গুরুত্বপূর্ণ দিকগুলো
- অস্ট্রেলিয়ায় চান্দ্র নববর্ষ একাধিক উপায়ে উদযাপন করা হয়
- আধুনিক চীন গ্রেগরিয়ান ক্যালেন্ডার ব্যবহার করে, তবে চীন এবং বিদেশের চীনা সম্প্রদায় চীনা ক্যালেন্ডার ব্যাপকভাবে ব্যবহার করে যেখানে চীনা নববর্ষ এবং ল্যান্টার্ন উৎসব বা কিংমিং উৎসবগুলোও থাকে
- এ বছরের প্রতীক বাঘ, যেটি শক্তি এবং নিয়ন্ত্রণকারীর প্রতীক
এ বছর ২২ জানুয়ারি পালিত হবে লুনার নিউ ইয়ারের প্রথম দিনটি। ২০২৩ সালের থিম হচ্ছে খরগোশ এবং এটিকে বলা হচ্ছে ইয়ার অফ দ্য র্যাবিট।
ডঃ প্যান ওয়াং নিউ সাউথ ওয়েলস বিশ্ববিদ্যালয়ের চীনা এবং এশিয়ান স্টাডিজের সিনিয়র লেকচারার।
ডঃ ওয়াং চন্দ্র ক্যালেন্ডারের ব্যাখ্যা করে বলেন, এই বসন্ত উৎসবটি পনেরো দিন ধরে লণ্ঠন উৎসব (ল্যান্টার্ন ফেস্টিভ্যাল) পর্যন্ত চলবে ।
তিনি বলেন, লুনার নিউ ইয়ার (চান্দ্র নববর্ষ) হল লুনার ক্যালেন্ডার বছরের শুরু। চাঁদের চক্রের উপর ভিত্তি করে এটিকে চীনা নববর্ষ বা বসন্ত উৎসবও বলা যেতে পারে। এটি চীন, জাপান,কোরিয়া, ভিয়েতনামের মতো অন্যান্য পূর্ব এশিয়ার দেশগুলিতে পালিত হয়। এছাড়া এই দেশগুলোর অভিবাসীরা অস্ট্রেলিয়ার মতো আরও অনেক দেশে পালন করে। উৎসবটি ৪,০০০ বছর আগে জিয়াওর শ্যাং রাজবংশ থেকে শুরু হয়েছে এমন একটি ইতিহাস আছে।
Lunar New Year Celebration Source: Getty Images
তিনি বলেন, অস্ট্রেলিয়ায় চান্দ্র নববর্ষ উদযাপন সারা বিশ্বের মানুষের জন্য চীনা, দক্ষিণ-পূর্ব এবং পূর্ব এশীয় সংস্কৃতি সম্পর্কে জানার একটি দারুন সুযোগ।
ডঃ কাই ঝাং ব্যাখ্যা করে বলেন, লণ্ঠন উৎসবটি চান্দ্র বছরের ১৫তম দিনে অনুষ্ঠিত হয়।
তিনি বলেন, এটিকে লণ্ঠন উৎসব বলা হয় কারণ এই ঐতিহ্য রয়েছে, এসময় প্রতিটি পরিবার তাদের বাচ্চাদের জন্য ছোট লণ্ঠন তৈরি করবে এবং দরজার বাইরে লণ্ঠনগুলিকে আলোকিত করবে। এবং এদিন একটি বড় ইভেন্ট হবে; বাচ্চারা তাদের লণ্ঠন নিয়ে তাদের পরিবারের সাথে বাজারে যাবে।
Lunar New Year Celebration Source: Getty Images
তিনি বলেন, উৎসবের সময় মাছের ডাম্পলিং খাওয়া, পরিবার এবং বন্ধুদের সাথে আড্ডা হয়। চীনা সম্প্রদায় নানান কিছু করে । যেমন সিংহ এবং ড্রাগন নাচ ইত্যাদি। এছাড়া বাচ্চাদের লাল খামে উপহার দেওয়াও একটা ঐতিহ্য।
আইরিস টাং চীনের মূল ভূখন্ডে বেড়ে ওঠেন এবং ২০ বছর আগে অস্ট্রেলিয়ায় পাড়ি জমান।
তিনি বলেন অস্ট্রেলিয়া এবং চীনের উদযাপনের মধ্যে প্রধান পার্থক্য হল যে তাদের জন্মভূমিতে চান্দ্র নববর্ষ উদযাপনের জন্য একটি দীর্ঘ সরকারি ছুটি থাকে - তখন কয়েক মিলিয়ন মানুষ পারিবারের সাথে দেখা করতে চীনে তাদের নিজ শহরে যায় (অবশ্য ব্যতিক্রম হয় কোভিড-১৯ বিধিনিষেধ থাকলে)।
টাং এর মতে, চীনের মত অস্ট্রেলিয়ায়ও চান্দ্র নববর্ষ উদযাপনের একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশ খাদ্য।
যদিও আধুনিক চীন গ্রেগরিয়ান ক্যালেন্ডার ব্যবহার করে, তবে চীন এবং বিদেশের চীনা সম্প্রদায় চীনা ক্যালেন্ডার ব্যাপকভাবে ব্যবহার করে যেখানে চীনা নববর্ষ এবং ল্যান্টার্ন উৎসব বা কিংমিং উৎসবগুলোও থাকে।
Lunar New Year Celebration Source: Getty Images
সা প্যান ওয়াং বলেন, ঐতিহ্যবাহী চীনা ক্যালেন্ডারের বৈচিত্র সমগ্র পূর্ব এশিয়া জুড়ে পাওয়া যায়। চান্দ্র নববর্ষের দিনটি প্রতি বছর জানুয়ারিতে বা ফেব্রুয়ারিতে পড়তে পারে।
তিনি বলেন, এর পরিসর জানুয়ারির শেষ থেকে-মধ্য ফেব্রুয়ারির মধ্যে। এ বছর এটি ফেব্রুয়ারিতে হবে। সুতরাং যে মাসেই হোক না কেন, প্রথম চান্দ্র মাস বসন্তের শুরু এবং সেই বিশেষ দিনে বসন্ত উৎসব অনুষ্ঠিত হয়। চান্দ্র ক্যালেন্ডার এবং গ্রেগরিয়ান ক্যালেন্ডারের মধ্যে পার্থক্য হলো গ্রেগরিয়ান ক্যালেন্ডার একটি সৌর ক্যালেন্ডার, এটি একটি খ্রিস্টান ক্যালেন্ডার, মূলত তারার সাথে সম্পর্কিত সূর্যের অবস্থানের উপর ভিত্তি করে।
Lunar New Year Celebration Source: Getty Images
তিনি বেশ কয়েক বছর তাইওয়ান এবং দক্ষিণ কোরিয়াতে বসবাস করেছেন এবং সেখানে চান্দ্র নববর্ষ উদযাপনের কিছু দারুন স্মৃতি আছে তার।
ডঃ স্মিথ বলছেন, দক্ষিণ কোরিয়ায়, লুনার ইয়ারের (চান্দ্র নববর্ষ) সময় তারা পূর্বপুরুষদের শ্রদ্ধা জানায়।
তিনি বলেন, নববর্ষের এই দিনে সবাই ঘুম থেকে উঠে মৃত পূর্বপুরুষদের জন্য খাবারের ব্যবস্থা করে এবং তাদের স্মরণ করে এবং তাদের পানীয় অফার করে। এবং এর সাথে যুক্ত হয়েছে ধর্মীয় আচার। তাই এর পাশাপাশি বৌদ্ধ পরিবারগুলি চান্দ্র নববর্ষে সূত্র পাঠ করবে।
ডঃ স্মিথ বলেন, চন্দ্র নববর্ষ উদযাপনের অনেক উপাদান রয়েছে যা চীন ছাড়া অন্য দেশ থেকে পাওয়া।
যেমন সিংহ নাচ যা লুনার নববর্ষের প্যারেডের ঐতিহ্য। ভাষাগত এবং ঐতিহাসিক বিশ্লেষণের ভিত্তিতে অনেকে এটিকে পারস্যের ঐতিহ্যের সাথে যুক্ত বলে মনে করেন।
চীনা জোডিয়াক ইয়ার (রাশিচক্রের বছর) শুরু হয় কোন লুনার ইয়ার শুরুর সাথে এবং পরবর্তী বছরের নববর্ষে শেষ হয়। রাশিচক্রে বছরটি কোন রাশিচক্রের প্রাণী দ্বারা ১২ বছর পর পর প্রতিনিধিত্ব করা হয়, এতে ওই প্রাণীটির গুনাগুন তুলে ধরা হয়।
প্রাণীগুলো হলো ইঁদুর, ষাঁড়, বাঘ, খরগোশ, ড্রাগন, সাপ, ঘোড়া, ছাগল, বানর, মোরগ, কুকুর এবং শূকর।
Lunar New Year Celebration Source: Getty Images
তিনি বলেন, এটি শুরু হয়েছিল জেইড সম্রাটের কাছ থেকে যিনি একটি সভা করতে চেয়েছিলেন এবং সেখানে ১২টি প্রাণী প্রতিযোগিতা করে যাওয়ার চেষ্টা করছিল। এবং এতে নাকি প্রথমে ইঁদুর এবং তারপর ষাঁড় এবং তারপরে অন্যান্য প্রাণীগুলো সভায় পৌঁছেছিল। এ নিয়ে এমন গল্পই চালু আছে।
এ বছরের প্রতীক বাঘ, এ সম্পর্কে ড: ওয়াং বলছেন বাঘ শক্তি এবং নিয়ন্ত্রণকারীর প্রতীক - বিশ্বব্যাপী মানুষ কোভিড মহামারীর সাথে লড়াই করছে, তাই এবারের প্রতীকটি মানুষের নেতৃত্ব, কর্তৃত্ব, শক্তি এবং ক্ষমতার সাথে যেন মিলে গেছে।
পুরো প্রতিবেদনটি শুনতে উপরের অডিও-প্লেয়ারটিতে ক্লিক করুন।
এসবিএস বাংলার অনুষ্ঠান শুনুন রেডিওতে, এসবিএস বাংলা রেডিও অ্যাপ-এ এবং আমাদের ওয়েবসাইটে, প্রতি সোম ও শনিবার সন্ধ্যা ৬ টা থেকে ৭ টা পর্যন্ত। রেডিও অনুষ্ঠান পরেও শুনতে পারবেন, ভিজিট করুন:
আরও দেখুন: