গুরুত্বপূর্ণ দিক
- কোম্পানি এবং ব্যক্তিগত ট্যাক্স, পণ্যমূল্য বৃদ্ধি এবং শক্তিশালী শ্রমবাজারের কারণে এই বাজেটে উদ্বৃত্ত ১৯ বিলিয়ন ডলার যোগ হয়েছে
- সুদ হার বৃদ্ধি কীভাবে অর্থনীতিতে প্রভাব ফেলেছে তা মূল্যায়ন করতে আরও সময় দেওয়ার জন্য আনুষ্ঠানিক সুদের হার ৪.১%-এ অপরিবর্তিত রেখেছে আরবিএ
- কনজিউমার প্রাইস ইনডেক্স বা মাসিক ভোক্তা মূল্য সূচক মে মাসে ৬.৮ শতাংশ থেকে ৫.৬ শতাংশে নেমে এসেছে
ফেডারেল বাজেটে আগের যে উদ্বৃত্তের পূর্বাভাস দেয়া হয়েছিলো তার চেয়ে এখন অনেক বেশি হবে বলে ডিপার্টমেন্ট অফ ফাইন্যান্স তাদের মাসিক প্রতিবেদনে প্রকাশ করেছে।
মে মাসের আগে গত ১২ মাসের অন্তর্নিহিত নগদ ব্যালেন্স ছিল ১৯ বিলিয়ন ডলার, যা গত ফেডারেল বাজেটের ২০২২-২৩ আর্থিক বছরে পূর্বাভাস দেয়া ৪.২ বিলিয়ন ডলার উদ্বৃত্তের অনেক বেশি।
গত ৩০ জুন প্রকাশিত অফিসিয়াল ফাইন্যান্স ডিপার্টমেন্টের মাসিক পরিসংখ্যানে দেখা গেছে যে, কোম্পানি এবং ব্যক্তিগত ট্যাক্স বেড়েছে, পণ্যমূল্য বৃদ্ধি এবং শক্তিশালী শ্রমবাজারের কারণে এই উদ্বৃত্ত তৈরী হয়েছে।
অর্থমন্ত্রী ক্যাটি গ্যালাঘের এ প্রসঙ্গে বলেছেন যে পরিসংখ্যানগুলি থেকে দেখা যায় যে সরকার মে মাসের বাজেটে ৪.২ বিলিয়ন ডলারের পূর্বাভাসের চেয়ে অনেক বড় উদ্বৃত্ত লাভের পথে রয়েছে।
এই উদ্বৃত্ত আমাদের কী বার্তা দেয়?
ফ্লিন্ডার্স ইউনিভার্সিটির ইন্টারন্যাশনাল বিজনেসের লেকচারার ড. শরীফ রাসেল বলেন, এতে আমাদের অর্থনীতির শক্তিশালী দিকটাও যেমন প্রকাশ করে, তেমনি নাজুক হওয়ার শঙ্কাও থেকে যায়। কারণ, অস্ট্রেলিয়ার যেমন মূল্যবান খনিজ সম্পদ আছে, আবার একই সাথে দেশটি অন্য দেশের অর্থনীতির ওপরও নির্ভরশীল।
বাজেটে উদ্বৃত্ত বাড়ার যেসব কারণ ডিপার্টমেন্ট অফ ফাইন্যান্স দেখিয়েছে তা ব্যাখ্যা করে তিনি বলেন, "এখন বেকারত্বের হার কম এবং বেতনও বেড়েছে, তাই আয়কর আগের চেয়ে বেশি পাচ্ছে সরকার; পণ্যমূল্যের দাম বেড়েছে যার ফলে সরকার আরো বেশি জিএসটি পাচ্ছে।"
এদিকে রিজার্ভ ব্যাঙ্ক অফ অস্ট্রেলিয়া ১৫ মাসের মধ্যে আগের ১২ বার সুদ হার বৃদ্ধি কীভাবে অর্থনীতিতে প্রভাব ফেলেছে তা মূল্যায়ন করতে আরও সময় দেওয়ার জন্য আনুষ্ঠানিক সুদের হার ৪.১%-এ অপরিবর্তিত রেখেছে।
অর্থমন্ত্রী ক্যাটি গ্যালাঘের রিজার্ভ ব্যাঙ্ক অফ অস্ট্রেলিয়া সুদের হার স্থগিত করার সিদ্ধান্তকে স্বাগত জানিয়েছেন, বলেছেন এটি পরিবারগুলোর জন্য ভালো খবর।
মিজ গ্যালাঘের আরো বলেছেন যে সরকার মূল্যস্ফীতির চ্যালেঞ্জকে গুরুত্ব সহকারে নিচ্ছে।
তিনি বলছেন, "আজকের সিদ্ধান্তটিকে স্বাগত জানাচ্ছি, আমি জানি অস্ট্রেলিয়া জুড়ে পরিবারগুলো এটি স্বাগত জানাবে। আমাদের যে কাজটি করতে হবে তা হলো মুদ্রাস্ফীতি না কমিয়ে জীবনযাত্রার খরচের জন্য রিলিফ দেয়া। আমরা আরও উত্পাদনশীল এবং সহনশীল অর্থনীতিতে বিনিয়োগ করছি।"
এদিকে আরবিএ বোর্ড বলেছে যে সুদ হার বৃদ্ধিতে বিরতি দেয়ার মাধ্যমে তারা অর্থনৈতিক পরিস্থিতি মূল্যায়ন করতে আরও সময় পাবে, কারণ অর্থনৈতিক পরিস্থিতি এখনো অনিশ্চিত।
আরবিএ বোর্ড আরো বলছে যে ডেটা থেকে দেখা যায় যে অস্ট্রেলিয়ায় মুদ্রাস্ফীতি তার সর্বোচ্চ চূড়া পেরিয়ে গেছে, তবে তারা সতর্ক করে বলছে যে মুদ্রাস্ফীতির স্তরটি এখনো খুব উঁচুতে এবং বেশ কিছু সময়ের জন্য এটি থেকে যাবে।
তবে রিজার্ভ ব্যাঙ্ক অফ অস্ট্রেলিয়ার গভর্নর ফিলিপ লোই ভবিষ্যতে আরও সুদের হার বৃদ্ধি যে হবে না, তা অস্বীকার করছেন না৷
এদিকে কনজিউমার প্রাইস ইনডেক্স বা মাসিক ভোক্তা মূল্য সূচক মে মাসে ৬.৮ শতাংশ থেকে ৫.৬ শতাংশে নেমে এসেছে।
এদিকে বিরোধী দল সুদের হার যাতে বাড়তে না পারে তা নিশ্চিত করার জন্য সরকারের হাতে থাকা সমস্ত যন্ত্র ব্যবহার করতে তাদের প্রতি আহ্বান জানিয়েছে। কারণ হিসেবে তারা বলছে অস্ট্রেলিয়ান পরিবারগুলোর দৈনন্দিন ব্যয় বেড়ে গিয়ে জীবন ধারণ করা ইতিমধ্যেই খুব কঠিন হয়ে পড়েছে।
তবে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী ক্লেয়ার ও'নিল চ্যানেল সেভেনকে বলেছেন, সরকার ইতিমধ্যেই মুদ্রাস্ফীতি না বাড়িয়ে জনগণকে সহায়তা করার জন্য যথাসাধ্য চেষ্টা করছে।
তিনি বলছেন "মনে রাখবেন, এগুলি বৈশ্বিক সমস্যা, আমরা সমস্ত উন্নত দেশগুলিতে একই ধরণের সমস্যার সম্মুখীন হয়েছি৷ আমাদের সরকারের ফোকাস হচ্ছে বাজেটের দায়িত্বশীল ব্যবস্থাপনা। গত ১৫ বছরে প্রথম উদ্বৃত্ত পেয়েছি, এটিকে তুচ্ছ মনে করার মতো কিছু নয়। একই সময়ে, পরিবারগুলিকে সাহায্য করতে আমরা যথাসাধ্য চেষ্টা করছি এবং রিজার্ভ ব্যাঙ্ক যে কিছুটা পিছিয়ে গেছে তাতে বোঝা যায় যে আমরা ভারসাম্য ঠিকঠাক আনতে পারছি, এটি সত্যিই একটি কঠিন সময় অস্ট্রেলিয়ান পরিবার এবং অর্থনীতির জন্য।"
এদিকে শ্যাডো ট্রেজারার এঙ্গাস টেইলর বলেছেন যে, সরকারকে উৎপাদনশীলতা বাড়াতে হবে, আমরা যে অবস্থায় রেখে গেছি মাত্র এক বছরেই লেবার সরকার তার অর্ধেক উৎপাদনশীলতা কমিয়ে ফেলেছে।
তিনি বলেন মুদ্রাস্ফীতি কমাতে সরকারের কার্যকর নীতি প্রয়োজন, শুধু কেন্দ্রীয় ব্যাংকের দিকে তাকিয়ে থাকলে হবে না।
সেন্ট জর্জ সিনিয়র ইকোনমিস্ট ইয়ারেক কাউকজা এসবিএস অন দ্য মানিকে বলেন, সুদ হার অপরিবর্তিত রাখার কারণগুলোর মধ্যে আছে যে, আরবিএ মনে করছে ইতিমধ্যে যে ৪.১ শতাংশ সুদ হার আছে তা অর্থনীতিতে চাহিদা-যোগানের ভারসাম্য আনতে কাজ করছে।
এদিকে সুদ হার অপরিবর্তিত রাখার সিদ্ধান্তে অস্ট্রেলিয়ার শেয়ার বাজারেও কিছুটা ইতিবাচক ধারা লক্ষ্য করা গেছে।
এ প্রসঙ্গে বিনিয়োগ উপদেষ্টা কোম্পানি পারপেচুয়ালের ম্যাট শেরউড এসবিএস অন দ্য মানিকে বলেন, সুদ হার না বাড়ানোর সিদ্ধান্তে শেয়ার বাজার কিছুটা চাঙ্গা হয়ে উঠে, তবে এই দাম বৃদ্ধির ধারা ছিলো সংযমী।
তিনি আরো বলেন, সুদহার বৃদ্ধি বিনিয়োগ ও অর্থনীতিকে প্রভাবিত করলেও আমাদের মনে রাখতে হবে মুদ্রাস্ফীতি এখনো অনেক বেশি এবং স্থিতিশীল নয়। আমরা হয়তো আগস্ট মাসে গিয়ে আরো এ ব্যাপারে সুনির্দিষ্ট কিছু জানতে পারবো।
সুদহার বৃদ্ধি হাউজিং মার্কেটের মাঠ পর্যায়ের চিত্রটিকে কীভাবে প্রভাবিত করছে এ ব্যাপারে অজি হোম লোনের মর্টগেজ ব্রোকার হাসান তালুকদার বলেন, "সুদ হার বৃদ্ধির ফলে অনেক ক্রেতা চুপচাপ ছিলেন, তারা মার্কেটে ঢুকতে চাইলেও কিছুটা শঙ্কিত ছিলেন, তাদের মধ্যে এক ধরনের অনিশ্চয়তাও কাজ করেছে। এখন এটি অপরিবর্তিত রাখার সিদ্ধান্তে অনেকেই খোঁজ খবর নিচ্ছেন।"
বিশ্লেষকরা বলছেন, মুদ্রাস্ফীতির হার কিছুটা কমলেও সার্বিকভাবে অর্থনীতির চিত্রটা এখনো অস্থিতিশীল। রিজার্ভ ব্যাংক বলছে ২০২৩ সালে অস্ট্রেলিয়ার প্রবৃদ্ধি ১.৫০ শতাংশ বা তার কাছাকাছি হতে পারে এবং এই ধারা ২০২৪ সাল পর্যন্ত বজায় থাকবে।
সম্পূর্ণ প্রতিবেদনটি শুনতে উপরের অডিও-প্লেয়ার বাটনে ক্লিক করুন।
এসবিএস বাংলার অনুষ্ঠান শুনুন রেডিওতে, এসবিএস বাংলা অডিও অ্যাপ-এ এবং আমাদের ওয়েবসাইটে, প্রতি সোম ও শনিবার সন্ধ্যা ৬টা থেকে ৭টা পর্যন্ত।