ক্যান্সারের ক্লিনিকাল ট্রায়াল বিষয়ে একটি গবেষণা দলের প্রধান গবেষক হলেন ডঃ অভিজিৎ পাল, যিনি ইউনিভার্সিটি অফ সিডনির পিএইচডি ক্যান্ডিডেট, এবং সিডনির লিভারপুল হাসপাতালের মেডিকেল অনকোলজি স্টাফ স্পেশালিস্ট এবং ডিরেক্টর অফ অ্যাডভান্সড ট্রেনিং।
আমরা এ বিষয়ে আজ কথা বলেছি ডঃ অভিজিৎ পালের সাথে।
এখানে প্রকাশিত হলো ডঃ অভিজিৎ পালের সাথে সাক্ষাৎকারটির ২য় পর্ব। এই পর্বে তিনি কথা বলেছেন, বহুসাংস্কৃতিক কমুউনিটির ক্যান্সারের ক্লিনিক্যাল ট্রায়াল থেকে বাদ পড়া ও তার কারণ এবং এর সাথে সম্পর্কিত অন্যান্য বিষয়গুলো।
আরো শুনুন ডঃ অভিজিৎ পালের সাথে সাক্ষাৎকারটির ১ম পর্ব

ক্যান্সার চিকিৎসা এবং ক্লিনিক্যাল ট্রায়ালগুলো এখন আগের চেয়ে অনেক উন্নত: ড. অভিজিৎ পাল
SBS Bangla
10:01
বহু ভাষা-সংস্কৃতির অভিবাসীরা ক্যান্সারের ক্লিনিক্যাল ট্রায়াল থেকে বাদ পড়া বিষয়ে ড. অভিজিৎ পাল বলেন, "দেখা গেছে যারা ককেশিয়ান এবং যাদের আর্থিক সামর্থ্য আছে তারাই ক্যান্সেল ক্যান্সারের ক্লিনিক্যাল টায়ালে অংশ নিতে পারছে।"
"এর মূল কারণ ভিন্ন সংস্কৃতি থেকে আসা মানুষেরা ভালো ইংরেজি বলতে পারেনা, ক্লিনিক্যাল ট্রায়াল সম্পর্কে বা এর উপকারিতা সম্পর্কে তারা জানে না, তারা এ বিষয়ে আলোচনা করতে পারেনা, তারা এমনকি এ বিষয়ে প্ৰশ্নও করতে পারে না।"
যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্যের অভিজ্ঞতা থেকে মি. পাল বলেন, " আমেরিকা ইংল্যান্ড এসব দেশের বহু ভাষাভাষী মানুষের মধ্যেও এই প্রবণতা দেখা গেছে।
"এছাড়াও অভিবাসী কমিউনিটির মধ্যে ভুল বোঝাবুঝি আছে। তাদের মধ্যে অনেকের ধারণা ক্যান্সার মানেই হচ্ছে নো আনসার কিন্তু এখানে যে বিষয়টা জরুরী তা হল আপনি যদি ক্যান্সারের ক্লিনিক্যাল ট্রায়ালে অংশ নিতে আগ্রহী না হন তাহলে কখনো আপনি সেই ট্রায়ালের সুযোগ নিয়ে সুবিধাগুলো ব্যবহার করতে পারবেন না। আপনি না চাইলে সেখানে কেউ আপনাকে অংশ নিতে বলবে না।"
ক্যান্সার ট্রায়ালের যুক্ত বিষয়গুলো ব্যাখ্যা করে ড. পাল বলেন, "এখানে যে সমস্যাটি হচ্ছে সেটি হলো অনেকগুলো ফ্যাক্টর এখানে কাজ করে; অনেকে এ বিষয়ে রিসার্চ করতে চায় না, অনেকে মনে করে আমার সময় নেই, সে হয়তো ট্রায়াল নিয়ে ভয় পাচ্ছে, আর এভাবেই সে তখন সেখান থেকে বের হয়ে আসে।"
ভাষাগত বাধা একটি বড় বিষয়
ভাষাগত বাধার মত বিষয়টি সম্পর্কে তিনি বলেন, "যে রোগীটি ইংরেজি জানে না তার জন্য হয়তো কোন বাঙালি ডাক্তার নেই, হয়তো কোন ইন্টারপ্রেটর নেই তখন সেই ডাক্তার এই ট্রায়ালের জন্য কোন আগ্রহ দেখান না।"
"অনেক সময় স্পন্সররাও শর্ত জুড়ে দেয় এবং প্রটোকলে লেখা থাকে যে রোগীকে ইংলিশ বলতে পারতে হবে যা আরেকটি ইস্যু।"
বহুভাষী কমিউনিটির এসব বাধাগুলোকেই কারণ হিসেবে উল্লেখ করে ড. পাল বলেন, ক্যান্সার চিকিৎসার অনেক উন্নতি হয়েছে, অনেক ভালো গবেষণা হচ্ছে, অনেক ভালো ওষুধ এসেছে, ট্রায়ালের সিস্টেমও উন্নত হয়েছে, কিন্তু তারপরেও কমিউনিটি এখানে ঢুকতে পারছে না।
তিনি বলেন, "এ বিষয়ে আমরা একটি সার্ভে করেছি বহু সাংস্কৃতিক গোষ্ঠীর মানুষের জন্য ক্যান্সার ট্রায়াল কতটা অনুকূল করা যায়।"
"আমরা আমাদের গবেষণায় দেখিয়েছি যে বহু ভাষাভাষী জনগোষ্ঠীকে এই ট্রায়াল এর মধ্যে আনতে হলে ফান্ডিং দরকার। কারণ এজন্য আরো ইন্টারপ্রেটার দরকার। যার জন্য আরো আর্থিক সহায়তা দরকার।"

Lead researcher PhD student Abhijit Pal believes that there needs to be equity in outcomes for all cancer patients in Australia, including multicultural communities. Credit: Dr Abhijit Pal
"রোগীকে বলতে হবে আমাকে ইন্টারপ্রেটার দাও, আমাকে বাংলায় লেখা তথ্য দাও।"
"আমরা যখন ভারত বা বাংলাদেশ থেকে আসি তখন আমরা মনে করি ডাক্তাররা খুবই উঁচু পেশার এবং সম্মানিত লোক, আমরা তাদের কাছে কিছু চাইতে ভয় পাই। কিন্তু অস্ট্রেলিয়ার বেলায় উল্টো, এখানে রোগীদের চাহিদাই অগ্রাধিকার পাবে, রোগীর সমস্যার কথা ডাক্তারদের শুনতেই হবে, এখানে রোগীদের অধিকার আছে জানার, তাদের কি কি পাওয়ার অধিকার আছে সে সম্পর্কে ডাক্তারদের জিজ্ঞাসা করার," বলেন তিনি।
সিডনিতে তার একজন সহকর্মীর গবেষণার অভিজ্ঞতা স্মরণ করে ড. পাল বলেন, তিনি দেখিয়েছেন যারা ইংরেজি বলতে পারেনা তাদের ক্লিনিক্যাল ট্রায়ালে অংশগ্রহণের হার অনেক কম।
এখানে প্রশ্ন হচ্ছে বহু ভাষাভাষী কমিউনিটি কি ক্লিনিক্যাল ট্রায়াল সম্পর্কে ভীত? ড. অভিজিৎ পাল বলেন, অনেক কমিউনিটির মধ্যে এ নিয়ে অবিশ্বাস আছে। এক্ষেত্রে তাদের মূল দেশের ডাক্তারদের সাথে তাদের অভিজ্ঞতা কাজ করে, অনেক সময় ওইসব দেশে ডাক্তাররা অধিক অর্থ চার্জ করতে পারে, কিন্তু অস্ট্রেলিয়ার ক্ষেত্রে সেটি হয় না, অস্ট্রেলিয়া এসব ক্ষেত্রে অনেক সুবিধা দেয়।
সামাজিকভাবে ক্ষমতাবান ব্যক্তিদের সাথে বহুভাষী কমিউনিটির পার্থক্য প্রসঙ্গে ড. পাল বলেন, অনেক সময় সামাজিকভাবে ক্ষমতাশালী নয় এমন লোকদের আর্থিক অবস্থা দুর্বল থাকে, বা তাদের কম পড়াশোনা ঠকতে পারে, যার কারণে তারা অনেক সময় সুবিধা গুলো নিয়ে জিজ্ঞাসা করতে সংকোচ বোধ করতে পারেন। অন্যদিকে সমাজের ক্ষমতাশালী ব্যক্তিরা জিজ্ঞাসা করে কি কি সুবিধা আছে, তারা ট্রায়ালে যেতে পারবে কিনা।
ড. পাল বলেন বহু ভাষাভাষী কমিউনিটির লোকদের পরবর্তী প্রজন্ম যাদের জন্ম এবং বড় হওয়া অস্ট্রেলিয়ায় তারা অবশ্য এসব বিষয়ে সচেতন।
ডঃ অভিজিৎ পালের সাক্ষাৎকারের ২য় পর্বটি শুনতে উপরের অডিও প্লেয়ারে ক্লিক করুন।
এসবিএস রেডিও সম্প্রচার-সূচী হালনাগাদ করছে । এখন থেকে নতুন চ্যানেলে, পরিবর্তিত সময়ে সরাসরি সম্প্রচার শোনা যাচ্ছে।
প্রতি সোম ও বৃহস্পতিবার, বিকাল ৩টায়, এসবিএস পপদেশীতে আমাদের অনুষ্ঠান শুনুন, লাইভ।
কিংবা, বিদ্যমান সময়সূচীতেও আপনি আমাদের অনুষ্ঠান শোনা চালিয়ে যেতে পারেন। প্রতি সোম ও শনিবার, সন্ধ্যা ৬টায়, এসবিএস-২ তে।