।
এন্ডোমেট্রিওসিসের আরেকটি দিক যা এখনো অস্পষ্ট, তা হল রোগটি বংশগত কীনা।
প্রারম্ভিক গবেষণা অনুযায়ী এটি পরিবার থেকে আসা বলে মনে হয়। কিন্তু এটিই একমাত্র কারণ নয়।
মিজ কেটের রোগ নির্ণয় করতে আট বছর লেগেছিল, যদিও তার মাও এন্ডোমেট্রিওসিসে ভুগছিলেন।
তিনি বলছেন, তার মা সম্ভবত ১৭ বছর বয়স থেকেই ভুগছিলেন এবং একাধিক ভিন্ন বিশেষজ্ঞের কাছে গিয়েছিলেন। প্রায় ৩০ বছর আগের ডাক্তাররা তাকে বলেছিলেন যে এটি মনস্তাত্ত্বিক এবং তিনি এটি তৈরি করেছেন, এবং এটি মোটেও শারীরিক ব্যথা ছিল না। কিন্তু তিনি বুঝেছিলেন, কিছু একটা ঘটছে। তাই কি ঘটছে তা জানার জন্য বার বার তিনি বিভিন্ন ডাক্তারের কাছে গেছেন।
তবে এক প্রজন্ম পরেও, বৈজ্ঞানিক অগ্রগতি, সচেতনতা এবং শিক্ষার উন্নতিতেও এন্ডোমেট্রিওসিস নির্ণয়ের জন্য কেটের পথ এখনও চ্যালেঞ্জিং রয়ে গেছে।
কেট বলছেন, তিনি অনেক ডাক্তারদের কাছে গেছেন যারা পিরিয়ডের সাধারণ ব্যথা, ক্র্যাম্পিং এবং রক্তপাতের সাথে তীব্র অস্বাভাবিক ব্যথার বিষয়টি সম্পর্কিত করতে পারেন না। অনেক সময় মহিলারা এটি নিজেদের নিয়তি বলে মনে করে, ব্যাথার জন্য লজ্জিত হয় এবং কোন সামাজিক সম্পর্ক থেকেও বিরত থাকে। তারা শুধু নীরবেই ভুগতে থাকে।
রোগটি নির্ণয় কঠিন হলেও, সবকিছু শেষ হয়ে যেতে পারে না।
কারো আনুষ্ঠানিকভাবে রোগটি ডায়াগনোসিস করা হলে, তাদের অবশ্যই কার্যকর চিকিৎসা খুঁজে বের করতে হবে এবং এই রোগ নিয়ে কীভাবে চলতে হবে তা শিখতে হবে - কারণ বাস্তবতা হলো যে, এন্ডোমেট্রিওসিসের কোনও সুনির্দিষ্ট নিরাময় নেই।
এই সিরিজের পরবর্তী পর্বে, আমরা জানব কিভাবে আক্রান্তরা এন্ডোমেট্রিওসিসের সাথে বাঁচতে শেখে।
সম্পূর্ণ প্রতিবেদনটি শুনতে উপরের অডিও লিংকে ক্লিক করুন।
এসবিএস বাংলার অনুষ্ঠান শুনুন রেডিওতে, এসবিএস বাংলা রেডিও অ্যাপ-এ এবং আমাদের ওয়েবসাইটে, প্রতি সোম ও শনিবার সন্ধ্যা ৬ টা থেকে ৭ টা পর্যন্ত। রেডিও অনুষ্ঠান পরেও শুনতে পারবেন, ভিজিট করুন: